somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোয়াইন ফ্লু : বেশি আতংকিত হবার কারন নেই

১৫ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা হচ্ছে টাইপ এ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কর্তৃক সংঘটিত শুকরের ফুসফুসের অসুখ, যা নিয়মিতভাবে শুকরদের মাঝে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিস্তার ঘটিয়ে থাকে। এ ভাইরাসটি শুকরদের দেহে সারা বছরই সংক্রমন সৃষ্টি করে কিন্তু অসুখটি বেশিরভাগ সময় দেখা যায় হেমন্তের শেষ ভাগে আর শীতকালে। প্রথম প্রমিত ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসটি শুকরের দেহে পাওয়া গেছে ১৯৩০ সালে।

সাধারণত সোয়াইন ফ্লু মানব দেহে সংক্রমন করে না। তবু মানুষের মাঝে এর আক্রমন দেখা গেছে মাঝে মাঝে। সাধারণত যারা সরাসরি শুকরের সংস্পর্শে এসেছে, তাদের মাঝেই এ রোগ দেখা গেছে। মানুষ থেকে মানুষের দেহে এর সংক্রমনের ঘটনা দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের উইমকনসিন রাজ্যে ১৯৮৮ সালে।

শুকরের দেহ থেকে মানুষের শরীরে, আবার মানুষের দেহ থেকে শুকরের শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস সরাসরি ছড়াতে পারে। যারা সরাসরি শুকরের সংস্পর্শে এসেছে, তাদের মাঝেই ভাইরাসটি বেশি ছড়িয়েছে। মানুষ থেকে মানুষেও এর বিস্তার ঘটতে দেখা গেছে ফ্লু রোগের মতই হাঁচি আর কাশির সাহায্যে। এ ছাড়াও ফ্লু ভাইরাস সমৃদ্ধ স্থানে হাতের স্পর্শ এবং পরবর্তীতে সেই হাত, মুখ বা নাক স্পর্শ করলেও সোয়াইন ফ্লু ছড়াতে পারে। সোয়াইন ফ্লুর লক্ষণ হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতই। জ্বর, সর্দি, কাশি, দুর্বলতা, গলা ব্যথা, খাবার গ্রহণে অরুচি, বমি, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কয়েকটি সোয়াইন ফ্লু সংক্রমনের পেছনে রয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপের এইচ১ এন১ প্রজাতির এমন রূপ যা একেবারে নতুন। এইচ১ এন১ প্রজাতি যা ১৯১৮ সালে ফ্লু মহামারি ঘটিয়েছিলো এর একটি নতুন রূপ ঘটিয়েছে এই প্রাদুর্ভাব। এতে যে ডিএনএ রয়েছে তা এসেছে মানুষ, পাখি ও শুকরের ফ্লু ভাইরাস- এ ৩টি থেকে। ফ্লু ভাইরাসের এমন ক্ষমতা রয়েছে যে, এরা পরস্পর জ্বিন বিনিময় করতে পারে এবং মনে হচ্ছে এইচ১ এন১ প্রজাতির নতুন এই রুপটি মানুষ, পাখি ও শুকরের ভাইরাসের সংমিশ্রনে সৃষ্টি হয়েছে।

বিভিন্ন প্রজাতির ফ্লু ভাইরাস আশ্রয় নেয় বিভিন্ন প্রানীতে। নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সৃষ্টি হতে পারে মিউটেশনের ফলে। এটি হতে পারে দু’ভাবে ঃ
১.অ্যান্টিজেন প্রবাহ , যা দীর্ঘদিন চলে। ঈষৎ এই মিউটেশন ঘটলে শরীর এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
২.অ্যান্টিজেন স্থানান্তরের মাধ্যমে এসেছে নতুন এইচ১ এন১ প্রজাতি, যার বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। সোয়াইন ফ্লু বলা হচ্ছে কারন শুকরকে শুকর, পাখি ও মানুষের ফ্লু ভাইরাস জ্বিনের মিশ্রনের আধার বলে মনে করা হয়েছে।
১৯১৮ সালে স্পেনে যে ফ্লু হয়েছিলো, তাতে মারা গিয়েছিলো প্রায় ৫ কোটি মানুষ (এইচ১ এন১)। ১৯৫৭ সালে এশিয়ান ফ্লুতে মারা যায় ২০ লাখ মানুষ। এর মূলে ছিলো এইচ২ এন২ ভাইরাসের মানবরূপ। সাথে মিশ্রিত ছিলো বুনোহাঁসের একটি মিউটেটেড জ্বিন। তবে বর্তমান সোয়াইন ফ্লু রোগের বিরুদ্ধে সব দেশ ও সরকারকে জরুরি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আশার কথা হলো, মানুষ যেহেতু প্রতি বছরই প্রায় এইচ১ এন১ প্রজাতির মুখোমুখি হয়, তাই এই নতুন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে মানুষ অবশ্যই টিকে থাকতে পারবে।

