somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শের-ই-মহীশূর টিপু সুলতানের কিছু ইতিহাস ।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টিপু সুলতান

টিপু সুলতানের জন্ম হয় ১৭৫০সালের নভেম্ব মাসের ২০তারিখে । তার মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯৯ সালের মে মাসের ৪ তারিখে ।তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তা। তিনি একজন বীর যোদ্ধাও ছিলেন। তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ করতেন। তিনি তাঁর শৌর্যবীর্যের কারণে শের-ই-মহীশূর মহীশূরের বাঘ নামে পরিচিত ছিলেন।

দক্ষিণ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসক ছিলেন টিপু সুলতান৷ পিতা হায়দার আলী মহীশূর রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন৷ শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রামে কাবেরী নদীর একটি ব-দ্বীপে নির্মিত একটি দূর্গ থেকে রাজ্য শাসন করতেন৷ বর্তমানে শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রাম দক্ষিণ ভারতের কর্ণটক রাজ্যের মান্ডিয়া জেলার অন্তর্গত৷ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে যুদ্ধে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে টিপু সুলতানের মৃত্যু হয়। টিপুর এক সেনাপতি মীর সাদিক বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মেলান৷ পরে তার পরিবারের মানুষজনকে ভেলোরের দূর্গে বন্দী করে রাখে ব্রিটিশ শাসকরা৷


শের-ই-মহীশূর

টিপু সুলতানকে ডাকা হতো শের-ই-মহীশূর বলে । আর এ উপাধিটা ইংরেজরাই তাকে দেন। তাঁর এই বাঘ শের হয়ে ওঠার পিছনে অনেকগুলো কারন আছিলো। মূল কারণ ছিলো তার অসাধারণ ক্ষীপ্রতা,, দক্ষতা,, এবং বুদ্ধিমত্তা আর কৌশলপূর্ণ রাজ্য পরিচালনা বাবার সুযোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন তিনি। তার মানে বাবা হায়দার,, ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে টিপু নামে এক ফকিরের দোয়ায় এক পুত্রসন্তান লাভ করেন এবং আনন্দচিত্তে ঐ ফকিরের নামেই ছেলের নাম রাখলেন টিপু। মহীশূরের স্থানীয় ভাষায় কানাড়ী ভাষা । আর টিপু শব্দের অর্থ হলো বাঘ। হয়তো তাকে শের-ই-মহীশূর ডাকার পিছনে এটাও একটা বড় কারণ ছিলো।

ছোটবেলা থেকেই টিপু সুলতান বাঘের গল্প শুনতে অনেক ভালোবাসতেন।তার বাবাই তাকে বাঘের গল্প শোনাতেন। কিশোর বয়সেই টিপু সুলতান বাঘও পুষতে শুরু করেন। বাঘ নিয়ে তাঁর ব্যঘ্রতার শেষ ছিলো না। বাবার মৃত্যুর পর তিনি যখন সিংহাসনে বসলেন তখন বাবার পুরোন সিংহাসনটি টিপুসুলতান পছন্দ করলেন না। তাই টিপু সুলতান সে সময়ের শ্রেষ্ঠ কারিগর দিয়ে কাঠের ফ্রেমের উপর সোনার পাত বসিয়ে তার উপর মণিমুক্তা ও রত্নখচিত একটি সিংহাসন বানিয়ে নিলেন । যাকে বরং ব্যাঘ্রাসন ই বলা যায়।তার কারণ ছিল ঐ আট কোণা আসনটির ঠিক মাঝখানে ছিলো একটি বাঘের মূর্তি। ৮ ফুট চওড়া আসনটির রেলিংয়ের মাথায় বসানো ছিলো সম্পূর্ণ স্বর্ণে তৈরি দশটি বাঘের মাথা এবং উপরে উঠার জন্য ছিলো দুপাশে রূপার তৈরি করা সিঁড়ি। দেখতে পুরো ব্যাঘ্রাসনটাই ছিলো বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা।

