somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা দিবস

০৮ ই মে, ২০১১ রাত ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মা মা দিবস সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না, শুধু জানতেন বছরের একটি দিন দুনিয়ার সকল মা-দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য উৎসর্গ করা হয়। প্রথমবার যখন তিনি এটা শুনলেন তখন একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “১০ মাস কষ্ট করে মাত্র ১ দিন আমরা আমাদের সন্তানদের ভালবাসা পাই”? মায়ের কথা শুনে আমি একটু থতমত খেয়ে যাই। মনে মনে অবশ্য সৃষ্টিকর্তাকে একটু ধন্যবাদও জানাই এজন্য যে মা বাকি বিশ বছরের প্রতিদিনের একটু একটু করে সয়ে যাওয়া কষ্টগুলোর কথা একবারও তোলেননি।

সত্যি কথা বলতে কি আমার নিজেরও যে খুব পরিষ্কার ধারণা ছিলো তা নয়। মাকে শুধু নির্দিষ্ট একটা দিনে খুব বেশী ভালোবাসবো এই ধরণের চিন্তা আমার কখনোই মাথায় আসেনি। এক্ষেত্রে আমাকে অসামাজিক বা আনসফিস্টিকেটেড বললে খুব একটা ভুল হবে বলে আমি মনে করিনা। একটা সময় ছিলো যখন সব বাচ্চারা ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে সঙ্গে সঙ্গে মাকে কাছে পেতো। আমি কখনোই সে সু্যোগটা পাইনি। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মায়ের কথা মনে করে ভিতরে ভিতরে কাঁদতাম, কিন্তু মুখে কখনোই তা প্রকাশ করতাম না। ছুটিতে বাসায় এসেও কখনো মাকে জড়িয়ে ধরে বলিনি সেই কষ্টের কথা। কারণ আমার যেটুকু কষ্ট হয়েছে তাতো হয়েই গেছে, কথাটা শুনলে মা আরো বেশী কষ্ট পাবেন। মায়ের সান্নিধ্যের অভাবে খুব অল্প বয়সেই বুড়ো হয়ে যেতে হয়েছিলো। আমার কাছে বছরের ৩৬৫ দিনই মা দিবস ছিলো-এর মধ্যে মাকে কাছে পেয়েছি মাত্র ১০০ দিন।

ভাষাবিজ্ঞান অনুযায়ী মা শব্দের ব্যুৎপত্তি আমার জানা নেই, তবে মা দিবসের পটভূমি ঘাটতে যেয়ে যা দেখলাম তাতে মনে হলো মা শব্দটির শিকড় হলো দেবী। প্রাচীন মিশরে ইসিস নামক এক দেবীর পূজা করা হত যিনি ছিলেন মিশরের প্রথম ফারাও হোরাস এর জননী। এই দেবী ইসিস-কে প্রাচীন রোমে বলা হত সিবিল এবং গ্রীকরা তাকে রিয়া নামে পূজা করত। কিন্তু আমাদের আধুনিক মা দিবস এসেছে ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় সন্তানদের হারানোর পর জুলি ওয়ার্ড নামক এক মহিলা সকল মা-দের একত্রিত করেন এজন্য যে যাতে কোনো মায়ের সন্তান যেন অন্য মায়ের সন্তানদের হত্যা না করে। তিনি ৪ জুলাই মা দিবস পালনের প্রস্তাব রাখেন। তার প্রস্তাবনা বিবেচনা করে ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে ২ জুলাই আমেরিকার ১৮টি অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালন করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই এই আয়োজন স্তিমিত হয়ে যায়।

