somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা কবিতার গোড়াপত্তন ও এর অর্থবোধকতার পর্যায় সমূহ

২৩ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের ছোটবেলায় পদ্মা নদী খুব উত্তাল, বিশাল ও ভয়াবহ ছিল। নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করতাম, 'বাবা, গাঙের কি ঐ পাড় নাই?' বাবা হেসে জবাব দিতেন, 'আছে। অনেক দূরে। দেহা যায় না।'
আমি তখন গাঙের বুকে পালতোলা নাওয়ের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবতাম, আহা, একদিন যদি ঐ পাড়ে যাইবার পারতাম!'

কলেজবেলায় গ্রামে গিয়ে মাঝে মাঝে পদ্মাপাড়ে যেতাম বন্ধুদের সাথে বেড়াতে। পদ্মা ডুবে গেছে চরের বালুতে। কলাপাতায় সবুজের ঢেউ দেখি, আর শুকনো তীরে দাঁড়িয়ে দেখি পদ্মার বুকে সাদা বালু খাখা করছে। চিকন খালের মতো মরা নদী বুড়ির মতো ধুঁকে ধুঁকে হেঁটে যাচ্ছে যেন।


অনেকদিন পর দেখা।

গুলিস্তান থেকে শুরু। বাবু বাজার ব্রিজ কিংবা পোস্তগোলার চীনমৈত্রী সেতু পার হয়ে ঢাকা-মাওয়া সড়ক ধরে চলতে থাকুন।
শ্রীনগর।
সদর পার হয়ে কামারগাঁও ছাড়িয়ে শাইনপুকুর।
দোহার উপজেলা শুরু।
কিছুদূর গিয়ে নারিশা। ছোটবেলায় এখানে অনেক এসেছি। ছোট চোখে নদীর ঐ পাড় ধু-ধু দেখা যেত। কলেজবেলায় এখানে ধু-ধু বালুচর।

আজ।
নারিশা গ্রাম ভেঙে ডুবে যাচ্ছে নদীগর্ভে। গ্রামবাসীর প্রাণান্ত চেষ্টা তা প্রতিরোধে।

গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ি। পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখি ওপাড়ে সূর্য পাটের উপরে, স্রোতোময়ী পদ্মার শরীরে ঢেউয়ের ভাঁজে ভেঙে পড়া রোদ চিকচিক করছে।

এই পথে, একটু দূরে শাহনাজদের বাড়ি। স্কুলজীবনে শুধু শাহনাজের সাথে কাকতালে দেখা হবার সম্ভাব্যতায় এখানে ঘোরাঘুরি করতাম। আর আছে পারুলদের বাসা। ওর মতো সুন্দরী মেয়ে আমার চোখে আর একটাও পড়ে নি আজও। বীনাদের বাড়ি আর ইমরানদের বাড়ি পাশাপাশি। বীনার সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়। ইমরান বাবা হয়েছে বছর দুই আগে, ও এ-খবর দিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে।

আর নার্গিস? খবিরের চাচাত বোন নার্গিস। স্কুলজীবনের পর ওর সাথে আর দেখাই হলো না। শাহনাজ বলে, নার্গিসের দিনে দিনে বয়স কমে। 'খ' ওর সাথে প্রেম করতো। ওদের দু পরিবারে অহিনকুল পরিস্থিতি সারাজীবন। ও-বাড়ির মেয়ে এ-বাড়িতে? এ-বাড়ির ছেলে ও-বাড়িতে? পৃথিবী উল্টে গেলেও না। এসএসসির পর পর ওর বিয়ে হলো এক গণিতজ্ঞের সাথে। খবিরের সাথে দেখা করতে গেছি; এগিয়ে এলো ভুবনমোহিনী নার্গিস ওর হৃদয়হরা হাসি ছড়িয়ে।
'তুই না খুব চিকন আছিলি? মাত্র কয় মাসেই এতো মোটা হইয়া গেছস?' আমার কথা শেষ হবার আগেই, 'স্টুপিড!' বলে মুচকি হেসে ঘাড় বাঁকিয়ে বেণী দুলিয়ে চলে গেলো নার্গিস। ওর সেই হাসি চোখের সামনে ভাসে, ওর কথা মনে হলেই।
আমাকে ভর্ৎসনা করে খবির বলেছিল, তুমি এতো বোকা কেন? ও প্রেগন্যান্ট হইছে বোঝো না?

