somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক এবং খ্যাতিমান রুশ লেখক ল্যেভ তল্‌স্তোয়ের জন্মদিনে শুভেচ্ছা

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খ্যাতিমান রুশ লেখক ল্যেভ তল্‌স্তোয় বা লিও তল্‌স্তোয় আর বাংলা উচ্চারণে লিও টলেস্টয়। পুরো নাম ল্যেভ নিকলায়েভিচ তল্‌স্তোয়। যাকে রুশ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক, এমনকি বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তার দুইটি অনবদ্য উপন্যাস যথাঃ


১। War and Peace (যুদ্ধ ও শান্তি) রুশ ভাষায় ভাইনা ই মির(Vojna i mir)। এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট হচ্ছে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট-এর রুশ অভিযান। যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং শান্তির জন্য মানুষের সংগ্রামই এই উপন্যাসের মূল বক্তব্য এবং ২। আন্না কারেনিনা।


'আন্না কারেনিনা' রুশ সাহিত্যের তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ক্লাসিক এই উপন্যাসটি প্রকাশের সোয়া শ বছর পেরিয়ে গেছে। সময় যত গড়িয়েছে, প্রজন্মবাহিত হয়ে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। লিও তলস্তয়ের লেখা এ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত, ধারাবাহিক আকারে। 'আন্না কারেনিনা'র কাহিনী সংক্ষেপঃ উপন্যাসের প্রধান চরিত্রই আন্না কারেনিনা। একজন দুঃখী, অসুখী নারী, যার বেঁচে থাকা যেন শুধু সন্তানের জন্যই। যদিও তাঁর স্বামী আলেঙ্াই আলেকসান্দে একজন সম্ভ্রান্ত, গম্ভীর ও যথেষ্ট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ। বয়সে তিনি আন্নার চেয়ে বিশ বছরের বড়।
মস্কো শহরে এক অনুষ্ঠানে আন্নার পরিচয় হয় সুদর্শন পুরুষ কাউন্ট ভ্রুনস্কির সঙ্গে। ভ্রুনস্কি অবশ্য আগে থেকেই আন্নাকে চেনে। আন্না ভ্রুনস্কির কাছে ভালোবেসে নিজেকে সঁপে দেয়। প্রকাশ্যে সে তার স্বামীকে ছেড়ে চলে আসে ভ্রুনস্কির কাছে। ভ্রুনস্কি ও আন্না দুজন দুজনকে পেয়ে আপাত সুখী হলেও সন্তান সেরিওজার জন্য মন পোড়াত আন্নার। মা ও প্রেমিকা_এ দুই সত্তার দ্বন্দ্ব তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তা ছাড়া স্বামীর কাছে ডিভোর্স চাইলেও আলেকসান্দে তাকে ডিভোর্স দেয়নি। এমনকি সন্তান ও মায়ের দেখা করার প্রতিও ছিল কঠোর নিষেধাজ্ঞা। প্রতিনিয়ত দ্বিধা, সিদ্ধান্তহীনতা, ভয় আর নিজেকে বোঝা না-বোঝার ভার বয়ে বেড়াতে হয়েছে আন্নাকে। রুশ সমাজ, ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল।
ভ্রুনস্কি ও আন্না বিবাহবহির্ভূত এক সন্তানের পিতা-মাতা হয়। একসময় ভ্রুনস্কি অন্য এক নারীকে বিয়েও করে। প্রেমের জন্য আন্না তার স্বামী-সন্তানকে ছেড়ে আসে। কিন্তু কী পেল সে? আন্না আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ এক অন্তহীন প্রায়শ্চিত্ত তার।
বস্তুত উপন্যাসটি উনিশ শতকের রাশিয়া এবং এর বিত্তবান সমাজের গল্প, যার ভেতরে রয়েছে গভীর বেদনাময় এক শূন্য জীবনের আখ্যান। আন্নার ব্যক্তিগত দুঃখবোধ, নৈতিকতার দ্বন্দ্ব, প্রায়শ্চিত্ত শুধু তার একার না হয়ে তা যেন গোটা সমাজের চিত্র হয়েই ধরা দেয়। পাশাপাশি দুই দম্পতির সমান্তরাল কাহিনী তুলে ধরে তলস্তয় আপাত ভুল কিংবা ঠিক, প্রেম-অপ্রেম, ভালো বা মন্দের এক দ্বন্দ্বজটিল প্রতিবেশ নির্মাণ করেছেন এ উপন্যাসে। আন্নার অনুভবের মধ্য দিয়ে তলস্তয় তুলে ধরেন যেন চিরন্তন এক সত্যকে, 'পরিবারের দুঃখগুলো যার যার তার তার, সুখের অনুভূতি সবারই সমান।'


উপন্যাসটি অবলম্বনে বিভিন্ন সময় একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে Bernard Rose পরিচালনা করেন 'আন্না কারেনিনা' চলচ্চিত্রটি। একটি আন্তর্জাতিক প্রকল্প হিসেবে যৌথভাবে ছবিটি প্রযোজনা করেন আইকন প্রডাকশন ও ওয়ার্নার ব্রাদার্স। মূল ছবিটি দুই ঘণ্টা ২০ মিনিটের হলেও দর্শকদের উদ্দেশে মুক্তি দেওয়া হয় এক ঘণ্টা ৪৮ মিনিট। ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে আমেরিকায় এবং মে মাসে ইউরোপে ছবিটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়। ছবিটির বেশির ভাগ শুটিং হয় রাশিয়ার সেন্ট পিটারসবার্গে। কিছু অংশ মস্কোতেও শুটিং করা হয়। এই ছবিতে আন্না কারেনিনা চরিত্রে অভিনয় করেন Sophie Marceau. ভ্রুনস্কির চরিত্রে Sean Bean আর আলেকসাই আলেকসান্দে ভূমিকায় অভিনয় করেন James Fox.
পুরো উপন্যাসে লেখক লিও তলস্তয় আন্নার প্রতি ছিলেন সহমর্মী। সব ভুল, শুদ্ধ, নৈতিক-অনৈতিকতার ঊর্ধ্বে উঠে আপন দায়িত্ববোধ ও প্রায়শ্চিত্তের কাছেই আন্নার অবশেষে আত্মসমর্পণ পাঠক মনে যে ব্যথা তৈরি করে, চলচ্চিত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় না। 'আন্না কারেনিনা' আসলে স্বার্থপরতা, ঈর্ষা, বিশ্বাস, পরিবার, বিয়ে, সমাজ আর উচ্চাভিলাষীর কাহিনী। আর এর পাঠক বা দর্শক অবলীলায় সেসবের অংশ হয়ে যায়।


'আন্না কারেনিনা' উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ এখনো থেমে নেই। জো রাইটের পরিচালনায় ২০১০ সালের জুনে শুটিং শুরু হয় আরেকটি 'আন্না কারেনিনা' চলচ্চিত্রের, যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী কিরা নাইটলি। ভবিষ্যতেও এ উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ যে অব্যাহত থাকবে না তা কে বলতে পারে! লেখক উইলিয়াম ফকনারের ভাষায়, এ যে the best ever written উপন্যাস! তাঁর রচনার পরিমাণ ছিলো বিশাল। ছোটগল্প, বড়গল্প, উপন্যাস, নাটক, শিশুসাহিত্য, প্রবন্ধ, ডায়েরী, চিঠিপত্র সব মিলিয়ে তাঁর রচনা সমগ্র প্রায় ৯০ খন্ডে বিভক্ত। উপন্যাস ছাড়াও তিনি নাটক,ছোট গল্প এবং প্রবন্ধ রচনায় ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। আজ এই খ্যতিমান বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক ল্যেভ তল্‌স্তোয়ের ১৮৫তম জন্মদিন। জন্মদিনে লেখকের জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।


ল্যেভ তল্‌স্তোয় ১৮২৮ সালের ২৮ আগষ্ট রাশিয়ার তুলা প্রদেশের ইয়াস্নায়া পলিয়ানা নামের অঞ্চলে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পরিবারের চতুর্থ সন্তান। শিশু বয়সে তার বাবা মা মারা যান এবং আত্মীয় স্বজনরাই তাকে বড় করেন। তাঁর একাগ্রতা ও পরিশ্রম করার শক্তি ছিলো অসাধারণ, তিনি মেধাবীও ছিলেন। পাঁচ-ছ বছর বয়সেই তিনটি ভাষা শিক্ষায় হাতেখড়ি হয় তাঁর-মাতৃভাষা রুশ, ফরাসী ও জার্মান ভাষায়। লিও টলেস্টয় ১৮৪৪ সালে রাশিয়ার কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আইন পড়ার জন্য। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে গিয়ে ও তিনি আইন ছেড়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন লেখালেখিতে। পরিণত বয়সে নিজের চেষ্টায় তিনি লাতিন, ইংরেজি, আরবি, তুর্কো-তাতার, ইতালীয়, গ্রীক এবং হিব্রু ভাষা শিখেছিলেন। সঙ্গীতশাস্ত্র এবং চিত্রাঙ্কন বিদ্যাতেও মোটামুটি পারদর্শী ছিলেন ল্যেভ তল্‌স্তোয়। তিনি বস্তুতপক্ষে রবীন্দ্রনাথের মত স্বশিক্ষিত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে ১৮৬২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি বিয়ে করেন জার্মান বংশোদ্ভূত রুশ সোফিয়া আন্দ্রেইভনাকে। তারা ছিলেন ১৩ সন্তানের জনক-জননী৷ দাম্পত্য জীবনের প্রথম দিকটা তাদের সুখের হলেও পরে অশান্তি দেখা দেয়৷


