somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুর অব্যক্ত আর্তনাদ, করুণ আকুতি- আমার অসহায় আত্মসমর্পন!!!!

১৯ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা বাংলাদেশী জাতি বড় আবেগপ্রবণ.. খুব অল্প কিছুতে যেমন আনন্দিত হয়ে উঠে উৎসবের আমেজে মিশে যাই তেমনি খুব সহজে দুঃখ, কষ্ট, ক্ষোভে ফেটে পড়ি!!

এইতো কয়েক সপ্তাহ আগের একটি ঘটনা.. ক্ষুধার্ত দুজন শিশুর খাবার চুরির অভিযোগে গণপিটুণির শিকার এবং তা একজন ফটোগ্রাফারের ক্যামেরাবন্দী হতে সক্ষম হয় .... আমাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে সেই ছবি দেখে.. ব্যক্তিগত ভাবে বা সাংগঠনিক ভাবে অনেকে খোঁজ নিতে চেষ্টা করি তাদের, অন্ততঃ দুবেলা দুমুঠো ভাতের নিশ্চয়তা দেবার আশায়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে শিশুদের সন্ধান মিলেনি, তারপরও অনেকেই থেমে নেই.. একের পর এক পোস্ট আসছে তাদের সন্ধান চেয়ে বা ঘৃনা প্রকাশ করে। এটা আশার কথা যে আমাদের বিবেক এখনও জাগ্রত, আমরা এখনও নির্মমতা দেখে শিউরে উঠতে জানি, প্রতিবাদী হতে জানি।।

ক্ষুধার্ত দুজন শিশুকে নিষ্ঠুরভাবে যারা প্রহার করেছিলো তাদের চেহারা ছবিতে স্পষ্ট.. তাই আমরা সেখানে নিজেদের অনুপস্থিতি মিলিয়ে নিতে পারি, খুঁজে পাই ঘটনায় নিজের নির্দোষ হবার প্রমান!! আমরা বিপুল বিক্রমে আক্রমণাত্বক হয় উঠি নিষ্পাপ শিশুদের সাথে এ্মন হীন নির্মম আচরনকারীদের প্রতি.........

আমরা কি জানি, আমাদের চারপাশে প্রতিদিন এমন অনেক ছবির সৃষ্টি হচ্ছে যে সব ছবির অদৃশ্য আক্রমণকারী, প্রহারকারীদের মাঝে আপনার, আমার, আমাদের সকলের ছবি বড় বেশি স্পষ্ট??

পহেলা বৈশাখে উৎসব আমেজের মাঝে তোলা এই ছবিটি প্রহৃত শিশুদের ছবিটির চেয়ে হাজার গুন বেশি শক্তিশালী ও নির্মম মনে হয়েছে!!



পরিবারের শিশুরা বোধহয় সবচেয়ে মূল্যবান সদস্য। মা বাবা হয়তো নিজের সখের বা প্রয়োজনের জিনিসের জন্য খরচ করবেন কিনা তা নিয়ে দীর্ঘদিন ভাবেন, অথচ শিশুর জন্য যেনো কোন কিছুই অতিরিক্ত মূল্যবান নয়... সন্তানের মুখের হাসির কাছে সবকিছু ম্লান হয়ে যায়।

উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত.. সমাজের যে কোন শ্রেনীর পরিবার নিজের সাধ্যমতো সন্তানকে আগলে রাখে। একজন বস্তিবাসী দিনমজুরও তাঁর মাথার ঘামা পায়ে ফেলা উপার্জন দিয়ে কন্যার জন্য মালা, দুলের মতো সৌখিন সামগ্রী কিনে আনেন, গৃহপরিচারিকা গৃহকর্ত্রীর কাছ থেকে কখনও পেয়ে কখনও চেয়ে ছেলের জন্য একটা সুন্দর জামা বা খেলনা নিয়ে এসে অপার আনন্দ লাভ করেন।
এটাই বাবা মা'র ভালোবাসা, এমনটা যেকোন শিশুর মৌলিক অধিকার...

অথচ, এই শিশু এমনই হতভাগ্য যে এই সামান্য নিরাপত্তা, স্নেহভালোবাসা দিয়ে মুড়িয়ে রাখার কেউ নেই তার পাশে..

আপাতঃ দৃষ্টিতে একজন মানসিক ভারসাম্যহীণ মা, রুটির টুকরো তুলে দিতে চাইছে সামনে উপবিষ্ঠ অবোধ শিশুর মুখে.. আর সেই শিশু এক অসহায়, করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আপনার, আমার দিকে।
ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে কষ্ট হয়না এই একজোড়া নিষ্পাপ চোখের করুণ দৃষ্টিতে কি ভীষণ অসহায়ত্ব আর মিনতি জড়িয়ে আছে। অবোধ শিশু মুখ ফুটে বলতে না পারলেও যেনো দৃষ্টি দিয়ে ভিক্ষে চাইছে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন.. যেনো বলতে চাইছে; “মা আমার নিজেই বড় অসহায়, এক অন্ধকারাচ্ছন্ন অনিশ্চিত অবধারিত জীবনের শংকায় আমি ভীষণ ভীত. তোমরা আমাকে একটু বাঁচার অধিকার দাও, একটি আলোকিত জীবনের পথ করে দাও””।

