ছাগল একটা সুন্দর এবং নিরিহ প্রাণী । সারাক্ষণ এটা আমাদের আশেপাশে থাকে । ছাগলের সাথে মানুষের সম্পর্ক উপরের ছবির মতোই হওয়া উচিত ছিল । তা নয়, আমাদের ভাষায় নিকৃষ্টতম শব্দ হলো 'ছাগু', যা ছাগলের প্রতিশব্দ । আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা ফাকিস্থানিদের দালালি করেছিল এবং এখনো যারা চেতনায় এবং খেলাধুলায় ফাকিদের দালালি করে তাদের জন্য 'ছাগু' শব্দটা বরাদ্ধকৃত ।
কিন্তু কেন এমন হলো, ছাগলের মত নিরিহ একটা প্রাণীকে কেন আমরা রাজাকারের মত নিকৃষ্ট প্রাণীর সাথে তুলনা করব ? আমাদের ভাষায় আর কি কোন শব্দ ছিল না ? 'ছাগু' শব্দটা কি করে আমরা পেলাম, এটা নিয়েই আজকের গবেষণা পোস্ট ।
'ছাগু' নিয়ে গবেষণার শুরুতেই একপাল ছাগল আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়, 'ছাগল বন্ধন' ডাক দিয়ে রাস্তাঘাট সবকিছু অচল করে দেয়


যাইহোক, অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ছাগলদের রাস্তা থেকে সরালাম । এবার আমরা আমাদের গবেষণায় মন দেই । শুরুতেই আমরা দেখে নেব ছাগলদের সম্পর্কে 'উইকিপিডিয়া ' কি বলে?
> ছাগলঃ (Chagala) শিং ও ছোট লেজ বিশিষ্ট তৃণভোজী এবং রোমন্থক পশু বিশেষ ।
> ছাগুঃ ১) রাজাকার, রাজাকারের বাচ্চা/ অনলাইনে রাজাকার বিদ্বেষী গালি বিশেষ ।
২) বাঙালি/ বাংলাদেশী হয়েও ফাকিস্থান প্রেমী ।
> ছাগলঃ (মাড়খোর, এক ধরণের এন্টিলোপ) ফাকিস্থানের জাতীয় পশু । (এক্কেবারে ঠিক আছে

> ছাগলাঃ (আহমেদ গোলাম আলি ছাগলা ) ফাকিস্থানের জাতীয় সংগীতের কম্পোজার । (এমনি এমনি কি আর ফাকিগো ছাগু কই

ছাগলের প্রকারভেদঃ
"সকল খাশিই ছাগল, কিন্তু সকল ছাগল খাশী নয়" এই মহান বাণীটির মর্মার্থ পুরোটা বুঝতে হলে নিচের ছবিটা দেখতে হবে,
খাসীর জীবনচক্রঃ
পাঠাঃ অন্ডকোষ বিশিষ্ট ছাগলকে পাঠা বলা হয় ।
খাসিঃ যে ছাগলের দেহ থেকে অপারেশনের মাধ্যমে অন্ডকোষ অপসারণ করা হয় তাকে খাসী বলে । অন্ডকোষ অপসারণের প্রক্রিয়াকে 'খাসীকরণ' বলা হয় ।
এবার একটা শিক্ষিত ছাগলের গল্পঃ শুনি,

এক লোক একটা স্মার্ট ইংলিশ জানা ছাগল কিনতে চায় । অনেক খোঁজাখুজির পর অবশেষে এক চালাক ছাগল বিক্রেতার খপ্পড়ে পড়ে । বিক্রেতা জানায় তার ছাগল ইংলিশে কথা বলতে পারে । লোকটি বললো পরীক্ষা করে দেখতে চাই । বিক্রেতা তখন ছাগলের পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-বিক্রেতাঃ এই ছাগল, ইংরেজি এপ্রিল মাসের পর কি মাস বল?
-ছাগলঃ মে...
-বিক্রেতাঃ এই ছাগল এবার বল, জুন মাসে আগে কি মাস?
ছাগল- মে...
আরেকটা গল্প, প্রেম, ফ্যাশন আর একটি ছাগল (এটা শুধুমাত্র ব্লগের আপুদের জন্য


আচ্ছা, প্রেম ভেঙ্গে গেলে বা ছ্যাকা খেলে কি করেন? না না, কান্নাকাটি, মারামারি বা মন খারাপের কথা বলছি না । আমি জানতে চাইছি পুরনো উপহার গুলো নিয়ে কি করেন? আমি এই পুরনো উপহারগুলোকে কিভাবে ফ্যাশনেবলি ব্যবহার করা যায় তার উপায় বাতলে দিচ্ছি ।
প্রথমেই প্রমান সাইজের একটা ছাগল কিনুন । এর পর আপনার সাবেক প্রেমিক, আপনাকে উপহার দেয়া পোষাক বা জামা ছাগলটাকে পড়ান । স্কার্ফ বা ব্যান্ডানা নিয়ে শিংগুলোকে একটু স্টাইলাইজ করে নিতে পারেন । উপহারে আংটি পেয়ে থাকলে তা ছাগলের লেজে পড়িয়ে দিন । আর হার টা বকলস এর সাথে টিম-আপ করুন । উপহার পাওয়া কসমেটিক গুলোও ব্যবহার করতে ভুলবেন না কিন্তু । এর পরই আসল কাজ, আপনার সাবেক প্রেমিকের কোন সিংগেল বা ফ্যামিলি ছবি থাকলে তা ছাগলটার গলায় ঝুলিয়ে দিন । এবার ছাগলটাকে আপনার পুরনো প্রেমিকের বাড়িতে পাঠিয়ে দিন । (নিচের ছবির মত