মা দিবস পালনের সবচেয়ে কারযকারী উদ্দ্যোগ নেন এ্যানা এম জারভিস। তার মা এ্যানা রিভস জারভিসের মৃত্যুর পর মাকে সম্মান জানানোর জন্য মা দিবস পালনের জন্য গির্জায় একটি দরখাস্ত জমা দেন। ১০ মে ১৯০৮ এ তার আবেদন মঞ্জুর করা হয় এবং তখন থেকেই এই দিন এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এখন মোটামুটি প্রতিটা দেশেই মা দিবস পালন করা হয়। আমরা যে ধরণের মা দিবস পালন করি তা হল যে কোন মহান দিবস পালনের যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্করণ। আর সব দিবসের মত এতেও তারা বস্তুবাদের কালিমা লেপন করতে বাদ রাখেনি। মা দিবস পালনের সাধারণ পাশ্চাত্য ধারা হল বছরের একটি দিনে বৃদ্ধাশ্রম এ রাখা বুড়ো, অথর্ব মায়ের জন্য কিছু ফুল, এক বাক্স চকোলেট নিয়ে তাদের সাথে সারাদিন কাটিয়ে পরের বছরে একই দিনে দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া। নিঃসঙ্গ, অসহায় মা’রা বহুদিন পর তাদের সন্তানদের দেখতে পেয়ে যে পরিমাণ খুশি হন তাতে সারা বছর দেখা না করার কষ্টটা কিছুক্ষণের জন্য বিলীন হয়ে যায়। চকোলেট ও কার্ড কেনা-বেচার দিক দিয়ে মা দিবস-এর অবস্থান ভালোবাসা দিবসের ঠিক পরে। সুতরাং সন্তানরা তাদের মায়েদের প্রতি কতটুকু কর্তব্য পালন করে জানিনা, তবে দেশের অর্থনীতিতে যে সক্রিয় ভূমিকা রাখে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পশ্চিমারা যে কোনো দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তাদের পারিবারিক বন্ধন আমাদের মত অত গাঢ় না হলেও ভালবাসি শব্দটা ভালোভাবে অনেক বেশী ব্যবহারে তারা আমাদের চেয়ে শতগুণে পটু। খাঁচায় বন্দী তোতাপাখির মত আমরাও তাদের বুলি চোখ বন্ধ করে আউড়ে যাচ্ছি। আমাদের মা’রা তো আর বৃদ্ধাশ্রম এ থাকেন না যে শুধু তাদের দেখতে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র একটি দিন ঘটা করে পালন করতে হবে।না কি এটা কেবল শুরু? তবে কি আমরাও আমদের মায়েদের জন্য শুধু একটা দিন বরাদ্দ রাখবো? আমরাও কি আমদের মা’দের দেখতে বছরে একদিন ফুল আর চকলেট নিয়ে বৃদ্ধাশ্রম এ ফ্যামিলি পিকনিক করতে যাবো? আমরাও কি বছরে একদিন দেখা করে পরের বছরে একই দিনে দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বৃদ্ধ মা’কে নিঃসঙ্গ অবস্থায় রেখে স্বার্থপরতার চরমতম নিদর্শন সৃষ্টি করবো? না কি দেশের অর্থনীতির খাতিরে কার্ড আর চকোলেটের রমরমা ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরী করবো তা সময়ই বলে দেবে।
১১৪ বার পঠিত
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৩ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

ছবি কৃতজ্ঞতা এআই।

ভূমিকা

নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা ইতিহাসের এক দীর্ঘ অধ্যায়। পাশ্চাত্যে নারী আন্দোলন শুরু হয় ১৮শ শতকের শেষভাগে, যার ফলশ্রুতিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি স্মার্ট জাতির অন্তঃসারশূন্য আত্মজৈবনিক !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪


একটা সময় ছিল, যখন জাতির ভবিষ্যৎ বলতে বোঝানো হতো এমন এক শ্রেণিকে, যারা বই পড়ে, প্রশ্ন তোলে, বিতর্কে অংশ নেয়, আর চিন্তা করে। এখন জাতির ভবিষ্যৎ মানে—ইনফ্লুয়েন্সার। তারা সকাল ১০টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতায় যাবার আগেই নারী বিদ্বেষ শুরু

লিখেছেন অপলক , ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১০:১১

সংবাদ সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া হলো নারী সাংবাদিককে, যা বললেন মুফতি ফয়জুল করিম

বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের এক নারী সাংবাদিক মনিকা চৌধুরীকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামী দলগুলো নারী বিদ্বেষী - এটা একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১১:২৯

আরবের দেশগুলোকে আমাদের দেশের নারী আন্দোলনের নেত্রীরা দেখতে পারেন না হিজাব ইস্যুর কারণে। অথচ, আরব দেশ কাতার বি,এন,পি'র চেয়ারপারসনকে চার্টারড প্ল্যানে করে দেশে পাঠাচ্ছে। আরো কিছু উদাহরণ দেই। আওয়ামী লীগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী কমিশন বিতর্ক: সংস্কারের ভাষ্যে প্রান্তিকতার অনুপস্থিতি ও বিশ্বাসের সংঘাত

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ ভোর ৪:০৬


বাংলাদেশে নারী-অধিকার প্রশ্নে বিতর্ক নতুন নয়, তবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাবনা যেন একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছুড়ে দিয়েছে। বাল্যবিবাহ, পারিবারিক আইন, নারী-পুরুষের ভূমিকা ও ধর্মীয় বিধানের নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×