ল্যেভ তল্‌স্তোয়ের জীবনী শক্তি ও কর্মোদ্যম ছিল দানবীয় রকমের প্রচন্ড। ভালো শিকারি ছিলেন এবং ভয়ংকর একগুয়ে স্বভাবের ছিলেন। একবার ভালুক শিকারে গিয়েছিলেন, একটা ভালুক থাবা মেরে চোখের নিচে থেকে বাঁ দিকের গাল ছিড়ে নামিয়ে দেয়; দুই সপ্তাহ পরে ভালো হয়ে তিনি ফের শিকারে যান এবং ঐ ভালুকটিকে বধ করেন। বন্ধু-বান্ধব বা সমাজ কী বলবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজে যা উচিত এবং ন্যায্য বলে ভেবেছেন তাই করেছেন সবসময়। শান্ত-সুবোধ প্রকৃতির ছিলেন না, যৌবনে প্রচুর ধার-দেনা করেছেন এবং বিষয় সম্পত্তি নষ্ট করেছেন।পাদ্রী-পুরুতদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাদের সমালোচনা করেছেন, এবং তার শাস্তি স্বরূপ যাজক সম্প্রদায় ঘোষণা করেছেন যে, তলোস্তয় কে খ্রিস্ট ধর্ম থেকে বহিষ্কার করা হল, তিনি আর খ্রিস্টান বলে গণ্য হবেন না। এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে যারা ঈশ্বর ও যীশুকে নিয়ে ব্যবসা করে তাদের চেয়ে তিনি সহস্র গুণ বেশী ধার্মিক খ্রিস্টান।


অন্যদিকে, সম্রাটের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদাই মুখর ছিলেন, স্বনামে ও বেনামে দেশের ভিতরে ও বাইরে জার-শাসনের সমালোচনা করে লেখা ছাপিয়েছেন ল্যেভ তল্‌স্তোয়; কিন্তু শাসক গোষ্ঠী ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় নি, পাছে তাদের যদি আরো দুর্নাম এবং কেলেংকারীর বোঝা বইতে হয়। নিজের জমিদারিতে দরিদ্র চাষাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য স্কুল খুলেছিলেন, তাতে নিজে পড়িয়েছিলেন। দেশে দুর্ভিক্ষ হলে আক্রান্ত অঞ্চল সরেজমিনে ঘুরে ঘুরে দেখে বেড়িয়েছিলেন। সরকারের বিরুদ্ধে ঔদাসীন্যের অভিযোগ এনেছেন, আদমশুমারীতে অংশ নিয়েছেন। আইনের নামে বিচারের প্রহসন কিভাবে হয় তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য দিনের পর দিন আদালত আর জেলখানায় ঘুরেছেন। এমন সততা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বিস্ময়কর। তাঁর মনের গড়ন ছিলো ভাবুকের, দার্শনিকের। সে জন্যই তিনি যখন গল্প-উপন্যাস-নাটক ইত্যাদি সৃজনশীল সাহিত্য রচনা করতে শুরু করলেন, সেখানে কোথাও অবাস্তব রোম্যান্টিক কল্পনা আমরা দেখতে পাই না। তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলীঃ
উপন্যাসঃ ১। পুনরুত্থান(১৮৯৯), ২। যুদ্ধ ও শান্তি (ওয়ার এন্ড পিস)(১৮৬২-৬৮) ৩। আন্না কারেনিনা(১৮৭৮) বড় গল্পঃ ১। ইভান ইলিচের মৃত্যু(১৮৮৬), ২। ফাদার সিয়ের্গি(১৮৯৮) নাটকঃ ১। অন্ধকারের শক্তি(১৮৮৭), ২। জিন্দা লাশ(১৯০০)


