somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধবাজ যুক্তরাষ্ট্রঃ শান্তির নামে অশান্তির দূত (পর্ব-২)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯৭২ সালে ভিয়েতনামে তোলা উপরের ছবিটি মনে করিয়ে দেয় সেদিন পৃথিবী কেঁদেছিল।

গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বযুদ্ধ মঞ্চে অন্যতম পরাশক্তিরূপে আবির্ভাব এবং শীতল যুদ্ধ নিয়ে। আর এই পর্বে থাকছে ভিয়েতনাম এবং কোরীয় যুদ্ধ এবং মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কিছু অংশ। যুদ্ধবাজ মার্কিনীরা যুদ্ধ করবেই। জাপানের আত্ন-সমর্পণের পর থেকে নতুন নতুন কাহিনী যুক্ত হতে থাকে ইতিহাসের পাতায়। যার মধ্যে কোরীয় যুদ্ধ অন্যতম। আর এই যুদ্ধকে শীতল যুদ্ধের (Cold War) অংশ মনে করা হয়।
কোরীয় যুদ্ধঃ
১৯১০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত জাপানী সাম্রাজ্য কোরীয় উপদ্বীপ শাসন করে। আর জাপানের পরাজয়ের পর, মিত্রশক্তিরা কোরীয় উপদ্বীপটিকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। মার্কিন প্রশাসন উপদ্বীপটিকে ৩৮তম সমান্তরাল রেখায় ভাগ করে, এর মধ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনী দক্ষিণ অর্ধেক নিজেদের দখলে আনে এবং সোভিয়েত সশস্ত্র বাহিনী উত্তর অর্ধেক অধিকারে আনে।একপাশে মার্কিনীদের সহায়তায় গড়ে উঠে ডানপন্থী সরকার। আর অন্যপাশে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় গঠিত হয় সাম্যবাদী সরকার। যার ফলে দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক ভাগের সৃষ্টি হয়। ফলে একসময় দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বার বার আলোচনা ভেস্তে যায়। অবশেষে সময়কাল ১৯৫০ সালের ২৫ শে জুন উত্তর কোরিয়া দক্ষিন কোরিয়া আক্রমন করে।রাশিয়া জাতিসংঘের অধিবেশন ত্যাগ করে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের কাছ থেকে কোরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের অনুমোদন পাশ করায়। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিন কোরিয়ার হয়ে যুদ্ধে নেমে পড়ে। যাইহোক, কাজে অথবা অকাজে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করবেই।যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে করেছিল শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য।যার ফলে যুদ্ধ মঞ্চে প্রবেশ করে চীন। রাশিয়া রসদ দিয়ে সাহায্য করে। আর কোরীয় যুদ্ধ মারাত্নক রূপ নেয়। সবদিকে যেন লাশের মিছিল।


এই শিশুগুলো কেন ভুক্তভুগি বলতে পারেন। ওরা যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম্রাজ্যবাদী লড়াইয়ের আগুনের শিকার। সামরিক ক্ষয়ক্ষতির কথা বাদই দিলাম। এই যুদ্ধে হতাহত হয় প্রায় পঁচিশ লক্ষ বেসামরিক মানুষ। এর জবাব কে দেবে?প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সৈন্য নিখোঁজ হয়। তাদের কবর হয়ত উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
অবশেষে, প্রায় তিন বছর পর, দুই কোরীয়ার মধ্যে যুদ্ধ বিরিতি সাক্ষর হয়। অনেকটা সংক্ষেপিত ভাবে শেষ করলাম কোরীয় যুদ্ধের ইতিকথা। যুদ্ধ যেন শেষ হয় না। সবাই তো আর মার্কিনীদের বিরুদ্ধে সামরিকভাবে যুদ্ধে নামতে পারে না। আনেকে তো শোষিত হচ্ছে তো হচ্ছেই। যাই হোক, চলে যাই ভিয়েতনাম যুদ্ধে। ১৯৫৯ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধ সংঘঠিত হয়।

