somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনার হরিণ (গল্প)

০৮ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চাকরিটা অবশেষে হলো....!!! হ্যা, শেষ -প-র্য-ন্ত- হলো।
বিশ্বাস হচ্ছিল না নাহিদের। গত তিন বছরে গুনে গুনে বাহাত্তরটি ইন্টারভিউ দিয়েছে। হ্যা, সর্বসাকুল্যে বা-হা-ত্ত-র-টি!! কিন্তু চাকরি নামক সোনার হরিণ জোটেনি। নাহিদও নাছোড় বান্দা চাকরি তাকে পেতেই হবে। এজন্য সে দিনের পর দিন ধৈর্য্য ধরেছে, চাকরি হবেনা জেনেও একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিয়ে গেছে। ঘনিষ্ট বন্ধুরা তাকে 'ইন্টারভিউ স্পেশালিষ্ট' বলে টিটকারি মারতো। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে 'মাকাল ফল' বলে তাচ্ছিল্য করতো; তবে এগুলো বুঝেও সে থোড়াই কেয়ার করতো। অবশেষে আসলো সফলতা। মানুষতো আর এমনি এমনি বলে না-

''সবুরে মেওয়া ফলে'' ; "ধৈর্য্যের ফল মিঠা হয়"

মার্চ মাসের দুই তারিখে ঢাকার মতিঝিলের হেড অফিসে জয়েন করতে বলেছে তাকে। জয়েনিং লেটারও সাথে করে নিয়ে এসেছে নাহিদ। বেতন সর্বসাকুল্যে তেত্রিশ হাজার টাকা। তের হাজার দিলেও রাজি ছিল নাহিদ। যাক শেষ পর্যন্ত সফলতা আসল। মনিষীরা এজন্য বলে গেছেন - "কখনো হতাশ হলে চলবে না, অধ্যবসায় চালিয়ে যাও একদিন না একদিন সফলতা আসবেই।" তবে এ পরিশ্রম পড়ালেখার ক্ষেত্রে না চাকরির ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে; নাকি উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য জানে না নাহিদ!!!

আরেকটি কথা; নাহিদের ঢাকায় ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার বিড়ম্বনার কথা বলা হয়নি। ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার কথা সকাল দশটায়। কিন্তু মফস্বল শহর থেকে ছেড়ে আসা বাসটা লেট করায় নাহিদ অফিসে পৌছায় পাক্কা দেড়ঘন্টা পর!! মনটা যারপর নাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল নাহিদের। প্রাইভেট ফার্মের চাকরি বলে কথা; ইন্টারভিউতে সময় মতো উপস্থিত হতে না পারলে চাকরি হওয়ার চান্স নেই। নাহিদ ধুরু ধুরু বুকে ভেতরে প্রবেশ করে দেখল ইন্টারভিউ তখনো চলছে, চাকরি প্রার্থী আরো আট-দশজন বাকি আছে।

রিসিপশনিস্টকে অনেক অনেক অনুনয়-বিনয় করে বুঝানোর চেষ্টা করলো - দেখুন অনেক দূর থেকে এসেছি, রাস্তায় জ্যাম থাকায় লেট হয়ে গেছে, এটা অনিচ্ছাকৃত। প্লীজ একটু কনসিডার করুন, প্লীজ!! না, লোকটির কঠিন হৃদয়ে কোন দয়ার উদ্রেক হলো না; লোকটি কোট-টাই পরে খুব ভাব নিয়ে বসে আছে। মনে হচ্ছে কথা কানে যাচ্ছে না তার। শেষমেশ চরম বিরক্তি নিয়ে বললো - "আমি এক কথার মানুষ, আপনি টাইম মতো আসতে পারেন নাই, অতএব নো চান্স ফর ইউ, প্লীজ আপনি এবার আসুন।" নাহিদও নাছোড় বান্দা ইন্টারভিউ তাকে দিতেই হবে যে করেই হোক।

শেষ পর্যন্ত স্যার-টার ডেকে নাহিদ কোনমতে ম্যানেজ করল লোকটিকে। কোমল সুরে নাহিদের "স্যার-গো" ডাক শুনে লোকটির কঠিন হৃদয়খানিতে শীতল ঝর্ণাধারা বইতে শুরু করলো!! তবে একখান শর্ত দিল, সিরিয়ালের সবার শেষে যেত হবে নাহিদকে।

নাহিদ মোটামুটিভাবে ধরেই নিয়েছিল চাকরিটা আর হবে না। এসি রুম তারপরও টেনশনে ঘামে জবজবা হয়ে গেছে সে। টেনশন থাকলে মনে হয় ঘাম-টাম একটু বেশিই হয় মনে মনে ভাবলো নাহিদ। হঠাৎ মনে পড়লো, আগের দিন অনেক কষ্ট করে ঢাকায় আসার ভাড়াটা জোগাড় করেছে সে। মাসের মাঝামাঝি, টিউশনির বেতনও হয়নি। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না পেয়ে লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে টিউশনির টাকাটা এডভান্স এনেছে।

"তার মতো তুচ্ছ মানুষের আত্মমর্যাদাবোধ থাকতে নেই।"

গত রাত স্টেশনে এসে সাড়ে তিনশ টাকায় টিকেট কেটে বাসে উঠে রওয়ানা দিয়েছিল নাহিদ। কিন্তু তার বাস পাক্কা নয় ঘন্টা পর ঢাকায় এসে ল্যান্ড করেছে!! যদিও চার-পাঁচ ঘন্টার বেশি লাগার কথা নয়। বাসটি পথে কোন প্যাসেঞ্জারকে হতাশ করেনি। যখন যে হাত তুলে সিগন্যাল দিয়েছে, বিফল হয়নি। ড্রাইভার মানুষটা অনেক উদার!! নাহিদেরও লাভ কিন্তু কম হয়নি, এমন উদার গণতান্ত্রীক বাসে উঠায় কাটায় কাটায় দুইশত টাকা বেঁচে গেছে তার!!


অবশেষে ডাক পড়ল আহসান হাবিবের; নাহিদ তার ডাক নাম। ভেতরে প্রবেশ করতেই লক্ষ্য করলো ইন্টারভিউ নিচ্ছেন মাত্র একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা। দেখতে বেশ কালচার্ড/আধুনিক মনে হলো। চোখে সোনালি ফ্রেমের ফ্যাশন চশমা, শাড়ি পরা, মাথায় হালকা টিপ পরা, বেশ পরিপাটি সাজগোজ। মহিলাকে ইন্টারভিউ নিতে দেখে ভেতরটা ধুক করে উঠল নাহিদের। মহিলাদের কাছে আগে ইন্টারভিউ যে দেয়নি তা কিন্তু নয়। অনেক ক্ষেত্রেই ইন্টারভিউ বোর্ডে মহিলা/পুরুষের মিশ্রণ ছিল। কিন্তু কখনো শুধু মহিলাদের কাছে ইন্টারভিউ দেওয়া হয়নি তার। যাক কী আর করা, নতুন অভিজ্ঞতা হবে; মনে মনে ভাবলো নাহিদ।

-- ম্যাডাম আসতে পারি?
-- আসুন। টেক সিট, প্লীজ।
গভীর মনযোগে নাহিদের সিভিটা উল্টেপাল্টে দেখে ম্যাডাম প্রশ্ন করলেন -
-- সিভিতে দেখছি তিন বছর হলো মাস্টার্স করেছেন। আগে কোথাও চাকরির চেষ্টা করেননি? রেজাল্ট তো দেখছি মোটামুটি ভালই।
-- অনেক চেষ্টা করেছি ম্যাডাম, কিন্তু হয়নি। আজকেরটা সহ এ পর্যন্ত বাহাত্তরতম ইন্টারভিউ দিয়েছি।
ম্যাডাম চোখের চশমাটি খুলে টেবিলে রেখে একটু সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে কৌতুহলি দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলেন-
-- বলেন কী!! ইন্টারেস্টিং। বাহাত্তরতম? একটিও চাকরি হয়নি আপনার?
-- হতে পারে বিষয়টি ইন্টারেস্টিং। জব হয়নি বলেই তো আজকে আবার ইন্টারভিউ দিতে আসলাম।
একদম নরমাল গলায় উত্তর দিল নাহিদ।
-- সিভিতে দেখছি লিখেছেন, অনেক জব এক্সপেরিয়েন্স আছে; কোন চাকরি না করেই তা কিভাবে সম্ভব?
নাহিদের চোখের দিকে থাকিয়ে গম্ভীর স্বরে জানতে চাইলেন, ম্যাডাম।
-- অভিজ্ঞতার বিষয়টি মোটেও মিথ্যা নয়, ম্যাডাম। আমি এসএসসি পাশ করার আগ পর্যন্ত গ্রামে ছিলাম। তখন বাবার সাথে পড়াশুনার ফাঁকে নিয়মিত ধান/পাট ক্ষেতে কাজ করেছি; সরকারি রাস্তায় মাটি কেটেছি; শাক-শব্জির চাষ করেছি; মাঠে গরু ছাগল চরাইছি; বাজারে আনাজ-তরকারি বিক্রি করেছি। আর শহরে ইন্টারে পড়ার সময় থেকে এখন পর্যন্ত টিউশনি করছি। আমার অসংখ্য ছাত্র/ছাত্রী এসএসসি, এইচএসসিতে এ+ পেয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে কাজ করেছি; বিয়ের সেন্টারে ওয়েটারি করেছি; আমার এলাকার একটি সামাজিক সংগঠনের সাথেও জড়িত আছি; টানা তিনবার সভাপতিও ছিলাম।
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে থামলো নাহিদ।
-- এগুলো কাজের অভিজ্ঞতা? চাকরির সাথে রিলেটেড নির্দিষ্ট কোন কাজের অভিজ্ঞতা আছে কিনা, বলুন?
একটু বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করলেন ম্যাডাম।
-- ইন্টারভিউ ম্যাডাম। ইন্টারভিউ।
একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল নাহিদ।
-- কি বললেন, ইন্টারভিউ!! ইন্টারভিউ আবার অভিজ্ঞতা হয় নাকি?
চশমাটি আবারে চোখে দিতে দিতে বিরক্তির সূরে প্রশ্ন করলেন ম্যাডাম।
-- হয় ম্যাডাম হয়; ইন্টারভিউ থেকেও অনেক অভিজ্ঞতা হয়। যেমন ধরুন, আপনি আমাকে কী কী জিজ্ঞেস করতে পারেন তা মোটামুটিভাবে সব বলতে পারবো। এটা কী কম অভিজ্ঞতা, বলুন?
ম্যাডামের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো নাহিদ।
