somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণকারীদের অভায়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশঃ ধর্ষণের বিস্তার রোধে নরপশুদের ফাঁসির চাই

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আইনের যথার্থ প্রয়োগ না হওয়া, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দানে অপারগতা কিংবা অবহেলা, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিরাপদে অবস্থান কিংবা প্রভাবশালী বিধায় ধর্ষণকারীর বিচার না হওয়ায় নরপশুরা দোর্দণ্ড প্রতাপে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্ম। ধর্ষকদের মনে একটা কথা এখন বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে যে , ধর্ষণ করলে কিছুই হয় না। গণধর্ষণে বড়জোড় জরিমানা হয় কিংবা দোররা অথবা হাজার দশেক টাকা জরিমানা । আর ভিক্টিম মারা গেলে হয়তো বড় জোড় জেল হবে । আবার এসব কিছুই হবে না যদি ধর্ষকদের মামা – চাচা (!) থাকে । আর যদি রাজনৈতিক কর্মী হয় , তাহলে তো উল্টো ভক্টিমের পরিবারকেই হেনস্থা হতে হয় ! যে কারনেই এইসব নরপশুদের সাহস এতো বেড়ে গেছে । ডাঃ সাজিয়া আক্তার ইভার হত্যাকারী ,কিংবা ধর্ষক পরিমল অথবা মডেল তিন্নির হত্যাকারী এবং এরকম হাজারো ঘটনার নরপশুদের কেউ কেউ ধরা পড়লেও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি।


তাই আগে যা হতো লোকচক্ষুর আড়ালে রাতের অন্ধকারে তা এখন প্রকাশ্যে অনেকের সামনে দিনের আলোয় সংঘটিত হচ্ছে। অভিজাত ভাষায় বলা হয় যাকে বলা হয় গণধর্ষণ। কয়েকটি সারমেয় মিলে এক যোগে একটি কিশোরী কিংবা তরুণীর দেহ ছিন্ন ভিন্ন করে। এখানেই ক্ষ্যান্ত হয়না তারা, নারী দেহ নিয়ে হায়নাদের সেই বিভৎস উল্লাস ক্যামেরা বন্ধী হয়ে তা ছড়িয়ে দেয় বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে কানাচে। যার চিত্রায়ণ দেখে তাদের স্বজাতিরা কামাতুর হয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোল; প্রলুব্ধ হয় এমন একটি কচি শরীর বাগে আনতে। ধর্ষিতা শত হাজারবার ধর্ষিতা হয় তার অজান্তে। এমনি ভাবে দিনে দিনে ধর্ষণকারী হিংস্র নরপশুদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এদের হাত থেকে নিস্কৃতি পায়নি ৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে কিশোরী, তরুণী, গৃহবধু, শিক্ষিকা, আইনজীবী, ডাক্তারসহ ৬০ বছরের বৃদ্ধাও। একাধিক নরপশুরা একই সাথে ছিন্নভিন্ন করছে ৫ বছরের কোমল শিশুর শরীর। এমনি হাজারো ঘটনা ঘটেছে আমাদের এই দেশে যেমনঃ
বাঁশখালীতে যুবতী ধর্ষণের ঘটনা ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা, মাতবরেরাই ধর্ষণের ঘটনা নিষ্পত্তি করেন কুলিয়ারচরে, কুতুবদিয়ায় ১০ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনা ধামা-চাপা, ঈশ্বরদীতে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টার অভিযোগ, চবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা। অভিযুক্ত শিক্ষকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশু হত্যা, বরিশালে গৃহবধূকে-ধর্ষণের-ঘটনা-ধামাপাচা-দেয়ার-চেষ্টা, রামগঞ্জে শিক্ষক কতৃক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, ফতুল্লায় নববধূকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার তৎপরতা, চাঞ্চল্যকর আরও ছয়টি রেইপ এর ঘটনা, তুমা চিং মারমাকে ধর্ষণের পর হত্যা, কেন্দুয়ায় চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা, রাঙামাটিতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, ভিকারুন্নেসায় ছাত্রী নির্যাতন, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ভট্রসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর এক ছাত্রী ধর্ষণ, ডা. সাজিয়া আরফিন ইভাকে ধর্ষণে বাধা দানে হত্যা, ৬ বছরেও তিন্নি হত্যা, মীরসরাইয়ে ৬ বছরের শিশু ধর্ষণ ইত্যাদি।


বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০০০ থেকে ৪০০০ ধর্ষণের ঘটনার রিপোর্ট হয় । যা সরকার স্বীকার করে । অন্য সুত্রগুলো বলে এই সংখ্যা ১০,০০০ এর কাছাকাছি থাকে গড়পড়তা। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে রেইপের ঘটনা ঘটেছে ১১,২৯১। ২০০৬ সালে ১১,৬৮২ টি খেয়াল করুন এইগুলা সবই রিপোর্টেড ঘটনা । রিপোর্টেড নয় এমন ঘটনা যোগ করলে এই সংখ্যা কতো হবে ধারনা করতে পারেন। প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালে দেশে তিন হাজার ৫৮৪টি ধর্ষণ এবং ২০০৮ সালে তিন হাজার ৪৬২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২০০৯ সালের ৯ মাসে এক হাজার ৪৭৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ।জাতীয় মহিলা পরিষদের ২০১২সালের ডিসেম্বর মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিজয়ের মাসে ৪০০-এর ওপর নারী ধর্ষিত হয়েছেন। এছাড়াও ঘটে বিভিন্ন নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনাও। টাঙ্গাইলে স্কুল ছাত্রীর হণ ধর্ষনের ঘটনা, বাগেরহাটে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে গণধর্ষণ , গোবিন্দগঞ্জে শিক্ষক কর্তৃকছাত্রীধর্ষণ , রাজধানীতে ধর্ষণের পর ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রীকে হত্যা, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ভট্রসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর এক ছাত্রী ধর্ষণ, সাভারে গণধর্ষণ; ভিডিও ধারন, সর্বশেষ শিশু চাঁদনী।


সচেতনাতার অভাব কিংবা সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই হয়তো বিচার প্রার্থী হতে পারেনা বা হয়না। তাই দেশের ধর্ষণজনিত ঘটনার কিয়াদংশই আমাদের গোঁচরে আসে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ধর্ষণের খবর রসিয়ে রসিয়ে প্রচার করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে, কখনো্ কখনো ধর্ষীতার ছবি ও নাম পরিচয় প্রকাশ করে তাকে দর্শকদের দ্বারা ধর্ষণ করায় যা নৈতিকতা বিরুদ্ধ। সম্প্রতি ভারতে বাসে ধর্ষীতার নাম পরিচয় ও ছবি প্রকাশ না করার যে দৃষ্টান্ত ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দিয়েছে তার অনুকরণীয়। ভিক্টিমের পরিচয় গোপন করে সংবাদ প্রচার করে ধর্ষনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেবার দ্বায়িত্ব প্রচার মাধ্যমের।


বেশ কয়েক বছর আগে '' এসিড সন্ত্রাস '' এতোটাই ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে , প্রতিদিন পত্রিকা, টিভি খুললেই গড়পড়তা ৫/৬ টা এই ধরনের ভয়াবহ নিউজ আসতো । এই এসিড সন্ত্রাস এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারন করেছিলো যে তখন নারী ও শিশুনির্যাতন বিষয়ক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত এবং কঠোর শাস্তির ব্যাবস্থা করা হয়েছিলো , আজ কিন্তু এসিড সন্ত্রাস প্রায় নেই বললেই চলে। জনগণ প্রতিবাদী হয়েছিলাম বলেই আমরা এসিড সন্ত্রাস রুখতে পেরেছিলাম। বর্তমানে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, সন্ত্রাস আজকে এমন একটা পর্যায়ে চলে গিয়েছে যার বিরুদ্ধে সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে একটা বড় ধরনের প্রতিবাদ প্রতিরোধ আবশ্যক এখনই।


ধর্ষণ প্রতিরোধে আমরা কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরতে পারি যেমনঃ
১। ধর্ষণের বিস্তার রোধে ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। সেই ফাঁসীর খবরগুলোর মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করতে হবে যাতে করে সেইসব নরপশুদের মনে মৃত্যুর ভয় ঢুকিয়ে দিতে হবে।
২। বিকল্প হিসেবে ধর্ষনকারীদেরকে নপুংশক করা যেতে পারে। সম্প্রতি কোরিয়াতে এই আইন পাশ করা হয়েছে।
৩। ধর্মীয় অনুশাসন, প্রচলিত আইন, রীতি নীতি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে সবাইকে।


পরিশেষে বলতে চাই, ধর্ষণকারীদের কোন দল নাই, গোষ্ঠি নাই, পরিবার পরিজন নাই। এরা আলাদা শ্রেণী, মানুষরূপী হায়েনা। ধর্ষকদের জন্য একটাই আইন চাই ,যাবজ্জীবন কিংবা জরিমানা নয় । কোন প্রকার ক্ষমা, বিশেষ ক্ষমা, সাধারণ ক্ষমা নয়। " দ্রুত বিচার আইনে ৯০ দিনের মধ্যে ফাঁসীর বাস্তবায়ন চাই" । আসুন আমরা প্রতিবাদ করি ভার্চুয়ালি কিংবা রাজপথে ,শান্তিপূর্ণভাবে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×