(এ সেই নবুওত এবং ইমাম মাহদী একই সাথে মাসীহ ইবনে মরিয়ম হবার দাবিদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী [মৃত : ১৯০৮ সাল, ভারতের পাঞ্জাবে)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
শুরুকথা - ইসলামি বিশ্বাস হচ্ছে সেই বিশ্বাস, যেটি পবিত্র কুরান এবং সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যুগ যুগ ধরে মুসলিম উম্মাহা'র শ্রেষ্ঠতম ও বরেণ্য মুহাক্কিক, মুহাদ্দিস এবং মুফাসসীরগণের ইজমা (ঐক্যমত্য) যার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। যদ্দরুন আসলাফের বিপরীতে ভিন্ন মত ও বিশ্বাসের যে কেউ ইসলাম থেকে খারিজ হিসেবে গণ্য হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তখন যতই যুক্তি দেয়া হবে, যতই দাবি করা হবে সে মুসলিম বা কুরান হাদিসকে বেঁকিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে যতই নিজেদের সঠিক প্রমাণ করা হবে, তাতে বিন্দুমাত্র কাজ হবেনা। কারণ সালফে সালেহীনের বিপরীতে ও ইজমার বিরুদ্ধে কারো নতুন কোনো ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়।
মুসলিমদের সাথে কাদিয়ানিদের বিশ্বাসের পার্থক্য :
মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (মৃত : ১৯০৮ ইং) ভারতের একজন বাসিন্দা। ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন নবী দাবিদার। অত্যধিক ধুর্ত ও কপট প্রকৃতির ব্যক্তি। বৃটিশ সরকারের অন্যতম তাবেদার। এ ব্যক্তি নিজেকে কখনো মুজাদ্দিদ, কখনো মাহদী, কখনো ঈসা ইবনে মরিয়ম আবার কখনো নবী দাবি করেছিল। বৃটিশ সরকারের খাহেশ বাস্তবায়ন করার জন্য ইসলামের আইন-আদালতকে মনগড়া ব্যাখ্যা দিত। ১৮৯১ সালে সর্বপ্রথম সে প্রতীক্ষিত মাহদী দাবি করে। যা মিথ্যা এবং স্বজাতির সাথে সুস্পষ্ট প্রতারণা। প্রতীক্ষিত মাহদী তিনি কেমন হবেন তার আলামত সহিহ হাদিসগুলোতে বিধৃত হয়েছে।
(উপরে পিকচারে দেখুন)।
মূল আলোচনা :
চরম স্ববিরোধী মতাবলম্বী কাদিয়ানী জামাত এমন একটি গোষ্ঠী, যাদের আকিদার সাথে প্রকৃত ইসলামি আকিদার কোনো সম্পর্ক নেই। তারা ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে এমন কিছু মতবাদে বিশ্বাসী যা পুরোই মনগড়া এবং নবুওত এর দাবিদার মির্জা গোলাম কাদিয়ানি থেকে দ্বার করা। মজার ব্যাপার হল, মির্জা কাদিয়ানির লেখিত পুস্তকগুলোতে অহরহ স্ববিরোধী কথাবার্তা পাওয়া যায়। যেমন মির্যা কাদিয়ানী কোথাও নিজেকে নবী দাবি করে লিখেছে :
براہین احمدیہ میں ہی خدا نے انکا نام نبی اور رسول رکہا ہے، فرمایا کہ خدا تعالیٰ کی وہ جو پاک وحی جو. میرے پر نازل ہوتی ہے.
তথা... 'বারাহীনে আহমদিয়া'র মধ্যে খোদাতায়ালা উনার (মির্যা) নাম নবী এবং রাসূল রেখেছেন। ইরশাদ হয়েছে যে, খোদাতায়ালার পবিত্র ওহী আমার উপর নাযিল হয়।' (বারাহীনে আহমদিয়া : ৪৯৮ দ্রষ্টব্য)। মির্যা কাদিয়ানী তার অন্য আরেক জায়গায় নিজেকে 'রাসূল' দাবি করে লিখেছে :
تو بہی ایک رسول ہے جیسا کہ فرعون کی طرف ایک رسول بہیجا گیا تھا.
অর্থাৎ তুমিও একজন রাসূল, যেরকম ফেরাউনের নিকট একজন রাসূলকে প্রেরণ করা হয়েছিল।' (সূত্র - মালফূজাত : ৮/৪২৪; লেখক মির্যা কাদিয়ানী)। তার ঊর্দূ বইয়ের স্কিনকপি তুলে দিলাম। তার 'রাসূল' দাবি করার প্রমাণ এখানে দেখুন -
আবার কোথাও স্ববিরোধিতা করে লিখেছেন : 'মুহাম্মদ আঁ-হযরত (সা)-এর পর যে নিজেকে নবী দাবি করবে আমি তাকে অভিশপ্ত এবং কাফির মনে করি (মাজমু'আ ইশতিহারাত ১/২৩০-৩১ দ্রষ্টব্য)। এবার মির্যা সাহেব নিজের ফতুয়াতে নিজেই অভিশপ্ত আর কাফির/চির জাহান্নামি হলেন কিনা? এমতাবস্থায় তার অনুসারি 'আহমদি/কাদিয়ানিরা' তাকে কাফির স্বীকার না করার যুক্তি কোথায়? প্রমাণের জন্য তারই লেখিত ঊর্দূ বইয়ের পৃষ্ঠাটি তুলে দিলাম।
স্কিনশট দেখুন
প্রিয় পাঠক! এ সেই ব্যক্তি যাকে 'আহমদিয়া মুসলিম জামাত' নামধারী কাদিয়ানিরা কথিত ইমাম মাহদী বিশ্বাস করে। আপনার ক্ষুদ্র বিবেককে প্রশ্ন করুন, এ ব্যক্তি নবুওত দাবি করে নিজের ফতুয়াতে নিজেই যেখানে কাফির, সেখানে সে ইমাম মাহদী হয় কিভাবে?
