মূল রচনা -
Click This Link
কমলা দপ্তরে বড়ই শোকে কাতর হইয়াছে আজ । মানব জাতির কপালে শনির রেখা দেখা দিয়াছে । বাঙালীর বর্ণমালা, অক্ষর লইয়া এতদিন টানাটানি চলিয়াছে - ইহাতে আপাততঃ বাঙালীর অগ্রযাত্রা ব্যাহত হইলেও দুনিয়ার অগ্রযাত্রা থামিয়া ছিল না । কিন্তু আজ ইহা সে কি খবর শুনিল । হাজার বছরের পুরনো যে যোগ-বিয়োগ তাহাও নাকি লোকে প্যাটেন্ট করিয়া লইবার চেষ্টা করে!
যোগ-বিয়োগ করা মানুষের অগ্রযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ । আর কোন প্রাণীর সংখ্যার ধারনা আছে কিনা তাহা খুব পরিষ্কার না থাকিলেও উহা যে কেবল কিছু গণনা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাহা পরিষ্কার । মানুষই কেবল ইহাকে বাস্তব থেকে পরাবাস্তব মাধ্যমে লইতে পারিয়াছে এবং প্রাথমিক যোগ-বিয়োগ থেকে উচ্চতর আরো জটিল গণিতের উন্মেষ ঘটাইয়াছে ।
যোগ-বিয়োগ এখন একটি অতীব সরল ব্যাপার - আমরা মানবেরা, শিশু অক্ষর চিনিবার আগেই তাহাকে যোগ-বিয়োগ শিক্ষা দিতে পারি । এই যোগ-বিয়োগ যেখানেই করা হউক না কেন তাহা আসলে মূল ধারণার চেয়ে আলাদা কিছুই নহে । স্থানাঙ্কের হিসাবের সুবিধার্তে যে একটি সংখ্যা হাতে রাখিয়া পরবর্তী ফলের সাথে সামঞ্জস্য করা লাগে ইহা যেকোন কোমলমতি শিশুকে জিজ্ঞাসা করিলেই বলিয়া দিবে । কিন্তু আজ জানিতে পারিলাম এক বাঙালী নাকি কম্পিউটারে এই যোগ-বিয়োগের নিয়ম-রীতির স্বত্বের জন্য দাবিদার হইয়াছেন ।
এই অতি সামান্য ব্যাপার যাহা শিশুরাও বলিয়া দিতে পারে তাহা কীভাবে কেবল কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী করিবার জন্য তিনি নিজের উদ্ভাবন দাবি করিবেন তাহা নিতান্তই আশ্চর্যের ব্যাপার । উদ্বৃত্ত সংখ্যা হাতে ধরিয়া হউক, পায়ে ঠেলিয়া হউক, মাথায় গুঁজিয়া হউক বা খাতার কোনে টুকিয়া রাখিয়া হউক অথবা প্রসেসরের মেমরির কোন লুক্কায়িত প্রকোষ্ঠ হইতে বাহির করিয়া হউক উহাতে মূল যোগ-বিয়োগের পদ্ধতির কোন ব্যত্যয় হয়না ।
যাহাই হউক এতদিন এই কাজ বিদেশী কিছু স্বার্থান্বেষী লোকই কেবল করিত, উহাতে কোনও বাঙালী নাম লিখাইয়া বাঙালী জাতির নামে কলঙ্ক দেয় নাই । বিদেশীরা নির্লজ্জ, স্বার্থান্বেষী জাতি - তাহারা অর্থের জন্য কামড়া কামড়ি করে, ইরাকে হানা দেয়, বাপ-মা ভুলিয়া যায় - এহেন খারাপ কাজ নাই যাহাতে তাহাদের নাম পাওয়া যাইবে না ।
কিন্তু আজ এই খবর শুনিয়া অব্ধি আমার আহার নিদ্রা ঘুম বন্ধ হইয়া গিয়াছে । সুশীল জাতি হিসাবে বাঙালীর নাম মনে হয় মুছিয়া যাইবার উপক্রম হইল । চিন্তা করিয়া দেখুন যোগ-বিয়োগ করিবার পদ্ধতির স্বত্ব দাবি করিয়া তিনি কি চূড়ান্ত ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়াছেন । অতঃপর হয়ত বাজারের হিসাব কষিবার গণক যন্ত্র কিনিলেও উনি আসিয়া লভ্যাংশের দাবিদার হইবেন ।
বাঙালী স্বাধীনচেতা, মুক্ত চিন্তার জাতি । এই সকল অতি সাধারণ বিষয় লইয়া অপরাপর জাতির লোকেরা ব্যবসা করিলে করিতে পারে কিন্তু কোনও বাঙালী কেন তাহা করিবে বা তাহার চেষ্টাই বা কেন করিবে ? ইহা কোকিল কূলে জন্মগ্রহণ করিয়া কাকেদের দলে ভিড়িবার চেষ্টা মাত্র বই নয় ।
তাই আজিকা আমার অনুভব এই খবর শুনিয়া আমাদের সকলের কেবল বসিয়া থাকিলে চলিবে না । আমাদের সকলকেই এম্ববিধ ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে ঝাঁপাইয়া পড়িতে হইবে । সকলের প্রচেষ্টায় আমরা ঐ সকল জন বিরোধী গবেষকদের গবেষণার নামে বর্ণ, বর্ণমালা, পাটীগণিত, বীজগণিত লইয়া খেল তামাশা রুখিয়া দিতে সমর্থ হইব বলিয়া আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।
পুনশ্চঃ এটি একটি রম্য রচনা । এতে তথ্যগত ভুল থাকাই স্বাভাবিক । অতএব এটিকে নিতান্তই আনন্দের খোরাক হিসেবে দেখবার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করছি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:৪৬