somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হলকাস্ট এর হেজিমনিক বয়ান বনাম ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তিমূল

২০ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিটলারের ইহুদি নিধন বা হলকাস্ট এর দায় মোছাতে (?) পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সমূহ [ব্রিটেন, ফ্রান্স. ] ১৯৪৮ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা ইহুদীদের এনে ফিলিস্তিনের জমি দখল করে তৈরি করে কৃত্রিম রাষ্ট্র ইসরাইল। এসব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বক্তব্য হচ্ছে, “ যেহেতু হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদের গণহত্যা করছে সেহেতু তাদেরকে আলাদা একটা রাষ্ট্র দেয়ার মাধ্যমেই এই ইউরোপীয় আধুনিক পাপ মোচন সম্ভব!” কিন্তু হলকাস্ট এর সত্যতা যাচাই নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন গবেষণা হয়নি, বরং সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়ার অব্যাহত প্রচার- প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে এটাই আজ হেজিমনিক সত্য! কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে হিটলার ইহুদি নিধন করলেও একে মাত্রাতিরিক্ত অবিশ্বাস্য অতিরঞ্জনের মাধ্যমে ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সেই মিথিকেল আবেগের উপর ভিত্তি করে তাদের জন্য আলাদা কৃত্রিম রাষ্ট্র গড়ার বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মানবিক ভিত্তিমূল প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বার্নার্ড লুইস এর মতে, “ হলকাস্ট সম্পর্কে ইতিহাসের অবস্থান হচ্ছে, এটা কখনোই ঘটেনি, এটা ছিল অতিরঞ্জন”! ডেভিড আরভিন , দেবরথ লিপস্টাড, আর্নস্ট যান্দেল এর মত অনেক পশ্চিমা ইতিহাসবিদ একে অতিরঞ্জন বলেছেন। ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ এর মতে, “ ইহুদীদের গণহত্যা করা হয়েছে বলে তারা (পশিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং যায়নবাদিরা) একটা মিথ তৈরি করে এবং এতে বিশ্বাস স্থাপনকে তারা ঈশ্বর, ধর্ম এবং নবীদের উপর বিশ্বাসের চেয়ে বেশি পবিত্র জ্ঞান করে। তাদের দেশ সমূহে গড এর উপর বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেও কেউ কিছু বলবে না, কিন্তু কেউ যদি হলকাস্টকে অস্বীকার করে তবে যায়নবাদি মিডিয়া এবং যায়নবাদিরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।“ আহমাদিনেজাদ আরও বলেন, “ ইসরাইল রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে একটা মিথ্যা এবং মিথিকাল দাবি থেকে। পশ্চিমা শক্তি সমূহই এই মিথ তৈরি করে”। ২০০০ সালে হামাস একটা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে ঘোষণা দেয়, “ তথাকথিত হলকাস্ট হচ্ছে মিথিকাল আবিষ্কার! ২০০৯ সালে হামাস স্কুলের পাঠ্যক্রমে হলকাস্ট অধ্যয়নের উপর আপত্তি জানায় কেননা তাদের মতে, “ এটা হচ্ছে যায়নবাদিদের দ্বারা আবিষ্কৃত মিথ্যা” এবং হলকাস্ট অধ্যয়নকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করে হামাস। হলকাস্ট অস্বীকার ইউরোপের ১৭টি দেশে [অষ্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, চেক রিপাবলিক, ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইসরাইল, লিথুনিয়া, লিচেন্সতাইন, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, সুইজারল্যান্ড] আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ! প্রতিটি দেশেই আইন করে বলা আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হিটলার লাখ লাখ ইহুদীদের নিধন করেছেন এটা অস্বীকার করা যাবে না! অর্থাৎ হলকাস্ট এর সত্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন এমনকি ঐতিহাসিক গবেষণাও করা যাবে না, এটা অস্বীকার করলেই ব্লাসফেমির অপরাধে জেল জরিমানার খড়গ নেমে আসে তার উপর। ফ্রান্সের খ্যাতিমান দার্শনিক রোজার গারদীকে হলকাস্ট এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের অভিযোগে ৫ বছর জেল এবং লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। মতপ্রকাশের অধিকার আর বাক স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার পশ্চিমা শক্তি কর্তৃক হলকাস্ট নিয়ে গবেষণা করাকে নিষিদ্ধ করা এবং গবেষণাকারীদের শাস্তি দেয়ার বিধান /আইনই প্রমাণ করে হলকাস্ট এর সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ !

ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার পেছনে যে হলকাস্টকে (সেটা সত্য বা মিথ্যা যাই হোক) দাঁড় করানো হয়েছে সেই ইসরাইলই ফিলিস্তিনে ৬৪ বছর ধরে গণহত্যা বা হলকাস্ট চালিয়ে আসছে!