লেখক ল্যেভ তল্‌স্তোয়ের অভিজ্ঞতার পরিধিও ছিলো বিশাল। সমাজের সবচেয়ে নিচু তলার মানুষ থেকে শুরু করে রাজদরবারের লোক-জনের সাথে তিনি মিশতে পারতেন। তিনি তার উপন্যাস বা গল্পের কাহিনীতে সেসব মানুষ, সামাজিক স্তর বা জীবনযাত্রার ছবিই এঁকেছেন যা তিনি নিজে দেখেছেন। তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করেছিলেন এবং নানা কারণে তাঁর শিল্পী জীবনের সবটুকুই অশান্তির মধ্যে কেটেছে। এই অশান্তির একটি প্রধান কারণ ছিলো- সমাজে বা সভ্যতায় প্রচলিত কোন বিশ্বাস বা রীতিনীতি তিনি বিনা প্রশ্নে মেনে নেন নি।হাউ মাচ ল্যান্ড ডাজ এ ম্যান রিকয়্যার। গল্পের লেখক ছিলেন, লিও টলেস্টয়। অর্থাৎ একজন মানুষের কতটুকু জমি প্রয়োজন। গল্পটি এ রকম, একদিন এক দরিদ্র মানুষ এসে রাশিয়ার সম্রাটের কাছে বললেন, তার কোন জমিজমা বা খেটে খাওয়ার মতো কোন সম্পদ নেই। তিনি চলতে পারছেন না। তখন সম্রাট তাকে বিশাল এক প্রান্তরে নিয়ে গিয়ে বললেন, ঠিক আছে, সামনে যা জমি আছে, সব আমার। তুমি এই সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দৌড় দিয়ে যতটুকু জমির চারধারে ঘুরে আসতে পারবে, ঠিক ততটুকু জমি তোমার হবে। তুমি চাষাবাদ করে খেতে পারবে বা ভোগ দখর করে যা ইচ্ছে তা করতে পারবে। তোমার আর কোন অভাব থাকবে না।
দরিদ্র মানুষটি একবার শুধু ভাবল, তাই নাকি, আমি তাহলে এক দৌড়ে অনেক জমি ঘুরে এসে সম্রাটের কাছ থেকে সেই জমি নেব। আমি অনেক জমির মালিক হবো। তারপর সে ছুট দিল। জমিকে কেন্দ্র করে সে জমির ভেতর দিয়ে দৌড় আরম্ভ করল। সে দৌড় দিচ্ছে আর ভাবছে, আর একটু, আর একটু, আর একটু। আর একটু হলে ভাল হয়, বসত ভিটাটা একটু বড় করে বানানো যাবে। আবার আরো একটু দৌড়েভাবে, না আর একটু হলে চাষাবাদের সাথে সাথে তরিতরকারির জমিটা থাকলে মন্দ হয় না। আরো একটু দৌড়েভাবে, না আর একটু দৌড়ালে একটু বেশি চাষাবাদের জমি পেলে অন্যকে বর্গা দিয়ে নিজে বসে খেতে পারবে। তারপর আবারো একটু দৌড় দিয়ে ভাবে, আরো একটু বেশি জমি থাকলে বাড়িটা পাকা করা যাবে, সম্রাট তো বলেছে, যতোটুকু জমি সূর্যাস্ত পর্যন্ত দৌড়ে সীমানা দিয়ে ঘুরে আসতে পারবো, ততটুকুই আমার। ওঃ বড্ড ক্লান্ত হয়েছি। একটু জিড়িয়ে নিই। সামান্য জিড়িয়ে নেবার পরই সে ভাবে আজ আমার বিরতি নেবার দিন নয়, আজ আমার বিজয়ের দিন, যতোটা খাটবো, ততটা পাবো, সুতরাং দে দৌড়, আজ কোন বিরতি নেই। সে দৌড়িয়েই চলছে। দৌড় দিয়ে সে জমিগুলোর অনেক ভেতরে প্রবেশ করেছে, যেখান থেকে সম্রাটের রাজ্য দেখাই যায় না। এদিকে সূর্য্য প্রায় ডুবু ডুবু। এখন তার ফিরবার পালা। সে ডান দিকে ঘুরে একটি আয়তক্ষেত্র আঁকবার চেষ্টা করল। সূর্য পশ্চিমে আরো হেলে পড়েছে। এবার তার ফিরতে হবে। সে দৌড় দিল। সূর্য ক্রমাগত পশ্চিমে নেমেই আসছে। সে আরো দ্রুত দৌড়াতে শুরু করল। সূর্য পশ্চিম দিগন্ত প্রায় ছুঁই ছুঁই করছে, তার আর সময় নেই, তাকে সম্রাটের প্রাসাদের সীমনায় যেতে হবে। সে আরো জোরে দৌড়োচ্ছে। কিন্ত লোকটি সীমানা প্রাচীরের কাছে এসেই আর টিকে থাকতে পারল না। দড়াম করে পড়ে গেল! বুকের ভেতর থেকে শেষ বাতাসটুকু বেরিয়ে গেল। লোকটি মারা গেল। কিন্তু কি পেল সে? এখানেই পাঠকরা লেখক টলেষ্টয়কে বলে ঋষী লেখক। আর ঋষী লেখক টলেষ্টয় তাঁর এ লেখার মাঝ দিয়ে মানুষকে বেঝানোর চেষ্টা করেছেন, একজন মানুষের প্রকৃতপক্ষে কতটুকু জমি প্রয়োজন?


