দরজা-জানালা, রাস্তা, সিঁড়ি, দেয়াল-সবই যেন
নীল রঙের চাদরে মোড়া। নীলে ভরা সুন্দর এ
শহরের নাম শেফশেওয়েন। 'নীল মুক্তো' নামে
বিখ্যাত মরক্কোর উত্তরের এ শহরটির
আপাদমস্তক ঢাকা নীল রঙে। তবে শহরের
পুরনো ভাগেই নীল রঙের চল বেশি দেখা যায়।
এদিকটা পরিচিত মেদিনা নামে।
পুরো শহর নীল রঙে এমনিই রাঙানো হয়নি। এর
পেছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। ১৪৭১ সালে গড়ে
ওঠা শেফশেওয়েন শহরে একসময় নানান ধর্মের
মানুষ একসঙ্গে বাস করত। বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ,
বিশেষ করে ১৯৩০-এর দশকে হিটলারের ভয়ে
ইহুদিরা পালিয়ে আশ্রয় নেয় মরক্কোর এ শহরে।
সে সময়ই ইহুদি শরণার্থীরা নিজেদের ঘরবাড়ি
থেকে শুরু করে পুরো শহর নীল রঙে ঢেকে ফেলে।
তাদের কাছে নীল রংটি ছিল আকাশ আর স্বর্গের
প্রতীক। তাই আকাশের নীলটুকু যেন মর্ত্যে
নামিয়ে আনতেই শহরজুড়ে নীলের ছড়াছড়ি।
অবশ্য শহরের সব কিছু নীল রং হওয়ার পেছনে
আরেকটি খুব মজার কারণও থাকতে পারে বলে
মনে করে অনেকে। আর তা মশার হাত থেকে
নিস্তার পাওয়ার একটা চেষ্টা। এর কারণ, মশারা
নাকি টলটলে নীল জল একটুও পছন্দ করে না।
নীল মেদিনা শহর দেখলে আর রাস্তা ধরে হাঁটলে
মানুষেরই যদি নীল সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার
অনুভূতি হয়, তবে মশারা ধোঁকা খেতেই পারে। শুধু
তা-ই নয়, নীল রং দেওয়ায় নাকি ঘরের ভেতরে সব
সময়ই পানির মতো এক ঠাণ্ডা আমেজ বয়ে যায়,
এমনটা দাবি করে মেদিনার লোকজন।
১৯৪৮ সালে বেশির ভাগ ইহুদি ইসরায়েল চলে
গেলেও শহরের নীল রংটি রয়েই যায়। শুধু তা-ই
নয়, প্রতিবছর বসন্তের সময় শহরের বাসিন্দারা
একবার করে পুরো শহরে নীল রঙের প্রলেপ
দেয়। স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকেও শহরের
পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখার সব রকম চেষ্টা করা
হচ্ছে।
নীলের সঙ্গে খানিকটা গোলাপি, হলুদ আর সবুজ
রঙের দেখা মিললেও নীলের রাজত্বে ওগুলো
বড্ড ফিকে। এখানকার বাসিন্দারাও যেন শহরের
রঙের সঙ্গে মিলিয়ে গায়ে নীল রঙের কাপড়
চড়িয়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে।
শহরের নীলে ঢাকা সরু অলিগলি ঘুরতে গেলে মনে
হয়, এ যেন এক গোলকধাঁধা। ৪০ হাজার মানুষের
বসতির শেফশেওয়েন শহরে সারা বছর ধরেই
পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়েরও বড় কারণ এই
নীল রং। অবশ্য শহরের অনাবিল সৌন্দর্য আর
এখানকার মানুষের ব্যবহার এবং খাবারেরও
রয়েছে দারুণ সুনাম।
সংকলিত
www.kalerkantho.com/print-edition/mogoj-dholai+/2015/05/31/227961
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৫ সকাল ৯:৫৬