সহীহ হাদিসে নবুওত এবং রেসালতের দ্বার বন্ধ ঘোষণা :
সহীহ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে - রাসূল (সা) বলেছেন : নিশ্চয় নবুওত এবং রেসালত বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমার পরে কোনো নবুওত নেই, রেসালতও নেই। (তিরমিযি শরীফ)
নবীপ্রেমিক তাওহিদী বন্ধুরা! এখানে ভণ্ড কাদিয়ানী জামাতের জঘন্যতম কিছু বদ-দ্বীনি আকিদা ও ইসলাম বিরুধী আকিদার ফিরিস্তি তুলে ধরব। ফলে ইসলাম এবং কাদিয়ানিজম দুটো ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ হিসেবে সবার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
১- কাদিয়ানিদের আকিদা : - তাদের বিশ্বাস হল, মুহাম্মদ (সা)-এর পরে আর কোনো নবী নেই- এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নতুন শরিয়তি নবী নেই কিন্তু নতুন অ-শরিয়তি নবী আছে। যেমন ১৯০১ সালে নবুওত এর দাবিদার মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী একজন অ-শরীয়তি নবী ও উম্মতি নবী। (নাউজুবিল্লা)
খণ্ডনমূলক জবাব : এ জন্যই তো চির হতভাগা মির্যা কাদিয়ানী নিজের ফতুয়াতে নিজেই কাজ্জাব এবং কাফির ও অভিশপ্ত সাব্যস্ত হল। মির্যা সাহেব সম্পর্কে তার অনুসারিরা সত্য প্রকাশ করতে চায় না। যদি আসল সত্য প্রকাশ পায় তাহলে পাবলিক তাদের দেশছাড়া করবে তাতে সন্দেহ নেই। মির্যা সাহেব, নিজেকে 'রাসূল' দাবিও করেছে এবং রাসূলের সংজ্ঞাও দিয়েছে। যেমন সে লিখেছে-
حسب تصريح قرآن کریم، رسول اسی کو کہتے ہیں جس نے احکام و عقائد دین جبرائیل کے ذریعہ حاصل کئی ہوں لیکن وحی نبوت پر تو تیرہ سو برس سے مہر لگ گئی ہے، کیا یہ مہر اس وقت ٹوٹ جائے گی؟ ازالہ اوہام 3/387
অর্থাৎ কুরানুল কারীমের সুস্পষ্ট বর্ণনামতে রাসূল তাঁকেই বলবে যিনি জিব্রাইলের মাধ্যমে শরীয়তের বিধানাবলী এবং দ্বীনি আকিদা বিশ্বাস অর্জন করবেন। কিন্তু ওহীর উপর তো তের শত বছর ব্যাপী মোহর (সীল) লেগেই আছে। এ মুহূর্তে কি সেই মোহর (সীল) ভেঙ্গে যাবে?? (ইযালাতুল আওহাম : ৩/৩৮৭) এমতাবস্থায় বলা যেতে পারে যে, মির্যা 'রাসূল' দাবী করে আদতে নতুন শরীয়তী নবী ও রাসূল হওয়ার দাবি করেছেন। এতে কাদিয়ানী জামাত যে ভিন্ন আরেকটি ধর্মের অনুসারী তা পরিষ্কার হতে আর কী লাগে?
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, শেষোক্ত কথা দ্বারা মির্যা গোলাম আহমদ যেন নিজ নবুওত দাবিকেও অস্বীকার করল। এভাবে মির্যার স্ববিরোধী কথাবার্তার অন্ত নেই। তাই অসংখ্য কাদিয়ানী মুবাল্লিগ ও মুবাহিস পর্যন্ত কাদিয়ানিয়ত ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করা শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে শায়খ রাহিল আহমেদ জার্মানি, মির্যা মাসরূর আহমেদের রেদ্বায়ী ভাতিজা মির্যা শামসুদ্দিন লাহোর, ইরফান মাহমুদ বাট প্রমুখ অন্যতম। এবার একটি সহীহ হাদিস থেকে দেখুন।
হযরত রাসূলেপাক (সা) ইরশাদ করেছেন : "...সা-ইয়াকূনু ফী উম্মাতি কাজ্জাবূনা দাজ্জালূনা, কুল্লুহুম ইয়ায'আমু আন্নাহু নাবিয়্যুন, ওয়া আনা খাতামুন নাবিয়্যীন লা নাবিয়্যা বা'দী।" অর্থাৎ...অচিরেই আমার উম্মতের মধ্য থেকে ত্রিশজন এমন মিথ্যাবাদী এবং দাজ্জালের প্রকাশ পাবে তাদের প্রত্যেকে নবুওত এর দাবি করবে। অথচ আমি শেষনবী আমার পরে আর কোনো নবী নেই। [তিরমিযি শরিফ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৫; মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ২১৮৮৯]
২- কাদিয়ানিদের আকিদা : পবিত্র কুরানের সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতে হযরত ঈসা (আ) সম্পর্কে আল্লাহ'র বাণীকে অপব্যাখ্যা দিয়ে কাদিয়ানিরা বলে : 'রাফা'আহুল্লাহু ইলাইহী' এর ভেতর "রাফা'আ" (رفع) মানে আকাশে উঠিয়ে নেয়া নয়, বরং 'মর্যাদা উন্নীত' করা বুঝানো হয়েছে। (নাউজুবিল্লা)।
খণ্ডনমূলক জবাব : (১) রাফা'আ অর্থ (উপরে উঠানো)। ইংরেজীতে He was raised তথা তিনি তুলে নেন। (অনূদিত, ডক্টর ইউছুফ আলী)। (২) কুরানের সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াত দ্বারা বুঝানো হচ্ছিল, কাফিররা তাঁকে (ঈসা) হত্যা করতে এসেছিল। ইমাম ইবনে কাসীর রহঃ তিনি তাঁর তাফসীর কিতাবে লিখেছেন যে, ইহুদীরা তাঁকে হত্যার জন্য যখন তাঁর বাড়ী ঘিরে রেখেছিল তখন তিনি তাঁর একজন হাওয়ারী (সাহাবী)-কে বললেন, কে আছ যাকে আমার চেহারার মতো করে দেয়া হবে......? অতপর আল্লাহ তায়ালা তখন তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। তারপর কাফিররা তাঁর সেই সাহাবীকে হত্যা করে আনন্দ করছিল যাকে তাঁর মতো করে দেয়া হয়েছিল (দ্রষ্টব্যঃ আলে ইমরান : ৫২ এবং ৫৩)।
এখানে ১৫৮ নং আয়াতে সমাধান দেয়া হচ্ছে, যেহেতু ১৫৭ আয়াতে বলা হচ্ছে তাঁকে হত্যা করা হয়নি, শূলেও চড়ানো হয়নি, তাহলে তাঁকে কী করা হয়েছিল? সেখান থেকে তিনি কীভাবে রক্ষা পেলেন? সম্মানের দিক থেকে উন্নীত করানো বুঝালে তাঁকে আল্লাহ কীভাবে রক্ষা করলেন তখন তা বড়সড় প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়াবে কিনা? উত্তর কোথায়?? এছাড়া ১৫৮ নং আয়াতে ‘সম্মানের দিক থেকে উন্নীত (রাফা'আ)’ বুঝানোর দরকারই বা কী, যেখানে তিনি কীভাবে বেঁচেছিলেন তাঁর সমাধান দেয়া হচ্ছে?