প্রতিরোধ

০ যারা অসুস্থ, যাদের সর্দি, কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা হয়েছে তাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে
০ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি চর্চা জরুরি। হাঁচি ও কাশি দেবার সময় নাক মুখ ঢেকে রাখা উচিত
০ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমন রোধ করার জন্য হাত বার বার সাবান পানি দিয়ে ভালো করে ধোয়া উচিত। আর হাত দিয়ে দরজার হাতল ধরলে তা ধোয়ার জিনিস দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত
০ যাদের ফ্লুর মতো অসুখ হয়েছে, তাদের সেবা যতœ করার সময় রোগের বিস্তার এড়ানোর জন্য মুখোশ ব্যবহার করতে হবে

এডগার হার্নানডেজ- প্রথম নিশ্চিত রোগী
মার্চ মাসের শেষের দিকে পাঁচ বছর বয়সী এডগার হার্নানডেজ হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে জ্বর, মাথা ব্যথা আর ভীষন গলা ব্যথায় ভুগছিলো। কেবল এডগার একা নয়, লা গ্লোরিয়া গ্রামের শত শত লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলো তখন। ডাক্তারগন এডগারেরর মা মারিয়াহ ডেল কারমেন হার্নান্দেজ কে বলেছিলেন ফ্লুতে আক্রান্ত হবার কথা। পরবর্তীতে এডগারের অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার গলা থেকে নেয়া সোয়াব কানাডার একটি ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। আর সেখানেই এ ভাইরাসটির নতুন রুপ চিহিৃত হয়।

সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসটি শুরুতে যতোটা ভয়ঙ্কর মনে হয়েছিলো আসলে এটি ততোটা ভয়ঙ্কর নয়। এটি সাধারন ফ্লু ভাইরাসের মতোই এবং এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাপি যে মহামারীর আশংকা করা হয়েছিলো তা নাও ঘটতে পারবে। তাই সোয়াইন ফ্লু নিয়ে বেশি আতংকিত হবার কারন নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৪:১০
১১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। একাত্তুর থেকে চব্বিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২০




সমাজকল্যাণ ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। তাদের সুস্থ করতে পারিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটু সৃজনশীল হও=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৬


খেয়ে দেয়ে আরামসে ঘুম, এ জীবন বুঝি
খাও দাও ঘুমাও এ কর্ম রোজই,
টিকটকে ভিডিও, ফেসবুকের রিল,
তাতেই করছো সুখ ফিল?

সাজুগুজু, প্রাশ্চাত্যের ড্রেসাপ, হাই হিলে হাঁটা
ব্যস! এমন অহমে পূর্ণ জীবনে ঝাঁটা
নেই সংসার গুছানোতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকার কি পদক্ষেপ নিবে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২৭


আওয়ামী লীগের মিছিলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকার ডেমরা-উত্তরা- বাড্ডা - মিরপুর সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল করছে। প্রায় তিনমাস ধরে রাস্তায় মিছিল নামানোর প্রস্তুতি ছিলো। মিছিলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবেনাকো তুমি- যেদেশে হাসির জন্যও প্রাণ দিতে হয়!

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩৩

কয়েক দিন আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম হবু চন্দের আইন কবিতা নিয়ে, যেখানে কান্নার বিরুদ্ধে রাজা আইন জাড়ি করেছিলেন.....আজ লিখতে হচ্ছে- হাসির জন্য প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ঘটনা নিয়ে। আমরা সবাই ইতোমধ্যেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

৭১ না দেখেও কেবল ইতিহাস পড়ে যদি আপনি ৫৩ বছর পরে এসেও পাকিস্তানকে ঘৃণা করতে পারেন। তাহলে নিজ চোখে ভারতের আগ্রাসন দেখেও চুপ কেন?

লিখেছেন তারেক সালমান জাবেদ, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

প্রথমেই শুরু করতে চাই সীমান্ত হত্যা নিয়েঃ -
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী দ্বারা ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ সাধারণ ও বেসামরিক বাংলাদেশি হত্যা করা হয়েছে। ভারত সরকারের বাংলাদেশের সীমান্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×