টিপু সুলতানের রাজ্যের প্রতীক ছিলো বাঘ। এই বাঘ ছিলো তাঁর অনুপ্রেরণার মতো। তার রাজ্যের পতাকায় কানাড়ী ভাষায় লেখা ছিলো বাঘই ঈশ্বর। তিনি সিংহাসনে বসে মাঝে মাঝেই বলতেন ভেড়া বা শিয়ালের মতো দু'শ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দু'দিন বেঁচে থাকাও সর্ব শ্রেষ্ঠ ও ভালো ।

তার সমস্ত পরিধেয় পোষাক ছিলো হলুদ ও কালো রঙের ছাপানো আর বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা। তিনি যে তলোয়ার ব্যবহার করতেন তার গায়েও ছিলো ডোরা দাগ এবং হাতলে ছিলো খোদাই করা বাঘের মূর্তি। তার ব্যবহৃত রুমালও ছিলো বাঘের মতো ডোরাকাটা। তাঁর রাজ্যের সমস্ত সৈনিকের পোষাকে থাকতো বাঘের ছবি। সৈন্যদের ব্যবহার্য তলোয়ার,, বল্লম,, বন্দুকগুলোর নল,, কুদো,, ও হ্যামারেও আঁকা থাকতো বিভিন্ন আকারের বাঘের প্রতিরূপ কিংবা মূর্তি। এমনকি তিনি তার রাজ্যের প্রধান প্রধান সড়কের পাশেও বাড়ির মালিকদেরকে বাড়ির দেয়ালে বাঘের ছবি আকার নির্দেশ দিতেন। তখনও তার বাঘ পোষার বাতিক যায়নি এবং রাজবাড়িতে বেশ কয়েকটি পোষা বাঘ ছিলো। কয়েকটি বাঘ আবার তার ঘরের দরজার সামনেও বাঁধা থাকতো। ইংরেজ সেনাপতি হেক্টর মুনরোর ও তার বাহিনীর কাছে দ্বিতীয় মহীশূর যুদ্ধে টিপু ও তার বাবা মারাত্মক নাজেহাল হন এবং টিপুর রাজ্যে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতিও হয় । নিহত হয় অনেক সৈন্যও। এমনিতেই তিনি প্রচন্ড ইংরেজ বিরোধী ছিলেন,, তদুপরি এই পরাজয়ে তিনি আরো বেশি তেজদীপ্ত হয়ে ওঠলেন। ঘটনাক্রমে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে হেক্টর মুনরোর একমাত্র পুত্রসুন্দরবনের সাগর দ্বীপে বাঘ শিকার করতে গিয়ে বাঘ আক্রমণে নিহত হয়। এই সংবাদ পেয়ে টিপুর মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। তিনি এই ধারণাটি কাজে লাগিয়ে একটি বিচিত্র খেলনা বানিয়েছিলেন যা সারা দুনিয়ায় টিপুস টাইগারনামে বিখ্যাত হয়ে আছে। ফরাসি যন্ত্রকুশলীদের দ্বারা নির্মিত প্রমাণ আকারের এই খেলনাটিতে ক্লকওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছিলো। খেলনায় দম দিয়ে ছেড়ে দিলে এর সাথে লাগনো একটি অর্গান পাইপ থেকে রক্ত হীম করা বাঘের প্রচণ্ড গর্জন আর এক ইংরেজের প্রচণ্ড গোঙানির আওয়াজ বের হতো। পুরো খেলনাটি ছিলো এরকম একজন ইংরেজ একটি বাঘের থাবার মধ্যে অসহায়ভাবে পড়ে গোঙাচ্ছে আর একটা বাঘ প্রচন্ড আওয়াজ করে সেই ইংরেজের বুকের উপর চেপে গলা কামড়ে ধরতো। তখন ইংরেজটি তার হাত উঠিয়ে চেষ্টা করতো বাঘের মাথাটি এদিক-ওদিক সরিয়ে দিতে। ভিতরকার অর্গান থেকে আরো বেরিয়ে আসতো মহীশূর সুলতানের প্রিয় গজলের সুর। টিপুস টাইগার বানানোর পিছনে একদিকে যেমন ছিলো তার ইংরেজদের প্রতি উষ্মা আবার তেমনি ছিলো অন্যদিকে প্রচন্ড ব্যঘ্রপ্রীতি। সময় পেলেই তিনি বাঘটিতে দম দিতেন কখনও কখনও রাতের পর রাত একই জিনিস দেখে গায়ের জ্বালা মেটাতেন টিপুসুলতান।


