সিয়ার্স টাওয়ারের প্রবেশ পথে লম্বা লাইন, ইংরেজী "S" অক্ষরের পর ও আরো কয়েকটি প্যাঁচ! সেখানে যখন অপেক্ষা করছি, চোখ পড়লো অদুরে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্রমহিলার দিকে। বেশ ভীত চোখে দেখছেন মনে হলো। আমি নিজেও মাঝে মাঝে কিছু বেপারে একটু বেশি ঘাবড়ে যাই, তাই অন্যকেউ অকারনে ভয় পেলে বুঝতে পারি। বেচারীর দোষ দেয়া যায়না, তখন মাঝে মাঝেই লাল, কমলা এলার্টের খবর আসছে, তার উপর এসব আতংকের শুরু এর চেয়েও উঁচু দুটি দালানের ধ্বংস থেকে। আর আমার গ্রুপটির সবাই বেশ লম্বা আর সমবয়সী, ভয় তো পেতেই পারে। বেশ কিছু সময় পরও ওনার শংকা কাটছেনা দেখে মনে হলো, এগিয়ে গিয়ে বলি," ভয়ের কিছু নেই, এই যে পয়সা খরচ করে ১৪৫৪ ফুট উঁচু সিয়ার্স টাওয়ার দেখতে এসেছেন, এই টাওয়ারের প্রধান স্থপতি আর আমি এক সুত্রে গাঁথা, সেই সুত্রটির নাম বাংলাদেশ"।
অপেক্ষার পালা শেষ হলো, এক সময় আমরা টাওয়ারের ১০৩ তলার স্কাই ডেকে পৌঁছে যাই। এই অবজারভেশন ডেকটি ক্লোজড, কাঁচের দেয়ালে ঘেড়া, বাইরে বেরুনোর উপায় নেই। কাঁচের ভিতর দিয়ে যেটুকু দেখা যায়। বাইরের দৃশ্য দেখে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে এমন সব স্থান বুঝেই এধরনের টাওয়ারগুলো সাধারনত বানানো হয়। নতুন করে শিকাগো দেখা, লেক মিশিগানের সৌন্দর্য্য আর শহরটির স্কাই লাইন দেখা, প্রতোটি এ্যঙ্গেল থেকে নিজস্ব সৌন্দর্য্য।
টাওয়ার থেকে নেমে বেড়িয়ে যাওয়ার পথে থমকে যেতে হলো। ছোট্ট একটি করিডোরের দেয়ালে ব্রোন্জের ম্যুরালের মতো আর সামনে একটি ব্রোন্জের আবক্ষ ভাস্কর্য। বড় বড় অক্ষরে লেখা "এফ আর খান", দেয়ালে তাঁর প্রতি সন্মান ও স্বীকৃতি জানিয়ে কয়েকটি লাইন। The Structural Engineers Associaion of Illinois Recognizes Fazlur Rahman Khan as one of The great Structural Engineers of Our Time.আনন্দে চিৎকার করে সবাইকে ডেকে দেখাতে ইচ্ছে করছিলো!! অন্যরকম এক ভালোলাগায় মন ভরে গেছে, শিকাগো শহরে এর চেয়ে সুন্দর, এর চেয়ে আনন্দদায়ক আর কিছু নেই মনে হলো।
সেখানে কতোক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম জানিনা, অন্যদের ডাকে যখন সম্বিৎ ফিরে, সেই ভাস্কর্য্যের ছবি তুলতে যেয়ে লক্ষ্য করি চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। সেখান থেকে বেড়িয়েও কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম, এমন কিছু আশা করে টাওয়ারে যাইনি বলেই হয়তো। এভাবে চোখ ভিজিয়ে দেয়া Pleasant surprise পেতে কার না ভালো লাগে! আমার সৌভাগ্য, এফ আর খানের ব্রোন্জ মুর্তি দেখার অনুভূতির মতো আরো কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। যেদিন ডঃ ইউনুসের নোবেল জয়ের খবর পেলাম, যেদিন নিউ ইয়র্কের সেই বাংলাদেশী ক্যাব চালকের খবর(যিনি তাঁর ক্যাবে রেখে যাওয়া যাত্রীর হাজার ডলারের হীরা ফেরত দিতে অন্য একটি এলাকা থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে আগের গন্তব্যে ফিরে সেই যাত্রীকে খুঁজে বের করেছিলেন) আমেরিকার কয়েকটি প্রধান সংবাদ মাধ্যমে জানালো, সেসব দিন শিকাগোর মতো চোখ ভিজে উঠেছিলো। ঝাপসা চোখের সামনে শুধু ভেসে উঠে লাল সবুজে আঁকা পতাকা, হাজার হাজার মাইল দুরের ছোট্ট একটি দেশ.. মনে মনে বলি...
"তুমি আমার স্বপ্ন হাজার
বুকেরই নিঃশ্বাস
তোমায় নিয়ে যায় কি ধরা
বাজীর কোন তাস"
আমাদের সময়
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৩২