এবার অন্যরকম খবর! "পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায় " বাঙালির এই প্রবাদ দিব্যি কাজে লাগিয়ে দিয়েছে মার্কিন নৌবাহিনী । ছাগলের সবকিছু খেয়ে ফেলার অভ্যাস কাজে লাগিয়ে বিশেষ মিশনে পাঠানো হয়েছে একদল ছাগলকে । সানফ্রান্সিসকোর রেললাইনের দুইপাশ প্রেইরী ঘাসে ভরা থাকে । রেলগাড়ি চলার সময় সামান্য স্ফুলিঙ্গ থেকেই আগুন লেগে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে । রাসায়নিক দিয়ে ঘাস নির্মূলে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা থাকায় পরিবেশ বান্ধব 'ছাগল পদ্ধতি' কাজে লাগিয়েছে তারা


গল্প করতে করতে আমরা ছাগল গবেষণার যাবতীয় তথ্য উপাত্ত যোগার করে ফেলেছি । এবার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করার পালা ।
'ছাগু' গবেষণার সামারি বা সারাংশ তিনটা ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করা হলো ।
(১) আলবদর কমান্ডারপুত্র প্রগতিশীল ব্লগারদের বেইসবল ব্যাট দিয়ে পেটানোর হুমকির প্রতিবাদে ব্লগাররা শিম্পাঞ্জি দিবস পালন করে । দুষ্ট ছেলে অরুপ বেইসবল ব্যাট হাতে শিম্পাঞ্জির ছবি দিয়ে পোস্ট দেয়, আর এই ছবিই তখন হয়ে উঠে পাকি রাজাকারদের প্রতীক ।
(২) পরবর্তিতে ব্লগজুড়ে ফাকিপ্রেমী ব্লগারদের সাথে প্রগতিশীল ব্লগারদের ফাইট চলতে থাকে । ফাকিদের খোড়া যুক্তি অনেকের কাছেই ছাগলের ম্যাঁ ম্যাঁ মনে হতে থাকে । তখন ব্লগার 'অরুপ' আরেকটা ছবি দেন, যেখানে দেখা যায় একটা রামছাগলের মাথা লালত্রিভূজ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসছে । দুষ্টু ব্লগাররা এরপর 'রামছাগল দিবস' পালন করেন, আর এই রামছাগল হয়ে উঠে ফাকিদের প্রতিক ।
(লালত্রিভূজের ভেতর রামছাগল কেন ? এই প্রশ্নের উত্তর লেখক দিয়ে যান নাই । তাই আমাকে কেউ এটা নিয়ে প্রশ্ন করে বিব্রত করবেন না


(৩) ব্লগের এক দুষ্টু কবি ছাগুরামকাব্য লিখে হৈচৈ ফেলে দেন । ব্যাস, 'ছাগুরাম' শব্দটা ব্লগারদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠে । আর এই 'ছাগুরাম' শব্দটাই পরবর্তিতে বিবর্তিত হয়ে এখন 'ছাগু' হয়ে উঠেছে । '
ছাগু শব্দটা আমরা কিভাবে পেলাম, এর মোটামুটি একটা ইতিহাস আমরা জানলাম । তবে ঢালাওভাবে বা শুধু শুধু কাউকে 'ছাগু' ট্যাগ দেয়া ঠিক নয় । 'ছাগু' শব্দটি শুধুমাত্র আমাদের মহান স্বাধীনতার বিরোধী এবং জঙ্গীবাদি গোষ্ঠির জন্য নির্ধারিত । আর ট্যাগবাজি-গালিবাজি না করে যুক্তি দিয়ে, তথ্য দিয়ে, স্যাটেয়ার করে, খোঁচা দিয়ে, পঁচায়ে দিয়ে কিংবা শুধুমাত্র নির্বোধ হাসির পাত্র বানিয়ে কাউকে ঘায়েল করাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা । আর এতে ছাগুরা যেমন উপহাসের পাত্র হয়ে দাঁড়াবে, আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বেঁচে যাবে নীপিড়ন-ধর্ষনের হাত থেকে ।
শেষে আরেকটা কথা না বলে পারছি না । যেকোন বিপ্লব বা সংগ্রামের সফলতার পেছনে নাগরিক সাংস্কৃতিক পটভূমি নির্মান খুবই জরুরী । ফরাসী বিপ্লব এবং রাশান বিপ্লবের পেছনের পটভূমি সেখানকার লেখক-বুদ্ধিজীবি শ্রেণী আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন । আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পেছনেও বায়ান্ন'র ভাষা আন্দোলন এবং তদপরবর্তি নাটক-উপন্যাস-কবিতা-গান-সিনেমা এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক আন্দোলন বিশাল ভূমিকা রেখেছিল । এমনকি অস্ত্র হাতে যুদ্ধকরা মুক্তিসেনাদের মনোবল বাড়ানোর পেছনে মুক্তির গান-কবিতা আর এমআর মুকুলের স্যাটেয়ার টনিকের মত কাজ করত । মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি পড়লে তাদের আত্মত্যাগের পেছনে সাংস্কৃতিক প্রণোদনা স্পষ্ট হয়ে উঠে । যদি গালিবাজি করে দেশ স্বাধীন করা যেত কিংবা বিপ্লব করা যেত, তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র-গান-কবিতা-চেতনা ফেলে ঘরে বসে গলা চড়িয়ে গালিবাজি করেই তা সমাধা করত । কিন্তু সেটা যে কখনোই সম্ভব না, এটা আজকের ভার্চুয়াল গালিবাজদের কে বোঝাবে ??
স্বাধীনতা দিবসের মাসে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ।