যেই লোক এক ওয়াক্ত নামাজও ঠিক মতন পড়েনা, যেই লোক পার্সোনাল কম্পিউটারের একদম গহীনে কিছু ভিডিও ফাইল গোপন করে রাখে নির্জনে দেখবে বলে, যে লোক ইন্টারনেটের চটি পেজগুলোতে নিয়মিত যাতায়াত করে - সেই লোকই কোন নাস্তিকের নাম শুনলে কিছু না পড়েই টাকলা ভাষায় লিখবে Nastec ar pusy cae. যাহা বাংলায় ডিক্রিপ্ট করলে দাঁড়ায় "নাস্তিকের ফাঁসি চাই।"
বাংলাদেশের একটা বিরাট অংশের মানুষের বিশ্বাস নাস্তিকদের একটাই শাস্তি, মৃত্যুদন্ড। যে কারনে যখন কোন নাস্তিককে হত্যা করা হয়, তাঁরা কেউই টু শব্দটা পর্যন্ত করেননা। এর মানে তাঁরা মনে মনে এর সমর্থন করেন। এবং কেউ কেউ মুখ ফুটে বলেও ফেলেন, "আলহামদুলিল্লাহ!"
আমি কারও কারও সাথে এই নিয়ে কথা বলেছি। তাঁরা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, "যেহেতু তারা মুসলিম পরিবারে জন্মে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়েছে - কাজেই তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।"
তাহলে কয়েকটা ঘটনা শুনাই।
উবায়দুল্লাহ ইবনে জাশের নাম শুনেছেন? একদম প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করা গুটি কয়েক মানুষের একজন তিনি। তার স্ত্রীর নাম রামলা বিন্তে আবু সুফিয়ান। বিখ্যাত কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের মেয়ে।
মুসলিমদের উপর কুরাইশদের অত্যাচারের পরিমান বাড়তে থাকলে নবীজি (সঃ) সবাইকে হিজরতের পরামর্শ দেন। মানে দেশ ত্যাগ করে আবিসিনিয়ায় চলে যাওয়া।
খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। নিজের বাড়িঘর সব ছেড়ে একদম শুন্য হাতে ভিন্ন দেশে চলে যেতে কেমন লাগে সেটা দেশত্যাগী মাত্রই বলতে পারবেন। উবায়দুল্লাহও তাঁর পরিবার নিয়ে আবিসিনিয়ায় চলে গেলেন। এবং তার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হচ্ছে, সেখানে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টান হয়ে গেলেন। জ্বী, ইসলামের প্রথম মুরতাদের নাম উবায়দুল্লাহ ইবনে জাশ। কুইজে আসতে পারে। জেনে নিন।
তার শাস্তি কী হয়েছিল? কিছুই না। সে নিজের বিছানায় শুয়ে মরেছিল। কেন? কারন সে কোন ইসলামী রাষ্ট্রে বাস করতো না। আবিসিনিয়া তখন একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র ছিল। এই পয়েন্ট মনে রাখুন, পরে আবার আসছি।
তুলায়্হা আল আজদির নাম অনেকেই জেনে থাকতে পারেন। এ এক আচানক ক্যারেক্টার। প্রথম জীবনে কারও দাওয়াত ছাড়াই ইসলাম গ্রহণ করে ফেলে। তারপর ভন্ডামি শুরু করে একদিন নিজেই নিজেকে নবী প্রচার করতে থাকে। একদম আমাদের বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখো পীরের মতন। এরা শুধু প্রকাশ্যে বলে না যে তারা নবী, কিন্তু অলৌকিক ক্ষমতার দাবি করে, যা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওদের এই ক্যাটাগরিতেই ফেলে।
যাই হোক, কোন পীরেরই মুরিদের অভাব হয়না। তুলায়্হারও হয়নি। এরা হজরত আবু বকরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। এবং যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তুলায়হা পালিয়ে যায়। এবং যে কারনে তাঁকে আচানক ক্যারেক্টার বললাম তা হচ্ছে পালিয়ে গিয়ে তিনি আবারও ইসলাম গ্রহণ করেন - এবং ফিরে এসে উমরাহও করেন। তুলায়হা কিন্তু মুরতাদ হয়েও ফিরেছেন। তাঁকে "দেখিবামাত্র কোপানো" হয়নি। ফিরে আসার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি একবার মুসলিম হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর তিনি আবারও নিজের ধর্মে ফেরত যান। কিছুদিন পর আবারও মুসলিম হতে চাইলে আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্যেই কয়েকটা আয়াত নাজেল করেন। সুরাহ আল ইমরানের ৮৬ থেকে ৮৯ পর্যন্ত আয়াতগুলো তাঁকে উদ্দেশ্য করেই নাজেল হওয়া। সংক্ষেপে যার মর্মার্থ হচ্ছে, যে সত্যের অনুসন্ধান পেয়েও বিপথে চালিত হয় তাঁর জন্য আর কিই বা করা যেতে পারে! যদি সে ফিরে না আসে, তবে আখিরাতে আল্লাহ তাঁর জন্য কঠিনতম শাস্তি রেখেছেন। এবং যদি ফিরে আসে, তবে অবশ্যই তাঁকে ক্ষমা করা হবে।
আনসার ব্যক্তিটিকে অবশ্যই ক্ষমা করা হয়েছিল ও মুসলিম ভাই হিসেবে জড়িয়ে ধরা হয়েছিল।
নবীজির (সঃ) সময়ের সাধারন মুরতাদদের কাহিনী বললাম।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে মুরতাদদের মৃত্যুদন্ডের বিধান কোত্থেকে আসলো?
এই প্রশ্ন করার আগে আরেকটু পড়াশোনা করলেই কিন্তু এই প্রশ্ন মনে আসতো না।
তখনকার সময়ে কুরাইশরা ইসলামবিরোধী যে কাউকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে মুসলিমদের ধুলিস্যাত করতে চাইতো। আমরা খন্দকের যুদ্ধে এটাই দেখতে পাই। পুরো আরব সমাজ একত্র হয়ে এসেছিল মদিনা গুড়িয়ে দিতে। মদিনার স্ত্রী পুরুষ শিশু সব মিলিয়ে যত জনসংখ্যা হয়, তার চেয়েও বেশি ছিল শত্রু সেনার সংখ্যা।
এমন বৈরী অবস্থায় কেউ যদি ইসলাম ত্যাগ করে শত্রু শিবিরে নাম লেখায়, তার শাস্তি কী হওয়া উচিৎ?
আরেকটু সহজ ব্যাখ্যা করি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক হানাদার বাহিনী শিকারী কুকুরের মতন আমাদের মারতে শুরু করলো। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হলো। এবং দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানানো হলো "মরিচের গুড়া নিয়ে হলেও যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ুন।"
এই অবস্থায় কিছু বাঙালি তাদের বাঙালিত্ব ত্যাগ করে হানাদারদের দলে নাম লেখালো। আবার একদলতো খোদ হানাদার সেনা হয়েই স্বজাতিকে হত্যা করলো। আপনারা ফ্রিডম অফ চয়েজ বলতে পারেন। এবং এর ফল আমরা দেখেছি। কেউ মন্ত্রী হয়েছে, কেউ শিল্পপতি। ইসলাম এই ভুল করেনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সময় থাকতেই করতে হয়, এইটা ইসলামের বিধান।
যাই হোক, এখন আমাদের কোন যুদ্ধ চলছে না। কাজেই কারও (কোন মুরতাদের) শত্রু সেনায় নাম লেখানোর প্রশ্নই উঠেনা।
বাংলাদেশ কোন ইসলামপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইসলামী বিশ্বের খলিফাও নন। কাজেই কোন কন্ডিশনই এপ্লাইড হচ্ছেনা। উবায়দুল্লাহ ইবনে জাশের মতন ওকেও শাস্তি দেয়া যাবেনা। এইটা মুহাম্মদ (সঃ) এর শিক্ষা।
আরেকটা ঘটনা দিয়ে শেষ করি। নবীজির (সঃ) জীবনী আলোচনা করতে আমার দারুন লাগে। কত কিছু যে শিখার আছে।
ফাজিল পোলাপান তাঁর আমলেও ছিল, এবং আরও বেশিই ছিল। তাঁকে জ্বালানোর জন্য একদিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে ওরা বলল, "আসসামু আলাইকুম।"
আমার আরবি জ্ঞান শুন্য, তবু এর মানে হচ্ছে "তোমার মৃত্যু ঘটুক" অথবা এইরকমই কিছু।
নবীজির (সঃ) সাথে তাঁর স্ত্রী হজরত আয়েশা (রাঃ) ছিলেন। তিনি নিজের রাগ ধরে রাখতে না পেরে বললেন, "তোরা আর তোদের গুষ্ঠী ধ্বংস হোক।"
নবীজি নিজের স্ত্রীকে শান্ত করলেন। সহজ ভাষায় বললে তিনি বলেছেন, "রিল্যাক্স আয়েশা। চিন্তিত হবার কিছু নেই। টেক ইট ইজি।"
তারপর তিনি উত্তরে বললেন, "ওয়ালাইকুম।"
মানে তোমাদের উপরেও। সহজ ভাষায় প্রতিবাদ।
তুমি আমাকে গালি দিচ্ছ? যা দিচ্ছ সেটাই তোমাকে ফিরিয়ে দিলাম, এবং নিজেও মুখ পর্যন্ত খারাপ করলাম না।
ফিলদি কথাবার্তা লিখে কেউ অ্যাটেনশন পাবার চেষ্টা করছে? প্রথম কথা, আপনি পড়বেন না। এবং যদি পড়েও ফেলেন, মনে মনে শুধু বলুন, ওয়ালাইকুম, অ্যান্ড মুভ অন। রিল্যাক্স। চিল।
যদি নবীজিকে (সঃ) গালাগালি করার শাস্তি হিসেবে কাউকে হত্যার বিধান তিনি দিতে চাইতেন একবার শুধু আওয়াজ দিলেই উমার (রাঃ), আলী (রাঃ), খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ), সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস(রাঃ) ছুটে আসতেন। তাঁদের সামনে দাঁড়াবার ক্ষমতা কখনই কারও ছিল না।
এখন নবীজির শিক্ষা জানতে হলে কী করতে হবে? পড়াশোনা করতে হবে। দুই চার পাতা আম পারা সিপারা পড়ে Nastec ar pusy cae মার্কা মুসলিম হলে আপনার নিজেরতো ক্ষতি হবেই, সমাজেরও কী ক্ষতি হবে সেটা আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি।