সুরা কাহফ,চমৎকার একটা গল্প, কোরানের 18 নং সুরা, তবে একটু সমস্যা আছে, পরম করুনাময় আল্লাহ নিজের কৃতিত্ব প্রচার করতে গিয়ে অবৈজ্ঞানিক কিছু কথা বলে ফেলেছেন। তিনি বিজ্ঞান পড়েন নাই এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত, আমরা অনেক আগে একটা তর্ক শুরু করেছিলাম, যেখানে বলেছিলাম কোরানের ভাষ্য মতে পৃথিবী চ্যাপ্টা থালার মতো, হারুন ইয়াহিয়া সাহেবের বরাত দিয়ে অনেকেই অনেক রকম কথা বলে ফেললো। সহজ কথাকে বেঁকিয়ে কতটা ধোঁয়াটের করা যায় তার একটা প্রতিযোগিতা হয়ে গেলো, আমার আলোচনা নির্দিষ্ট করি আপাতত সুরা কাহাফ-এ।
সুচনায় বেশ চমৎকার বানী আছে- সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি এই কিতাব রচিয়াছেন এবং ইহাতে কোনো বক্রতা রাখেন নাই। এই সুচনার বক্তব্যটাই আমরা সত্য মানি, কোনো রকম বাঁকা কথার মধ্যে নেই আল্লাহ, তিনি যখন কিতাব রচিয়াছেন, এমন ভাবে রচিয়াছেন যেনো একজন এই কোরান পড়েই বিশ্বের সকল জ্ঞান, রুহানী, বাতেনী, শরিয়তি লাভ করিতে পারে। কোনো এক মহিলার লেখা প্রবন্ধ পড়লাম সেখানে বলা হয়েছিলো, হাদিস পড়তেও শিক্ষক লাগে, শিক্ষক ছাড়া হাদিস পড়ে জ্ঞান লাভ করা যাবে না এমন না, তবে সেই জ্ঞান সুসম্পূর্ন হবে যদি কেউ হাতে ধরে পার করে দেয়। রবি ঠাকুর বলেছেন হাত ধরে মোরে নিয়ে চলো সখা-আমি তো তোমায় চিনি নে। তাই আল কোরাআন হাতে ধরে আমরা সামনে আগাবো।
সুচনায় খুবই গভীর একটা বর্ণনা আছে- একদল যুবক পাহাড়ের গুহায় অবস্থান গ্রহন করে এবং ঘুমিয়ে পড়ে, রিপ ভ্যান এর গল্পের আরবি ভার্সন বলা যায় ঘটনাটাকে। 309 বছর ঘুমিয়ে কাটানোর পর তারা যখন উঠবে তখন তাদের মনে হবে মাত্র গতকাল ঘুমিয়েছিলো তারা গুহার ভেতরে। ছোটো বেলায় একজন খুব গম্ভির মুখে বলতো এই বিষয়টাই ঘটবে কেয়ামতের পর, সকল মুর্দা কবর থেকে চোখ কচলে উঠবে, ভাববে তারা মাত্র গতকাল ঘুমাতে গিয়েছিলো।
চমৎকার কিছু নিদর্শন বিশ্বাসীদের সামনে আনা হয়েছে অতঃপর- 2জন কৃষকের গল্পও আছে এখানে, যাদের এক জন ইশ্বরের বিশ্বাস করে অন্য জন করে না। এবং যে বিশ্বাস করে না তার অহংকারের ফলে তার বাগান ধ্বংস হয়ে যায়।
তিনি অবশ্য মাঝে মৃদু হুংকার দিয়ে বলেছেন যারা বিভ্রান্ত করে তাদের তিনি সাহায্যকারী হিসেবে রাখবেন না।
এর পর মুসার ভ্রমন কাহিনী শুরু হয়, একজন সঙ্গিকে নিয়ে মুসার নিরুদ্দেশ গমনের গল্প। মুসার বিশ্বাস খুঁজে পাওয়ার গল্প।
যাই হোক এক পরে শুরু হয় যুলকারনাইনের গল্প।
এখানেই আরও কিছু অবৈজ্ঞানিক কথা, যা প্রমান করে মুহাম্মদের দৃঢ় বিশ্বস ছিলো পৃথিবী সমতল।
আয়াত 18:86-
অতঃপর সূর্য যেখানে অস্ত যায় তিনি সেখানে পৌগগছালেন, এবং সূর্যকে ডুবে যেতে দেখলেন পঙ্কিল জলাশয়ে, এবং এখানে এক সমপ্রদায়ের সাথে তার দেখা হলো--
সূর্য অস্ত যায় এটা একেবারে স্থানীয় বিষয়, সূর্য কখনোই অস্ত যায় না, আমরা যা দেখে ভাবি সূর্য অস্ত গেছে তা হলো পৃথিবী গোলাকার বলে এর অন্য পৃষ্টে চলে যাওয়ার ঘটনা। কেনো সূর্য কোনো এক জলাশয়ে গিয়ে আত্মাহুতি দিবে? সূর্য কোথায় অস্ত যায়? যেখানে অস্ত যায় সেখানে কিভাবে মানুষ পৌঁছায়?
এর পরে আয়াত 18:90 এ নজর দিতে হবে, এখানে যুলকারনাইন সাহেব অন্য দিকে রওনা দিলেন, এবং সুর্য যেখানে উদিত হয় সেখানে পৌঁছালেন- সেখানে এমন এক দল মানুষের সাথে যুলকারনাইনের সাক্ষাৎ হলো যাদের সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোনো উপায় আল্লাহ সৃষ্টি করেন নি।
পৃথিবী গোলাকার ধরে নিলে এই সমস্যা এড়ানো যেতো। তবে সমতল ধরে নিলে সমতলের এক মাতায় পৌঁছে বলা যায়, আহা এই তো পূর্বের সব চেয়ে শেষ সীমানা, এর পর আর কিছু নেই, সূর্য ঐ ঐকোণ দিয়ে উদিত হচ্ছে। এবং একেবারে পশ্চিমে গিয়ে বলা যায়, এর পর পথ নেই আর- এর পর সূর্য ডুবে গেলো জলাশয়ের নীচে। তাও কাদামাটি মেখে অস্ত গেলো।
যাই হোক এই যে সূর্যের অস্ত যাওয়ার পর সূর্য কোথায় যায় এর বর্ণনাও আল্লাহ দিয়েছেন- সুরা ইয়াসীন এ। সুরা ইয়াসীন, কোরানের 36 নং সুরা- এখানে তিনি সৃষ্টির উপরে তার করূণাধারার বর্ণনা দিয়েছেন, মানুষ অকৃতজ্ঞ, সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ স্ব ীকার করে না, তিনি তাদের খাদ্য দিচ্ছেন, পানীয় দিচ্ছেন তার পরও সামান্য শোকরানা আদায় করে না তারা।
এখানে এসে দেখতে হবে আয়াত নং 38-39-40
সূর্য তার জন্য নির্দিষ্ট অবস্থানে ফিরে যায়, যা সৃষ্টিকর্তা কতৃক নির্ধারিত- অবশ্য এটার শোভন একটা অনুবাদও করা হয়েছে- সূর্য তার জন্য নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে- যদিও বোখারির হাদিস প্রথম অর্থটাকে প্রাধান্য দেয়- আল আমীন মুহাম্মদ বলেছেন- আবুজর গিফারি তুমি জানো অস্ত যাওয়ার পরে সূর্য কোথায় যায়, আবুজর গিফারি পরম শ্রদ্ধার সাথে বললেন, আল্লাহর রসুল এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। এর পর মুহাম্মদ বলেন, সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আল্লাহর আরশের নীচে গিয়ে পরবর্তি দিন উদিত হওয়ার নির্দেশের অপেক্ষা করে। কেয়ামটের দিন সূর্যকে উদিত হওয়ার আদেশ দেওয়া হবে না।
এর বিপরীত বানীও আছে, কেয়ামত নিয়ে একটা আলোচনায় পাওয়া যায়, সূর্য কেয়ামতের দিন আরও নীচে চলে আসবে, এবং গরমে মানুষের বহ্মতালু টগবগ টগবগ করে ফুটবে। ভয়ংকর বর্ননা, তবে সূর্য আল্লাহর আরশের নীচে থেকে এই ঘটনা ঘটাবে না মাথার উপরে ঘটাবে এটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা যায়, তবে উদিত হওয়াটাই ভালো। কারন আল্লাহর আরশ যদি আমাদের মাথার উপরে হয়, যার নীচে গিয়ে যূর্য রাতের খাবার খেয়ে ঘুম যায়, সেটার প্রভাবে আমরা রাতে সূর্যকে দেখতে পেতাম নিশ্চিত ভাবেই।
যাই হোক কেয়ামতের দিন সূর্য উদিত না হলেও সমস্যা নেই, যেভাবেই হোক সেটা মাথার উপরে এসে যন্ত্রনা দিবে।
আয়াত 39 চাঁদের জন্য আলাদা আলাদা ঘর আছে, আলাদা আলাদা ঠিকানা, ভয়ংকর বিষয়, চাঁদ আমার জানা মতে একটাই কক্ষ পথে ঘুরছে, সেটার ঘন ঘন বদল হয় না, এমন কি তার যে কলা র পরিবর্তন এটা ঘটানোর জন্য চাঁদকে কোথাও যেতে হয় না কক্ষপথ ছেড়ে, তার কক্ষপথে থেকেই এই আশ্চর্য ঘটনা ঘটাতে সক্ষম চাঁদ।
আয়াত 40 সবচেয়ে ভয়ানক, যেখানে বলা আছে সূর্য চাঁদকে তাড়া করছে, এবং ইশ্বরের অভিপ্রায় এমন যে সূর্য কখনই চাঁদকে ধরতে পারবে না।
এটার শোভন ব্যাখ্যাও আছে- যেখানে বলা আছে- চাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষপথ এবং সূর্যের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষপথ বিদ্যমান তারা একটা অন্যটাকে অতিক্রম করে না। বিষয়টা ঠিক কি রকম যেনো। চাঁদ ঘুরপাক খায় পৃথিবীকে ঘিরে, আর পৃথিবী ঘুরপাক খায় সূর্যকে ঘিরে। এখানে কক্ষপথের অধিক্রমনের ঘটনা ঘটবে কিভাবে? যদি না এমন কোনো দৃশ্য কল্পনা করা হয় যে সূর্য ও চাঁদ উভয়েই পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে তাহলে আয়াত 40 এর একটা গ্রহন যোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
