somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি আমার স্বপ্ন হাজার...

০৮ ই জুলাই, ২০০৭ সকাল ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কয়েক বছর আগে শিকাগো শহরের ডাউন টাউনের চমৎকার কিছু নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থান দেখেছিলাম। শিকাগো নেভী পিয়ারের অসাধারন সৌন্দর্য্য, লেক মিশিগানে অগুনিত বকের মতো ভেসে বেড়ানো শতশত বোটের দৃশ্য, ১৫০ ফুট উঁচু "ফেরিস হুইলে" বসে ডাউন টাউনের স্কাইলাইন দেখে, আরো অন্যান্য সব মজার রাইড ও ইভেন্ট উপভোগ শেষে ক্লান্ত। দুপুরের খাবারের পর সবাই ঘরে ফিরতে উৎসুক। তবে সব আনন্দই অপূর্ণ থেকে যাবে যদি "সিয়ার্স টাওয়ার" দেখা না হয়।

সিয়ার্স টাওয়ারের প্রবেশ পথে লম্বা লাইন, ইংরেজী "S" অক্ষরের পর ও আরো কয়েকটি প্যাঁচ! সেখানে যখন অপেক্ষা করছি, চোখ পড়লো অদুরে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্রমহিলার দিকে। বেশ ভীত চোখে দেখছেন মনে হলো। আমি নিজেও মাঝে মাঝে কিছু বেপারে একটু বেশি ঘাবড়ে যাই, তাই অন্যকেউ অকারনে ভয় পেলে বুঝতে পারি। বেচারীর দোষ দেয়া যায়না, তখন মাঝে মাঝেই লাল, কমলা এলার্টের খবর আসছে, তার উপর এসব আতংকের শুরু এর চেয়েও উঁচু দুটি দালানের ধ্বংস থেকে। আর আমার গ্রুপটির সবাই বেশ লম্বা আর সমবয়সী, ভয় তো পেতেই পারে। বেশ কিছু সময় পরও ওনার শংকা কাটছেনা দেখে মনে হলো, এগিয়ে গিয়ে বলি," ভয়ের কিছু নেই, এই যে পয়সা খরচ করে ১৪৫৪ ফুট উঁচু সিয়ার্স টাওয়ার দেখতে এসেছেন, এই টাওয়ারের প্রধান স্থপতি আর আমি এক সুত্রে গাঁথা, সেই সুত্রটির নাম বাংলাদেশ"।

অপেক্ষার পালা শেষ হলো, এক সময় আমরা টাওয়ারের ১০৩ তলার স্কাই ডেকে পৌঁছে যাই। এই অবজারভেশন ডেকটি ক্লোজড, কাঁচের দেয়ালে ঘেড়া, বাইরে বেরুনোর উপায় নেই। কাঁচের ভিতর দিয়ে যেটুকু দেখা যায়। বাইরের দৃশ্য দেখে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে এমন সব স্থান বুঝেই এধরনের টাওয়ারগুলো সাধারনত বানানো হয়। নতুন করে শিকাগো দেখা, লেক মিশিগানের সৌন্দর্য্য আর শহরটির স্কাই লাইন দেখা, প্রতোটি এ্যঙ্গেল থেকে নিজস্ব সৌন্দর্য্য।

টাওয়ার থেকে নেমে বেড়িয়ে যাওয়ার পথে থমকে যেতে হলো। ছোট্ট একটি করিডোরের দেয়ালে ব্রোন্জের ম্যুরালের মতো আর সামনে একটি ব্রোন্জের আবক্ষ ভাস্কর্য। বড় বড় অক্ষরে লেখা "এফ আর খান", দেয়ালে তাঁর প্রতি সন্মান ও স্বীকৃতি জানিয়ে কয়েকটি লাইন। The Structural Engineers Associaion of Illinois Recognizes Fazlur Rahman Khan as one of The great Structural Engineers of Our Time.আনন্দে চিৎকার করে সবাইকে ডেকে দেখাতে ইচ্ছে করছিলো!! অন্যরকম এক ভালোলাগায় মন ভরে গেছে, শিকাগো শহরে এর চেয়ে সুন্দর, এর চেয়ে আনন্দদায়ক আর কিছু নেই মনে হলো।

সেখানে কতোক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম জানিনা, অন্যদের ডাকে যখন সম্বিৎ ফিরে, সেই ভাস্কর্য্যের ছবি তুলতে যেয়ে লক্ষ্য করি চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। সেখান থেকে বেড়িয়েও কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম, এমন কিছু আশা করে টাওয়ারে যাইনি বলেই হয়তো। এভাবে চোখ ভিজিয়ে দেয়া Pleasant surprise পেতে কার না ভালো লাগে! আমার সৌভাগ্য, এফ আর খানের ব্রোন্জ মুর্তি দেখার অনুভূতির মতো আরো কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। যেদিন ডঃ ইউনুসের নোবেল জয়ের খবর পেলাম, যেদিন নিউ ইয়র্কের সেই বাংলাদেশী ক্যাব চালকের খবর(যিনি তাঁর ক্যাবে রেখে যাওয়া যাত্রীর হাজার ডলারের হীরা ফেরত দিতে অন্য একটি এলাকা থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে আগের গন্তব্যে ফিরে সেই যাত্রীকে খুঁজে বের করেছিলেন) আমেরিকার কয়েকটি প্রধান সংবাদ মাধ্যমে জানালো, সেসব দিন শিকাগোর মতো চোখ ভিজে উঠেছিলো। ঝাপসা চোখের সামনে শুধু ভেসে উঠে লাল সবুজে আঁকা পতাকা, হাজার হাজার মাইল দুরের ছোট্ট একটি দেশ.. মনে মনে বলি...

"তুমি আমার স্বপ্ন হাজার
বুকেরই নিঃশ্বাস
তোমায় নিয়ে যায় কি ধরা
বাজীর কোন তাস"

আমাদের সময়
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৩২
৪৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×