আমি সিলেটে একটি কোম্পানীতে "হিসাব কর্মকর্তা" হিসাবে চাকুরী করি। চাকুরীটা আমার ভাল লাগে না সে কথা আমি বলতে চাই না, কারণ এই চাকুরীটা আমাকে আল্রাহু রাবুল আলামিন রুজি ও রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেণ। তাই আমি এই চাকুরী টাকে ভালবাসতে বা্ধ্য।
সকাল হলো,
হ্যালো,
আস্যালামুয়ালাইকুম, স্যার,
ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন,
স্যার, আলহামদুল্লিলাহ ভাল আছি।
এমনি ভাবে ভালবাসার শুভেচ্ছা বিনেময় করা সম্ভব হলো।
তার পর নির্দেশ হলো, ঢাকা থেকে দুই জন অফিসার আসবেন, এক জন আমার সিনিয়র অফিসার আর একজন আমার কলিক, মানে সম-মানের তাদেরকে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের পয়েন্টে রিসিভ করতে হবে। আমি সেখানে অপেক্ষা করবো এবং তাহারা আমাকে সাথে নিয়ে আমাদের বিভিন্ন ওয়াকিং সাইট ভিজিট করবেন। উপায় নাই যেতেই হবে। তৈরি হলাম, বাসা থেকে সিএনজি করে, বন্দর তার পর রিক্সা করে বাস ষ্টান্ড, হবিগঞ্জের বাসে শায়েশ্তাগঞ্জ গেলাম, উপায় নাই প্রচন্ড রদ্রু তার মাঝেও ভাল কাপড় পড়তে হয়েছে। কারন গাড়ীতে এসি, বাহিরে প্রচন্ড গড়ম থাকলেও গাড়ীতে অবশ্যই এসি থাকবে। তাই বাধ্য হয়েই কোট পড়তে হয়েছে। যদিও তা আমার জন্য ছিল একান্তই কষ্টের কারন।
অপেক্ষা আর অপেক্ষা, অপেক্ষার প্রহর কাটতে চায় না।, একবার এনা গাড়ীর কাউন্টারের কাছে বসলাম আমার চিন্তা করলাম মসজিদে গিয়ে একটু অজু করবো, কিন্তু মসজিদের দরজা এমন ভাবে তালা বদ্ধ যে তাতে ডোকার কোন পথ আর রহিল না। প্রচন্ড রদ্রু পিপাসায় ক্লান্ত প্রায়। তাই এদিক ওদিক ঘুরে একটি দোকানে একটু বসলাম, আমার মনে হলো, সেই দোকানীর আমার বসাটা ভাললাগে নাই, কিছু না কিনে দোকানে বসাটা একটু বেমানান তাই উঠতেই চোখে পড়লো, আনারস, একজন ফেরিওয়ালা আনারস কেটে ফেরি করে বিক্র করছে। তার কাছে গেলাম, এবং পছন্দ করে তাকে একটি আনারস কেটে দিতে বললাম, পাকা এবং রসালোই আমার মনে হলো, আনারসের ৪ ভাগের এক ভাগ খেতেই আমার মনে হলো পেট পানিতে ভরে গিয়াছে। আর এত মিষ্টি আনারস এর আগে কখনও খেয়েছি বলে আমার মনে হয়নি। হয়তো বা এমনও হতে পারে যে, ঐ সময় স্বাদ ও প্রয়োজনীয়তা দু'টোই সমান ছিল। ফেরিওয়ালাকে বললাম, ভাই আমি আর খেতে পারবো না।
ইঞ্জিনিয়ার আতিক সাহেবকে ফোন করলাম, তিনি শত ব্যস্ততার মাঝেও আমার ডাকে সারা দিলেন এবং যথা সময়ে এনা গাড়ীর কাউন্টারে আসলেন। কিন্তু আমি ছিলাম আগন্তক মেহমানদের আপেক্ষায় বিভোর বেমালুম ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের কথা ভুলেই গিয়েছি বা আমার মেমোরী থেকে ছিটকে পরে গিয়াছে।
অপেক্ষার প্রহর যদি প্রভাত হলো তবে যথা স্থানে তাদেরকে পেলাম না। কিন্তু ডাইভারকে দেখে ঠিকই চিনে নিলাম যে, এই আগন্তক মহোদয় আমারই সফর সঙ্গী হবে বা আমিই তাহাদের সফর সঙ্গী হবো, দুটোই সম-সাময়িক। যেহেতু আমাদের সবার উদ্যেশ একই, এখানে একটি কথা না বলেই নয় আগন্তকদয়ের কেউই আমার পূর্ব পরিচিত নয়। তবু চাকুরীর খাতিরে তাদের সাথে ভাব জোমাতেই হবে। ইতিমেধে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ফোন করলেন, আংক্কেল, কোথায় আছেন? তখন হুস হলো আমিতো আতিক সাহেবকে আসতে বলেছিলাম, কারন এই সাইট গুলো তো তারই, তাই তাকেই বেশী প্রয়োজন রহিয়াছে। ডাইভার সাহেবকে বললাম, ফিরে চলুন একজন ইঞ্জিনিয়ারকে সাথে নিতে হবে।
এনা গাড়ীর কাউন্টার থেকে তাকে আমাদের গাড়ীতে তুললাম, কিন্তু তিনি অত্যান্ত ভালমানুষ, তার উদ্যেশ আমার বুঝতে বাকি থাকলো না। তিনি প্রথমতো তার আবাসস্থলে আমাদেরকে আমন্ত্রন জানাতে ভূল করলেন না। তার আবাস স্থলটি একটি ব্যাচেলর বাসা সে এক মনবোত্তর জীবনের দৃশ্য দেখার পর অনুভূত হলো কতই না কষ্ট করে তারা টাকা রোজগার করে আমাদের কাছে পৌছায় আর আমরা দামী দামী পোষাক পরে, তাদের সাথে অহমিকা দেখাই, আমি ধিক জানাই সেই সকল অফিসারদেরকে যারা তাদের সাথে এমনি আচরন করতে ছাড়ে না। এই স্বাভাবিক পেষা জীবি মানুষ গুলো আমাদের অর্থনীতির চাকাকে স্বচল রাখছে, আমার গভীর ভালবাসা তাদের প্রতি রইল। যদিও সামনা-সামনি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে পারিনা, তার পরও আমি আমার স্বীকারউক্তি এই লেখনির মাধমে সবার সমনে তুলে ধরলাম। হে শ্রম জীবি মানুষ তোমার প্রতি আমার ভালবাস ও সালাম রইল।
সাইটের হিসাবগুলো অডিট করাই আমাদের প্রধান কাজ, তিনি তার প্রয়োজণীয় কাজগুরো আমাদেরকে বুঝাতে মোটেই দিধা করলেন না্। তিনি এর আগেও আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছেন, আমি সুনেছি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পাথরে ফুল ফুটাতে পারে ঠিক তারই প্রমান পেলাম এই ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। তিনি আমাদেরকে যথাযথ আপ্যায়ন করিতে মোটেও কার্পন্য করিলেন না। একটি ভাল হোটেলে দুপুরের খাবার খাওয়ালেন, মজাদার খাবার। আমার মনে হয় তার স্বাধটা এখনও আমার মুখে লেগে আছে। রুচি সম্মত খাবার, সমস্ত কষ্ট ভূলে যাবার মতো খাবার, ক্লান্তি ভুলে যাবার মতো।
পান দোকানের সামনে দাড়ালাম, দোকানী দুটো পান বানাইয়া আমাদের হাতে তুলে দিলেন, টাকা দিলাম তিনি নিলেন না, তিনি এক কথায় বুঝাতে চেষ্টা করলেন, স্যার দিবেন। আমার বুঝতে পাকি থাকলো না, যে তিনি কোন স্যার ,তিনি আতিক সাহেব। তিনি বেশ মজার ও কাজের মানুষ। কথায় কথায় বলে থাকেন, "স্যার, নাশোকতা করবেন না" হাসতে হাসতে পেটে খিল লেগে যেতে চায়। তার মুখে কখনও হাসি ফুরায় না। আর এই রকম হাসি না থাকলে হয়তো তারা শ্রমিক দিয়ে কাজ করতে বা করাতে পারতো না। হয়তো মানুষ দিয়ে কাজ করাবার একটি কৌশল মা্ত্র। তিনি আমাদেরকে বিদায় দিয়ে তার কাজে চলে গেলেন। আমরা গাড়ী যোগে রওয়ানা হলাম শায়েস্তাগঞ্জ ওয়ার্কি সাইটে। সাইটটি পরির্দশন শেষে ছুটলাম ইমাম বাড়ীর দিকে, একই রাস্তা ডানে বায়ে মোড় নেয়ার কোন প্রয়োজন নাই একমাত্র লোহার পোল পার হবার পর ডানে মোড় নিতে হবে। যদিও আমি কখনও এই রাস্তায় যাইনি, একবার হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ একবার এসেছিলাম কিন্তু ইমাম বাড়ীর নাম বহুতবার সুনেছে কিন্তু একবারও এখানে আসি নি।