আবার আমরা যদি হলকাস্টকে সত্য বলেও ধরে নেই তাহলেও আমাদের বলতেই হচ্ছে, ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার জন্য কেন ফিলিস্তিনকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে? কেন নিজেদের আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হবে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে? কেন শরণার্থী শিবিরে এক জীবন কাটিয়ে দিতে বাধ্য করা হবে তাদের? কেন ফিলিস্তিনিদের উপর লাগাতার বছরের পর বছর গণহত্যা চালাবে ইসরাইল অথচ এই ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক ভিত্তি নাকি গণহত্যা বা হলকাস্ট? ইউরোপ কি পারতো না তাদের কিছু ভূমি ছেড়ে দিয়ে ইহুদীদের আবাসন এর বাবস্থা করতে? তা না করে ফিলিস্তিনি আরব মুসলমানদের কেন ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হবে আর যারা নিজ ভূমিতে থাকবেন তাদের অবরোধ দিয়ে খাদ্য, ওষুধ , জ্বালানীর অভাবে জীর্ণ শীর্ণ করা হবে এরপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে, বিমান হামলা করে একে একে তাদের হত্যা করা হবে? জার্মানির আধুনিক পাপের বোঝা কেন ফিলিস্তিনিদের বহন করতে হবে? ইউরোপের নির্মমতার দায় কেন আরবকে নিতে হবে? তাহলে বিষয়টা মূলত ইহুদী নিধন/ হলকাস্ট এর দায়মুক্তি নয়! ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতি যদি আমরা না বুঝি তাহলে ইসরাইলি গণহত্যা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমরা কিছুই করতে পারব না! ইসরাইলকে আরব এর কেন্দ্রস্থলে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে মূল উপাদান হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য এর দেশগুলোর রাজনীতি, অর্থনীতি এবং আদর্শিক অবস্থানকে নিয়ন্ত্রণে রেখে তাদের উপর সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ করা, মধ্যপ্রাচ্য এর তেল সম্পদ লুণ্ঠনকে নিরঙ্কুশ করা এবং সর্বোপরি এসব দেশের সাম্রাজ্জবাদ বিরোধী বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের প্রতিরোধের বন্দোবস্ত করা। তাই ইসরাইল এর সহযোগিতায় আমরা সব সাম্রাজ্যবাদী দেশের মাঝে চরম ঐক্য দেখতে পাই।



হলকাস্ট এর মত হেজিমনিক বয়ান কতটা সত্য তার উপর বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা তাই এখন সময়ের দাবি, ইসরাইলী আগ্রাসন প্রতিরোধের জন্য ইসরাইল প্রতিষ্ঠার এই মানবিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তিমূল (ইউরোপীয়দের মতে, আমার মতে নয়) কে নিয়ে কাজ করা দরকার, কিন্তু কে সেই গবেষণা পরিচালনা করবেন? চরম যুক্তিবাদী আর রেনেসাঁর আলোয় আলোকিত ইউরোপ যে এর উপর গবেষণাতো দূরের কথা এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকেই পাপ/অপরাধ মনে করে! যেমনটা মধ্যযুগের ইউরোপীয় গির্জা ধর্মের দোহাই দিয়ে গবেষণাকে নিরুৎসাহিত করতো এই উত্তরআধুনিক / অত্যাধুনিক যুগে এসেও আলোকিত (?) ইউরোপ যে সেই অন্ধকার পথে হাঁটছে তার সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির কারণে এটাই বেশি পীড়াদায়ক ।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১১:১৬
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকার প্রথম তেলের পাম্প

লিখেছেন সহীদুল হক মানিক, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৮

প্রায় ৪০০ বছর আগে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে উঠেছিলো ঢাকা শহর। এই শহরে প্রথম কীভাবে গাড়ি এসেছে সেই ইতিহাস অনেকেরই জানা আছে। শুরুর দিকে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন সরকার কি ইসলাম কুপানোর নতুন মিশন নিবে?

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭

নতুন সরকারে এনজিও পন্থী লোকজন দিয়া ভরপুর। তারপর আছে লালনবাদী আর আছে পাক্কা নাস্তিকগণ। দেশে ইসলাম কুপিয়ে ইন্ডিয়া আর পশ্চিমা দেশগুলোকে খুশি রাখা ছিল তার ক্ষমতার মূল উৎস। খবরে দেখলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেষ পর্যন্ত ভারতে ইলিশ পাঠাইতে বাধ্য হইলো?

লিখেছেন অনুপম বলছি, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৮

আবরার ফাহাদ আর আসিফ নজরুলকে অপমান করলো এনজিওগ্রাম সরকার। ৫০০ মেট্রিক টনের জন্য তারা আন্দোলন করেছিলো কিন্তু এখন ৩ হাজার মেট্রিক টন পাঠাইলো। ভালো হইছে জাতি এখন ভন্ড মিথ্যুকদের নিজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা সময়ের কাছে একদিন.....

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮


আমার ছেলেবেলায় আমি বাংলাদেশের নানাস্থানে ভ্রমন করেছিলাম। এর পেছনে কারণ ছিলো আমার কিছু পরমাত্মীয়ের সরকারী কর্মকর্তা হবার সুবাদে আমাদের ছেলেবেলার গরমের ছুটি, শীতের ছুটি ছাড়াও নানাবিধ আচার অনুষ্ঠান পালনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নয় বছর সাত দিন (নবম বর্ষপূর্তি পোস্ট)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩২

এ ব্লগে আমার প্রথম পোস্টটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, রাত ১১টা ২৬ মিনিটে। তারপর, ২০১৬ সাল থেকে আমি নিয়মিতভাবে বর্ষপূর্তির এই দিনটিকে স্মরণ করে পোস্ট লিখে এসেছি। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×