আমি বাংলাদেশ থেকে বলছি। বলতে গেলে বলতে হয়, এখানে কখনও গণতন্ত্র আসেনি। সেই ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা। কিন্তু, আমারা কি সত্যি স্বাধীন হয়েছিলাম? গণতন্ত্রে নাগরিকদের ভোটাধিকার বলে একটি নিয়ম আছে। আমরা সেই নিয়ম করেই আমাদের শাসক নির্বাচন করি।স্বাধীনতার পরে দেশ শাসনের ভার পড়ল আওয়ামীলীগের হাতে।শুরু হল একদলীয় শাসনতন্ত্র। যাইহোক, এই একদলীয়তন্ত্র থেকে বের হওয়ার জন্যই বোধয় আওয়ামীলীগ থেকে কিছু তরুনেরা বের হয়ে আসল। আর ১৯৭২ সালে গঠন করল জাসদ। যে দলটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল শেখ মুজিবুর রহমানকে। এর নামই তো হওয়া উচিত গণতন্ত্র।
কিন্তু, কোথায় গণতন্ত্র? ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে রচিত হয় এক কালো অধ্যায়। যেন গণতন্ত্রের বুকে ছুরি বিঁধে গেল। গঠিত হল বাকশাল।বাকশাল বাদে অন্যান্য সকল দলের বিলুপ্তি ঘোষণা। বাংলাদেশের জনগণ কি এই স্বাধীনতা চেয়েছিল?
এ বিষয়ে কথা বাড়াব না। এর পর ঘটে গেল অনেক ইতিহাস। কিছু সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হবার পর মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।এই সময়েই চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মোঃ মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (৩ নভেম্বর) হত্যা করা হয়। খালেদ মোশাররফ আসলেন তিন দিনের জন্য। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর ৩ তারিখে তিনি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। এরপর ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর কর্নেল আবু তাহেরর নেতৃত্বে সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংঘটিত হয়, যা খালেদ মোশাররফ সরকারের পতন ঘটায় এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানকে কারামুক্ত করে। আবু তাহের ছিলেন জাসদের গণবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের সরকারের আমলে দায়েরকৃত এক হত্যা মামলায় (ভুয়া মামলা) সামরিক আদালতে তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড (হত্যা বলা চলে) দেয়া হয় এবং ১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই তাঁর ফাঁসী কার্যকর হয়। শাহাদুজ্জামানের "ক্রাচের কর্নেল" বইটি পড়লে আরও ভালভাবে জানতে পারবেন। জিয়াউর রহমানও গণতন্ত্রকে হত্যা করল।জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৩ সালে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন কালে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারীর মাধ্যমে দেশ শাসন করেন।এখনও এই স্বৈরাচার শাসকের বিচার হয়নি, যা গনতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। ডিসেম্বর ৬, ১৯৯০ সালে এরশাদের পতন হল।
এরপর শুরু হল বিএনপিপন্থী আর আওয়ামীলীগ পন্থীদের দেশ শাসন। বাংলাদেশের মানুষ কি কতটুকু স্বাধীনতা পেয়েছে?
অবশেষে, ৫ জানুয়ারি, ২০১৪ সালে হয়ে গেল নির্বাচনের নামে প্রহসন। এরপর মেয়র নির্বাচনগুলোতেও আমরা একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি দেখেছি। আমার ভয় হয়, মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাও কি বাকশালের মত কিছু কায়েম করতে চাচ্ছেন?
লিখলে অনেক লিখা হয়ে যাবে।সংক্ষেপিত করব বলে, অনেক কিছু বাদ দিয়েছি।
অবশেষে কেউ কথা রাখেনি।বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনও কারাগারে।
আমাদের দেশে বিএনপিপন্থী, আওয়ামীলীগপন্থী, বামপন্থীদের অভাব নাই।
কিন্তু, আমার বাংলাদেশপন্থী বাংলাদেশীরা কই?
বাংলাদেশপন্থী বাংলাদেশীরা কই?