প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপা কেমন আছেন? আমি আপনাকে দুপুরে ফোন দিয়েছিলাম। (চমৎকার সূচনা-ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী)
জবাবে খালেদা বলেন, আপনার কোন ফোন আমি পাই নি।
( জবাব মনঃপুত হয়নি। এটা হলো ডাইরেক্ট অহংকার। জবাবটা যদি এমন হতো- আমি ভালো আছি আপা। আপনার ফোন পেয়ে খুশী হয়েছি। তবে দুঃখিত আপনার ফোন দুপুরে আমি পাইনি)
শেখ হাসিনা : আমি নিজে ফোন করেছি। কিন্তু আপনি ধরেন নি।
( আমি নিজে ফোন করেছি- এ কথা ঠিক আছে। কিন্তু আপনি ধরেন নি বলে-শুরুতেই সন্দেহের বীজ বোনা হয়ে গেলো। আর বীজ খারাপ হলে ফলতো খারাপ হবেই)
খালেদা জিয়া : রেডফোন তো অনেকদিন ধরে বিকল। আমার অফিস থেকে চিঠি দেয়ার পরেও এই ফোন ঠিক করা হয়নি।
( শেখ হাসিনা যখন বললেন- আপনি ফোন ধরেন নি- এ কথার জবাবে খালেদার জবাব খুবই সুন্দর হয়েছে)
শেখ হাসিনা : কেন আমি তো রিংয়ের শব্দ শুনেছি। আপনি শুনেন নি।
( এটা কোনো কথা হলো। আমি নিজেই কতবার বাসায় ফোন করি, এ পাশ থেকে ক্লিয়ার রিংএর শব্দ পাই। কিন্ত ও পাশ থেকে আম্মা বলেন-টেলিফোনের রিং এর শব্দই শুনতে পাইনি। সন্দেহের ২য় বীজ। গাছের ফলের এখন আরো খারাপ অবস্থা)
খালেদা জিয়া : না না কোন রিং হয়নি। আমিতো বাসায়ই ছিলাম। রিং হবে কিভাবে? ওই ফোনতো নষ্ট দু’বছর ধরে। ( খালেদা জিয়ার আবারো চমৎকার জবাব। নিজের ফোন যে নষ্ট , এটাতো ফোনের মালিকেরই সবচেয়ে ভালো জানার কথা)
শেখ হাসিনা : ফোন নষ্ট ছিল, না নষ্ট করে রেখেছেন?
( সন্দেহের ৩য় বীজ। পুরো বাগানই নষ্ট হতে চলেছে)
খালেদা জিয়া : কেমন কথা বলছেন। আপনার লোকদের জিজ্ঞাস করেন। লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। টিএ্যান্ডটির কর্মকর্তা বলেছেন ফোন নাকি ঠিক আছে। কিন্তু এটা মিথ্যা কথা।
( খুবই প্রফেশনাল জবাব)
শেখ হাসিনা : কিন্তু আমিতো রিং এর শব্দ শুনেছি। অনেকক্ষন রিং হয়েছে। কেউ ধরে নি। আপনি মিথ্যা বলছেন কেন? আপনার হয়তো কানে সমস্যা আছে।( এটা হলো অহেতুক কথা। গায়ে পড়ে ঝগড়া লাগানোর মতো। তাছাড়া বাড়তি কথা বলা-এরকম গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাজেনা)
খালেদা জিয়া : আমার মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস নেই। এসব অভ্যাস আপনার আছে। ( আমার মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস নেই- এটুকু বললেই হতো।-এসব অভ্যাস আপনার আছে- এটা হলো -অতিরক্তি কথা।মনের ঝাল মিটানো প্রতিহিংসার কথা)
শেখ হাসিনা : আচ্ছা বিষয়টি আমি দেখবো। যদি নষ্ট হয়ে থাকে আগামীকাল ১১টার মধ্যে ওটা ঠিক হয়ে যাবে। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে গণভবনে এসে কথা বলার জন্য আমি ২৮ তারিখ সন্ধ্যায় আপনাকে দাওয়াত করছি। আপনি জানেন আমি ইতিমধ্যে অন্যদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি। আমার সঙ্গে রাতের খাবার খাবেন। ( মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বুকের গহীন থেকে শ্রদ্ধা। চমৎকার সুন্দর একটা কথা। একজন প্রধানমন্ত্রী'র এই বিনয়ের জন্য জাতি সারা জীবন আপনাকে মনে রাখবে)
খালেদা জিয়া : আপনি কি র্নিদলীয় সরকার নিয়ে আলাপ করার জন্য আমাকে ডেকেছেন ? যদি এটি নিয়ে ডাকেন তাহলে আমি আসব।
( সংলাপে বসার আগেই যদি সবকিছু মীমাংসা হয়ে যায়-তবে আর সংলাপে বসারই দরকার কি?)
শেখ হাসিনা : আমিতো সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছি। ওটা নিয়ে যদি আপনার কোন সাজেশন থাকে, আমরা সেটা শুনব।( চমৎকার কথা। যদি এভাবে বলতেন তা হলে আরো ভালো হতো- আপা আসুন । আমরা একসাথে বসি। ইনশাল্লাহ সবাই মিলে একটা গ্রহণযোগ্য বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারবো)
খালেদা জিয়া : এটা আপনার প্রস্তাব। জনগনের এই প্রস্তাবে সায় নেই। এতে তো সমস্যার সমাধান হাবে না। আপনি র্নিদলীয় সরকারের প্রস্তাব নীতিগতভাবে মেনে নেন।( তালগাছ আমার, গাছের ফলটাও আমার- ফল দিয়ে যে পিটা বানানো হবে তাও আমার-এরকম গোঁ ধরে থাকলেতো সমস্যার সমাধান হবেনা)
শেখ হাসিনা : আমি যে প্রস্তাব দিয়েছি। তাতে তো আপনার দলের লোকও থাকবে। রাজনীতিবিদরা মিলে এই সরকার হবে। রাজনীতিবিদদের প্রতি আপনার আস্থা নেই কেন ? আপনি র্নিদলীয় সরকার দেখেন নি ? তারা কি করেছে আপনার মনে নেই ? ( রাজনীতিবিদরা মিলে এই সরকার হবে- খুবই সুন্দর কথা।
তারা কি করেছে আপনার মনে নেই? আমাদের মনে আছে- কিছু দূর্নীতিবাজদের চৌদ্দ শিকের ভিতর আটকিয়েছে। একেকজনের বাড়ির উঠোনে হরিণের পাল পাওয়া গেছে। ফ্রীজ , তোষকের ভিতর থেকে টাকা বের হয়েছে। চোর বাটপারদের ত্রাহি মধুসুদন অবস্থা হয়েছে,। ভালোইতো ছিলো)
খালেদা জিয়া : সেটা ভিন্ন বিষয় ছিল। এখন র্নিদলীয় সরকারের দাবি আমার একার না। এটা দেশের সব মানুষের দাবি।( দেশের মানুষতো সব সময় দুই দলে বিভক্ত- কথাটা রাজনৈতিক ভাবে ঠিক হলেও- সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক না।)
শেখ হাসিনা : আপনি আগে আসেন। আপনার দলের যতজন খুশী সব নিয়ে আসেন। তালিকাটা আগে পাঠিয়ে দেবেন। তবে আসার আগে দেশের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করে আসবেন। ( ধন্যবাদ আরেকবার আপনাকে । শুভ উদ্যোগ।)
খালেদা জিয়া : আপনার বাসায় আসতে আমার কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু হরতাল এথন প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। আপনি যদি আমাকে একদিন আগে বলতেন বা আজ সকালেও বলতেন, তাহলেও আমি চেষ্টা করে দেখতাম। হরতাল তো আমি একা ডাকেনি। ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের পুলিশ তাড়া করছে। তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আলোচনা করার জন্য এখন তাদেরতো পাবো না। ( চমৎকার বলেছেন সম্মানিত বিরোধী দলীয় নেতা। খুবই যৌক্তিক কথা। হুট করে বললেই তো প্রোগ্রাম বাতিল করা যায়না। আর এটাতো শুধু বিএনপি'র না। বাকিদের মতামত নিয়েইতো চলতে হয়)
শেখ হাসিনা : দেখেন আমি আন্তরিকতা নিয়ে ফোন করেছি। আপনিতো আমারে গ্রেনেড হামলা করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। আরো কতকিছু করেছেন। তারপরেও তো আমি ফোন দিয়েছি। ( এখানে গ্রেনেড হামলা নিয়ে আসার কী দরকার ছিলো? নৌকা'র মাঝে ধানের বোঝা নিয়ে মেঘনা নদী পার করতে হবে। সেই নৌকাকে আপনি ঠেলে দিলেন-আটলান্টিক মহাসাগরে। যে মহাসাগরে অলরেডি অশান্ত উর্মিমালা বিরাজ করছে,তারপর একের পর এক ঝড়)
