somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রথম ভারত সফর। পর্ব-৩

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫। সকাল বেলা উঠে দ্রুত নিজেদেরকে তৈরী করে নিলাম। চারিদিকে চরম কুয়াশা। অন্ধকার ......। রাতে আবার বুড়ির কাশি উঠেছিলো। বমি করেছে কাশতে গিয়ে। যা খাইয়েছিলাম, সবই তুলে দিয়েছে। পরে ওকে আবার পরিস্কার করে শুতে শুতে বেশ রাত হয়েছিলো। আমরা যদিও ভোর ৬টার দিকে উঠে পড়েছিলম। তবু কেন যেনো বেশী ভোরে বের হতে পারলাম না। রামজি অবশ্য ৮টার মধ্যেই এসে পড়েছে। তাকেই আমাদের সাথে দেয়া হয়েছে। এই ক’দিনের লং ট্যুরে সেই আমাদের সাথি। লোকটি বয়স্ক এবং ভদ্র, সেই সাথে রসিক। আমরাও খুশি হলাম যে ওকে পেয়েছি। যতই তাড়াহুড়া করি না কেন, সকালে হোটেলে বুফে নাস্তা সেরে বের হতে হতে প্রায় ৯টাই বেজে গেলো।

আগ্রা যাবার পথে কিছু ছবি তাজমহল সহ









সকালে দিল্লীর রাস্তা মোটামুটি ফাকা। রোদ উঠেছে কিন্তু তার পরেও কনকনে ঠান্ডা বাতাস। দ্রুত বুড়িকে নিয়ে গাড়িতে বসলাম। লাগেজ তুলে দিলাম পিছনে। যাত্রা শুরু হলো আমাদের আগ্রার উদ্দেশ্যে। এক্সপ্রেস রোড ধরে গাড়ি চলতে লাগলো। যমুনা নদীর উপরে ব্রীজ পার হয়ে এগিয়ে চল্লো রামজির টাটা ইন্ডিগো। একটি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে ট্যাক্স দিতে হলো। এক্সপ্রেস রোড ব্যবহার করলে আলাদা ট্যাক্স দিতে হয়। রাস্তার উপরে দেখি ডাব বিক্রি করছে ভ্যানের উপরে। ঠান্ডায় আর মন চাইলো না। রামজি ট্যাক্স পে করে আবার রওনা দিলো। বিশাল চওড়া রাস্তা। ওয়েলকাম টু যমুনা এক্সপ্রেস ওয়ে লেখা সাইনবোর্ডের নিচে দিয়ে আমরা ছুটে চল্লাম। রাস্তার দু ধারে কোথাও শরিষা ক্ষেত, কোথাও ধুধু মাঠ ...... বিশাল চওড়া এই রাস্তা ধরে হিম ঠান্ডা বাতাস কেটে এগিয়ে চল্লো রামজি।

সুর্য্য উঠেছে, শিশির বিন্দুতে পড়েছে সেই সূর্যের আলো। চমৎকার পরিবেশ। অক্ষরধাম মন্দির পার হয়ে আমরা এগিয়ে চল্লাম। চলতে চলতে একটি ধাবার সামনে থামলো রামজি। আমি নামলাম এমনি। ও গেলো ফ্রেশ হতে। মা-মেয়ে গাড়িতেই বসে ঝিমোচ্ছিলো। ধাবাটি অনেক পরিচ্ছন্ন। চা, কফি সহ নানা ধরণের খাবার রয়েছে। সামনে ঘাসে ভরা লন। সেখানে আবার চারপেয়ে পাতা। অনেকে সেখানে বসে রোদ পোহাচ্ছে। রোদ উঠলেও চরম ঠান্ডা বাতাস। রামজি ফিরে এল। আবার যাত্রা শুরু হলো আমাদের। বিশাল চওড়া রাস্তার দুধারে অনেক আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে। সেগুলোর সাইজও বিশাল বিশাল। এভাবে চলতে চলতে আলীগড়কে হাতের বায়ে রেখে আমরা এগিয়ে চল্লাম আগ্রার দিকে। কিছু দূর পর পর বড় করে দিক নির্দেশনা দেওয়া আগ্রা ..... কিমি।
(
আগ্রায় ঢুকছি যমুনার উপর দিয়ে করা ব্রিজ দিয়ে )











আগ্রা ঢুকতে আমরা বেশ জ্যাম পেলাম। বেলা তখন ১টারও বেশী বাজে। প্রথমে ভেবেছিলাম হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর তাজমহল দেখবো। কিন্তু রাস্তায় যে এতো জ্যাম হবে, সেটা আমাদের জানা ছিলো না। তাই হোটেলে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে অনেক সময় লাগবে, তাই সরাসরি তাজমহলে ঢোকার সিদ্ধান্ত নিলাম। পথে যেতে যেতে হাতের ডানে পড়ে আগ্রা রেড ফোর্ট আর বামে পড়ে তাজমহল। অনেক দূর থেকেই তাজমহলের বাউন্ডারী দেয়া। তাই রাস্তা থেকেই দেখতে পেলাম কাঙ্খিত তাজমহল। সাদা শ্বেত পাথরের একটি চমৎকার স্থাপনা।

(তাজ মহলে প্রবেশ মুহুর্ত)













তাজমহলে ঢোকার জন্য খুব সম্ভব তিনটি গেট আছে। আমরা পুরানা মান্ডি গেট ব্যববহার করলাম। রামজি আমাদেরকে ওখানে ছেড়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করতে চলে গেলো। বলে দিলো কি কি করতে হবে। এই পুরানা মান্ডি গেট পর্যন্ত আসতে আমাদের অনেক সময় লাগলো। প্রচুর গাড়ি। আর আমরা এসে পৌছেছি এমন একটি সময়ে যখন মানুষ জমে গেছে অনেক। বছর শেষের ছুটি চলছে সারা ভারত জুড়ে। তাই এই অবস্থা! আমরা পুরানা মান্ডি গেটে নেমে ঢুকে পড়লাম। সেখানে অটো আছে, উটের গাড়ি আছে তাজমহলে ঢোকার গেট পর্যন্ত নিয়ে যাবে। ৪০ রুপী দিয়ে একটি অটো ঠিক করে উঠে পড়লাম। ও আমাদেরকে তাজমহলের গেটের কাছাকাছি এনে নামিয়ে দিলো। ওখানে মানতেই চোখে পড়লো বিশাল লম্বা লাইন। এই লাইন ঠেলে কখন ঢুকবো তাজমহলে আল্লাহই জানেন। আমাদেরকে দেখে একজন গাইড এগিয়ে এলো। সে তার পরিচয় পত্র দেখিয়ে হিন্দিতে বল্লো সে আমাদেরকে সুন্দর ভাবে পুরা তাজমহল ঘুরিয়ে দেখাবে। বিনিময়ে তাকে পারিশ্রমিক বাবদ সরকার নির্ধারিত ফী দিতে হবে। প্রথমে রাজী হচ্ছিলাম না। সে আবার বল্লো দেখুন আপনারা মুসলমান, আমিও মুসলমান, (বুড়ির মায়ের পোশাক দেখে সে বুঝতে পেরেছে)। আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন, ঠকবেন না। আর না বুঝিয়ে বল্লে আপনারা অনেক কিছুই বুঝবেন না। পরে রাজী হলাম। ও আমাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলো কাউন্টারের কাছে। যেখানে ফরেনারদের কাউন্টার একদম ফাকা পড়ে আছে। কিন্তু আমরা যারা নতুন আগন্তক, তাদের পক্ষে তা বোঝা একটু কঠিন। বুড়ি আর ওর মাকে এক জায়গায় দাড়া করিয়ে রেখে আমি তিনটি পাসপোর্ট নিয়ে গাইড ছাব্বির এর সাথে গেলাম। ওরা পাসপোর্ট দেখে দুটি টিকেট দিলো। বুড়ি ফ্রি। এই টিকেটের সাথে আরো ফ্রি পেলাম দুটি জুতা কাভার আর দুই বোতল পানি। বুড়ির জন্য আরো এক জোড়া জুতা কভার কিনলাম বাইরে থেকেই ২০ রুপি দিয়ে। তারপরে ছাব্বির বল্লো ওকে অনুসরণ করতে। গাদাগাদি ভীড় আর মানুষ ঠেলে আমরা তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে গেলাম। ও আমাদেরকে ফরেন গেটের কাছে নিয়ে গেলো। আমরা অন্ধের মতো ওকে অনুসরণ করছি, এছাড়া উপায়ও নাই। বেশ কয়েকটি লোহার সারি। ফরেনারদের ঢোকার জন্য যে সারি, সেটা পুরাই ফাকা পড়ে আছে। কিন্তু লোকাল লোকজনদের ভীড়ে তা বোঝার উপায় নাই।

(সাধের তাজ মহল দর্শন)















শত শত লোকের ভীড়ে আমরা এমন ফাকা একটি সারি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি দেখে খুবই মজা লাগলো। ফরেনার বলে কথা ! হিহি। ঐ সারি দিয়ে ঢুকলেই চেক পয়েন্ট। পুরুষ আর মহিলাদের আলাদা। মহিলাদের সাথে আবার ব্যাগ থাকে, তাই সেই ব্যাগও চেক করা হয়। খাবার, পাণীয় ইত্যাদি ফেলে দেয় ওরা। আমি আর ছাব্বির আগে ঢুকে দাড়িয়ে থাকলাম। বুড়ি আর বুড়ির মা একটু বাদে ঢুকলো। তাজমহলের এতো কাছে এসে পড়েছি যে ভাবতেই অন্যরকম লাগছে। ছাব্বির আমাদেরকে কিছুটা ব্রিফ করলো তাজমহল সম্পর্কে। এরই মাঝে ফটো তোলার লো জুটলো। সে ছবি তুলে দিবে। প্রাতি ফটো সাইজ বুঝে দাম। যেটা আমাদের ভালো লাগবে, সেটাই নিতে পারবো। যেগুলো ভালো লাগবে লাগবেনা, সেগুলো নেয়া লাগবে না। উনি যে সাইজটা প্রতি পিস ৬০ রুপি করে চাইলো আমরা সেটাকে ৪০ রুপিতে রাজী করিয়ে নিলাম।