-- আপনি অনেক ফানি মানুষ। আমার জীবনে কোনদিন এমন ইন্টারভিউ নেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। আচ্ছা সিভিতে আছে ফ্যামেলিতে আরো তিন ভাই আছেন আপনার। তাদের কাজের বিষয়ে লেখেছেন, যখন যে কাজ পান তাই করেন; এটার মানে বুঝলাম না। চুরিটুরিও করেন নাকি?
মুচকি হেঁসে জিজ্ঞসু দৃষ্টিতে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, ম্যাডাম।
-- মানে খুব সিম্পল, ম্যাডাম। এরা তিনজনই দিন মজুর; যখন যে কাজ পান তা-ই করেন। অবশ্য চুরি চামারি কখনো না।
হেঁসে হেঁসে উত্তর দিল নাহিদ।
-- আপনার আর কোন অভিজ্ঞতা আছে? যেটা এই চাকরির ক্ষেত্রে উপযোগী।
-- ধৈর্য্য ম্যাডাম। ধৈর্য্য। আমার অনেক ধৈর্য্য আছে।
-- একটু ডিটেল বলুন। কেমন ধৈর্য্যে অভিজ্ঞতা আছে আপনার?
এবার ম্যাডাম বেশ সিরিয়াস।
-- ম্যাডাম, ছোটবেলা থেকে অনেক গালি ও অপমান সহ্য করেছি, কিন্তু কখনো প্রতিবাদ করি নাই। অনেক সময় না খেয়ে থেকেছি, কিন্তু চুরি করি নাই। সামর্থবান বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন কখনো গুরুত্ব দেয়নি, ফলে কষ্ট পেয়েছি কিন্তু কখনো ধৈর্যহারা হই নাই। রোদবৃষ্টি উপেক্ষা করে হেঁটে হেঁটে স্কুল, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছি কিন্তু ধৈর্য হারা হয়ে লেখাপড়াটা ছাড়ি নাই। আপনি চাইলে বলার মতো আরো আছে, বলবো ম্যাডাম?
-- না, যথেষ্ট হয়েছে। আর বলতে হবে না।
হাতের ইশারায় নাহিদকে থামালেন। ম্যাডামের মুখটি বেশ গম্ভীর দেখালো। বারবার নাহিদের দিকে তাকাচ্ছেন। নাহিদকে আবার প্রশ্ন করলেন,
-- আচ্ছা, জীবন সম্বন্ধে আপনার মূল্যায়ন কী?
-- ম্যাডাম অনেক কঠিন প্রশ্ন। তবে আমার কাছে জীবন মানে ধৈর্য্য, পরিশ্রম ও জ্ঞান অর্জন করা। নিজেকে জানা, দেশকে জানা ও সৃষ্টির রহস্যকে বুঝার চেষ্টা করা।
-- তাহলে শিক্ষার উদ্দেশ্য কী?
একটু সময় নিয়ে আবার প্রশ্ন করলেন, ম্যাডাম।
-- জ্ঞান অর্জন করা। তবে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চাকরি ও রেজাল্ট নির্ভর। এখানে জ্ঞান অর্জনটা গৌণ।
-- আপনি কী বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন?
জানতে চাইলেন ম্যাডাম।
-- দিয়েছি ম্যাডাম, কিন্তু চাকরি হয়নি। ক্লাস ওয়ান থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করার পরও যদি বিসিএস কোচিং করে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে হয় তাহলে এত টাকা খরছ করে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরের পর বছর লেখাপড়া করে কী লাভ বলুন? এই পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় অনেক ত্রুটি আছে; এছাড়া অতিরিক্ত কোটা ব্যবস্থা তো আছেই।
-- বাহ! বিষয়টি নিয়ে আমি তো কখনো এভাবে চিন্তা করি নাই।
-- জি, ম্যাডাম। এটা আমার নিজস্ব ধারণা।