খালেদা জিয়া : কে কি করেছে তা আপনিও জানেন, আমিও জানি, দেশের মানুষও জানে। এগুলো বাদ দেন। অতীত নিয়ে বসে থাকলে আমরা সামনে অগ্রসর হতে পারব না। আজো আমার ৮ জন লোককে হত্যা করা হয়েছে। ( শেখ হাসিনার কথার পিঠে- খালেদা জিয়ার চমৎকার জবাব। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা - সুন্দর ,মনপুতঃ জবাব)
শেখ হাসিনা : দেখেন আপনি তো ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করেন। কিন্তু ওটা তো আপনার জন্মদিন নয়। আপনি আমাদের বাসায় বহুবার এসেছিলেন। আমার ছোট ভাই রাসেলকে দেখেছেন। ছোট্ট এই শিশুটিকে হত্যার দিনে আপনি কি করে কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন ? ( আবারো বেহুদা কথা। এসব নিয়েতো রাজনীতির পল্টন ময়দান, পান্থপথ, সংসদ, হাট, মাঠ, বাজার সব সময় উত্তপ্ত-এরকম একটি জাতীয় সংকটময় মুহুর্তে পুরানো লেবু না কচলানোই ভালো)
খালেদা জিয়া : দেখেন ১৫ আগস্ট কারো মৃত্যুদিন যেমন হতে পারে, তেমনি অনেকেরই জন্মদিনও হতে পারে। ১৫ আগস্ট কারো জন্মদিন হলে সে কি দিনটি পালন করবে না ? আমার জন্মদিনে আমি পালন করবো, এটা তো আমার নিজস্ব ব্যাপার। আমি তো আপনার কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করি না। ( একেবারে বাজে একটা কথা। আমার চরম শত্রুর ও যদি স্বপরিবারে বা কেউ মারা যায়, আর সেদিন আমার জন্মদিন হয়েই থাকে। তাহলেও আমি আমার নিজস্ব বিবেকের তাড়নায়, মানবিক মূল্যবোধের তাগিদে , আপন মহানুভবতায় সেদিন আমার জন্মদিন পালন করবোনা)
শেখ হাসিনা : যাই হোক, এখন আলোচনার জন্য আমার আন্তরিকতা আছে। তাই ফোন করেছি। আপনি আসেন। আমরা আলাপ-আলোচনা করি। ( এতক্ষন পর আবোর একটি আশা জাগানিয়া কথা। ভালো লাগলো। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী)
খালেদা জিয়া : আপনার আন্তরিকতা থাকলে, আরো আগেই ফোন দিতেন। এখনো যদি নীতিগতভাবে র্নিদলীয় সরকারের দাবি মেনে নেন, তাহলে হরতালসহ সব কর্মসূচি বন্ধ করার দায়িত্ব আমি নেবো। সমাধান হয়ে গেলে তো আর কোন কর্মসূচির দরকার হবে না। ( আন্তরিকতার ব্যাপারে খালেদা জিয়ার কথা ঠিক আছে। তবে শেষ পর্যন্ত আলাপ যখন শুরু হলো- তখন খালেদা জিয়ার বলা উচিত ছিলো- আপনার শুভবুদ্ধির জন্য ধন্যবাদ,। তবে আমি সবার সাথে আলোচনা করে ,আপনাকে জানাচ্ছি। আমি হুট করে একাতো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা)
শেখ হাসিনা : আপা আপনি আগে আসেন। হরতাল প্রত্যাহার করে আসেন। (শেখ হাসিনা বলতে পারতেন- আচ্ছা আপা। আপনারা যখন প্রোগ্রাম দিয়েই ফেলেছেন, তবে একটু শিথীল করুন। আর আসুন । আমরা একবার একসাথে বসি)