তাজমহলে প্রবেশ করলাম। সুবিশাল কারুকার্য্য করা গেট। শ্বেত পাথরের সাদা স্থাপত্য। সম্রাট শাহজাহানের অমর কীর্তি। ছাব্বির জানালো এই সাদা তাজ মহলের ঠিক পিছনেই আরো একটি কালো তাজ মহল বানানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান, কিন্তু তার আগেই সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে বন্দী করেন এবং ঐ অসমাপ্ত কাজ ওভাবেই পড়ে থাকে। সেটাও আমরা ভিতরে ঢুকে দেখলাম। ওটা হলো বর্তমান যে তাজমহল তার পেছন দিকে। হেটে হেটে বাম পার্শ দিয়ে এগিয়ে গেলাম। যেখান দিয়ে ফরেনারদের ঢুকার ব্যবস্থা। ঢোকার আগে জুতার কাভার লাগিয়ে নিলাম। পুলিশ আমাদেরকে সিড়ি বেয়ে উঠতে সহায়তা করলো। সিড়ি দিয়ে উঠে আবার লাইন দিয়ে ঢোকার ব্যবস্থা। প্রচুর লোকের সমাগম। তাই বেলাইন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাজ মহলের ভেতরে বেশ অন্ধকার। ঢুকার পরেই দুটি কবর পাশাপাশি। একটি মমতাজের অপরটি শাহজাহানের। ছাব্বির বল্লো এই দুটি হলো ডামি বা নকল কবর। আসল কবর দুটি ঠিক এই কবর দুটির বরাবর নিচে। সেখানে বছরে একবার যাওয়া যায়। শাহজাহানের মৃত্যুদিবসে নিচের গেটটি খোলা রাখা হয়, যেনো মানুষ যেতে পারে। বছরের আর সমস্ত দিন নাকি বন্ধ থাকে।
(শাহজাহান মমতাজের নকল কবর-এই বরাবরই আসল কবর)



যাই হোক সেই কবর দুটির পাশ দিয়ে হেটে হেটে ঘুরে আবার বেরিয়ে এলাম চত্বরে। চার পাশ থেকে একই রকম লাগে তাজমহল। এটি তাজমহলের একটি বৈশিষ্ট্য। আরো মজার ব্যপার হলো এর চার পাশে যে চারটি মিনার রয়েছে, সেটিও এমন ভাবে তৈরী যে, যে দুটি মিনার দর্শকের সামনে থাকবে, দর্শকের কাছে মনে হবে সেদুটি ছোট, পেছনের দুটি বড়। আবার সাদা পাথরের ভিতরে খোদাই করে করে কালো পাথর বসিয়ে নক্সা করা। কোন রং এর ব্যবহার নাই। আবার সাদা পাথরের ভিতরে লাল বা সবুজ পাথর কেটে বসানো। ইরান, ইয়েমেন, পারস্য থেকে বিভিন্ন ধরণের পাথর উট, ঘোড়া আর হাতি দিয়ে আনিয়ে এই তাজমহল তৈরী করা হয়েছিলো।

(তাজমহলের পাশেই রয়েছে মসজিদ)





তাজমহলের এক পাশে একটি মসজিদ রয়েছে। আর মসজিদ আর তাজমহলের মাঝ খানে ওজুর জন্য জলাধার। ছাব্বিরকে বল্লাম নামাজ পড়েেবা। সেও রাজী হলো। পুলিশকে বলে শর্টকাট ওয়েতে আমরা মসজিদের দিক দিয়ে নেমে গেলাম। ওরে ঠান্ডা পানি! ওজু করে মসজিদে ঢুকে আসরের নামাজ ঐ মসজিদের নির্ধাতি ইমাম এর সাথে আদায় করলাম। উনি আবার নিজেকে পরিচয় করালেন এবং বল্লেন বংশ পরম্পরায় ওনারাই এই মসজিদে ইমামতি করে আসছেন। ঠান্ডা পরিবেশ। নামাজ পড়ে বের হলাম যখন, তখন ৪.৩০ বাজে। দুপুরে কিছুই খাওয়া হয়নি। তাই আর থাকতেও ভালো লাগছিলো না। আর মানেষের গাদাগাদিতে অস্থির লাগছিলো। বুড়িকে কাধে তুলে বেরিয়ে যাবার জন্য রাস্তা ধরলাম। বার কয়েক পিছনে ফিরে তাজমহলটাকে আবারো দেখে নিলাম। অদ্ভুত কারুকাজমন্ডিত এতো বড় একটি স্থাপনা! আবার কবে দেখতে আসব কিনা !

ছাব্বিরের সাথে বাইরে এলাম। সে একটি দোকান দেখালো, সরাকার দ্বারা পরিচালিত একটি দোকান। বিভিন্ন রকমের স্যুভিনির রয়েছে। তাজমহল, হাতি সহ নানা রকমের তৈজসপত্র। একটি ছোট্ট তাজমহল কিনলাম। এরই মাঝে আমাদের ছবি গুলো প্রিন্ট হয়ে এসেছে। আমরা বেছে বেছে কিছু ছবি নিলাম। বাকি গুলো ফেরত দিলাম। ছবি ওয়ালা অবশ্য বাকি সব গুলোই নিতে বলছিলো ১০০ রুপি দিয়ে। কিন্তু আমাদের ভালো লাগেনি বিধায় আর নিলাম না। ছাব্বিরকে তার পারিশ্রমিক দিয়ে বিদায় করলাম। একটি অটো করে ফিরে আসলাম পুরান মন্ডি। রামজিকে ফোনে জানিয়ে দিলাম। ও এসে আমাদেরকে নিয়ে গেলো। গাড়ি করে কিছু দূর এসে একটি হোটেলের সামনে গাড়ি থামালো রামজি, খাওয়া দাওয়ার জন্য। হোটেলে ঢুকে কি খাওয়া যায়, তাই ভাবছি। সেই পুরনো সমস্যা .... খাবো টা কি? কোনটা আমাদের ভালো লাগবে? শেষমেষ আমার জন্য অর্ডার দিলাম কাশ্মিরি পোলাও আর ওরা নিলো সাদা ভাত চিকেন , মিক্সস্ড স্বব্জি, ডাল আর সালাদ। কিছু সময় বাদে আসলো খাবার। কাশ্মিরি পোলাও প্লেটে নিয়ে দেখি বাঁশমতি চালের ভাত, মটরশুটি আর পাকা কলা স্লাইস করে কেটে দেয়া। এই হলো কাশ্মিরী পোলাও ....... !! পকা কলা দিয়ে পোলাও জীবনে কোন দিন খাইনি, আজ খেলাম। যাই হোক পেটে তো কিছু গেলো ......! খাওয়া শেষে চটপট এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়ে এলাম। থাকার হোটেলে যেতে হবে। এখান থেকে হোটেলের লোকেশনটা জেনে নিলাম। বুকিং এর কাগজটা হাতেই রাখলাম। যদি আবার কল দেয়া লাগে। গাড়িতে থাকতেই আমার পরিচিত এক বড় ভাই , তিনিও তাজমহল পরিদর্শনে আমার সঙ্গি ছিলেন কিছু সময়, সেই আনসারী ভাই ফোন করে বল্লেন, ওনারা সন্ধ্যা ৭টায় লাইট এন্ড সাউন্ড শো দেখবেন রেড ফোর্টে।

রাতের আগ্রা ফোর্ট





আমার বউও সেটি দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে গেলো। আমিও রাজি হলাম। হোটেলে যেতে পথে ডলার এক্সচেঞ্জ করলাম। কোলকাতা থেকে অনেক কম রেটে ভাঙাতে হলো। ডলার ভাঙিয়ে আবার হোটেলের পথ ধরলাম। বেশী খুজতে হলো না। পেয়ে গেলাম আমাদের কাঙ্খিত হোটেল। বাইরে থেকে বেশ পরিষ্কার আর সুন্দর দেখতে হোটেলটি।

বুকিং এর কাগজটি ওদের দিকে বাড়িয়ে দিতেই আমার চোখে পড়লো এক বিশাল বিভ্রান্তি। আজ ২৬ তারিখ, বুকিং অনুযায়ী আজ আমার চেক আউট হবার কথা ...... অথচ আমি এখন চেক ইন হচ্ছি ...... ! প্রথমে মাথায় একটা চক্কর দিলো ..... পরে এমন একটা ভান করলাম যে বিষয়টা আমি আগে থেকেই জানি। বুকিং এর কাগজটা ওরা দেখে বল্লো স্যার ! আপনার তো বুকিং ছিলো গত কাল, আর আমরা আপনার রুম ফাকা রেখেছিলাম, কিন্তু আজ তো আপনার রুম নাই। আমি বল্লাম দেখুন আমাদের আসতে আসতে দেরী হয়ে গেছে আর কিছুটা সমস্যার কারণে আমরা গতকাল আসতে পারিনি, আপনারা একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন চিন্তা করেই আপনাদের এখানে আসা। ওদের ম্যানেজার তখন বল্লো স্যার চিন্তা করবেন না, আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। রিসিপশনে যিনি ছিলেন, ম্যানেজার তাকে একটি রুম দেয়ার নির্দেশ দিলেন। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম সেম সুবিধা ও সেম প্রাইসে পাবো তো? মানে একই ভাড়ায় কন্টেম্পরারি ব্রেক ফাষ্ট ইত্যাদি সহ পাব তো? ওনারা বল্লেন হ্যা ..... তবে গত কাল আরো ভালো রুম রেখেছিলাম আপনার জন্য।

যাই হোক ...... হোটেলের আনুষ্ঠানিকতা সেরে রুমে গিয়ে লাগেজ রেখেই আবার বেরিয়ে গেলাম। লাইট এন্ড সাউন্ড শো দেখবো। রামজিকে বলে রেখেছি। ও নিয়ে যাবে। এই তাড়াহুড়ো ব্যস্ততার মাঝে হোটেলের ওয়াইফাই সুবিধাটা চালু করে নিলাম। কারণ এই তারিখ বিভ্রাট তো আমার বাকি আর সব স্পটের হোটেলেও প্রভাব ফেলবে নির্ঘাত। সুতরাং বুকিং ডট কমে ঢুকে সব গুলোর ডেট রিসেট করতে হবে। তাই একদিকে লাইট এন্ড সাউন্ড শো তে যাওয়ার ব্যস্ততা,অন্যদিকে হোটেলের তারিখ আপডেট করা ... দুই মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা আমার! এছাড়া পাসপোর্ট, মানি সবই আমার ছোট ব্যাগে, সেটাও সব সময় আমাকে সামলে রাখতে হয়। প্রথমেই বুকিং ডট কম এর অনলাইনে ঢুকে আজমির শরীফের হোটেলের ডেট চেঞ্জ করতে চেষ্টা করলাম। কারণ আগামী কাল রাতে আমি ওখানে উঠবো। রুম না থাকলে তো সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ আজমীর পৌছাতে আমার অনেক রাত হবে। তখন আমি হোটেল খুজবো কোথায়? বুকিং ডট কম জানালো ডেট চেঞ্জ করার সময় সিমা পার হয়ে গেছে। সুতরাং কিছুই করার নেই। তাই আমি সরাসরি ফোন দিলাম আজমিরের ঐ হাটেলে। বল্লাম আমি একদিন পরে ওদের ওখানে উঠবো। প্রথমে ওরা গাইগুই করছিলো। পরে বল্লো ঠিক আছে আপনি আসুন। আপনার রুম থাকবে। যাক বাবা! হাফ ছেড়ে বাচলাম। আরো একটি কাজ বাকি থাকলো। সেটা হলো জয়পুরের হোটেলে দিন কমাতে হবে। অর্থাৎ আমি বুকিং দিয়ে রেখেছি ২৭ ২৮ ২৯। সেখানে শুধু ২৮ থেকে ২৯ ডিসেম্বর হলেই হয়। সেখানেও বুকিং ডট কম বল্লো টাইম আউট। এসব করতে করতে গাড়িতে উঠে বসলাম ফোনালাপের মাঝেই। রামজি এগিয়ে চল্লো ফোর্টের দিকে। আমি ফোন দিলাম জয়পুরের হোটেলে। সব ভেঙে চুরে বল্লাম। সব শুনে ওরা বল্লো বুকিং ডট কমে যোগাযোগ করতে। আমি তো আগেই বুকিং ডট কমে যোগাযোগ করেছিই। সুতরাং বাদ দিলাম। জয়পুরে একদিনের ভাড়া হয়তো বেশী দিতে হতে পারে , রুম না থাকার তো টেনশন নাই। তাই বাদ দিলাম।

এসব কমিউনিকেশন করতে করতে চলে এলাম আগ্রা ফোর্টের সামনে। বেশ মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ড আজকের রাত। বুড়িকে নিয়ে আমার ভয়। যদি কাশি বা ঠান্ডা বেড়ে কষ্ট পায়? রামজি পার্কিং এ যখন গাড়ি দাড়া করালো তখন ৭.২০। দ্রুত টিকেট কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলাম। প্রথমে কাউন্টার থেকে জানালো টিকেট নাই। তার পর জানতে চাইলো কতজন? বল্লাম বাচ্চা সহ তিনজন। সে দ্রুত দুটি টিকেট দিয়ে বল্লো যাও যাও তাড়াতাড়ি যাও ......! প্রচন্ড ঠান্ডায় অস্থির চারপাশ। আমরা যখন ঢুকছি, আনসারি ভাই তখন বউ বাচ্চা নিয়ে বের হচ্ছেন। দেখা হলো ওনাদের সাথে। আমরা প্রথমে অন্ধকারাচ্ছন্ন আলোতে বিশাল বড় দরজা দিয়ে ফোর্টের ভিতরে ঢুকলাম। পাথরে বাধাই করা রাস্তা। শুনশান নিরব পরিবেশ। আশে পাশে কেউ নেই। অন্ধকারে প্রকান্ড বড় দরজা আর দেওয়াল গুলো ভুতের মতো নিরবে দাড়িয়ে আছে। ভয়ঙ্কর এক ভুতুড়ে পরিবেশ মনে হলো কিছু সময়ের জন্য। কিছুদুর গিয়েও যখন লাইট এন্ড সাউন্ড শো-র দেখা পেলাম না তখন আমরা তিন প্রানি আর সাহস করলাম না ভিতরে ঢুকার। আবারো বাইরে বেরিয়ে এলাম। বেরোনোর পথে দেখলাম কিছু ছেলে মেয়ে একসাথে ঢুকছে। ভাবলাম ওরা হয়তো শো দেখতেই ঢুকছে। কি করবো বুঝতে না পেরে কাউন্টারের ঐ লোককে আবার জিজ্ঞেস করলাম শো কি শুরু হয়ে গেছে? সে শুধু দ্রুত ভিতরে প্রবেশ করার জন্য ইশারা করলো। আমি আবারো ওদেরকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। গতবার যে পর্যন্ত গিয়েছিলাম, তার থেকেও বেশ দূরে পাথরে বাধনো পথ ধরে হাটতে লাগলাম। নির্জন রাস্তা, ঠান্ডা প্রকৃতি। শত শত বছরের পুরোনো ইতিহাস আর কালের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে থাকা সুবিশাল সুউচ্চ প্রাচীর আর প্রাসাদের দেয়াল গুলো কি আমাদেরকে দেখছে? মনে মনে এই কথাই ভাবছি আর এগোচ্ছি। কিছু দুর যাওয়ার পর দেখলম এক দল নারী পুরুষ খোশ গল্প করতে করতে লাইট এন্ড সাউন্ড শো নিয়ে আলোচনা করতে করতে বাইরের দিকে এগোচ্ছে। আমরা তখন ভাবলাম যে শো আরো ভেতরে হয়।