ভিয়েতনাম যুদ্ধঃ
ভিয়েতনামের সাধারন মানুষের যেন আর মুক্তি নেই। দীর্ঘ আট বছরের যুদ্ধ শেষে ভিয়েতনামীরা ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে।এরপর ভিয়েতনামকে সাময়িকভাবে উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম - এই দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়।উত্তর ভিয়েতনামে সাম্যবাদী সরকার গঠিত হয় এবং দক্ষিন ভিয়েতনামে সাম্যবাদ বিরোধীরা ডানপন্থী সরকার গঠন করে।ডানপন্থী সরকার গঠনে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করে। আর সাম্যবাদীরা চেয়েছিল সমগ্র ভিয়েতনামে একক সাম্যবাদী সরকার গঠন করতে। আবার আম্রিকা। যুক্তরাষ্ট্রের মদদ পুষ্ট দক্ষিন ভিয়েত্নামের সরকার নিপীড়নমূলক আচরণ শুরু করে। আর এই নিপীড়নমূলক আচরণের প্রতিবাদে দক্ষিণ ভিয়েতনামে আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৬০ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করা হয়।১৯৬০-এর দশকের শুরুতে ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। মার্কিনীদের জড়িয়ে পরার কারন কী জানেন? মার্কিনীদের "ডমিনো তত্ত্ব" ।ওদের এই তত্ত্বগুলোই সমগ্র বিশ্বে আগুন লাগানোর জন্য যথেষ্ট। এসব বিষয়ে পরে আলোচনা করব। চলে যাই যুদ্ধে।ধরতে গেলে ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল, এই ব্যপক সময় নিয়ে চলে ভিয়েতনামের যুদ্ধ। শান্তি চুক্তির লক্ষ্যে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে প্যারিসে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একটির পর একটি ভেস্তে যায়। একদিকে সামরিক বাহিনী অন্য দিকে সাধারন জনগণ । এই যুদ্ধ যেন থামার নয়।তবুও, ২৩ জানুয়ারি, ১৯৭৩ সালে প্যারিসে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু, কিছুদিন পর উভয় পক্ষই চুক্তি ভঙ্গ করে। আবারও, রক্তপাত। ভুক্তভুগী সাধারন মানুষ। তৎকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার আলোচনা চালাতে থাকেন। অবশেষে, ১৩ জুন, ১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর ভিয়েতনাম যৌথভাবে প্যারিস চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাক্ষর করে। শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে সাম্যবাদী শাসনের অধীনে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়। ১৯৭৬ সালে এটি সরকারীভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। এই যুদ্ধে প্রায় ৩২ লক্ষ ভিয়েতনামি মারা যান। এর সাথে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ লাও ও ক্যাম্বোডীয় জাতির লোক মারা যান। মার্কিনীদের প্রায় ৫৮ হাজার সেনা নিহত হন।যুদ্ধ যেন মৃত্যুর দূত হয়ে আসে।

এখন আর যুদ্ধের কাহিনী লিখব না। যুদ্ধ আর ভাল লাগে না। সামনে যাওয়ার আগে চলুন ঘুরে আসি। ঘুরে আসি মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারার হাত ধরে।
চে একজন বিপ্লবীর নামঃ


