১
রাত তখন আনুমানিক ১১.৩০।
ইরার সাথে আমি কথা বলছি, হঠাৎ করে ইরা আমাকে বলছে সাক্ষর কাল তুমি কি করছো। আমি সুগম আর সাকিয়া কাল পাকশি ব্রিজ যাচ্ছি। পরে আমি তাকে বললাম কাল মানে শুক্রবার আমি মনে হয় যেতে পারব না। আমার মন চাচ্ছে যেতে। কিন্তু কিভাবে যাব কিছু বুঝতে পারছি না। পরে আমি ইরা কে বললাম আমি যদি রাতের মধ্যে সব কিছু ঠিক করে ফেলতে পারি তাহলে আমি তোমাকে মোবাইল এ এসএমএস করে জানাচ্ছি। পরে আমি দেখি আমার পকেট এ মাত্র ২০০ টাকা আছে। সাথে সাথে মোবাইল করলাম আমার বন্ধু ইমন আর পল্লবকে। তারা দুজন মিলে আমাকে ১৫০০ টাকা দিল। আর আগে থেকেই আমার কাছে ছিল ২০০ টাকা, তার মানে হয়ে গেছে। সাথে সাথে বাসায় গিয়ে সব কিছু প্লান করতে থাকি। এই করতে করতে রাত ৪টা বাজায় দিলাম, তারপরে দিলাম ঘুম।
সকাল ৫.৩০। মোবাইল এ কল আসল ইরার। সাথে সাথেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। তারপরেও এদিক সেদিখ করে আমি সব কিছু রেডি করে বাসা থেকে বের হলাম। আমার সাথে সব সময় আমার ব্যাগ থাকে। এখানেও তার ব্যাতিক্রম হল না। আমি আমার ব্যাগের মধ্যে আমার একটা জামা, একটা প্যান্ট, আর একটা তোয়ালে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। উদ্দেশ কল্যানপুর। সেখানে গিয়া দেখি আমার পরিচিত কেউ নাই। বসে খাইলাম এক কাপ চা।
তার মাঝে আমি ইরাকে কে এসএমএস করলাম, তারপরে দেখি তার মোবাইল বন্ধ। আমার হয়ে গেল মাথা নষ্ট। কি করি! সাথে সাথে চিন্তা করলাম ইরা কি আমার সাথে মজা করল নাকি। আর আসলে ইরা তো আমার সাথে মজা করতে যাবেই বা কেন? যাই হোক সব জল্পনা কল্পনা শেষ করে তাহারা তিনজন আসলেন। দেখে খুব ভালো লাগল। সাকিয়ার সাথে আমি আগে থেকেই ফেসবুক এ ছিলাম। কিন্তু এই প্রথম সুগম এর সাথে আমার পরিচয়।
২
যাই হোক এইবার আমার টিকেট কাটার পালা। এইদিক সেইদিক করে কোন ভাবে কোন টিকেট ম্যানেজ করতে পারছি না। সময় মিলে তো চারটি সিট মিলে। সময় ও চারটি সিট মিলে তো সেটা আবার সবার পিছনে। যাই হোক সব কিছু শেষ করে আমরা হানিফ এর ৮.৩০ এর চারটা সিট মাঝামাঝিতে পেলাম।
তারপরে শুরু হল সকালের নাস্তা। আমি খাব না খাব না বলছি, কিন্তু খাবার দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। শুরু করলাম সকালের নাস্তা তারপরে সকালের নাস্তা শেষ করে সবাই মিলে আমাকে পচানো শুরু করল। তারপরে দেখি আমাদের সময় অনেক চলে যাচ্ছে। তারপরে আমি সবাই কে বললাম আমরা যদি টিকেট ফেরত দিতে পারি তাহলে আমরা ফরিদপুর দিয়ে আমরা এখন যেতে পারি। সবাই একমত হল। কিন্তু আমি আবার পরে বললাম, থাক এখন যা হবার হল, আমরা সময় না ওই পথ দিয়ে আসব। ঠিক আছে সকাল ৮.৩০ এ যথারীতি একটা ছোট বাস এলো, মাথা নস্ট। আমরা কি তাহলে এখন সবাই গাবতলি গিয়া বাসে উঠব। সবই ঠিক আছে। বাস ছাড়ল সকাল ৯.