টিপু সুলতানের পরিবার

টিপু সুলতানের ৪জন স্ত্রী ও ১৬জন পুত্র এবং কমপক্ষে ৮জন কন্যা সন্তান ছিল। কন্যাদের পরিচিতি অজানাই রয়ে যায়।

টিপুসুলতানের সন্তানের কিছু নাম
১। শাহজাদা হায়দার আলী সুলতান সাহেব
২। শাহজাদা আব্দুল খালিক সুলতান সাহেব
৩। শাহজাদা মুহি-উদ-দীন সুলতান সাহেব
৪। শাহজাদা মু'ইজ-উদ-দীন সুলতান সাহেব
৫। শাহজাদা মি'রাজ-উদ-দীন সুলতান সাহেব
৬। শাহজাদা মু'ইন-উদ-দীন সুলতান সাহেব
৭। শাহজাদা মুহাম্মদ সুবহান সুলতান সাহেব
৮। শাহজাদা মুহাম্মদ শুকরুল্লাহ সুলতান সাহেব
৯। শাহজাদা সারওয়ার-উদ-দীন সুলতান সাহেব
১০। শাহজাদা মুহাম্মদ নিজাম-উদ-দীন সুলতান সাহেব
১১। শাহজাদা মুহাম্মদ জামাল-উদ-দীন সুলতান সাহেব
১২। শাহজাদা মুনির-উদ-দীন সুলতান সাহেব
১৩। মহামান্য শাহজাদা স্যার গুলাম মুহাম্মদ সুলতান সাহেব, কেসিএসআই
১৪। শাহজাদা গুলাম আহমদ সুলতান সাহেব
১৫। শাহজাদা ? সুলতান সাহেব

তথ্যসূত্র পাওয়া

খন্দকার জাহিদ মুরাদ সেপ্টেম্বর ১৯৯২। ইতিহাস:বাঘ ও টিপু সুলতান। নতুন ঢাকা ডাইজেস্ট প্রিন্ট বাংলা ভাষায় ঢাকা।

টিপুসুলতান ও বাঘের বন্ধুত্ব



ছবি গুগল থেকে নেওয়া ।

চাইলে একবার এখান থেকেও কিছু জেনে নিতে পারেন ।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৫:১১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বঙ্গবন্ধু কি শোষক ছিলেন?

লিখেছেন রাজীব নুর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০২



বঙ্গবন্ধু শোষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন অতি সাধারণ মানুষ।
একদম মাটির মানুষ। তার কোনো অহংকার ছিলো না। একটা উদাহরণ দেই। দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু তার বাড়িতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ লাগলে কোন দল কোন পক্ষ নেবে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:২৬

প্রথমেই বলি ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার সম্ভবনা নাই বললেই চলে। কারণ উভয় দেশের অধিকাংশ জনগণ শান্তি প্রিয়। উভয় দেশের কিছু মানুষ এবং মিডিয়া এই সম্ভবনার কথা রটিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে একাধিকবার কনসার্ট আয়োজন এবং হালকা কিছু বকবক....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৯


জুলাই অভ্যুত্থান নিসন্দেহে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিশেষত যারা তরুণ তাদের মধ্যে এক ধরণের নতুন রাজনৈতিক চেতনার বীজ বপন করেছে। এই অভ্যুথানে অসংখ্য লোকের আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেই ট্রেইনি চিকিৎসকরা নিজের বেতন বৃদ্ধির জন্য সড়ক অবরোধ করে তাদের কাছ থেকে সেবা প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৫৬



বেতন বৃদ্ধির দাবিতে চিকিৎসকরা শাহবাগের সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে দেখে এতো লজ্জা লাগলো। গার্মেন্টস শ্রমিকরা অশিক্ষিত তারা রাস্তা বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় করে। চিকিৎসকরা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসিনা দিল্লিকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ করতে বলেছিলেন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৮


ক্ষমতায় থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে ভারতে পালানোর আগে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট সকালে সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে ফোন করে ঢাকার ওপর দিল্লির হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। দিল্লির সহায়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×