চলুন মোটর সাইকেলে করে ভ্রমনে বের হই লাতিন আমেরিকার পথে পথে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র চে।১৯৫১ সালে লেখাপড়ায় এক বছর বিরতি দিয়ে আলবার্টো গ্রানাডো নমক এক বন্ধুকে সাথে করে মোটর সাইকেলে দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমনে বেরিয়ে পড়েন যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পেরুর সান পেবলোর লেপার কলোনিতে (কুষ্ট রোগীদের জন্য বিশেষ কলোনি) স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে কয়েক সপ্তাহ কাজ করা| তিনি লেপার কলোনিতে বসবাসকারী মানুষের মাঝের ভাতৃত্ব ও সহচার্য দেখে অভিভূত হন| এই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর ডায়েরীতে(The Motorcycle Diaries,) তিনি লিখেছেন, ‘মানব সত্ত্বার ঐক্য ও সংহতির সর্বোচ্চ রুপটি এসকল একাকী ও বেপরোয়া মানুষদের মাঝে জেগে উঠেছে’। তার এই দিনলিপি নিউয়র্ক টাইমস এর বেস্ট সেলার এবং পরে একই নামে(The Motorcycle Diaries,)চলচিত্র বের হয় যা পুরস্কৃত হয়েছিল।লাতিন আমেরিকার পথে পথে তিনি সাধারন মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখতে পান। তিনি এর থেকে উত্তরনের পথ খুঁজতে থাকেন। এই ভ্রমণ তাকে নিয়ে যায় আর্জেন্টিনা, চিলি, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, পানামা ও মিয়ামির মধ্য দিয়ে বুয়েন্স আয়রেস এর দিকে।ভ্রমণের শেষ দিকে তিনি এই মত পোষণ করেন যে, দক্ষিণ আমেরিকা আলাদা আলাদা দেশের সমষ্টি নয় বরং এক অভিন্ন অস্তিত্ব যার প্রয়োজন মহাদেশ ব্যপী স্বাধীনতার জাগরণ ও স্বাধীনতার পরিকল্পনা। পরবর্তিতে তাঁর নানা বিপ্লবী কর্মকান্ডে এই একক, সীমানাবিহীন আমেরিকার চেতনা ফিরে আসে বার বার। এবং তার এই চেতনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।১৯৫৪ সালের শুরুর দিকে গেভারা মেক্সিকো শহরে পৌছান এবং সদর হাসপাতালে এলার্জি বিভাগে চাকুরি করেন। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে তার বন্ধু নিকো লোপেজ রাউল কাস্ত্রোর সাথে তার পরিচয় করান এবং পরে তার বড় ভাই ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে পরিচিত হন।কাস্ত্রোর সাথে তার প্রথম সাক্ষাতে দীর্ঘ আলাপচারিতা হয় এবং চে বলেন যে কিউবার সমস্যা নিয়ে তিনি চিন্তিত।তারপর তিনি ২৬শে জুলাই আন্দোলন দলের সদস্য হন।সেই সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদের ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন এই আগ্রাসি তত্পরতার আশু সমাপ্তি প্রয়োজন।
চে চেয়েছিলেন মেক্সিকো থেকে সরাসরি কিউবা আক্রমণ করবেন। তারা মেক্সিকো যাওয়ার পর বাধার স্মমুখীন হন। বেশীরভাগ সহযোদ্ধা বন্দী হয়। ২২ জন সহযোদ্ধা বেঁচে থাকেন। অবশেষে, ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি বাতিস্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং কিউবায় একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তন করেন। এবং ১৯৬০-এর দশকে কাস্ত্রো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এরপর চে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চে কিউবার শিল্প বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। এসময় তিনি কিউবার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে আলজিয়ার্স সফরকালে সোভিয়েত সরকারকে সাম্রাজ্যবাদের দোসর আখ্যা দেয়ার ফলে দেশে ফেরার সাথে সাথে তার মন্ত্রীত্ব বাতিল হয়।এরপর তিনি কূটনীতিক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। তিনি কিউবার প্রতিনিধি হয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান করার জন্য নিঊয়র্ক শহরে যান। ১১ ডিসেম্বার জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ১৯তম অধিবেশনে আবেগ অভিভূত বক্তৃতায় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিগত বৈষম্যের কঠোরনীতি দমনে জাতিসংঘের দুর্বলতার কথা বলেন।এটাকে বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের কোন পদক্ষেপ আছে কি না জানতে চেয়ে প্রশ্ন তোলেন। গুয়েভারা তখন নিগ্র জনগনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করেন। ক্রোধান্বিত গুয়েভারা ‘সেকেন্ড ডিক্লেরেশন অব হাভানা’(হাভানা কিউবার রাজধানী) নামক একটি আবেগপূর্ণ ঘোষণার উল্লেখ করে তার বক্তৃতা শেষ করেন। তিনি বলেন যে তার এই ঘোষণার জন্ম হয়েছে ক্ষুধার্ত জনগন, ভূমিহীন কৃষক, বঞ্চিত শ্রমিক ও প্রগতিশীল মানুষের দ্বারা । বক্তব্যের শেষ করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, সারা বিশ্বের শোষিত জনগোষ্ঠীর একমাত্র চিৎকার এখন,হয় স্বদেশ অথবা মৃত্যু।

এরপর তিনি আবার তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসেন। বিপ্লবীরা তো বিপ্লব করবেই। তিনি যোগ দেন কঙ্গোর স্বাধীনতা সংগ্রামে। সেখে তিনি এক বিপ্লবী ব্যাটালিয়নের দায়িত্বে ছিলেন। চে তখন নিখোঁজ হিসেবে ছিলেন। লোকজন তার কথা জানত না। এরপর তিনি বলিভিয়ার বিপ্লব শুরু করেন। আর জীবনের শেষ সময়গুলো সেখানেই থাকেন। আর তার মৃত্যুর শেষ তিন মাসে লিখেন, তার বিখ্যাত লিখা। যা "চে গুয়েভারার ডায়েরী" নামে পরিচিত। তিনি তার জীবনের শেষ দিনগুলোকে আটকে দেন ডায়রীর পাতায়।

বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে তারা গুয়েভারাকে ৭ অক্টোবর গ্রেফতার করে এবং তার মৃত্যু হয় ৯ অক্টোবর ১৯৬৭ সাল বেলা ১.১০ টায়।মৃত্যুর এ সময়কাল এবং ধরণ নিয়ে মতভেদ এবং রহস্য এখনো আছে। ধারণা করা হয় ১৯৬৭ সালের এই দিনটিতে লা হিগুয়েরা নামক স্থানে নিরস্ত্র অবস্থায় নয়টি গুলি করে হত্যা করা হয় বন্দী চে গেভারা। পরে বলিভিয়ার সেনাবাহিনী ঘোষণা করে যে বন্দী অবস্থায় নয়টি গুলি চালিয়ে সেই আর্জেন্টাইন ‘সন্ত্রাসবাদী’কে মেরে ফেলতে পেরেছে এক মদ্যপ সৈনিক। তবে আরেকটি মতামত হচ্ছে এই দিন যুদ্ধে বন্দী হলেও তাকে এবং তার সহযোদ্ধাদের হত্যা করা হয় কিছুদিন পর। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন প্রতিবেদনে পরবর্তীতে এইসব দাবির সপক্ষে কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সে সময় লিখেছিল,

‘একজন মানুষের সঙ্গে সঙ্গে একটি রূপকথাও চিরতরে বিশ্রামে চলে গেল।’

চে বিশ্রামে চলে গেছেন। কিন্তু, তিনি রেখে গেছেন তার অনুসারীদের। তিনি তাদের মাঝেই বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন।
চে গুয়েভারারা শান্তি পাবেন তখনই, যখন সাম্রাজ্যবাদীদের পতন ঘটবে।
ক্ষমা করবেন।যুক্তরাষ্ট্রের কাহিনী লিখতে লিখতে চে এর মধ্যে চলে গিয়ে ছিলাম।


