প্রসঙ্গঃ একজন ব্লগার লিখলেন - নাস্তিকদের সাথে যুক্তিতে পারা যায় না তবুও তিনি আস্তিক তথা বিশ্বাসী।
যদি নাস্তিকদের সাথে যুক্তিতে না পারেন, তাহলে আস্তিক হলেন কিভাবে? অর্থাৎ, নাস্তিকতাই যদি যুক্তি সংগত হয় তাহলে আপনার ‘বিশ্বাসের’ কি মূল্য? আমি যতটুকু জানি, ইসলামী মতাদর্শ অনুযায়ী আল্লাহও চান না মানুষ না বুঝে, যুক্তিসংগত হিসাবে গ্রহন করা ছাড়াই, ঈমান আনুক। ইসলামী মতাদর্শ অনুযায়ী ঈমান বা বিশ্বাসের মধ্যে অন্তরের উপলব্ধি, মৌখিক দাবী ও কর্মগত সাদৃশ্য এই তিন-এর সমন্বয় বা অন্তর্ভূক্তি অপরিহার্য্য।
তাই আমি মনে করি, নাস্তিকদের সাথে কেউ যদি যুক্তিতে কুলিয়ে উঠতে না পারেন, তাহলে তাঁর আস্তিক থাকার কোন কারন নাই। জ্ঞানবিহীন বিশ্বাস অর্থহীন, অসম্ভব।
স্মর্তব্য যে, নাস্তিকতাকে খন্ডন করা আস্তিক হওয়ার অপরিহার্য্য শর্ত নয়। আস্তিকতার যুক্তি আছে - কেবলমাত্র এতটুকুই যথেষ্ট।
আস্তিকতাকে খন্ডন করা প্রচেষ্টা যেমন নাস্তিকদের একটা শ্রেণীগত বিভ্রান্তি বা ক্যাটাগরী মিস্টেক তেমনি নাস্তিকতাকে খন্ডন করার জন্য আস্তিকদের প্রচেষ্টাও সুস্পষ্টভাবে শ্রেণীগত বিভ্রান্তি বটে।
কারন -
‘প্রমান’ দিয়ে ‘বিশ্বাস’ হয় না। ‘বিশ্বাসে’র ভিত্তি হলো ‘যুক্তি’। এবং ‘যুক্তি’ই হলো ‘জ্ঞানে’র ভিত্তি, উপাদান ও মৌলিক কাঠামো।
তাই -
অনুমান ছাড়া শুধুমাত্র ‘প্রমান’ দিয়ে ‘জ্ঞান’ হয় না। ‘প্রমান’ লাগে, যেটি হলো তথ্য। যা ‘জ্ঞানে’র একক। যেমন দালানের জন্য ইট-এর খন্ড গুলোকে আমরা দালানের একক বলতে পারি। তথ্য ও জ্ঞানের পার্থক্য সম্পর্কে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তথ্য ছাড়া জ্ঞান হয়না। তাই বলে সব তথ্য জ্ঞান নয়। তথ্যের ‘নির্দিষ্ট সমাহার’ হলো্ জ্ঞান। অনুমান-ই হলো এই ‘নির্দিষ্ট সমাহার’। শর্ত হলো সংশ্লিষ্ট অনুমান-কে হতে হবে যুক্তি-সংগত।
সকল জ্ঞানই মূলতঃ বিশ্বাস (বা অনুমান) কিন্তু সকল বিশ্বাস জ্ঞান নয়। জ্ঞান হলো যুক্তিসংগত সত্য বিশ্বাস।
অতএব, অ-যৌক্তিক বিশ্বাস-ই হলো অন্ধ-বিশ্বাস। কেউ যদি স্বীকার করেন যে, নাস্তিকদের যুক্তি অধিকতর গ্রহনযোগ্য, তাহলে তিনি একজন নাস্তিক। সামাজিক কারনে তিনি নিজেকে নাস্তিক পরিচয় না দিলেও।
আমাদের সমাজে নাস্তিকরা সাধারনতঃ নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে চান না। মজার ব্যাপার হলো অনেকেই জানেন না যে, তিনি নাস্তিক। নাস্তিকতাকে এখানে গালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। জন্মগতভাবে কেউ আস্তিক বা নাস্তিক হন না। আস্তিকতা বলুন, নাস্তিকতা বলুন - এগুলো অর্জন করতে হয়।
আমাদের দেশে সবাই বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী আস্তিকতো বটেই, এমনকি হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টানরাও ‘মুসলিম’! কারন, ‘রাষ্ট্রধর্ম’(!) হলো ইসলাম। কী বিচিত্র ! ইসলাম অন্ততঃ ‘রাষ্ট্রধর্ম’ হওয়ার কোন ব্যাপার নয়। অবুঝ (জন্মগতভাবে) মুসলিমরাই ইসলামের বড় সমস্যা।
আস্তিক হোন আর নাস্তিক হোন - জেনে-বুঝে হোন। হঠকারী (এক্সট্রিম) হবেন না। যা কিছুর ‘যু্ক্তি নাই’ তা পরিত্যাগ করুন। যুক্তিবাদী হোন, তাহলেই সত্যিকারের বিশ্বাসী হতে পারবেন। (ভালভাবে) বাঁচতে হলে আমাদেরকে সত্যিকারের বিশ্বাসী হতে হবে। বিশ্বাসের বিষয় যা-ই হোক না কেন।
বিঃ দ্রঃ যারা বিপরীত মত-কে গালি দানে ধন্য হোন, তাঁরা দয়া করে মন্তব্য দানে বিরত থাকবেন।