দিন ও রাত্রিও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন এবং একে অন্যকে ধরার চেষ্টা করছে। ভাব খানা এমন যে দুজনেই জীবন্ত প্রানী এবং তাদের ভেতরে একটা প্রতিযোগিতা চলছে অহর্নিশি।
যাই হোক সূর্য প্রসঙ্গে এবং চন্দর প্রসঙ্গে কথা বললেই কোরানে এর সাথে সাথে দিন ও রাতের কথা এসেছে-
সুরা 21 আয়াত 33
তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন, চাঁদ ও সূর্য এবং তারা আপন কক্ষপথে ঘুরে। যদিও এর আগে কারো লেখায় বলেছিলাম দিন ও রাতকে সৃষ্টি করার কিছু নেই, তাদের আলাদা করে তৈরি করার কিছু নেই, এর পরও এই যে ধারাবাহিকতা এটা দেখলে যা সহজ কল্পনায় আসে তা হলো সূর্য ও দিন সমার্থক, চাঁদ ও রাত্রি সমার্থক, সূর্যকে সৃষ্টি করা মানে দিন সৃষ্টি করা চাঁদ সৃষ্টি করা মানে রাত সৃষ্টি করা। এবং এর ব্যাখ্যায় একজন বলেছেন, এই যে আপন কক্ষপথের কথা বলা হয়েছে তা আসলে সূর্য ও চাঁদের কক্ষপথের কথা। সূর্যের কক্ষপথ(!!!) পৃথিবীর সাপেক্ষে? নাকি সূর্য যে কক্ষপথে প্রায় 25 কোটি বছরে একটা ঘূর্ণন সম্পন্ন করে সেই কক্ষপথের কথা বলা হয়েছে?
যদিও এই ভ্রমনের সাথে দিন রাতের কোনো সম্পর্ক নেই এর পরও, রাত্রি ও দিনের কথা উঠা মাত্রই চাঁদ ও সূর্যের কথা এসে পড়ে।
সুরা 31 আয়াত 29
তুমি কি দেখো না আল্লাহ রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের ভেতরে(? ?) এবং তিনি চাঁদ ও সূর্যকে নিজস্ব কাজে নিয়োজিত রেখেছেন, তারা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত পরিভ্রমন করে? কোনটা নির্দিষ্ট কাল? একটা সীমানা দিয়ে রাখা হয়েছে, সেটা খুব আধুনিক ব্যাখ্যা মতে কোথাও নিয়ে যায় না আমাদের, 25 কোটি বছরের ভ্রমনের কথা বলা যায় উদাহরন হিসাবে আবার বলা যায় প্রায় অনির্দিষ্ট প্রসারনের কথা, যা কোনো সেন্টার রাখে নি বৃহৎ মহাবিশ্বের সাপেক্ষে যেখানে সূর্যের কক্ষপথ হতে পারে। তবে সহজ ব্যাখ্যা নিলে বলা যায় এটা বলা হয়েছে সূর্য দিনের বেলা উদিত হয়, রাতে অস্ত যায়, এভাবেই দিনের ভেতরে রাত প্রবেশ করে রাতের ভেতরে দিন।
এ ছাড়া এমন কোনো খাপ কিংবা খাপ খোলা বিষয় নেই যা একেবারে রাত্রি বলে মেনে নেওয়া যায়। এখন আমেরিকার রাত্রি আর বাংলাদেশের দিনের ভেতরে সমসাময়িকতা আছে, ঠিক কোন খানে কে প্রবেশ করছে। শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ করে ফেললে বিষয়টাকে এই দিন রাত্রির বিষয়টা নির্দিষ্ট হয় , এবং এটাকে সবার জন্যই এক মনে করার জন্য একটাই পূর্বানুমান লাগবে তা হলো পৃথিবী সমতল। এই সমতল পৃথিবীর ধারনার বাইরে কখনই এ বিষয়টা থাকতে পারবে না। সব এলাকায় এক সাথে ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসা এর দিনাগমন বিষয়টা সম্ভব না গোলাকার পৃথিবীতে।
সুরা 44 আয়াত 58 বলে শেষ করি -
আমি আপনার ভাষায় কোরানকে সহজ করে দিয়েছি যেনো তারা স্মরন রাখে। অন্য একটা অনুবাদে আসে যেনো তারা কর্ণপাত করে ।
কোরানের ভাষা সহজ এবং এটার বানী শুনে যেনোম্মুসলিম উম্মাহ ধর্ম পালন করে সৃষ্টিকর্তার এই একান্ত ইচ্ছা - তিনি গোপন,খুব গোপন কোনো এনকোডেড ম্যাসেজ পাঠান নাই, সহজ কথা সহজ করে বলেছেন যেনো মানুষ ইশ্বরের বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে।