সম্ভবত ১৯৮৩ সালের কথা, ঠিক মনে নাই। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনার ছবি দূর দেশ আলোড়ন তুলে মুক্তি পেল। পরিচালনায় বাংলাদেশের এহতেশাম আর ভারতের অমৃশ সাঙ্গাল। লতা মঙ্গেশকর এর সেই সাড়া জাগানো গান, রুখ যা সাথী! যে গান বাংলায় সমান মাধুর্য্যতা নিয়ে গেয়ে ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। শশি কাপুর, শর্মিলা ঠাকুর, নাদিম, রাজ বাব্বার, ববিতা, পারভিন ববি অভিনয় করেছিলেন সেই আশির দশকের মাঝামাঝিতে দূর এক দেশ কানাডায় চিত্রায়িত ছায়াছবিটিতে। বাংলাদেশে দূর দেশ নামে মুক্তি পেলেও ভারতে ছবিটি মুক্তি পেয়ে ছিল গেহেরি চোট(গভীর আঘাত) নাম নিয়ে। এই ছবি'র পাঁচটি গান বাংলাদেশে তখন খুবই জনপ্রিয় হয়ে ছিল। ভাইটি আমার তুমি কেঁদো না, যেও না সাথী, দুশমনি করো না প্রিয়তম, তুমি আমারে ভালোবাসো এ কথা আমার মন জানে ইত্যাদি গান সেই যে মনে গেথে গিয়ে ছিল আজো তেমনি মনে আছে! দূর দেশ ছবিটি আমি পাঁচ বার দেখেছিলাম ঢাকা শহরের বিভিন্ন হলে। জোনাকী, মধুমিতা, আনন্দ আর শ্যামলী হল ঘুরে ঘুরে যখন দূর দেশ দেখি তখন ধারনা ও ছিল না ঠিক তার ৪/৫ বছর পর আমি নিজেই ডেরা বাঁধতে চলে যাবো সেই একই দূরের সেই দেশে!
প্রায় তিরিশ বছর আগের দেখা ছবির গান গুলো আজ আবার মনে পড়ল। ইউটিউব খুঁজে খুঁজে শুনলাম সব গুলো গান। বাংলা ভার্শনের ভিডিও কোয়ালিটি জঘন্য। একই ছবির ভারতীয় প্রিন্ট এর কি অবস্থা আর আমাদের প্রিন্টের কি দশা! জানি না আমাদের আসল প্রব্লেমটা কোথায় কোনখানে! নইলে একই জিনিস এই দেশে আসলে সেইটার হালত এমন হয়ে যায় কেমন করে! যাই হোক, দূর দেশ প্রথম দেখি আমাদের পরিবারের প্রায় বিশ/ পচিশ জন সদস্যের এক দল আনন্দ হলে। আমার মামারা তখন জাহানারা গার্ডেনে ঢুকতেই বা'হাতের বিশাল বাংলো বাড়িটায় থাকতেন। মামা/মামীরা তাঁদের ভাই/বোন আমরা ভাই/বোন মিলেমিশে ৯টা ১২টা শোতে ডিসিরে এক সারি প্রায় এ মাথা ও মাথা পুরোটাই আমরা আমরা। এই শো তে অদ্ভুত এক মজা হয়ে ছিল। সিনেমা আর সিনেমা হল হলো আমার অদ্ভুত এক ভালোলাগার যায়গা। বিরতির সময় তাই ঠান্ডা আর চিপ্স/ চানাচুর আমি ছাড়া কে এমন ফূর্তি সহকারে কিনতে আর যাবে! খাবারদাবার কিনে দুই হাতে এক গাদা কোল্ড ড্রিংক্স নিয়ে হলে ঢুকে সিড়ি ভাংছি এমন সময় পেছনের এক সিট হতে সমানে ডাকছে, ঐ ঠান্ডা ঐ ঠান্ডা । আমি তো শুনেও না শুনার ভান করে দ্রুত পা ফেলে উপরে উঠছি। পেছনের লোক গলা চড়িয়ে ডাকেন, ঐ ঠান্ডা এদিকে আয় ছেমরা! কে তখন কার কথা শুনে! আমি ইজ্জত বাঁচিয়ে পরিমরি করে আমাদের সিটের কাছে এসে হাতে হাতে সবাইকে খাবার গুলো দিয়ে দম ফেলি। ততক্ষনে পেছনের লোকটা অন্য ঠান্ডা অলাকে খুঁজে পেয়ে যান। ছবি আবার শুরু হয়ে যায়।
১৯৮৮ সালে কানাডা যাবার পর আমি দূর দেশ ছবির বিশেষ বিশেষ লোকেশন গুলি খুঁজে বার করি। টরন্টোর সিএন টাওয়ার, হাই পার্ক, লেক অন্টরিওর আশপাশ, নায়াগ্রা ফল, নায়াগ্রার কাছের সেই বিখ্যাত ফ্লাওয়ার ক্লক! মনে আছে যায়গা গুলোর ছবি তুলে দেশেও পাঠিয়ে ছিলাম তখন। সে আজ হতে প্রায় চব্বিশ/ পচিশ বছর আগের কথা। আজ আবার গান গুলো শুনে, ছবির দৃশ্য দেখে কত কি মনে হলো! প চি শ বছর কেমন কেমন করে পেরিয়ে গেল... টেরও পাওয়া গেল না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:৩৫