ব্যাপারটা এ রকম যে, কারো বাসায় আগুন লেগেছে এবং সেখানে একজন মানুষ আটকা পড়েছে আর আপনি তার উদ্ধারের ব্যবস্থা না করে, বরং তাঁকে মোবাইল করে বলছেন, 'তোমার মান-সম্মান বৃদ্ধি করা হয়েছে, তোমার নামে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে দেয়া হবে' এমন নয় কি? আল্লাহ এখানে সমাধান দিচ্ছেন যে, তিনি তাঁকে কীভাবে ইহুদীদের হত্যাকান্ড থেকে রক্ষা করেছেন! “বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে উঠিয়ে (রাফা’আ) নিয়েছেন, আল্লাহ পরাক্রমশালী” (সূরা নিসা-১৫৮)। সুবহানআল্লাহ। এখানে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তিনি পরাক্রমশালী। তাঁর পক্ষে ঈসাকে আকাশে তুলে নেয়া কোনো ব্যাপারই না।
(৩) رفع (রাফা'আ) এর صلة (ছিলাহ) যখন ظرف (স্থান/সময়) কিংবা ظرف এর অর্থপ্রদানকারী হবে এবং مفعول به তথা কর্মপদ شيئ -(বস্তুবাচক) হবে, তখন 'রাফাআ' এর প্রকৃত অর্থ নিতে হবে - উপরে উত্তোলন করা/উপরে উঠানো। যেজন্য সকল মুফাসসীর এ আয়াত দ্বারা ঈসাকে উপরের দিকে (আকাশে) উঠিয়ে নেয়া বুঝিয়েছেন। কুরানের একাধিক আয়াত এবং সহীহ হাদিসে এর পক্ষে যথেষ্ট ক্বরীনা বা প্রমাণ বিদ্যমান। পবিত্র কুরানের সূরা বাকারা'র ৬৩ এবং ৯৩ নং আয়াতে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহতালা এরশাদ করেন -
و اذ اخذنا ميثاقكم و رفعنا فوقكم الطور
অর্থাৎ স্মরণ কর, যখন তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তূর পর্বতকে তোমাদের ঊর্ধ্বে উত্তোলন করিয়াছিলাম।" সিয়াহ সিত্তার অন্যতম 'সুনানে নাসায়ী' কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪০ নং পৃষ্ঠায় হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) হতে বর্ণিত আছে, أنه رأى النبي صلى الله عليه وسلم : اذا افتتح الصلاة رفع يديه حتى تكاد ابهامه تحاذى شحمة أذنيه অর্থাৎ তিনি দেখেছেন, নবীকরিম (সা) যখন নামায শুরু করতেন তখন উভয় হাত এতো উত্তোলন করতেন যে, প্রায় কানের লতি বরাবর হয়ে যেত।'
সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ এবং নাসায়ী কিতাবে এসেছে, হযরত মালেক ইবনে হুয়াইরিছ (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم : يرفع يديه اذا كبر و إذا رفع رأسه من الركوع حتى يبلغ بهما فروع أذنيه অর্থাৎ আমি রাসূল (সা)-কে দেখেছি, তিনি যখন তাকবীরে তাহরিমা বলতেন তখন স্বীয় দু হাত উত্তোলন করতেন এবং যখন রুকূ হতে মাথা উত্তোলন করতেন তখন তিনি স্বীয় দু' কানের লতি পর্যন্ত হস্তদ্বয় পৌঁছাতেন....(মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ, বাবু ইফতিতাহিস সালাত)। প্রিয়পাঠক! 'রাফা'আ' শব্দের প্রকৃত অর্থ 'উত্তোলন করা' বা 'উপরে উঠানো' হওয়ার পক্ষে পবিত্র কুরান এবং সহীহ হাদিস থেকে কয়েকটি উদাহরণ দিলাম।
তর্কের খাতিরে (কাদিয়ানিদের হাস্যকর দাবিটুকু) মেনে নিলাম যে, ঈসা (আ)-কে ইহুদিরা শূলি থেকে নামিয়ে আধমরা করে রেখে দিয়ে চলে যাওয়ার পর তিনি গোপনে ফিলিস্তিন থেকে পালিয়ে 'কাশ্মীর' চলে যান!!! কিন্তু আধমরা রেখে পালিয়ে যাওয়ার মত এমন কাঁচা কাম সুচতুর ইহুদীরা কিভাবে করতে পারে যেখানে তারা মৃত্যু নিশ্চিত না করে পূর্বাপর নবীদের ছেড়ে দেননি কিংবা প্রাণে বাঁচতে দেননি? বিশ্ব মানচিত্র বলছে ফিলিস্তিন আর কাশ্মীরের মাঝে দূরত্ব সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার চেয়ে কম না।
ঈসা (আ) আধমরা অবস্থায় ফিলিস্তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পথ গোপনে অতিক্রম করে গেলেন, কেউ টেরও পেলনা; অথচ পুরো দেশটাই তখন ইহুদী শাসিত! মির্যায়ীদের এসব কল্পিতনির্ভর কাহিনী কোনো হিন্দী মুভির চরিত্র নয় তো?? যারা আপনা বিবেক নিজ হাতে হত্যাকারী তারাই কেবল এ সব অবৈজ্ঞানিক কাহিনী বিশ্বাস করতে পারে। আল্লাহ আমাদের এসব বানোয়াট কাহিনী থেকে হেফাজত করুন।
৩- কাদিয়ানিদের আকিদা : কাদিয়ানিদের দাবি হচ্ছে, হযরত ঈসা (আ) পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার আকাশ থেকে নাযিল হওয়ার বিষয়ে যেসব হাদিস এসেছে সেগুলো মোল্লাদের (ব্যঙ্গার্থে) বানানো। (আরেকটু অগ্রসর হয়ে) কাফিরেরা বানিয়ে হাদিসের নামে ঢুকিয়ে দিয়েছে। (তাদের আরেকটি দাবি হল) হাদিসে 'নাযিল' শব্দটি রূপকার্থে উল্লেখ হয়েছে। অর্থাৎ ঈসার নমুনায় অন্য কেউ পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশ করবে। বনী ইস্রাইল (ইহুদীজাতি) ঈসাকে যেমন স্বীকার করেনি, তেমনি তাঁর নমুনায় যিনি আসবেন তাকেও উম্মতে মুহাম্মদিয়া স্বীকার করবেনা। আর সেই নমুনার মানুষটি এসে গেছেন। যার নাম মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। সুতরাং ঈসা নবী দ্বিতীয়বার দুনিয়াতে আসবেন না।(নাউজুবিল্লা)
খণ্ডনমূলক জবাব : তাদের এসব কথাবার্তা পুরোপুরি অবাস্তব এবং মস্তিষ্কপ্রসূত। যা কখনো কোনো মুসলমানের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। ইচ্ছে করলে অনেক জবাব দেয়া যায়। এখানে শুধু এটুকু বলতে চাই যে, ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ)-এর অনুরূপ ভিন্ন কেউ উম্মতে মুহাম্মদিয়ার মধ্য থেকে জন্ম নিয়ে প্রতিশ্রুত মাসীহ নামে প্রকাশিত হবে এমন কোনো কথার ন্যূনতম ইঙ্গিতও কোনো সহীহ হাদিসে নেই। বরং পরিষ্কার বলা হয়েছে, 'রাসূল (সা) বলেছেন- সেই সত্ত্বার শপথ যাঁর হাতের মুঠোতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় ইবনে মরিয়ম তোমাদের মাঝে নাযিল হবেন। (বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া, হা/৩২৬৫)। বিস্তারিত দেখতে এখানে ক্লিক করুন করুন। সুতরাং মির্যার মাসীহ দাবি নিছক মিথ্যা এবং প্রতারণা।