একজন সিকিউরিটির দেখা পেলাম বিশাল এক মাঠের কোনায় দাড়িয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করতেই আরো সামনে যাওয়ার নির্দেশ দিলো। মেয়েকে কোলে নিয়ে হাটতে হাটতে হাপিয়ে গেছি। আরো কিছুদুর গিয়ে দেখি সারি হয়ে অনেক মানুষ বসে আছে। টিম টিম করে কয়েকটা লাইট জ্বলছে। ছোট ছোট সিঁড়ি করা মঞ্চের মতো। তারই এক পাশে বসে পড়লাম। মেয়েকে ভালো করে চাদর মুড়ি দিয়ে বসালাম। নাকে রুমাল আর মাথায় কান টুপি পরিয়ে দিলাম। ও চুপ করে বসে থাকলো। কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম খারাপ লাগছে কিনা, সে বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়িয়ে না বল্লো।

যেখানে বসেছি তার সামনে দালানে ঘেরা খোলা মাঠ। মাথার উপরে উন্মুক্ত আকাশ। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। নিঃশব্দে ঝরে পড়ছে ঠান্ডা। একটু পরে আলো নিভিয়ে দেয়া হলো। শুধু চাঁদের আলোয় ঠান্ডা হিম পরিবেশে আমরা বসে থাকলাম। মনে হলো যেনো ছোট বেলায় দাদি বাড়ির উঠোনে মাদুর বিছিয়ে বসেছি, গল্প শুনবো বলে। একটু পরেই ঘোড়ার খুরের টগবগ টগবগ আওয়াজ আর দূরে লাল সবুজ আলোর নাচানচি সহ নানা রকম কোলাহল পূর্ণ শব্দ। ইংরেজীতে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস বর্ণনা শুরু হলো। বাবর, হুমায়ুন, আকবর .....এভাবে ধারাবাহিক বর্ণনা। সেই সাথে ভিস্তিওয়ালার একদিনের সম্রাট হওয়ার কাহিনী সহ নানা রকম ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা হলো। অনেকে আবার এরই মাঝে উঠে চলে গেলো। আমারও যে বসে থাকতে খুব ভালো লাগছিলো, তা নয়। কিন্তু বউয়ের ভালো লাগছে ভেবে বসে ছিলাম। একটু পরে কয়েকজন একসাথে উঠে চলে যাচ্ছে দেখে বউও বল্লো চলো চলে যাই। আমি আর দেরী করলাম না। বুড়িকে নিয়ে উঠে পড়লাম। ঠান্ডার মধ্যে আবারো হাটতে হাটতে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাইরে অনেক ঠান্ডা। এতো সময় একটি দেয়ালে আবদ্ধ ছিলাম বলে কম লাগছিলো। দ্রুত বুড়িকে কোলে নিয়ে রামজির গাড়িতে উঠলাম। এতো ঠান্ডার মধ্যে ওকে নিয়ে আসলেই দুশ্চিন্তা করছিলাম। আসতে পথে রামজি আবার রাস্তা ভুল করলো। শেষ মেষ লোকজনকে জিজ্ঞেস করে †হাটেল অব্দি পৌছালাম।

হোটেলের রুমে আসার পরপরই ডাইনিং থেকে ফোন দিলো। বুফে ডিনার করার অফার দিলো। পার পারসন ৪০০ রুপি। আমি প্রথমে এড়িয়ে গেলাম না। বল্লাম চিন্তা ভাবনা করে জানাচ্ছি। দেখি। কিছু সময় পর আবারো ফোন দিলো। বল্লো ৩০০ রুপি। আমরা ডাইনিং এ গেলাম কি কি খাবার আছে সেটা দেখার জন্য। ঐ একিই খাবার। ষ্টিম রাইস, পোলাও, ডাল , সব্জি, মটর পনির ইত্যাদি। বল্লাম বুফে খাব না, অর্ডার দিয়ে কিছু আইটেম নেবো। তারা রাজী হলো না। আমরাও আর গরজ করলাম না। আমাদের হোটেলটার সাথেই আরেকটি হোটেল ছিলো। সেটাও বেশ জৌলুসপূর্ণ। ওটাতেই আনসারী ভাইরা উঠেছে। ভাবলাম দেখে আসি ওনারা কোথায় খাচ্ছে। গিয়ে দেখি বাচ্চা দুটোকে রেখে ওনারা বাইরে গেছেন। ফোন দিলাম আনসারি ভাইকে। সে জানালো কোন এক মুসলিম হোটেলে তারা খেতে গেছে। একটু দূরে। আমরাও তো যেতে পারতাম, কিন্তু এই ঠান্ডার মধ্যে বুড়িকে নিয়ে যেতে সাহস করলাম না। আনসারি ভাইয়ের রুম থেকে বের হতেই দোতলায় এই হোটেলের ডাইনিং চোখে পড়লো। ভাবলাম ঢু দিয়ে যাই, এখানেও কি বুফে না অর্ডার দিয়ে খাওয়া যাবে। জানলাম বুফে নয়। পছন্দ অনুযায়ী ওর্ডার দিয়ে খাওয়া যাবে। আমরা ওখানেই বসলাম। সাদা ভাত, সব্জি, পরোটা, ডাল, চিকেন। পরোটাটি খুবই মজা লাগলো, হালকা পোড়া পোড়া, পেচানে পেচানো নকশা করে ভাজা ......! যতটুকু পারলাম খেলাম, বাকিটা পার্সেল করে নিয়ে গেলাম রুমে। যেহেতু ফ্রিজ আছে, রেখে দিলে পরে হয়তো খাওয়া যাবে, খাবার নষ্ট করে লাভ কি? কিন্তু প্রায় সময়ই খাবার গুলো ফেলে দিতে হয়েছে। পরে আর খেতে পারিনি।

হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে শুতে শুতে প্রায় রাত ১২টার বেশী বাজলো। আগামী কাল সকালে আবার ৮টার মধ্যে বের হবো। প্রথমে যাব সেকান্দ্রা। আকবরের সমাধী। এর পর যাব ফতেহপুর সিক্রী। তার পর সোজা জয়পুর হয়ে আজমীর। অর্থাৎ বিশাল জার্নি। প্রায় ৭০০ কিমিঃ।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাথরুমে পানি নেই। রিসিপশনে ফোন করলাম। বল্লো ৫ মিনিটের মধ্যেই ব্যবস্থা হচ্ছে। ৫ মিনিটে কিছুই হলো না। আবারো ফোন দিয়ে জানালাম, আমাদের তাড়া আছে। পানির জন্য বসে থাকলে আমাদের দেরী হয়ে যাবে। ওরা তখন বল্লো আপনাদের রুম চেঞ্জ করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। মেজাজটা কেমন লাগে? এখন আবার সব বাক্স পেট্রা নিয়ে রুম বদলাবো, তার পর ফ্র্রেশ হবো, তার পর বের হবো? এ হয় কোন দিন? তারপরেও তাড়াহুড়ো করে পোশাক আশাক বাইরে যা ছিলো ব্যাগে ভরলাম। বুড়িকে ঘুম থেকে দ্রুত টেনে তুল্লাম। এরই মধ্যে হোটেল বয় এলো। ওকে বল্লাম একটু দাড়াও আমি ব্যগ গুছিয়ে নিচ্ছি। দুটি ব্যগ গুছানো হলে ওকে ব্যগ নিতে বল্লাম, ও তখন বল্লো, আপনাদেে শুধু অন্য রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে হবে। ব্যাগ নিতে হবে না। হইলো ?? আমার তখন মনে হলো ব্যাটাকে ধরে একটা আছাড় মারি! তা তুমি আগে সেটা বলো নি কেন? আমি এতো তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ গোছালাম রুম শিফট করবো বলে? ব্যাটা ছাগল? রামজি ঠিকই বলেছিলো আগ্রায় যাওয়া মানে পাগল খানায় যাওয়া। আমাদের দেশের পাবনার মতো এখানে নাকি পাগলাখানা আছে। এদের কথা বর্তায় তা-ই মনে হলো। কিন্তু কি আর করা। আমি প্রথমে গেলাম ওর সাথে। রুম থেকে বেরিয়ে দেখি এই ফ্লোরের আরো কিছু বোর্ডার হাতে জামাকাপড় নিয়ে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে। তার মানে এই ফ্লোরের অন্যান্য রুমেও পানির সমস্যা হয়েছে। এক তলা নিচে নেমে একটি রুমে ঢুকে গেসল সেরে নিলাম। তারপর রুমে গিয়ে দেখি ওরাও ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। পানি অল্প অল্প আসছে। দ্রুত রেডি হয়ে ব্যাগ সহ নিচে নেমে এলাম।

ব্রেকফাষ্ট করে তারপর রওনা দিবো। নিচে নেমে রামজির খোজ করলাম। সে সকালেই এসে উপস্থিত হয়েছে। ডাইনিং রুমে ঢুকলাম। খাওয়ার মতো তেমন কিছুই তারা রাখেনি। কয়টা ঠান্ডা লুচি পড়ে আছে, কলা ডিম শেদ্ধ এসব কিছুই নেই। পাউরুটি আচার টক দই .....এসব কি আমাদের খাবার? ধ্যুর..... মেজাজটা গেলো আরো বিগড়ে। আমাদেরকে বল্লো একটু বসেন, গরম লুচি ভেজে দিচ্ছি। আমরা বসে আছি। অথচ আমাদেরকে লুচি না দিয়ে পর পর দুই বারই আরেকটি ফ্যামিলিকে গরম লুচি সরবরাহ করলো। মেজাজ আর ধরে রাখতে পারলাম না। হোটেল বয় কে দিলাম ঝাড়ি। মিঞা তুমি সব গরম লুচি এক জায়গায় বার বার কেন দিচ্ছ? এখানে দুইটা দিতে পারতা না? ফালতু সার্ভিস ...... ব্লা ব্লা যা বলার বলে বেরিয় আসলাম। হোটেল থেকে বের হতেই দেখি রামজি হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। সে জিজ্ঞেস করলো কেমন কাটলো রাত? আমি হোটেলের সবার সামনেই রাগ ঝাড়তে লাগলাম। রাতের ডাইনিং, সকালের পানির অভাব, রুম শিফট নিয়ে কেরি ক্যচার, নাস্তার বেহাল অবস্থা সবই গড় গড় করে এক নাগাড়ে বলতে বলতে গাড়ির দিকে এগোলাম। তখন দেখি পেছন থেকে এক হোটেল বয় এসে বল্লো স্যার আপনাকে একটু রিসিপশনে ডাকছে। আমি বল্লাম আবার কি? সব পেমেন্ট তো চুকিয়ে দিয়েছি। তারপরেও গেলাম। দেখি একটি বই বাড়িয়ে দিয়ে বলছে কমেন্ট প্লিজ! আমি বল্লাম কমেন্ট আর কি করবো? এতো বাজে অবস্থা আপনাদের হোটেলের? তারপরেও গুড এ টিক মেরে বরিয়ে এলাম এবং বল্লাম মুখে আপনাদেরকে সার্ভিস ভালো বলতে পারছি না বলে দুঃখিত। লিখিত অভিযোগ করছি না। বলে বেরিয়ে এলাম। পরে গাড়িতে বসলে রামজি বল্লো এই হোটেলের মালিক একটু বিটকেল টাইপের। এর আগেও সে এই হোটেলে এসেছে এবং হাঙ্গামা হয়েছে। সে আরো জানালো গতকাল ছিলো পূর্ণিমার রাত, যা আমরা রেড ফোর্ট এ বসে দেখেছি এবং ঐ রাতে তাজমহল স্পেশালি খোলা ছিলো। পূর্নিমার আলোতে তাজমহল তার রঙ পরিবর্তন করে...... দেখতে অদ্ভুত দেখায়। কিন্তু এখন আর সে গল্প শুনে আফসোস হওয়া ছাড়া উপায় কি? আমাদের তো এই বারে তা দেখার বরাত নাই।
সম্রাট শাহজাহানের বেল্টে যে পাথর ছিলো ..




