somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপেক্ষিত মানবাধিকার, নিরাপত্তাহীনতায় মানুষঃ গত চার বছরে গড়ে প্রতি দুই ঘণ্টায় খুন হয়েছেন একজন

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিগত ৪ বছরে গড়ে প্রতি দু্ই ঘণ্টায় খুন হয়েছেন একজন। মানবাধিকার লঙ্ঘিক হয়েছে চরমভাবে, নিরাপত্তাহীনতায় দেশের মানুষ। গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এমআরটি) এক জরিপের তথ্য মতে গত চার বছরে মোট খুনের সংখ্যা ১৬ হাজার ৫৮৯ জন। গড় হিসেবে প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন খুন হয়েছেন।


ওই জরিপে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালে সর্বোচ্চ খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১২ সালে খুনের ঘটনা ছিল আগের তিন বছরের চেয়ে অনেক বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ সালে সারা দেশে খুন হয়েছেন, ৪ হাজার ২১৯ জন। ২০১০ সালে ৩ হাজার ৯৮৮ জন ও ২০১১ সালে ৩ হাজার ৯৭০ জন। ২০১২ সালে ৪ হাজার ৪১২ জন খুন হয়েছেন। গড় হিসেবে এ বছর প্রতিদিন গড়ে ১২ জন মানুষকে খুন করা হয়েছে।


বিগত চার বছরের আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে, সাগর-রুনি হত্যা, ঢাকায় সংসদ ভবন এলাকায় যুবলীগ নেতা ইব্রাহীম হত্যা, যাত্রাবাড়ীতে ব্যবসায়ী দম্পতিসহ ট্রিপল মার্ডার, গুলশানে বাসায় ঢুকে মা ও মেয়েকে গুলি করে হত্যা, মগবাজারে যুবলীগ নেতা ইউসুফ আলী সরদার হত্যা, খিলগাঁওয়ে প্রকৌশলী হত্যা, মহাখালীতে কর্মচারী নেতা সিদ্দিকুর রহমান হত্যা, খিলগাঁওয়ে গৃহবধূ কণিকা হত্যা, মিরপুরে ইডেন কলেজের ছাত্রী মেনকা হত্যা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান হত্যা।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলে গ্রুপিংয়ের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুধু আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছেন ১৫৩ জন। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৩৮ জন, ২০১০ সালে ৩৮ জন, ২০১১ সালে ৩৮ জন, ২০১২ সালে ৩৯ জন নিহত হয়েছেন।


এ ছাড়াও বিগত চার বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় খুন হয়েছেন ৭৯০ জন। ২০০৯ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২৫১ জন, ২০১০ সালে ২২০ জন, ২০১১ সালে ১৩৫ জন ও ২০১২ সালে ১৮৪ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৬৫৫ জন। হিসাব অনুযায়ী গড়ে প্রতি বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত হয়েছেন ১৪ হাজার ৯১৩ জন আর প্রতিদিন গড়ে ৪১ জন মানুষ আহত হয়েছেন।


একই সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ৪৫৯ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার বছরে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ জনের। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই কথিত ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা ও হামলা ছিল লক্ষণীয়। বিশেষ করে বিগত বছরের প্রথম ও শেষ দিকে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বিরোধী জোটের পূর্বঘোষিত মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন ও ৩০ জানুয়ারি রাজশাহীতে একজন নিহত হন। সর্বশেষ বিরোধীদের মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শিবির কর্মী মুজাহিদ। সংস্থার একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয়েছে ১৫৪ জনের, ২০১০ সালে ১২৭ জন, ২০১১ সালে ৮৪ জন ও ২০১২ সালে ৯৪ জনের।


রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দলীয় কোন্দল এবং বিভিন্ন কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নিহত ছাড়াও একই সময় গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৫৮৮ জন।
বর্তমান সরকারের চার বছরে সারা দেশে গণপিটুনিতে নিহত হন ৫৮৮ জন। সে হিসেবে প্রতি মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। গণপিটুনিতে সাভারের আমিনবাজারে ছয় শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা স্মরণ করে এখনো আঁতকে ওঠেন অনেকে। এ ছাড়া গণপিটুনিতে ২০০৯ সালে নিহত হয়েছেন ১২৭ জন, ২০১০ সালে ১৭৪ জন, ২০১১ সালে ১৬১ জন ও ২০১২ সালে ১২৬ জন।


দেশেরপ্রতিটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তার দ্বায়িত্ব সরকারের উপরে বর্তায়। সরকার মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে ব্যার্থ হলে তা তার সংম্লিষ্ট বিভাগের অদক্ষতার প্রমান। স্বাভাবিক মৃত্যু জনগণের মানবাধিকার। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্রান্টি সরকাকেই নিতে হবে। আমরা চাইনা কোন গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে কোন প্রকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। দোষীকে আইনের আওতায় শাস্তি বিধান সংবিধান স্বীকৃত। কেউ দোষী হলে আদালতের রায়ে তার ফাঁসি হলে মানবাধিকার সুরক্ষিত হবে। সুতরাং সকল রাজনৈতিক হত্যা ও আইন প্রেয়োগকারী সংস্থার ক্রস ফায়ারের নামে সকল প্রাকার বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করে জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষিত করতে আন্তরিক ও যত্নবান হোন এখনই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২৪
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×