তখন ক্লাস ৪ এ পড়ি। ভাড়া করা একটা রিকশা ঠিক করা হলো, যার কাজ ছিল সকাল ৭:৩০ এ আমাকে বাসা থেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, আর ১২:৪০ এ স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় পৌছে দেয়া। স্কুলে যাওয়ার সময় রিকশার হুড তুলে মাথা ঠেকিয়ে ঝিমাতে ঝিমাতে স্কুলে যেতাম। টি.এস.সি/ডাস এর দিকে আসলেই রিকশার হুড ফেলে দিতাম। আকাশ বাতাস দেখতে দেখতে স্কুলে যেতাম। এরপর আসত দেয়াল লিখন। প্রতিদিন একই জিনিষ পড়তে পড়তে স্কুলে যেতাম।
প্রতিদিন একই নিয়মে চলত।
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ আসলেই দেখতাম দেয়ালের একই লেখাগুলোর উপরে রং চড়ানো শুরু হতো। অনেক বছরের অনেক দিনই স্কুল থেকে ফেরার পথে দাঁড়িয়ে দেখতাম কিভাবে কি করে। এরপর রাস্তায় আঁকা, তারপর একুশে ফেব্রুয়ারি আর স্কুল বন্ধ।
২২ তারিখ (যে বছর স্কুল খোলা থাকত) স্কুল যাওয়ার সময় দেখতাম শহীদ মিনার এর সামনে ফুলে ফুলে ভরা। আর ফেরার পথে দেখতাম ঝাড়ু দিচ্ছে। তার পরদিন আবার সব আগের মত। আবার দেয়াল লিখন আস্তে আস্তে ঝাপসা হওয়া।
বলতে দ্বিধা নেই, সেই দেয়াল লিখনের প্রায় সবটাই কোন না কোন সময় বিভিন্ন রচনা বা প্রশ্নের উত্তরে লিখেছিলাম! অন্য স্কুলের ছেলে-মেয়েরা যেটা হয়ত বইয়ে পড়ে, শহীদ মিনারে শিক্ষা সফর করে জানত, তা আমরা স্কুলে যেতে আসতেই শিখে গেছি সেই বয়সেই।
এটাও বলতে দ্বিধা নেই, মনে হতো সারা বছর জুড়ে শহীদ মিনার আর ওই দেয়ালের লেখাগুলো আমাদেরই, আর ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ আসলেই যেন সবার কাঁড়াকাড়ি শুরু হয়। সবাই যে উত্তেজনা নিয়ে শুধু ২১ তারিখে শহীদ মিনারে যায়, পরদিন ততোধিক দ্রুততায় সবাই ভুলে যায়। শুধু ২১ তারিখ ভিত্তিক উত্তেজনা কেন যেন পাইনি কখনো। মনে হতো, বাকি দিনগুলা আমাদের আছে, সেইই ভালো।
(অনুভূতিটুকু একান্তই নিজস্ব)