সকালে আগ্রার রাস্তা গতানুগাতিক। তেমন ভিড় নেই। পুরণো জনপদ। খুব বেশী আধুনিক ঘর বাড়ি চোখে পড়েনি। গতকাল যখন আগ্রা শহরে ঢুকি তখনো দেখেছি সেই মোঘল আমলের সব বাড়ি ঘর। বানরের দৌড়াদৌড়ি প্রাচীরের উপর দিয়ে। আগ্রা শহর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি। পথে একটি দোকানের সামনে রামজি গাড়ি দাড়া করালো। বল্লো সম্রাট শাহজাহানের বেল্টে যে পাথর লাগানো ছিলো, সেটা নাকি এই দোকানে রাখা আছে। বংশ পরম্পরায় এই দোকনীই নাকি তা সংরক্ষণ করছে, মানুষকে দেখানোর জন্য। বিক্রির জন্য নয়। সেটা দেখানোর জন্য সে আমাদেরকে ঐ দোকানের সামনে দাড় করালো। আমরা ভিতরে ঢুকলাম। একজন দোকানি আমাদেরকে দেখালো সেই বড় একটি হলদে রঙের চকচকা পাথর। এরপরে ঐ দোকানের উপরে গিয়ে সেই আমলের শাহজাহান ও মমতাজের হাতে আঁকা ছবি দেখলাম। দোকানে কিছু ব্যবসাও হলো দোকানির। সে কিছু চুড়ি দেখালো। আমরাও দরদাম করে কিছু গিফট আইটেম নিলাম। বুঝলাম হয়তো রথ দেখা কলা বেচা দুটোই হলো বা শুধু কলাই বেচা হলো ......!

আগ্রার বিখ্যাত পাঞ্ছি পিঠার দোকান



আগ্রার পাঞ্ছি পিঠা বেশ বিখ্যাত। লাউয়ের তৈরী বিভিন্ন ধরণের মোরব্বা টাইপের। তবে নকল আসল চিনে কেনা বেশ মুষ্কিল। রামজি জানালো চারটি স্পট আছে, যেখানে আসল পাঞ্ছি পিঠা পাওয়া যায়। ও আমাদেরকে কিনে দেবে বলেছে। যাই হোক সেখান থেকে বেরিয়ে পাঞ্চি পিঠার দোকানে। পাঞ্ছি পিঠা কিনে আবারো রওনা দিলাম সেকান্দ্রায় আকবর টম্বের দিকে।

আগ্রা শহর থেকে আকবারের সমাধী সেকান্দ্রা যাবার পথে

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। স্বামীর কবরে শায়িত মতিয়া চৌধুরী, পেলেন না মুক্তিযোদ্ধার অন্তিম সম্মান

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৪



আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে।

দুই দফা জানাজা শেষে মতিয়া চৌধুরীকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর স্বামী বজলুর রহমানের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারের দোসরের স্বপ্ন ভাংগের বেদ্না.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৬

ইতিহাস......

“জুলাই মাসের ১ তারিখ, ২০১৭' সকালবেলা আমার ব্যক্তিগত মোবাইলে একটা কল আসলো। নিজেকে তিনি প্রেসিডেন্টের মিলিটারি সেক্রেটারি পরিচয় দিয়ে জানালেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন?

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:১৭





"আমি মানসিক বিকারগস্ত লোক। সারাক্ষণ এনক্সাইটিতে বুক ধড়ফড় করে। মায়ের দেয়া কলে আমি খুবই ভয় পেয়ে যাই। বাবা কে আমার সহ্য হয়না। আমার কাছে সবসময় মনে হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীনতার এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:২০

চাকুরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি....

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় সীমা ছেলেদের জন্য ৩৫ ও মেয়েদের জন্য ৩৭ করার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ হতে চলছে। বিনয়ের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করে কয়েকটি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরী lucky! শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, শেখ সেলিম, হাসানুল হক ইনু-রা ১০০ বছর বাঁচুক কামনা করি…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:১৪



১. মৃত্যু হলেই ইহজগতের সব কিছু শেষ হয়ে যায়। মৃত্যু পরবর্তী জগতে ঐ ব্যক্তির কী অবস্থা হয় তা আমরা জানি না। আবার ঐ ব্যক্তিও দুনিয়ার কিছু আর জানতে পারেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×