অদ্ভুত ব্যাপার হলো তলস্তয় যখন সমস্ত জমিদারি, সমাজ সংসার ছেড়ে দিয়ে অখ্যাত রেল স্টেশনে ডেরা গেড়েছিলেন তখন তার গাউনের ভেতরে ছিল উপমহাদেশের অনন্য শিল্পতাত্ত্বিক শহেদ সরওয়ার্দী সংকলিত হাদিস সংকলন। ভারতীয় ধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর নিজের জীবনদর্শনের মিল খুঁজে পেতেন তিনি৷ ঔপনিবেশিক শাসনামলে স্বাধীনতাকামী অনেক ভারতীয় নেতার সঙ্গে গড়ে ওঠে তাঁর যোগাযোগ, পত্রবন্ধুত্ব৷ এর মধ্যে অন্যতম মহাত্মা গান্ধী৷ ১৯০৯ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত অসংখ্য চিঠি চালাচালি হয়েছে এই দুই মহান ব্যক্তির মধ্যে, যেগুলো পরে এক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়৷ দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধী গড়ে তোলেন ‘টলস্টয় ফার্ম‘৷ তার বিখ্যাত রচনা ‘দ্য কিংডম অব গড ইজ উইদিন ইউ’তে অহিংস আন্দোলনের তার যে ধারণা ব্যক্ত হয়েছে তা গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল মহাত্মা গান্ধী এবং মার্টিন লুথার কিংকে।


ধনীর দুলাল তল্‌স্তোয় শেষ বয়সে প্রায় সন্তের জীবন-যাপন করতে চেয়েছিলেন। নিজের কাজ তিনি নিজে হাতে করতেন, এমন কি জুতো নিজে তৈরি করে পরতেন, চাষা-ভুষোর মত সাধারণ ও অল্প আহার করতেন, পরতেন ক্ষেত মজুরের পোষাক। শেষ বয়সে তিনি কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পথিমধ্যে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে ১৯১০ সালের ২০ নভেম্বর রাশিয়ার আস্তাপোভো নামক এক প্রত্যন্ত স্থানের রেলওয়ে স্টেশনে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান তল্‌স্তোয়। তিনি যখন মারা যান তখন পাদ্রী-পুরুতদের দল ভিড় করে এসেছিলেন, কিন্তু কাউকেই কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয় নি; এবং দেশের ও বিদেশের হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়াই তাঁর শবযাত্রায় শামিল হয়ে তাঁর মরদেহ গ্রামে নিয়ে সমাহিত করে।


তার মৃত্যুর পর ১৯২৮-১৯৫৮ এর মধ্যবর্তী সময়ে তার সাহিত্যকর্ম ৯০ খন্ডে বিভক্ত হয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এ প্রকাশিত হয়। লিও টলেস্টয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আইন পড়ার জন্য। কিন্তু তিনি আইন ছেড়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন লেখালেখিতে। আইনজীবী হয়ে তিনি পর্যাপ্ত টাকা হয়তো কামাতে পারতেন কিন্তু বিশ্ব তার অনবদ্য সাহিত্যিকর্ম থেকে বঞ্চিত হতো। আজ এই খ্যতিমান কথা সাহিত্যিকের ১৮৫তম জন্মদিন। বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকের জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×