-- এবার সংক্ষেপে নিজের সম্বন্ধে কিছু বলুন?
-- আমি খুব ভাল অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে পারি; ডিবেটে জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন আমি; সময় পেলেই ক্রিকেট খেলি। মুভি/নাটক/রেসলিং আমার পছন্দ না, তবে প্রচুর ডকুমেন্টারি দেখি। টিভিতে ফুটবল, টেনিস দেখি। এছাড়া আমি খুব ভাল সাতার কাটতে পারি। সামাজিক সংগঠন করেছি বলে লিডারশীপ কোয়ালিটিও কিছুটা আছে আমার। আরো আছে -----------?
-- এগুলোতো সিভিতে নেই?
জানতে চাইলেন, ম্যাডাম।
-- ম্যাডাম, সিভিতে যা নেই তাই বল্লাম আপনাকে। যা লেখা আছে তা তো আপনি জানেন। দেখেছেন।
-- প্রয়োজনে মিথ্যা কথা বলেন?
-- প্রতিনিয়ত বলতে হয় ম্যাডাম। যেমন- বাড়ি থেকে আম্মা কল দিলে, না খেয়েও বলি এইমাত্র খেয়েছি মা। ছোট ভাই-বোন টাকা চাইলে না থাকলেও বলি আছে। আরেকটি মিথ্যা আছে যা সচরাচর করি। বলবো?
-- হ্যা, অবশ্যই। নির্দ্বিধায় বলুন।
-- আমার আবেদন পত্রের সাথে দেওয়া নাগরিকত্ব সনদ, সত্যায়িত কপি আর চারিত্রিক সনদপত্রগুলো ভুয়া। ম্যাডাম, এত ইন্টারভিউ দেই তাই প্রতিবার এগুলো কালেক্ট করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া এগুলো সংগ্রহ করতে সময় ও টাকা উভয়ই খরছ হয়, তাই এটাস্টেশনের জন্য একটি সিল বানিয়ে রেখে দিয়েছি, যখন প্রয়োজন হয় কাজে লাগাই।
-- কি বলেন? এটা তো সাক্ষাৎ জালিয়াতি।
একটু উত্তেজিত হয়ে জোর গলায় বললেন, ম্যাডাম।
-- জালিয়াতি কী না জানি না ম্যাডাম। তবে সারা জীবন পড়াশুনা করে যে সার্টিফিকেট অর্জন করলাম তা সত্যায়িত করতে হবে কেন? আমার সার্টিফিকেট তো মিথ্যা নয়। আর এখন পর্যন্ত কাউকে পেয়েছেন যার চারিত্রিক সার্টিফিকেটে চরিত্র খারাপ লেখা আছে? আমি যে এ দেশের নাগরিক তা এত বছর পর চেয়ারম্যান/মেয়র স্বীকৃতি দিতে হবে কেন?
-- হুম, আপনি তো দেখি জিনিয়াস। আমার সম্বন্ধে আপনার মূল্যায়ন কি?
ঝটপট বলে উঠলেন, ম্যাডাম।
-- ম্যাডাম; আপনি অনেক ধৈর্যশীল, এজন্য আমার বকবকানি এতক্ষণ থেকে শুনেছেন। আর আমার মনে হয় আপনি এই প্রতিষ্ঠানের মালিক; এছাড়া আপনি ভদ্র ও কৌতুহলী।
-- কেন মনে হল আমি কোম্পানির মালিক?
-- আপনি নিজের প্রতিষ্টানের জন্য সঠিক মানুষটি খুঁজছেন কিন্তু এর আগে যারা ইন্টারভিউ দিয়েছে তাদের কাউকে আপনার পছন্দ হয়নি। না হলে আমাকে এত প্রশ্ন করতেন না।
-- ওয়েল ডান। আপনার বাহাত্তরতম ইন্টারভিউ সফল হয়েছে। আপনাকে আমাদের কোম্পানীতে স্বাগতম। আপনি কবে জয়েন করতে পারবেন?
-- সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে পারবো, ম্যাডাম।