৪- কাদিয়ানিদের আকিদা : কাদিয়ানিদের দাবি, ঈসা ইবনু মারিয়াম (আ) তিনি মরে গেছেন। কারণ কুরানে এসেছে প্রত্যেক প্রাণী মরণশীল। তাছাড়া সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতে এসেছে, 'মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র। তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে।' সুতরাং বুঝা গেল, ঈসা ইবনে মরিয়মও মারা গেছেন। বর্তমানে ঈসা'র কবর কাশ্মীরে আছে। (নাউজুবিল্লা)
খণ্ডনমূলক জবাব : মুসলিমরাও স্বীকার করেন যে, সকল মানুষের ন্যায় ঈসাও মরণশীল। তিনি কেয়ামতপূর্বে আবার দুনিয়ায় আসবেন। এরপর চল্লিশ বছর বসবাস করবেন। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে মৃত্যুবরণ করবেন, মহানবীর রাওজার পাশে ঈসা'র কবর হবে। (হাদিসে পরিষ্কার এর প্রমাণ আছে)। সূরা আলে ইমরানের উক্ত আয়াতের কোথাও বলা হয়নি যে, সব রাসূল মৃত্যুবরণ করেছেন, বরং আয়াতে বলা হয়েছে - ক্বাদ খালাত মিন কাবলহির রুসুলু। যার অর্থ তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে (অনুবাদ: আল কুরানুল কারীম, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)। 'গত হইয়াছে' এর মর্মার্থ ব্যাপক। যা 'মৃত্যু' অর্থের জন্য খাস বা নির্দিষ্ট নয়। এটি পবিত্র কুরানের এক ধরণের অলংকার। এরকম শব্দচয়ন দ্বারা যেন বুঝাতে চেয়েছে যে, আপনার পূর্বের সকল রাসূল গত হয়েছে, তবে সকলেই মৃত্যুবরণ করেনি। যেমন ঈসা ইবনে মরিয়ম। পবিত্র কুরানের নানা জায়গায় ঈসা (আ)-এর জীবিত থাকার প্রতি পরিষ্কার ইঙ্গিত আছে। যেমন, সূরা নিসার ১৫৯ নং আয়াত, সূরা যুখরুফের ৬১ নং আয়াত।
শুনে অবাক হবেন যে, ঈসা (আ) আজো জীবিত থাকা, এটি মির্যা কাদিয়ানী নিজেও স্বীকার করত। (মির্যার লেখিত, বারাহিনে আহমদিয়া'র টীকা পৃষ্ঠা নং ৪৯৮-৪৯৯ দ্রষ্টব্য)। মির্যাপুত্র বশিরুদ্দিন মাহমূদ রচিত 'হাকিকাতুন নবুওত' বইয়ের ১৪২ নং পৃষ্ঠায় সুস্পষ্টভাবে এ কথার পক্ষে প্রমাণ রয়েছে যে, ১৮৮০ সালে সে নিজেকে মুজাদ্দিদ দাবি করার পর থেকে প্রায় ১০ বছর অব্ধি উক্ত আকিদাই রাখত। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হল, যে ব্যক্তি নিজেকে মুজাদ্দিদ দাবি করল সেও দীর্ঘ ১০ বছর পর্যন্ত কুরান হাদিস থেকে 'ঈসার মৃত্যু' উদ্ধার করতে পারলনা! একজন মুজাদ্দিদ দাবিদার কিভাবে এরকম ভুল (মির্যার মতে শিরিকি আকিদা)'র উপর এত দীর্ঘ সময় পার করতে পারে? এ দেখুন মির্যা কাদিয়ানী নিজের ব্যাপারে কী সব বলে গেল :
الله تعالى مجہے غلطی پر ایک لمحہ بھی باقی نہیں رہتے دیتا اور مجھے ہر یک غلطی بات سے محفوظ رکہتا ہے.
অর্থ : আল্লাহতালা আমাকে ভুলে উপর এক মুহূর্তও বহাল থাকতে দেননা এবং আমাকে প্রত্যেক ভুল বক্তব্য থেকে হেফাজত রাখেন। [দেখুন : রূহানী খাযায়েন - ৮/২৭২]
এতে প্রশ্ন জাগে যে, মির্যা কাদিয়ানী উক্ত ভুলের উপর (যদিও তার পরবর্তী দাবি মতে ভুল) ১০ বছর পার করল কেন? আল্লাহ তাকে এরকম একটি নিকৃষ্ট (?) ভুলের উপর বহাল রাখল কেন? দেখুন তো মির্যার কথা আর বিশ্বাসের মাঝে ন্যূনতম মিল কোথায়? যাইহোক, এ তথাকথিত এলহাম আর ওহীর দাবিদার ভন্ড মির্যা কাদিয়ানী ১৮৯১ সালে নিজেকে ঈসা মাসীহ দাবি করে ফতুয়া দিল, আসল ঈসা মরে গেছে!! (নাউজুবিল্লা)। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করল, তাহলে আসল ঈসার কবর কোথায়? প্রত্যুত্তরে মির্যা নানা রকম স্ববিরোধী উক্তি করল। কখনো বলতেন, ঈসার কবর কাশ্মীর শ্রীনগরে। যেমন তার পুস্তকে লেখা আছে -
[১]
مسیح علیہ السلام کی قبر سری نگر میں ہے.
অর্থাৎ মাসীহ (আ)-এর কবর (কাশ্মীরের) শ্রীনগরে। {এটি মির্যার راز حقیقت পুস্তকের ২০ নং পৃষ্ঠায় পাবেন।}
[২]
মির্যা সাহেব তার আরেক পুস্তকে লিখেছে -
مسیح اپنی وطن گلیل میں جاکر فوت ہوگیا لیکن یہ ہرگز سچ نہیں کہ وہی جسم جو دفن ہو چکا تھا پھر زندہ ہوگیا
অর্থাৎ মাসীহ তিনি নিজ মাতৃভূমি 'গ্যালিলে' (সিরিয়ার প্রাচীনতম একটি জনপথ) গিয়ে ইন্তিকাল করেছেন। তাঁর শরীর সেখানে দাফন হবার পরে পুনরায় জীবিত হয়ে যাওয়া মোটেও সত্য নয়। {এটি মির্যার إزالة الاوہام পুস্তকের ৪৭৩ নং পৃষ্ঠায় পাবেন।} এখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ঈসা (আ) গ্যালিলে (সিরিয়াতে) মৃত্যুবরণ করেছেন। (নাউজুবিল্লা) তার পুস্তকের স্কিনকপি নিচে দেখুন!
[৩]
এ কাজ্জাব ভণ্ড মির্যা গোলাম কাদিয়ানী তার আরেক পুস্তকে আগের দুটোর বিপরীতে লিখেছে-
عیسیٰ کی قبر بلده قدس میں ہے اور ابتک موجود ہے অর্থাৎ ঈসার কবর বায়তুল মুকাদ্দাস (ফিলিস্তিন) শহরে অবস্থিত। তথায় এখনো বিদ্যমান আছে।' {এটি মির্যার إتمام الحجة পুস্তকের ২২ নং পৃষ্ঠায় পাবেন।} তার বইয়ের স্কিনকপি নিচে দেখুন।
প্রিয়পাঠক! হযরত ঈসা (আ) -কে মৃত সাব্যস্ত করতে গিয়ে মির্যা কাদিয়ানী এক মুখে কয় ধরণের কথা বলল তা তো দেখলেন। এমন ব্যক্তি যদি দাবি করে যে, কুরানের ৩০ টি আয়াতে ঈসা মাসীহ'র মৃত্যুর প্রমাণ রয়েছে, তখন তার ওই দাবি কতটা গুরুত্ব রাখবে তা আপনারাই বলুন! উপরন্তু মির্যা কাদিয়ানী তথাকথিত 'মুজাদ্দিদ' থাকা কালে দীর্ঘ ১০ বছরেও ঈসার মৃত্যুর দলিল আবিষ্কার করতে না পারা আর জীবিত ঈসা'র কাল্পনিক কবর সম্পর্কে তিন ধরণের পরস্পর বিরুধি তথ্য দেয়া, সবই তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় কি?
মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক স্বীকৃত প্রায় ৩০ জন মুজাদ্দিদের আকিদা ঈসা (আ) বর্তমানেও জীবিত এবং তিনি কেয়ামত পূর্ব সময়ে আকাশ থেকে নাযিল হবেন।
৫- কাদিয়ানিদের আকিদা : বর্তমানে কাদিয়ানিরা সুনানে ইবনে মাজা'র একটি হাদিসের খণ্ডিত অংশের বেঁকিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলে বেড়ায়: 'যিনি ঈসা তিনিই মাহদী।' (নাউজুবিল্লা)।
খণ্ডনমূলক জবাব : মির্যা কাদিয়ানী কত বড় মিথ্যাবাদী আর দাজ্জাল তার প্রমাণ তো উপরেই দেখলেন। এমন ব্যক্তি 'ঈসা মাসীহ আর ইমাম মাহদী' - দু'জনকে অভিন্ন চরিত্রের দাবি করে সে প্রকারান্তরে নিজেই নিজের ধ্বংস আর অকল্যাণকে বৃদ্ধি করেছে। কারণ তার জন্মের পূর্বে গত ১৩ শত বছরেও তার মত এমন কথা আর কেউ বলেনি। কাজেই, মির্যার এমন দাবি পরিত্যাজ্য বৈ কিছুনা। শুনে অবাক হবেন, মির্যা কাদিয়ানি নিজেও সুনানে ইবনে মাজা'র উপরের বর্ণনাটির সনদ বা সূত্রকে দুর্বল, ক্রুটিযুক্ত ও 'অগ্রহণযোগ্য' বলে গেছে। প্রমাণের জন্য তার 'হামামাতুল বুশরা' (পৃষ্ঠা নং ১৮৭) পুস্তকের স্কিনকপি নিচে দেখুন!
৬- কাদিয়ানিদের আকিদা : জিহাদ বা সশস্ত্র ধর্মযুদ্ধ হারাম ও নিষিদ্ধ। মাসীহ মাওঊদ মির্জা কাদিয়ানী জিহাদ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। কেয়ামত পর্যন্ত যুক্তিতর্ক দ্বারা জিহাদ অব্যাহত থাকবে, কিন্তু অস্ত্রের জিহাদ রহিত ও নিষিদ্ধ। (নাউজুবিল্লা)।
খণ্ডনমূলক জবাব : আখেরি নবী (সা) বলে গেছেন : কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর উম্মতের একটি দল বিজয়ী বেশে হক্বের উপর লড়াই অব্যাহত রাখবে। (সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড হাদিস নং ১৫৬)। সুতরাং মিথ্যাবাদী এবং ভণ্ড মির্যা কাদিয়ানির এসব কথাবার্তা বিশ্বনবীর সুস্পষ্ট হাদিসের বিপরীতে পুরোই মূল্যহীন। তার এসব বাগাড়ম্বর শুধমাত্র সাম্রাজ্যবাদ ব্রিটিশকে খুশি রাখা বৈ কিছুইনা।
৭- কাদিয়ানিদের আকিদা : মির্যা সাহেব লিখেছেন, ব্রিটিশ সরকারের অবাধ্যতা আল্লাহ'র রাসূল ও ইসলামের অবাধ্যতা। (দেখুন : রূহানী খাযায়েন - ৬/৩৮১) তিনি আরো লিখেছেন, "ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থরক্ষা প্রকৃতার্থে আল্লাহ'র স্বার্থরক্ষা।" (দেখুন : রূহানী খাযায়েন - ৬/৩৮১) আরেক জায়গায় লিখেছেন, আমি সত্যি সত্যি বলছি (ব্রিটিশের মত) অনুগ্রহশীল সরকারের অকল্যাণ চাওয়া একজন হারামি ও অপরাধীর কাজ।" (দেখুন : রূহানী খাযায়েন - ৬/৩৮০)
খণ্ডনমূলক জবাব : মির্যা সাহেবের বৃটিশ তোষণ নীতি সম্পর্কে বলতে গেলে শেষ হবেনা। মূলত বৃটিশ সরকারই তার ইমাম মাহদী দাবির পেছনে প্রধান উস্কানিদাতা ও মদদ দাতা। বর্তমানে কাদিয়ানিদের হেড কোয়ার্টার পর্যন্ত 'ইংল্যাণ্ডে' এবং ইসরাইলের তেল আবীবে। সেখান থেকে তারা সারা দুনিয়াতে মির্যার পঁচাগান্ধা মতবাদের তরফদারি করে যাচ্ছে। সুতরাং জ্ঞানীদের জন্য এতটুকুতেই বুঝা যথেষ্ট হবে যে, কাদিয়ানী ধর্মটি বৃটিশের একটি 'গেইম' মাত্র। যার খেলোয়াড়ের চরিত্রে ছিল 'মির্যা গোলাম আহমদ' আর রেফারির ভুমিকাতে ছিল, বৃটিশ সরকার।
৮- কাদিয়ানিদের আকিদা : কাদিয়ানিদের দাবি হাদিসে বর্ণিত ইয়াজুজ - মাজুজ দ্বারা বিধ্বংসী আগ্নেয়াস্ত্রধারী পরাশক্তির উত্থান হওয়া উদ্দেশ্য। (নাউজুবিল্লা)।
খণ্ডনমূলক জবাব : কাদিয়ানিরা কুরান হাদিসের অপব্যাখ্যায় পারঙ্গম, তা সবাই জানেন। সে আলোচনায় আপাদত আজ যাচ্ছিনা। প্রত্যেক মুসলমান মাত্র জানে যে, ইয়াজুজ আর মাজূজ এরা হযরত নূহ (আ)-এর সন্তান 'ইয়াফিজের' বংশধর। সহীহ হাদীস থেকে জানা যায়, তারা নূহ (আ) এর আওলাদ। প্রমাণ স্বরূপ সহীহ বুখারীর নিচের হাদীসটি উল্লেখযোগ্য। নবী (সা) বলেছেন, “রোজ হাশরে আল্লাহ্ তা’আলা আদমকে বলবেন, ‘হে আদম’! আদম বলবেন, ‘আমি আপনার দরবারে উপস্থিত আছি। সমস্ত কল্যাণ আপনার হাতে’। আল্লাহ্ বলবেন, ‘জাহান্নামের বাহিনীকে আলাদা কর’।
আদম (আ) বলবেন, ‘কারা জাহান্নামের অধিবাসী’? আল্লাহ্ বলবেন, ‘প্রতি হাজারের মধ্যে নয়শত নিরানব্বই জন’। ‘এ সময় শিশু সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যাবে, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের সন্তান পড়ে যাবে এবং মানুষদেরকে আপনি মাতাল অবস্থায় দেখতে পাবেন। অথচ তারা মাতাল নয়। আল্লাহ্র শাস্তির ভয়াবহতা অবলোকন করার কারণেই তাদেরকে মাতালের মত দেখা যাবে’। (সূরা হাজ্জঃ ২) সাহাবীগণ বললেন, “হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদের মধ্যে সেই একজন কে”? তিনি বললেন, “তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা তোমাদের মধ্য হতে একজন আর এক হাজারের অবশিষ্ট ইয়াজুজ মাজুজ হবে”।
অতঃপর তিনি বললেন, “যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম। আমি আশা করি, তোমরা জান্নাতীদের চারভাগের এক ভাগ হবে”। [আবূ সা’ঈদ (রা) বলেন] আমরা এটা শুনে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর পাঠ করলাম।
তারপর নবী (সা) বললেন, “আমি আশা করি, তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীর এক তৃতীয়াংশ হবে”। আমরা এ সংবাদ শুনে আবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিলাম। তিনি আবার বললেন, “আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতীদের অর্ধেক হবে”। এ কথা শুনে আমরা আবারও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিলাম। তিনি বললেন, “তোমরা তো অন্যান্য মানুষের তুলনায় এমন, যেমন সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কাল পশম অথবা কালো ষাঁড়ের শরীরে কয়েকটি সাদা পশম”। (সহীহ বুখারী, হাদীস সংখ্যা- ৩৩৪৮)
মুসলিম শরিফের হাদিসে এদের আকার আকৃতি এবং অবস্থা সম্পর্কে বর্ণিত আছে। কেয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে হযরত ঈসা (আ)-এর নাযিলের পর পৃথিবীতে এদের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তারা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালাবে। আল্লাহতালা তাদের ঘাড়ে এক ধরণের পোকার বিস্তার ঘটাবেন। ফলে একসাথে সবাই মৃত্যুবরণ করবে। পৃথিবী তাদের লাশের আস্তাবলে পরিণত হবে। তখন আল্লাহতালার হুকুমে উটপাখির ন্যায় বিশালাকৃতির পাখিরা এসে এদের টেনে নিয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে থাকবে। এ হচ্ছে ইয়াজুজ মাজুজ। পবিত্র কুরানেও এদের আলোচনা পাওয়া যায়। (সূরা আল কাহাফ, আয়াত ৯২-৯৯ ; সূরা আম্বিয়া আয়াত ৯৬-৯৭ দ্রষ্টব্য)।