চাকুরীর সুবাধে অনেক জায়গায় যাওয়ার সুযোগ এসেছে, যাহা স্বাভাবিক ভাবে হয়তো যাওয়া সম্ভব হতো কিনা আমার জানা নাই, সবই আল্লাহু রাবুল আলামিনের ইচ্ছা ছাড়া আর কিছুই না। গাড়ীর গতি খুবই বেশী ছুটছে তো ছুটছে, এক সময় আমরা হবিগঞ্জ শহরে এসে পৌছলাম। এখন সত্যিই আমরা দিশা হাড়া হয়ে পড়লাম । একজন ট্রাফিক পুলিশের কাছে জানতে চাইলাম , ভাই আমরা ইমাম বাড়ী যাবো কোন পথে? তিনি মোটামুটি খোলশা করলেও কি জানি মনে করে তিনি হুন্ডা যোগে আবার আমাদের কাছে এসে সঠিক পথ বাতলাতে ভূল করলেন না। মোটা মুটি ভালই লাগলো, একজন পুলিশের সঠিক দায়িত্ব পালন করাতে মনটা আনন্দে ভরে গেল। বাংলাদেশের প্রতিটি পুলিশ সদস্য যদি এমন হতো কতই না ভাল হতো। আমি আজও আশাবাদী বাংলাদেশের প্রতিটি পুলিশ সদস্য এমন হবে। আমার গর্ববোধ হলো, যে আমি জন্মেছি এই দেশে। সুজলা সুফলা আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হলো, আমি স্বাধীন, আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় এই কি আমার দেশ? এই দেশ আমি নিজ হাতে অস্ত্র ধরে স্বাধিন করেছিলাম? যখন দেখি জীবনের নিরাপত্তা বিলীন, সঠিকভাবে পথ চলতে পারিনা। যখন দেখি রাজনৈতিক অস্থিরতা, মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি, গুম, হত্যা, হরতাল, অরজগতা, বড়ই অস্থির হয়ে পড়ি এবং মনে মনে ভাবি তবে কি স্বাধিনতা আমাদের জন্য ভূল ছিল? না না আমাদের স্বীধীনতা ভুল না, ভূল আমাদের নৈতিকতা, আসুন আমরা সবাই মিলেমিশে দেশটাকে আবার সুন্দর ভাবে গড়ে তুলি। অরজগতা ভুলে আবার নতুন করে সবাই একত্রিত হয়ে সোনার বাংলা গড়ে তুলি। আমি রাজনীতি জানি না এবং ভালও বাসি না। আমি আমার শান্তি ময় দেশ চাই। সোনার বাংলা চাই। আমার দেশের মাটি সোনার চেয়ে খাটি, যদি না চাষীর কাছে পৌছানো যায় তবে বুঝা কঠিন।
বুঝতে বাকি থাকলো না যে, এটা ইমাম বাড়ি, বেশি একটা অতিক্রম না করতেই সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে ফোন করতে তিনি সঠিক ঠিকানা জানালেন। খুব সহযেই চিনে নিলাম আমাদের ওয়াকিং সাইট। সাইটে ডুকলাম এবং কাজ কর্ম দেখলাম, ভালই লাগতেছিল। সুবিধা -অসুবিধা জানলাম। পাইল ড্রাইভ চলতেছে, শব্দের গতি এতই বেশী ভালভাবে কথা শোন খুবই কঠিন। মোটামুটি কাজ সেরে রাস্তায় আসতে ছিলাম এমন সময় একজন লোক আদুল গায়ে, সারা শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছে, আবেদনের সুরে এসে কাছে দাড়ালো, তিনি জানালেন যে, আমার জমিতে কাজ করতে দেব না। আমার বুঝতে বাকি থাকলো না যে, তার মাঝে একটি চাকা কান্না কাজ করছে। তিনি অত্যান্ত বেদনার সুরে আমাকে