ম্যাডাম আরো যোগ করলেন, আপনার সাবলীল উপস্থাপনা এবং স্পষ্টবাদিতা আমার ভাল লেগেছে। আমি আপনার কাছে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছিলাম তা আপনার কথাবার্তা থেকে পেয়ে গেছি। এই কাজের জন্য আপনাকেই আমার যোগ্য মনে হয়েছ। কোম্পানির পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসেবে ভাল করবেন এই আস্থা আপনার উপরে আছে।

ম্যাডামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এসে নিজেকে অনেক ভারমুক্ত লাগল নাহিদের। যে অদৃশ্য বোঝাটি সে গত তিন বছর থেকে বয়ে বেড়িয়েছে। হঠাৎ নাহিদের খেয়াল হলো, অফিসের এসির বাতাসে ঘাম-টাম একদম উদাও হয়ে গেছে। মনটা কেমন যেন ফুরফুরা লাগছে। গত তিন বছর থেকে বয়ে বেড়ানো বুকের চিন চিন ব্যথাটাও এখন টের পাচ্ছে না নাহিদ। গত তিন বছর ব্যাথাটি বড্ড ভূগিয়েছে তাকে। চাকরি নেই বলে ভালবাসার মানুষটিকে হারাতে হয়েছে। মুখ বুঝে আড়ালে-আবডালে অনেক বাজে মন্তব্য শুনতে হয়েছে। কেউ সহযোগিতা করেনি; শুধু সুযোগ পেলেই জ্ঞান দিয়েছে প্রতিনিয়ত।

আরেকটি বাড়তি ঝামেলা থেকেও মুক্তি পেল নাহিদ। প্রতিবার ইন্টারভিউতে যে শার্টটি পরে তা ইন্টারভিউ শেষ হলে যত্ম করে ধূয়ে আয়রণ করে রাখতে হবে না; ফুটপাত থেকে কেনা জুতাটি বাসায় ফিরে পরিষ্কার করে পলিথিন দিয়ে গিট্টু দিয়ে রাখতে হবে না; হকার্স মার্কেট থেকে কেনা কোট-টাইও এত যত্ন করে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে না।।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

উৎসর্গ: গল্পটি সামুতে গতকাল সেফ হওয়া (মিস লসএঞ্জেলস্) অচেনা হৃদি (পিচ্ছি) আপুটাকে উৎসর্গ করলাম।

চাইলে পড়তে পারেন-
আমার সবচেয়ে পঠিত, লাইক ও কমেন্ট প্রাপ্ত পোস্ট।
সবচেয়ে পঠিত প্রবন্ধ
সবচেয়ে পঠিত গল্প।
ছবি ব্লগ (লন্ডনের ডায়েরি-১)।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫১
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাত্রিজাগর রজনীগন্ধা, করবী রূপসীর অলকানন্দা.....

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬



আমাদের দেশে নানান ধরনের ও রং এর অলকানন্দা দেখা যায়। এরা আমাদের দেশীয় ফুল না। তবে বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশ 'Allamanda'-র সাথে মিল রেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নামকরণ করেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধ হোক এই ফ্যসিবাদী ব্যক্তিপুজার রেওয়াজ

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে এক দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেওয়াজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষিত ভারতীয়রা হতাশ, কমশিক্ষিত ভারতীয়রা রাগান্বিত।

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:০৬






অমর্ত্য সেন বাংগালী মানুষ, ব্লগিং'এ তেমন ভালো নন; কিন্তু বাংগালীদের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈ্তিক অবস্হা বুঝেন ও বাংলাদেশের জন্য চিন্তিত ও বর্তমান অবস্হা নিয়ে হতাশ। আসলে, উনি মহাজাগতিক ও যেকোন ভুয়া বাংগালী থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাবেন না।

লিখেছেন জাদিদ, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:১১

সাম্প্রতিক সময়ে শিবির নিয়ে অনেক মিথ্যাচার হচ্ছে। ইসলাম রক্ষা এবং দ্বীনের প্রচারে যে দায়িত্ব শিবির পালন করে যাচ্ছে সেটা অতুলনীয়। অতীতেও আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লগ্নে ইসলামী ছাত্র সংঘ তথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি যদি বিয়ে না করি, তাহলে সন্তান হবে না। এখনই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বৃদ্ধ অবস্থায় কি হবে? তখন আমাকে সেবা করবে কে?

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:০২

একাকীত্ব, অসুস্থতা ও রোবটের প্রয়োজনীয়তা


আগে আমি আমার নানা-নানীর সাথে থাকতাম। কেন থাকতাম, সে গল্প আপনারা জানেন। সময় বদলায়, জীবনও নতুন মোড় নেয়। বিয়ের পর আমি, আব্বু, আম্মু ও স্ত্রী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×