আরো অনেকে। নাজনীন। ঝিনুক।

একেকটা মেয়ে একেকটা অনবদ্য কবিতা, ভিন্ন ভিন্ন রস ও স্বাদের। এই দেখুন, কোনো ছেলের নামই আমার মাথায় আসছে না এখন। আমরা মেয়েদের কথা বেশি মনে রাখি; ওরা আমাদের নিয়ে কী ভাবে তা জানতে খুউব খুউব সাধ হয়। আমার মতো সবগুলো ছেলেই হয়তো এমন করেই সবগুলো মেয়ের কথা ভাবে। আর মেয়েগুলো? ওরা মনে হয় আমাদের আর মনে রাখে না। আমরা যেমন বউয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আর তার বুকের উপর শুয়ে একবার হলেও ওদের প্রত্যেকের কথা ভাবি, ওরা কি স্বামীর বুকে মাথা রেখে একটি মুহূর্তের জন্যও মনে করেছে আমাদের কথা? আমার কথা? ওরা খুব স্বার্থপর। ওরা স্বামীদের সাথে বেইমানি করে না, আমরা যেমন বউদের সাথে করি। ওরা নয় প্রেমিকা, নয় বান্ধবী। ওরা আমাদের কেউ না।

একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে শাহনাজ বলেছিল, তোরা এতো নিষ্ঠুর কেন রে? তোদের কথা ভেবে ভেবে মরি...........তারপর ওর কণ্ঠ গলে যেতে থাকে, করুণ ফিসফিসে স্বরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, তোর কথা কতো ভাবতাম..........খুব নিষ্ঠুর রে তুই!


আমি যখন পদ্মার গভীর থেকে বান্ধবীদের ছিনিয়ে নিয়ে আসছিলাম, দেখি আমার সরলা বউ আর সন্তানেরা উজ্জল ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আনন্দে ঝলমল করছে।


এখানে একটা কবিতার ভাব জাগে। সর্বপ্রথম যে শব্দটা মাথায় টোকা বা উঁকি দিল, সেটা হলো- দিধিষু। কবে কোথায় এই শব্দটা পড়েছিলাম মনে নেই। অর্থটাও তত পরিষ্কার নয়। কিন্তু দিধিষু দিয়েই কবিতা শুরু করি।



দিধিষু শরীর নদীর বিভায় ঘুমিয়ে পড়ে পাখিদের অগোচরে। জলের জোনাকিরা কোমল বাতাসে ভেঙে ভেঙে মাছের সারিতে মিশে যায়।



এই হলো কবিতা। এর কী অর্থ দাঁড়ায় তা জানি না। আদতে এর কোনো অর্থ নেইও। সব কবিতার অর্থ থাকেও না।

অহনার সাথে যদি আবার আরেকদিন, কালের স্রোতে ভাসতে ভাসতে কোনো এক চরের কন্দলীবনের হরিৎ ছায়ায় অলৌকিকভাবে দেখা হয়ে যায়, এ দু চরণ কবিতা ওকে শোনাবো। এ কবিতা শুনে সে যারপরনাই খুশি হবে, খুশির ঘোরে বহুক্ষণ কেটে যাবে, তারপর যথাস্বভাবে বলবে, এবার এর অর্থটা আমাকে বুঝিয়ে বল্‌।

আমি অহনাকে অতি চমৎকারভাবে কবিতাটার অর্থ বুঝিয়ে দেব। সে বিস্ময়ে ডগমগ হয়ে শুধু এ কথাটাই বলবে, তোর মতো কবি হয় না রে পাগল; তুই একজন অনেক বড় কবি!

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১১
৩৭৫ বার পঠিত
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় পতাকার অবমাননা

লিখেছেন সরলপাঠ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩

বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।

কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×