এই কথাটা বলেছে। এই হত গরীবের কথা শোনার কেউ হয়তো নাই। আমি তাকে বেশ নরম ভাবে থাকে জানতে চাইলাম ভাই আপনার মনের ব্যাথাটা কোথায়? তখন তিনি আমাকে জানালেন, গ্রামীনফোন কোম্পানী আমার কাছে থেকে জমি না নিয়া এই পাশ্বের লোকের কাছ থেকে জমি নিল, আমি কি অন্যায় করেছি? আরো অনেক কথা, তাহার কথায় যা বুঝতে পারলাম, দুরনীতি এখানে কিছু আছে, যা আমার পক্ষে পরিস্কার করা সম্ভব না। তিনি যা আমাকে জানিয়েছেন, তাহা এই লেখনিতে না জানাতে পেরে আমাকে অপরাধী বলেই মনে হলো কিন্তু উপায় নাই আমি একটা চাকুরী করি। আমারও কিছু সিমাবদ্ধতা আছে। তাই ইচ্ছা করলেও সীমা অতিক্রম করিতে পারি না। সুন্দর কলা দেখে, প্রসংশা করতেই ই্ঞ্জিনিয়ার সাহেব কিনে দিলেন, একটি করে কলা চিবুতে লাগলাম এবং গাড়ীর সবাইকে একটি করে দিলাম কিন্তু ড্রাইভার সাহেব কে একটি দিতে ভূল হলো না।
নোহা গাড়ী চলছে তো চলছে, ইমাম বাড়ী পার হইয়া সমান তালে নবীগঞ্জের দিকে ছুটছে। অবারিত সবুজের বুকে সোনালী ফসল কেউ কাটছে আবার কেউ ধান কেটে বাড়ীতে আনতেছে, এমন দৃশ্য না দেখলে হয়তো এর আনন্দটা অনুভব করা খুবই কঠিন। আমার সহযাত্রীরা কথা বলতেছে কিন্তু আমার মন বার বার ছুটে যাচ্ছে সেই ধান ক্ষেত ও কৃষকের আনন্দ অনুভব করার জন্য, তাদের কথার সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হই। মনযোগ বার বার ফিরাই আনার চেষ্টা করলেও পারছিলাম না। তখন মাহামুদ স্যারকে বললাম স্যার দেখুন না, ধান ক্ষেত কতই না সুন্দর। তার পর আলোচনা পর্যালোচনা, যখন ধান হয় তখন কৃষকের কতই আনন্দ আর যখন ফসল ভাল না হয় তখন দু:খের কোন শেষ নাই। গাড়ী সমান তালে চলছে, কিন্তু আমার মন ছুটে গেছে আমার গ্রামের বাড়ী সেই ছোট বেলায়। আমার মা, আমার মাটি, আমার গ্রাম যেখানে আমার ছোট বেলা কেটেছে। বাবার মৃতু আমাকে বড়ই বেদনা দিয়েছে। চোখের সামনে ছোট বেলার স্মৃতিগুলো বার বার এসে আহাত পাখির মতো পাখা ঝাপটা দিচ্ছে। স্মৃতিগুলো বড়ই অসহায় অবস্থায় সামনে এসে দাড়ায় কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছিনা। ছোট বেলার সাথীরা আজ তোথায়, কেউ বেচে আছে কেউ হয়তো বা বেচে নেই। এটাতো চিরন্তন সত্য আমাদের সবাকে একদিন প্রস্থান করিতে হবেই।
আবার ফিরে আসলাম সেই বাস্তবতার কাছে, আমরা যে তার হাতে বন্দি, নবীগঞ্জ পার হলাম সমনে আউসকান্দি, হাজারো প্রশ্নের মুখি মুখি হলাম, আসল কথা হলো কত সহজে আমরা আসতে পারতাম যদি না আমাদের ভিজিট থাকতো। শায়েস্তাগঞ্জ হতো আউশকান্দি সোজা রাস্তা কিন্তু আমরা আসলাম অনেক রাস্তা ঘুড়ে। বিশ্ব রোডে গাড়ী উঠলো তর তর করে চলছে নোহা। আগন্তকরা বিভিন্ন কিছুর সাথে পরিচিত হতে ছাড়লেন না। যথা সাধ্য তাহাদেরকে জানাতে কার্পন্ন্য করলাম না। শেরপুর পার হলাম লোহার পুল পার হতে প্রশ্ন করলো এই নদীর নাম কি? আমি জানালাম এই নদীর নাম কুসিয়ারা।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৫ রাত ৮:২০