৯- কাদিয়ানিদের আকিদা : হাদিসে বর্ণিত 'কানা দাজ্জাল' দ্বারা আসল উদ্দেশ্য হল ত্রিত্ববাদী খ্রিষ্টান মিশনারিরা। প্রকৃতপক্ষে দাজ্জাল বলতে এদেরকেই বুঝাবে। দাজ্জাল আদৌ মানুষের মত কেউ না (নাউজুবিল্লা)।
খণ্ডনমূলক জবাব : হাদিস শরিফে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, দাজ্জাল সে মানুষের ঘরে জন্ম নেবে এবং মানুষই হবে। সহীহ বুখারী'র কিতাবুল ফিতান (বিশৃঙ্খলা অধ্যায়)-তে দাজ্জাল সম্পর্কে পরিষ্কার হাদিস রয়েছে। রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন - فإذا رجل أحمر جسيم جعد الرأس اعور العين الخ অর্থাৎ অকস্মাৎ (আমি স্বপ্নে) এক লালবর্ণের শারীরিক গঠনের এক ব্যক্তি (-কে দেখতে পাই)। কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট মাথাওয়ালা ও একচক্ষু কানা...।" (বুখারী শরীফ, হাদিস নং ৬৭০৯)। কাদিয়ানী উক্ত মতবাদ সহীহ হাদিসের বিরুদ্ধে যাওয়াতে বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য।
হাদিসে আরো এসেছে, ইস্ফাহান থেকে সত্তর হাজার ইহুদি সেদিন দাজ্জালের বাহিনীর সাথে যোগ দেবে। হযরত ঈসা (আ) দাজ্জালকে "লূদ" নামক গেইটে পেয়ে যাবেন। আর তখন তাকে হত্যা করবেন। সেদিন জিহাদের মাধ্যমে খোদাদ্রোহি শক্তি নাস্তানাবুদ হয়ে যাবে। অবশিষ্ট সবাই ইসলামের পাতাকা তলে যোগদান করবে। আল্লাহতালা ইসলামকে বিজয়ী করবেন। ইসলাম ব্যতীত বাকি সব ধর্ম এবং মতবাদ তিনি ধ্বংস করবেন। সুতরাং কাদিয়ানিদের উপরিউক্ত আকিদা তাদের নিজেস্ব ও বানোয়াট। এর সাথে প্রকৃত ইসলামের সম্পর্ক নেই।
১০- কাদিয়ানিদের আকিদা : তাদের দাবি- হাদিসে 'লূদ' নামক স্থানে দাজ্জালকে হত্যাকরা হবে মর্মে যা উল্লেখ আছে তদ্দ্বারা 'পাকিস্তানের লুধিয়ান শহর' বুঝাবে। সেখানে দাজ্জালকে বধ করা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদেরকে বাহাস ও যুক্তিতর্কের মাধ্যমে পরাজিত করা। এটি ইতোমধ্যে মির্জা কাদিয়ানির মাধ্যমে ঘটে গেছে। (নাউজুবিল্লা)।
খণ্ডনমূলক জবাব : হাদিসে উদ্ধৃত 'লূদ' শহর আজকের দিনেও ফিলিস্তিনে (জেরুজালেম) বিদ্যমান। গুগলে সার্জ দিয়ে ম্যাপ বের করলে দেখবেন, পাকিস্তানের লুধিয়ান থেকে জেরুজালেমের 'লূদ' শহরের দূরত্ব ৩৮৬৩ কিলোমিটার প্রায়। মজার ব্যাপার হল, স্ববিরোধী মির্যা গোলাম কাদিয়ানী তিনি নিজেও তার একটি বইতে "লূদ" এর অবস্থান নির্ণয় করতে গিয়ে সেটি 'বায়তুল মুকাদ্দাস' এলাকার একটি গ্রাম বলে উল্লেখ করে গেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন, پھر ابن مريم دجال کی تلاش میں لگیں گے اور لد کے دروازے پر جو بیت المقدس کے دیہات میں سے ایک گاؤں ہے اس کو جا پکڑے گے اور اس کو قتل کر ڈالیں گے.
অর্থাৎ অত:পর হযরত ইবনে মরিয়ম তিনি দাজ্জালের খোঁজে লেগে পড়বেন এবং তাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের (নিকটবর্তী) একটি জনপদ এলাকায় "লূদ" নামক গেইটে পাকড়ো করবেন এবং তাকে কতল (হত্যা) করবেন। (মির্যা রচিত এযালাতুল আওহাম : ২১৯-২২০; রূহানী খাযায়েন : ৩/২০৯)। সুতরাং কাদিয়ানিদের দাবি স্ববিরোধী এবং কল্পিত ও বানোয়াট প্রমাণিত হল।
১১- কাদিয়ানিদের আকিদা : তাদের দাবি হল, দাব্বাতুল আরদ্ব (Dabbatul Arde) মানে প্লেগের প্রাদুর্ভাব। (নাউজুবিল্লা)।
খণ্ডনমূলক জবাব : কাদিয়ানিরা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে হাদিসে উল্লিখিত 'দাব্বাতুল আরদ্ব' এর মারাত্মক অপব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। অথচ হাদিসের বর্ণনা দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, এটি এক ধরণের জন্তু। যা কেয়ামতের বড় আলামত গুলোর অন্যতম। এক বর্ণনামতে এটি মক্কার সাফা এবং মারওয়া পর্বতের মাঝখান থেকে ভূগর্ভ হতে আত্মপ্রকাশ হবে। 'দাব্বাতুল আরদ্ব' সম্পর্কে জানা যায়, পবিত্র কুরানে এসেছে, এটি মানুষের সাথে কথা বলবে। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, তার এক হাতে মূসা (আ)-এর লাঠি থাকবে আর অপর হাতে থাকবে সোলায়মান (আ)-এর আংটি। আংটি দ্বারা মুমিনদের কপালে কিছু একটা লিখে দেবেন। ফলে তাদের মুখমণ্ডল সাদা আলোকময় হয়ে চমকাবে। আর কাফিরদের কপালেও কিছু একটা লিখে দেবেন। ফলে তাদের মুখমণ্ডল কালো হয়ে যাবে।
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরানে এসেছে, আল্লাহতালা ইরশাদ করেন : وَإِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَابَّةً مِّنَ الْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ
অর্থাৎ যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না। (সূরা নামাল ৮২)
সালফে সালেহীন ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে এর কতিপয় গুণাবলী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। যেমন, ইবনে আবী হাতিম তিনি হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণনা করেছেন, إن الدابة فيها من كل لون، ما بين قرنيها فرسخ للراكب. অর্থাৎ ভূতলের জন্তুটির গায়ের রঙ সব রঙের হবে। তার দুই শিংয়ের মধ্যমা আরোহীর জন্য সুদৃঢ় হবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন, هي مثل الحربة الضخمة অর্থাৎ এটি ('র আকৃতি) বিরাটকার বর্শার ফলার ন্যায় হবে। হযরত আলী (রা) বলেছেন, إنها دابة لها ريش وزغب وحافر، وما لها ذنب، ولها لحية. অর্থ : "এটি এমন একটি জন্তু যার পালক থাকবে এবং কোমল কেশ আর (পশুর পায়ের ন্যায়) খুর বিশিষ্ট হবে। তার লেজ থাকবে এবং দাড়িও থাকবে।" এ হচ্ছে দাব্বাতুল আরদ্ব। কাদিয়ানি কাজ্জাব সম্প্রদায় যেটিকে অপব্যাখ্যা দিয়ে 'প্লেগের প্রাদুর্ভাব' বানিয়ে নাম দিয়েছে। এবার বুঝে থাকলে বলুন, এ মির্যাজি গোষ্ঠী কতবড় নিকৃষ্ট মানসিকতার হলে ইসলামি আকিদা বিশ্বাসের এমন জঘন্য অপব্যাখ্যা দিতে পারে!