চলুন, শুরু করি হান্টিংটন তত্ত্বঃ


উপরের ছবিটি স্যামুয়েল পি. হান্টিংটনের।
এমনিতেই সারা বিশ্ব যুদ্ধের আগুনে পুড়ছে। তার মধ্যে পাশ্চাত্যের বিশিষ্ট্য চিন্তাবিদ স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন তত্ত্ব দিলেন।তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রসিদ্ধ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। তিনি নব্বইয়ের দশকে 'সভ্যতার সংঘাত' (clash of civilizations) তত্ত্বের জন্ম দেন। যা ১৯৯৩ সালে সভ্যতার সংঘাত নামে তার একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে৷যেটি পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর ১১-র সন্ত্রাসী হামলার পর তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। আমেরিকার এই চিন্তাবিদ মনে করেন আদর্শিক বা মতবাদের দ্বন্দ্ব ও অর্থনৈতিক লড়াইয়ের দিন শেষ হয়ে গেছে, ভবিষ্যত বিশ্বের মূল লড়াইটা হবে সংস্কৃতির লড়াই৷তিনি মনে করেন, ইসলামী সংস্কৃতি যুক্তরাষ্ট্রের উপর ভর করবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হল, শত্রু সৃষ্টির আগে তাকে শেষ করে দেওয়া। আর তাই যুক্তরাষ্ট্র ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর উপর আগ্রাসন শুরু করল।
ইরাক যুদ্ধের সময় অনেক ইউরুপের দেশ যুদ্ধের বিরোধিতা করে।এ বিষয়ে হান্টিংটন স্বীকার করেছেন যে ইউরোপের এই বিরোধীতার বিষয়টিকে সভ্যতার মধ্যে সংঘাতের তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়৷ কারণ ইউরোপ পশ্চিমা সভ্যতার একটি অংশ হিসেবে ইরাক যুদ্ধের বিরোধীতা করেছে৷ হান্টিংটনের মতে এক্ষেত্রে ক্ষমতার কাঠামো সভ্যতা ও সংস্কৃতির ওপর বিজয়ী হয়েছে, তবে এটা সাময়িক ব্যাপার মাত্র৷ হান্টিংটন নিজ তত্ত্ব উপস্থাপনের মাধ্যমে পশ্চিমা লিবারেলিজম বা কথিত উদারনৈতিক মতবাদের সাফাই দেয়ার এবং তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন।২০০৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্যামুয়েল পি. হান্টিংটনের প্রয়াণ ঘটে। হয়ত তার তত্ত্বদ্বারা ইরাকের সাথে যুদ্ধের সূচনা ঘটেছিল।
মানুষ মারা যায়। কিন্তু, যুদ্ধ শেষ হয় না। আবার আসব আগামী পর্বে।সাথে থাকবে প্রতিবাদ।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, চে গুয়েভারার ডায়েরী[চাইলে বইটি পড়তে পারেন] ছবি গুগল থেকে নেওয়া ইত্যাদি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১০
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সরকার কেন ফেইল করবে? ইউনুস সরকার কি কি ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে?

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৬

১। উপদেষ্টা পরিষদে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ঘরানা অ্যাপ্রুভড এমন সব লোকজনকে রাখা হয়েছে যাদের বয়স ৭০ এর ওপরে, এবং যাদের তেমন কোনো রাজনৈতিক ডিরেকশন, অভিজ্ঞতা বা এম্বিশন নেই। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইনকিলাব জিন্দাবাদ থেকে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:১৮

'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' থেকে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ'....

বৃটিশদের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বৃটিশ-ভারতের স্বাধীনতাকামী মানুষের স্লোগান ছিলো- "ইনকিলাব জিন্দাবাদ", / “করেংগে-ইয়-মরেংগে"।

পাকিস্তান প্রত্যাশীদের শ্লোগান ছিলো- "হাত মে বিড়ি, মুমে পান, লাড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান"- যদিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ফুলের মত সুন্দর স্বচ্ছ রাখুন মন= (ছB Bloগ)

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৮

০১।



=ভাইবোনেরা বন্ধু ও সখিরা=
এসো আড্ডা বসাই, গা ছুঁয়ে রই, ঝুমকো ফুলের মত
গল্প করি মেয়েবেলার, সুখ যা হয়েছে গত
এসো কাছে ও সখীরা, কোথায় তোমরা আছো,
একলা একা বিষণ্ণতা তাই নিয়ে কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মনে হচ্ছে, ভোটের রাতে ট্রাম্প অগ্রিম বিজয় ঘোষণা করবে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৬



২০২০ সালের ভোটে পরাজিত হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প ও তার লোকজন এবারের ভোটে জয়ী হওয়ার জন্য ৩য় বিশ্বের দেশগুলোর মতো ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। আজকে ভোট হলে, ট্রাম্পের জয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

দৃষ্টি আকর্ষন।

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২২

প্রিয় ব্লগার,

একজন নারী ব্লগারকে ক্রমাগত ইঙ্গিতপূর্ণ ও অশালীন মন্তব্য করার জন্য সুপরিচিত ব্লগার এবং কবি সেলিম আনোয়ারের ব্লগিং সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। লিখিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং প্রমাণের ভিত্তিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×