ঘরের ভিতর ঢুকে কাপড় ছাড়তে না ছাড়তে রুনুকে ছাঁচ পিঠাটা করতে দিয়ে আর ঝুনুকে আঁখের গুড়টা বের করতে দিয়ে মা চলে গেল গোসলে। এর মাঝে ওদের খালাতো বোন ইমা এসে উঁকি দিল। একান্নবতর্ী পরিবার ওদের। তাই কারও ঘরে কিছু হলে অন্যদের জানতে বাকি থাকে না।
ইমা উঁকি দিয়েই বলল, 'ওমা এত পিঠে কার জন্যি গো?'
রুনা মুখ বাঁকা করে বলল, 'হুঁহ জানিসনে যেন? সেদিন বললাম না। আমাগির বড় খালা আসপেনে ঢাকা থেইকে। তাগার জন্যি।'
'ওমা তাই বুজি অত আয়োজন চলসে?', বলেই ছো মেরে একটা পিঠা উঠিয়ে দৌড় দিল ইমা।
রুনু তাকে তাড়া করতে না করতে মায়ের সামনে পড়ল। মা সবে মাত্র গোসল সেরে আসলেন। বললেন, 'একটা পিঠে নিয়েছে তা তাড়া করতি হবে কি জন্যি! যা গিয়ে রেডী হ'গে যা।'
রুনু, ঝুনু কাপড় চোপড় পরে রেডী হতেই মা তাদের হাতে পিঠা আর ঝোলাগুড় তুলে দিয়ে নানু বাড়ী যেতে বললেন। রুনু, ঝুনুর নানু বাড়ি উজিরঘাটা নদীর ওপারেই। বৃটিশআমলে তৈরী করা ব্রীজ আছে একটা সেটা পার হলে পরেই নানু বাড়ি। ব্রীজটা একটু বিপদজ্জনকই বলা চলে। মেইনরোড বলে সারাক্ষন দুরপাল্লার গাড়ী চলতেই থাকে ব্রীজের উপর দিয়ে। দুটো গাড়ি একসাথে উঠলে আর কোন জায়গা থাকে। অনেকদিনের অভ্যস্ত বলে, রুনু-ঝুনু জানে কখন ব্রীজের দেয়াল ঘেঁষে উঠে পড়তে হয়। কখন রাস্তা পার হতে হয়।
খাবার গুলো নিয়ে গুটি গুটি পায়ে ব্রীজটা পার করেই চোখে পড়ে পানুদার দোকান। ওদের খুব আদর করেন তিনি। পানুদা দুর থেকেই ডাক পাড়ে,
'ও মনি, নানু বাড়ি যাসস বুজি? তা অ্যাইসো মালাই খেই্যয়ে যাও।'
ঝুনু যেতে চাচ্ছিল, কিন্তু রুন বাঁধা দিয়ে বলল, 'না কাকা, আজ আমাগির খালা আসপেনে ঢাকা থেইকে। পরে আসপানে।'
নানুর বাড়ী গিয়ে দেখে সেখানে সাজ সাজ রব। নানু একলা মানুষ, কত আর করবে। তাও সপ্তাহখানেক ধরে এটা সেটা কত কিছু করে রাখছে। রুনু, ঝুনুকে দেখে নানু খুশি হয়ে উঠল।
'ভালো হইয়েছে তোরা এয়েছিস! জলদি কইরে এই বড়ি কটা তুলে রাক দিনি। আমি গোছলটা সেইরে আসি।'
রুনু, ঝুনু বড়ি তুলতে তুলতে ভাবে, কখন আসবে তাদের খালা-খালু আর খালাতো ভাইয়েরা। এবার তাদের আসার বিশেষ কারন আছে। তাই সবার মনে একটা ছোট্ট আনন্দ জুড়ে আছে এই প্রতীক্ষা। বড়ি তুলতে তুলতে তাই মুচকি মুচকি হাসতে থাকে দুই বোন।
(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০০৭ সকাল ৭:১০