আজকের পর্ব সাবনেটিং।
আমার আগের কয়েকটি লেখায় বলেছিলাম কিভাবে ছোট আকারের নেটওয়ার্ক তৈরী করতে হয়। এবার আমি আলোচনা করব বড় আকারের নেটওয়ার্ক নিয়ে। বড় আকারের নেটওয়ার্ক তৈরীর সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রতিটি কম্পিউটারের জন্য একটি করে IP Address বরাদ্দ করা। কারন IPv4 এ IP Address এর সংখ্যা সীমিত। প্রথম যখন ইন্টারনেট আবিস্কার হয় তখন কেউ কল্পনা করতে পারেনি যে এটি এতটা জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হবে, তখন ইন্টারনেট শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষনার কাজে ব্যবহার করা হত। তাই ৩২ বিটের IPv4 Address কেই তারা ভেবেছিল যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ইন্টারনেট বিস্তৃত হওয়ায় IP Address সংকট দেখা দিয়েছে। তাই এই অল্প সংখ্যক IP Address নিয়েই আমাদের নেটওয়ার্ক তৈরী করতে হবে। এ কারনেই আমাদের সাবনেটিং এর প্রয়োজন হচ্ছে।
প্রথমে আমারা জানি যে, IPv4 Address কে ৪ টি ক্লাসে ভাগ করা হয়েছে, যা হলো :
CLASS A শুরু 0.0.0.0 থেকে 127.0.0.0 পর্যন্ত এবং সাবনেট মাস্ক 255.0.0.0
CLASS B শুরু 128.0.0.0 থেকে 191.0.0.0 পর্যন্ত এবং সাবনেট মাস্ক 255.255.0.0
CLASS C শুরু 192.0.0.0 থেকে 223.0.0.0 পর্যন্ত এবং সাবনেট মাস্ক 255.255.255.0
CLASS D শুরু 224.0.0.0 থেকে 239.0.0.0 পর্যন্ত [মাল্টিকাস্টের জন্য সংরক্ষিত]
CLASS E শুরু 240.0.0.0 থেকে 255.0.0.0 পর্যন্ত [রিসার্চের জন্য সংরক্ষিত]
এর মধ্যে Class A এড্রেস শেষ হয়ে গেছে এবং Class B এড্রেস প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে, ইন্টারনিকের কাছে আবেদন করে সেই আবেদনের যথার্থতা প্রমান করতে পারলেই কেবল এই ক্লাসের IP পাওয়া যায়।
এর মধ্যে কিছু এড্রেস রাখা হয়েছে Private IP Address হিসেবে সেগুলো হচ্ছে :
CLASS A শুরু 10.0.0.0 থেকে 10.255.255.255 পর্যন্ত
CLASS B শুরু 172.16.0.0 থেকে 172.31.255.255 পর্যন্ত
CLASS C শুরু 192.168.0.0 থেকে 192.168.255.255 পর্যন্ত
বড় একটি নেটওয়ার্কের জন্য যদি আপনি প্রতিটি পিসির জন্য আলাদা আলাদা আইপি এড্রেস কিনতে চান তাহলে আপনার নেটওয়ার্কটি হবে অনেক ব্যায়বহুল এবং ইন্টারনিক আপনাকে এতগুলো আইপি দেবেও না। তাই বড় নেটওয়ার্ককে যদি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করতে চান তাহলে প্রথমে বড় নেটওয়ার্কটিকে ছোট ছোট নেটওয়ার্কে (সাবনেটে) ভাগ করুন এবং IP Address হিসেবে Private IP Address Range ব্যবহার করুন। কারন Private IP Address ফ্রি এবং Private Address দিয়ে আপনি হাজার হাজার কম্পিউটারে আইপি এড্রেস বসাতে পারবেন। তবে এই প্রক্রিয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গেলে আপনাকে Router ব্যবহার করতে হবে। কারন প্রাইভেট আইপি দিয়ে সরাসরি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হওয়া যায় না, রাউটার ব্যবহার করলেই প্রাইভেট আইপির সব কম্পিউটার রাউটারের গেইটওয়ে এড্রেস ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে।
এখন ছোট ছোট নেটওয়ার্কগুলোকে রাউটারের সাথে যুক্ত করলেই একটি বড় নেটওয়ার্ক দাড়িয়ে গেল। ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য রাউটারের আউটগোয়িং পোর্টে ইন্টারনিক থেকে কেনা Public IP Address বসিয়ে দিন। তাতে আপনার নেটওয়ার্কের জন্য এতগুলো Public IP কিনতে হচ্ছে না, জাস্ট একটি Public IP হলেই চলছে এবং নেটওয়ার্কের সিকিউরিটিও বাড়বে। কারন Public IP Address দিয়ে বাইরের কেউ Private Network এ ঢুকতে পারে না।
ছোট নেটওয়ার্কে (সাবনেট) ভাগ করা ছাড়া যেকোন হোস্ট এড্রেস হয় নিম্নরুপ :
নেটওয়ার্ক আইডি + হোস্ট আইডি
এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে ইন্টারনিক আমাদেরকে যে নেটওয়ার্ক আইডি দিচ্ছে সেটিকে আমরা পরিবর্তন করতে পারবো না। কিন্তু আমরা যেসব ছোট নেটওয়ার্ক (সাবনেট) তৈরী করব সেগুলোকে ভিন্নভাবে চিহ্নিত করা দরকার। তাই আমরা নেটওয়ার্কের বিটগুলোকে অপরিবর্তিত রেখে হোস্ট আইডির কিছু বিটকে ব্যবহার করতে হবে। সাবনেট যুক্ত যেকোন নেটওয়ার্কের আইপি এড্রেস হবে নিম্নরুপ :
নেটওয়ার্ক আইডি + সাবনেট আইডি + হোস্ট আইডি
এখানে হোস্ট আইডিকে ভেঙ্গে কিছু বিট সাবনেট আইডি হিসেবে নেয়া হয়েছে। কিন্তু নেটওয়ার্ক আইডি অপরিবর্তিত রয়েছে।
সাব-নেটওয়ার্ক এড্রেস বের করার একটি পদ্ধতি হচ্ছে Binary ANDing। ANDing করার নিয়ম হচ্ছে :
1 AND 1 = 1
1 AND 0 = 0
0 AND 1 = 0
0 AND 0 = 0
একটি আইপি এড্রেস কোন সাবনেটের অন্তর্ভুক্ত তা বের করার জন্য Binary ANDing ব্যবহার করা হয়। নিচের ছবিটি লক্ষ করুন :
উপরের ছবিতে IP Address দেয়া হয়েছে 192.100.10.33 এবং সাবনেট মাস্ক দেয়া হয়েছে 255.255.255.0 এরপর আইপি এড্রেস আর সাবনেট মাস্ককে বাইনারি নম্বরে পরিবর্তন করে ANDing করতেই রেজাল্টে সাব-নেটওয়ার্ক এড্রেস 192.100.10.0 বের হয়ে এসেছে। এই ফর্মুলা ব্যবহার করে যে কোন আইপি কোন সাবনেট বা নেটের অন্তর্ভূক্ত তা বের করা সম্ভব।
এবারে আসুন দেখা যাক কিভাবে একটি বড় নেটওয়ার্কের জন্য IP Address সরবরাহ করবেন। প্রথমে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুজুন।
১। আপনি কতগুলো কম্পিউটারের জন্য IP Address খুজছেন?
২। আপনার বড় নেটওয়ার্কটিকে কতগুলো ছোট নেটওয়ার্কে (সাবনেট) ভাগ করতে চান?
৩। আপনার নেটওয়ার্কে কি ইন্টারনেট থাকবে নাকি শুধুমাত্র অভ্যন্তরীন কাজে ব্যবহার হবে?
উত্তরগুলো জেনে নিন। এখানে একটি বড় নেটওয়ার্ককে ছোট ছোট নেটওয়ার্কে ভাগ করে নেয়া সুবিধাজনক, কারন ধরুন আপনি একটি বিল্ডিং এর সবগুলো তলা নিয়ে বড় নেটওয়ার্ক তৈরী করছেন। এখানে যদি প্রতিটি তলা ছোট ছোট নেটওয়ার্কে ভাগ করা থাকে তবে তা আপনার জন্য সেটাপ+মেইনটেইন করা সুবিধাজনক।
ধরুন, আপনি 180 টি কম্পিউটার নিয়ে বড় একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করতে চান। যেখানে সাবনেট থাকবে 6 টি এবং প্রতিটি সাবনেটে হোস্ট কম্পিউটার থাকবে কমপক্ষে 30 টি। IP Address দেয়া হলো 192.168.16.0 এবং সাবনেট 255.255.255.0। কিভাবে করবেন?
কাগজ কলম নিয়ে হাতে সাবনেট ক্যালকুলেশন করার প্রকিয়া কিছুটা জটিল এবং নতুনদের জন্য সমস্যার। তাই আমি আপনাদের সাবনেট ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে সাবনেট হিসাব করার জন্য বলছি। এখান থেকে Subnet Calculator Software টি ডাউনলোড করে নিন। ইন্সটল করুন এবং রান করান, নিচের উইন্ডোটি আসবে।
এখানে IP বক্সে 192.168.16.0 লিখুন। এবার Max Subnets এ 6 দিন এবং Max hosts এ 30 বসান।
এবার সার্চ বাটনটিতে ক্লিক করুন। নিচের উইন্ডোটি পাবেন।
এখানে 6 টি নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক এড্রেস, ওই সাবনেটের রেঞ্জ এবং ব্রডকাস্ট এড্রেস দেয়া আছে। এখান থেকে টুকে নিয়ে কম্পিউটারে এড্রেসগুলো বসিয়ে দিলেই হবে। তবে মনে রাখতে হবে, নেটওয়ার্ক এড্রেস অর্থাৎ প্রথম আইপি এড্রেসটি এবং ব্রডকাস্ট এড্রেস অর্থাৎ শেষের আইপি এড্রেসটি আপনি কোন কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারবেন না। মাঝের সাবনেট রেঞ্জ এ যে এড্রেসগুলো দেয়া আছে ওগুলোই শুধু ব্যবহার করা যাবে।
এভাবে যেকোন আইপির জন্য সাবনেট তৈরী করা সম্ভব।
হাতে-কলমে সাবনেটিং শিখতে চাইলে, আমার কাছে একটি বই আছে যা পড়ে দেখতে পারেন। ডাউনলোড লিংক : Click This Link
এর পরের লেখায় আলোচনা করব সিমুলেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ভাবে নেটওয়ার্ক তৈরী করে পরীক্ষা করার পদ্ধতি এবং নেটওয়ার্কের ত্রুটি খুজে বের করা।
ধন্যবাদ।
আগের লেখাগুলো :
১। আসুন সহজে পিসি-টু-পিসি LAN করি (পর্ব – ১)
২। আসুন সহজে পিসি-টু-পিসি LAN করি (পর্ব – ২)
৩। আসুন সহজে পিসি-টু-পিসি LAN করি (পর্ব – ৩)
৪। আসুন সহজে পিসি-টু-পিসি LAN করি (পর্ব – ৫)
৫। আসুন সহজে পিসি-টু-পিসি LAN করি (পর্ব – ৬)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৩