খালেদা জিয়া : ২৯ তারিখ পর্যন্ত তো আমার কর্মসূচি আছে। ২৯ তারিখের পর যেকোন দিন যেকোন স্থানে আপনি ডাকলে আমি আসবো। ( খালেদা জিয়া ভালো বলেছেন। আলোচনার পথ বন্ধ করে দেননি। ধন্যবাদ।)
শেখ হাসিনা : হরতাল প্রত্যাহার করে আসেন। আমরা বসলে একটা সমাধান হবে। (শেখ হাসিনা বলতে পারতেন- আচ্ছা আপা। আপনারা যখন প্রোগ্রাম দিয়েই ফেলেছেন, তবে একটু শিথীল করুন। আর আসুন । আমরা একবার একসাথে বসি)
খালেদা জিয়া : না না না আগে আপনি ঘোষণা দেন। তাহলে আমার বসতে কোন অসুবিধা হবে না।( ঐ আগের তাল গাছ, গাছের ফল, পিঠা.- এরকম গোঁ ধরলেতো হবেনা)
শেখ হাসিনা : আপনি আপনার দলের নির্বাচিতদের নাম দেন। বাইরের লোকদের নাম প্রস্তাব করছেন কেন। দেশ চালাবো আমরা। বাইরের লোকের দরকার কি ? আমাদের উপর আস্থা রাখছেন না কেন।( মুলঃ সমস্যাতো এখানেই। বিগত পাঁচ বছরে যা হয়েছে তাতে আস্থা থাকে কেমন করে? আপনি বিরোধী দলে থাকলে আপনার আস্থা থাকতো কিনা?)
খালেদা জিয়া : আপনিও তো আমার উপর আস্থা রাখেন নি। সে কারণেই এখন দলের বাইরের লোক লাগবে। দেশের মানুষ র্নিদলীয় সরকার চায়। আপনি এ দাবি মেনে নিলেই সমস্যা শেষ হয়ে যাবে। আপনি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পছন্দ নাই করেন, তাহলে কেন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এই দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন ? ২০০৭ সালে কেন ওই সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এটা আপনাদের আন্দোলনের ফসল। এরপর সেই সরকারের অধীনে নির্বাচনেও গিয়েছিলেন। কিন্তু আজ বলছেন অন্য কথা। ( শেখ হাসিনার কথার জবাবে খালেদাজিয়ার খুবই যৌক্তিক কথা)
শেখ হাসিনা : দেখেন আপা, অভিজ্ঞতা যেমন আমার আছে, তেমনি আপনারও আছে। আমরা তো আপনাদের লোক নিয়েই অন্তবর্তী সরকার করতে চাচ্ছি। আপনি এখন চিন্তা করে দেখেন। ( শেখ হাসিনা ফোনের শুরু থেকেই খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার আপা বলে সম্বোধন করেছেন। খুবই ভালো লাগলো ব্যাপারটা। কিন্তু খালেদা জিয়া শিষ্টাচারের আশে পাশেও নাই।)
খালেদা জিয়া : এখানে চিন্তার কিছু নেই। আপনি দাবি মেনে নিন। দেশের মানুষকে শান্তি দিন। এই দেশটা আপনারও না, আমারও না, ১৬ কোটি মানুষের। তাদের শান্তির কথা, স্বার্থের কথা চিন্তা করেন। আমি তো সেসময়ে আপনার দাবি মেনে ছিলাম। আমি তো এখন আমার দলের সরকার চাই না। আমার নিজের সরকারও চাই না। চাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্দলীয় লোকদের সরকার। সেটা মানতে আপনার আপত্তি কেন বুঝতে পারছি না। ( খুবই চমৎকা যৌক্তিক কথা।"এই দেশটা আপনারও না, আমারও না, ১৬ কোটি মানুষের। তাদের শান্তির কথা, স্বার্থের কথা চিন্তা করেন। " পুরো টেলিফোন সংলাপের সবচেয়ে সুন্দরতম লাইন)
সংলাপের টেক্সট হাবিব _ ফরিদপুরের ব্লগ থেকে নেয়া হয়েছে।