যে শিশুদের আমরা খুঁজে পাইনা তাদের নিয়ে আজ আমরা বড় বেশি বিচলিত, অথচ আমদের সামনে পথে ঘাটে এর চেয়েও করুন, আর বাস্তবতার নিষ্ঠুর কষাঘাতে জর্জরিত শিশুরা আমাদের দিকে তাকিয়ে সাহায্য চাইছে.. আমরা তা দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাই। যেনো এই এড়িয়ে যাবার মাঝেই আমাদের দায়িত্বপালন আর দায়বদ্ধতার পরম মুক্তি।

ছবির এই শিশুটির ভবিষ্যত সহজে অনুমেয়.. শিশুটি ব্যবহৃত হবে ভিক্ষার অস্ত্র হিসেবে, অধিক আয়ের আশায় হয়তো তাকে বিকলাঙ্গও করে দেয়া হবে। আর ভাগ্যগুনে শারিরিক বিকলাঙ্গতা থেকে বেঁচে গেলেও নয়/দশ বছর বয়স(হয়তো তার চেয়েও কম) থেকেই সে হবে একপাল নরপশুর নারকীয় লালসা আর জৈবিক চাহিদা মিটানোর শিকার.. এক সময় সেও হয়তো মায়ের মতো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে অথবা বেঁচে থাকার জন্য আপন করে নিবে অন্ধকাচ্ছন্ন এক অভিশপ্ত পথ!!
উপরের যে কোন একটি যে তার জীবনের পরিনতি তা জানতে কোন জ্যোতিষ শাস্ত্রের প্রয়োজন হয়না।

আমার উদ্বেগ দেখে ঘনিষ্ঠবন্ধু বলেই বসলেন যে তাঁকে যেহেতু বাংলাদেশে প্রতিদিন এমন দৃশ্য দেখতে হয়, এই ছবি তাঁকে আলোড়িত করছেনা।

তাঁর বক্তব্য রূঢ় হলেও বাস্তবতা এ কথা মানি, শুধু আমরা এটা ভুলে যাই যে এই বাস্তবতাটা আমদেরই সৃষ্টি!
এমন দৃশ্য বাংলাদেশের পথে ঘাটে খুব বিরল নয়। সমস্যা হলো আমরা এসব দৃশ্য স্বাভাবিক ভাবে নিতে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে কেউ এসব নিয়ে ভাবতে গেলে তা নিতান্তই আদিখ্যেতা মনে হয়। আমাদের এই ভাবনাটা, এই মানসিকতা আমাদের সমাজ, রাষ্ট্রতন্ত্রকে ইগনোরন্টে করে রেখেছে.. তারা এসব বিষয়ে নিজেদের কোন দায়িত্ববোধ করেননা, এসব তাদের মাথা ব্যাথা নয়... এমনটা থাকবেই তাই এটা সমাধানের মতো কোন সমস্যা নয়।

এধরনের দৃশ্য মেনে নিতে অ্ভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, আজ বাংলাদেশে এটাই স্বাভাবিক.. আজ দেশজুড়ে ধর্ষন আর হত্যার যে নারকীয় উৎসব তাও আমরা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেবার প্রক্রিয়ায় আছি, সেদিন হয়তো দুরে নয় যখন আমাদের চোখের সামনে, হয়তো উৎসব মুখর পহেলাবৈশাখেই সকলের সামনে ধর্ষনের ঘটনা ঘটবে, আমরা স্বাভাবিক ঘটনা ভেবে দৃষ্টি সরিয়ে নিবো। খুব বেশি হলে হয়তো ধর্ষিতার আর্তচিৎকারে বিরক্ত হবো!!!

আমি জানিনা এই ছবি এভাবে আলোড়িত করেছে কেনো!!
ছবিটি দেখে ভয়ংকর মানসিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়... শিশুটিকে সহজে নিয়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায়, এতীমখানা, অথবা হয়তো কোন ধানাঢ্য পরিবারে(দেশে অথবা বিদেশে) দত্তক...তবে তাকে মাতৃস্নেহ'র মতো অমূল্যসম্পদ থেকে বন্চিত করতে ইচ্ছে করছিলোনা। শুধু তাই নয়, ভদ্রমহিলা এভাবে পথে পরে থাকলে আজ এই শিশুর ব্যবস্থা করলেও আগামীতে এমন আরেকজনের জন্ম দিবেন তা প্রায় নিশ্চিত ভাবে বলা যায়! খোঁজ নিতে চেষ্টা করি এমন কোন প্রতিষ্ঠানে ভদ্রমহিলার পূণর্বাসন সম্ভব কিনা... দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এমনকোন প্রতিষ্ঠানের সন্ধান এখনও পাইনি!

এখন মনে হয় সিস্টেমের দায়িত্বহীনতা আর ব্যর্থতার কাছে আমার অসহায় নতি স্বীকারের পালা!!!!!



ছবি সুত্র
১২৪টি মন্তব্য ১১৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×