১২- কাদিয়ানিদের আকিদা : আর্যজাতির দেবতা শ্রী কৃষ্ণ একজন নবী ছিলেন। আর আমি (মির্জা কাদিয়ানী) এ কলিযুগে সেই কৃষ্ণের একজন নমুনা বা অবতার। আমি আর্যদের আসমানি বাদশাহ'র প্রতিচ্ছায়া। স্কিনশট নিচে দেখুন!
খণ্ডনমূলক জবাব : আমার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করব না। বিজ্ঞ পাঠক! নিজেরাই চিন্তা করে দেখবেন, যে ব্যক্তি নিজেকে শীকৃষ্ণের রূপক (অবতার) দাবি করে আর যারা তার এ সব বালখিল্যপূর্ণ দাবি বিশ্বাস করে, তারা নিশ্চয় নিজ হাতে নিজের বিবেক হত্যাকারী বৈ নয়। উল্লেখ্য, ইসলাম ধর্মে 'অবতার' বলতে কিছুই নেই। এ শব্দ গুলো অংশিবাদী মুশরিকদের কাছ থেকে দ্বার করা। পবিত্র ইসলাম ধর্ম এসব অংশিবাদী মতবাদ থেকে পবিত্র।
১৩-কাদিয়ানিদের আকিদা : কাদিয়ানী জামাতের বিশ্বাস মতে, ইসলামি রাজনীতি নাজায়েজ এবং হারাম। (নাউজুবিল্লা)।
খণ্ডনমূলক জবাব : জবাবে বলতে চাই যে, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দালালি করার জন্য মাহদিয়তের চরিত্রে অভিনয় করতে যার সামান্যতম আত্মমর্যাদায় বাধেনি, 'খোদা তা'য়ালার সাথে বিবি মরিয়মের প্রতিচ্ছবিতে নিজের সহবাস করার হীনগল্প তৈরি করতে যার শরম করেনি (মির্যার রচিত, কিশতিয়ে নূহ, পৃষ্ঠা নং ৪৭); তার পক্ষে তো সবই সম্ভব! বাকিটা আপনাদের বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম।
১৪-কাদিয়ানিদের আকিদা : উম্মতে মুহাম্মদিয়ার ৭৩ ফেরকার মধ্যে যে একমাত্র ফেরকাটি জান্নাতি, সে ফেরকা 'আহমদিয়া কাদিয়ানী জামাত'। (নাউজুবিল্লা)
খণ্ডনমূলক জবাব : মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। কারণ, যাদের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা খোদ নিজের ফতুয়ায় নিজেই কাফির হয়, তারা সেসব আবোলতাবোল কথাবার্তা বলবে আর তা শুনে মানুষ বিনোদন বোধ করবে এমনটাই স্বাভাবিক। তাদের জানা উচিৎ যে, রাসূল (সা) বলে গেছেন, এ উম্মত কখনো পথভ্রষ্টতার উপর একমত হবেনা। আমরা জানি যে, মির্যার জন্মের আগ থেকেই প্রায় ১৩ শত বছর অব্ধি এ উম্মত গত হয়েছে। সেই দীর্ঘ সময় ব্যাপী আরো বহুজনে 'নবুওত' এর দাবি করেছিল। উম্মতে মুহাম্মদিয়া সর্বসম্মত ভাবে সেসব নবুওত দাবিদারদের প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসলামি হুকুমত তাদের মিথ্যাবাদী ও মুরতাদ আখ্যা দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। কাজেই, বুঝা গেল নবুওত দাবিদারকে কাফির আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করা উম্মতে মুহাম্মদিয়ার সর্বসম্মত ফয়সালা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ কি কাদিয়ানিধর্মের গোড়াপত্তন হওয়ার আগের সকল মুসলমানকে পথভ্রষ্ট বলতে পেরেছে? অবশ্যই না। সুতরাং এ কাদিয়ানিরা বড্ড কপট আর মিথ্যুক প্রমাণিত হল।
১৫- কাদিয়ানিদের আকিদা : কাদিয়ানিরা কথায় কথায় বলে থাকে, বর্তমান যামানার ইসলাম মোল্লাদের তৈরি ইসলাম। আসল ইসলাম নতুন নবী মির্জা গোলাম আহমদের প্রচারিত 'আহমদিয়া কাদিয়ানী জামাত' এর ইসলাম। (নাউজুবিল্লা)।
খণ্ডনমূলক জবাব : মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। কেননা, যারা কাফির, ইসলামে যাদের কোনো অধিকারই প্রতিষ্ঠিত নয়, দেশে দেশে যাদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা চলছে; তাদের কথাবার্তা তো এমন অশালীন হওয়াই যুক্তিক, তাই নয় কি? উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াতে কাদিয়ানিদের 'স্বতন্ত্র ধর্মাবলম্বী' বলা হয়েছে। মির্যাকে 'নতুন ধর্মের প্রবর্তক' বলা হয়েছে।
১৬- কাদিয়ানিদের আকিদা : মির্যা কাদিয়ানীর মতে ঈসা (আ)-এর পিতা ছিলেন। (নাউজুবিল্লা) যেমন সে তার পুস্তকে লিখেছে :
کیونکہ اس مسیح ابن مریم اپنی باپ یوسف کے ساتھ بائیس سال تک لکڑی کا کام کرتا رہے
অর্থাৎ কেননা এ মাসীহ ইবনে মারিয়াম নিজ পিতা ইউসুফের সাথে বাইশ (২২) বছর অব্ধি কাঠুরির কাজ করত।" (রূহানী খাযায়েন ৩/২৫৪)।
খণ্ডনমূলক জবাব : সূরা আলে ইমরানের ৪৭ নং আয়াত সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে, আল্লাহতালা হযরত ঈসা মাসীহকে বিবি মারিয়ামের গর্ভে কোনো পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই (তথা পিতা বিহীন) দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।' প্রিয়পাঠক! ঈসা (আ)-এর পিতা থাকার দাবি তোলা পবিত্র কুরানের সাথে সুস্পষ্ট বিরোধ কিনা? কুরান এবং সহীহ হাদিসের কোথাও কি মির্যা কাদিয়ানির উপরিউক্ত বক্তব্যের পক্ষে কোনো প্রমাণ আছে? অবশ্যই না।
১৭- কাদিয়ানিদের আকিদা : কাদিয়ানিরা বিশ্বাস করে যে, রাসূল (সা) এর মেরাজ স্বশরীরে হয়নি, স্বপ্নে হয়েছিল ।
খণ্ডনমূলক জবাব : আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা মতে, রাসূল (সা)-এর মেরাজ দু' পর্বে হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্বের মেরাজ স্বশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। বিশিষ্ট চারো ইমাম সহ সবাই একমত। সুতরাং কাদিয়ানিদের উপরিউক্ত দাবিও বাতিল। এ বিষয়ে শক্তিশালী প্রমাণ সহ আমার একটি লেখা আছে। অন্য সময় এখানে সেটি পোস্ট করব, ইনশাআল্লাহ।
১৮- কাদিয়ানিদের আকিদা : কাদিয়ানিরা বিশ্বাস করে যে, 'হুর' বলতে প্রকৃতপক্ষে কোনো রমণীকে বুঝায়না।
খণ্ডনমূলক জবাব : মন্তব্য করার মত যেন ভাষাই হারিয়ে পেললাম। পবিত্র কুরানের সূরা ওয়াক্বিয়া'র আয়াতগুলো (আয়াত নং ২২,২৩,২৪) সংশ্লিষ্ট তাফসীর সহ পড়ার আবেদন থাকল। আল্লাহতালা ইরশাদ করেন - وَحُورٌ عِينٌ -(তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ) كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ -( আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়) جَزَاء بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ -(তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ)। এ তো গেল কুরানের বাণী। এছাড়া অসংখ্য হাদিসের বিরুদ্ধে গিয়ে কাদিয়ানিদের সেসব বানোয়াট আর মিথ্যার জবাব দেয়া শুধু সময়ের অপচয় বৈ কিছুনা।
১৯- কাদিয়ানিদের আকিদা : কাদিয়ানিদের দাবি, সূরা কাহাফে উল্লিখিত 'আসহাবে কাহাফ" এর দীর্ঘ বছর ঘুমে অবস্থান করার প্রচলিত ঘটনাটি ঠিক না। যদিও অধিকাংশ মুসলমান এমনটাই বিশ্বাস করেন।
খণ্ডনমূলক জবাব : সূরা কাহাফে উল্লিখিত 'আসহাবে কাহাফ" (গুহায় আত্মগোপনকারী সাত যুবক) এর দীর্ঘ ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে থাকার অকাট্য কুরানি ঘটনাটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহতালা এ সম্পর্কে বলেন - وَلَبِثُوا فِي كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِائَةٍ سِنِينَ وَازْدَادُوا تِسْعًا 25 অর্থাৎ তারা তাদের গুহায় তিনশ বছর, অতিরিক্ত আরও নয় বছর অবস্থান করেছে।" কিন্তু কাদিয়ানিরা তা অস্বীকার করতে নিকৃষ্ট অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। অথচ তাওয়াতূর ভাবে যে বিশ্বাস তিন স্বর্ণযুগ থেকে আমাদের পর্যন্ত অব্যাহত ভাবে চলে এসেছে সেটিকে সরাসরি অস্বীকার করা কিংবা বেঁকিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ভিন্ন মর্মার্থ নেয়া জিন্দিকের পরিচয়। জুরুরিয়াতে দ্বীনের অস্বীকারকারী হিসেবে ইসলাম থেকে খারিজ। সুতরাং কাদিয়ানিরা কুরানের এ ঘটনাকে উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা দিয়ে নতুন অর্থ গ্রহণ করায় ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে।
২০ কাদিয়ানীদের আকিদা : হযরত আদম (আ) প্রথম মানুষ নন। তাঁর আগেও মানুষের অস্তিত্ব ছিল। তবে হযরত আদম (আ) প্রথম নবী। যদিও বর্তমান মুসলমানদের সবাই বিশ্বাস করে যে, হযরত আদমই প্রথম মানুষ। তাঁর থেকেই মানবজাতির বংশ বিস্তার। কিন্তু এটি ঠিক না। (এ হল কাদিয়ানিদের মতবাদ)।
খন্ডনমূলক জবাব : হযরত আদম (আ)-কে প্রথম নবী স্বীকার করা যেমন জুরুরি তেমনি প্রথম মানুষ স্বীকার করাও জুরুরি। বরং আদম (আ)-কে প্রথম মানুষ হওয়া অস্বীকারকারী পবিত্র কুরানের সূরা বাকারা'র ৩০ নং আয়াতেরও অস্বীকারকারী হিসেবে গণ্য হবে। কেননা, সূরা বাকারা'র ৩০ নং আয়াতে পরিষ্কার বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহতালা যখন পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি তথা আদম (আ)-কে সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করলেন এবং তা ফেরেশতাদের জানালেন তখন ফেরেশতারা নিম্নরূপ ভেটো দিলেন, আপনি কি পৃথিবীতে এমন জাতি সৃষ্টি করবেন যারা বিশৃঙ্খলা করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে???
কারণ ইতিপূর্বে অর্থাৎ মানবজাতি সৃষ্টি হওয়ার আগে পৃথিবীতে জীনজাতির আবাদ ছিল। তারা আল্লাহ'র সীমাহীন অবাধ্য হওয়াতে তাদের ধ্বংস করে দেয়া হয়। ফেরেশতারা সেই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন। সেই অনুমান থেকেই পরবর্তীতে তারা মানুষ সৃষ্টিতে ভেটো দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তাদের জবাবে বলেন - ইন্নি আ'লামু মা-লা তা'আলামূন। অর্থাৎ আমি যা জানি তোমরা তা জানোনা। (আয়াত : ৩০)। আয়াতের বর্ণনাভঙ্গি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, আদম (আ)-এর সৃষ্টি থেকে মানবজাতির বংশ বিস্তার। তাকে বিনে মানব অস্তিত্ব অসম্ভব। কাজেই হযরত আদম (আ) তিনি প্রথম নবী এবং প্রথম মানুষ। এ আকিদা একটি মৌলিক আকিদা। যেহেতু কাদিয়ানী তথা মির্যায়ী জামাত কুরানের অপব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামি আকিদার বিকৃতি ঘটায় সেজন্য তারা ইসলামের বাহিরে ও ভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি। অর্থাৎ তারা অমুসলিম।
উপসংহার : এ তো সামান্য কয়েকটি। এরকম বহু ইসলাম পরিপন্থী বানোয়াট মত ও বিশ্বাস তারা অন্তরে লালন করে থাকে যার সাথে প্রকৃত ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। যেজন্য পাকিস্তান (১৯৭৪ ইং), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আরব, ইরাক, মিশর সহ দুনিয়ার সকল মুসলিম দেশগুলোর ন্যায় আমাদের দেশ বাংলাদেশেও 'আহমদিয়া কাদিয়ানী জামাত' নামক এ দলটিকে নিষিদ্ধ করা হোক। সবাই ঈমানী দায়িত্ব মনে করে 'খতমে নবুওত আন্দোলন' এর সাথে একতাবদ্ধ হোন। এ অরাজনৈতিক দলটি প্রথম থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে, যেন কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয় ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। এজন্য যেন সংসদে একটি আইনও পাস করা হয়। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ। ওয়াসসালাম।
(চলবে)
ইমেইল : nabifeni44@gmail.com
ভিজিট করুন : এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৬
১. ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২৫ ০