০৬ মিনিটে। তারপরে শুরু হল আমাদের যাত্রা। প্রথমে বাসে উঠেই আমি আর সুগম দিলাম একটা ঘুম। সেখান থেকে আমি ঘুম থেকে উঠলাম যমুনা ব্রিজ এলে। আমি যমুনা দেখে মোটামুটি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম, সেখান থেকে হাল্কা হাল্কা ঘুম এ আমি সব দেখছি। তারপরে একবারে আমার ঘুম ভাঙ্গল নাটোরে এসে। সেখানে বাস জুম্মার নামাজের জন্য দাঁড়ালে আমি ইরা আর সাকিয়া নেমে পড়ি বাস থেকে। তারপরে শুরু হল আমাদের ছবি তোলা। সেখানে আম গাছ দেখে আমি মোটামুটি গাছে উঠার চেষ্টা করে এক প্রকার ব্যাথ হলাম। তারপরে সবাই মিলে (আমি, সাকিয়া, ইরা) আম পাড়া শুরু করে দিলাম। কিছুক্ষন পরে আবিষ্কার করলাম সেখানে পাশে ভ্যানে বসে আছেন এক ভদ্র লোক। আমি তাকে বলি, ভাই আমরা যে আম পাড়ছি, কেউ কিছু বলবে না। তখন তিনি আমাদের বলেন এখানে কেউ কারো আম চুরি করে না। আমরা বললাম কেন? কারন এখানে সবার আম গাছ আছে! কে কার আম চুরি করবে। তারপরে আমরা তিনজন মিলে শুরু করলাম আম চুরি। সাথে সাকিয়া ছবি তুলছে। দেখি হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল কোন রকম সাকিয়ার ক্যামেরা ব্যাগে রেখে আমরা বৃষ্টিতে ভিঝতে থাকলাম। আম পাড়া তো শেষ করলাম। এইবার এই আম খেতে হবে। তো কি লাগবে? আমি ছুরি ব্যবস্তা করতে থাকলাম। ছুরি দিয়া আম কাটলাম আর সবাই মিলে এই কাঁচা আম খেতে থাকল। একটু পরে আমি বলি এই কাঁচা আমের সাথে যদি একটু লবন মরিচ পাওয়া যেত তাহলে বেশ ভালো হত। যেই কথা সেই কাজ, শুরু করলাম মরিচ খুঁজা। তারপরে রাস্তার ওই পাড়ে আমরা তিনজন মিলে এক বাসায় গেলাম সেখান থেকে অনেক কথা বলে নিলাম বাংলা লবন আর কাঁচা মরিচ। তারপরে খাওয়া শুরু করলাম বাসের মধ্যে এই কাঁচা আম। তার মাঝে আমাদের বাস লালন শাহ ব্রিজ এর উদ্দেশ এ ছেড়ে দিয়েছে। বাসের মধ্যে এই কাঁচা আম খাওয়ায় যোগ দিল সুগুম। তারপরে কথা বলতে বলতে আমরা চলে আসলাম আমাদের এই জায়গা। লালন শাহ ব্রিজ, তারপরে আমরা সবাই মিলে একটু ফ্রেশ হয়ে একটা অটো ধরে চলে গেলাম সেই লালন শাহ ব্রিজ এর নিচে। সেখানে গিয়ে শুরু হল আমাদের ফটোশুট, সবাই মিলে সেই রকম মজা করতে থাকলাম।
৩
তার মাঝে বলে রাখি ইরা কিন্তু ক্যামেরার ফোকাসিং করা সেই দিনই শিখল। তার আগে সে এই সব কিছু জানত না। তারপরে সবাই মিলে অনেক ধরনের ছবি তোলে আমরা চলে গেলাম পদ্মা নদীতে গোসল করতে। যদিও সেখানে আমাদের গোসল করার কন ইচ্ছা ছিল না। তারপরে সবাই মিলে উঠলাম নৌকাতে। সেই নৌকা কিছু দূর যাবার পরে দেখি নৌকার পাখাতে কি যেন লেগে সেটা গেল বন্ধ হয়ে। তারপরে সবাই মিলে সেটা ব্রিজ এর নিজে পিলার এর সাথে আটকানোর ব্যবস্তা করলাম। তারপরে ইরা বলল আমরা কি সেখানে নামতে পারি। নৌকার মামা বলল হ্যা নামা যাবে। কারন সেখানে কোন শ্যায়লা নাই। যেহেতু আমি সাঁতার জানি, তাই আমি প্রথমে নামি, তারপরে সুগুম নামে, তারপরে ইরা নামে। আর সাকিয়া নৌকায় থেকে আমাদের ছবি তুলতে থাকে। তার কিছুক্ষন পরে আমি সাকিয়াকে নিয়ে নিচে নামিয়ে আনি। তারপরে আমরা চারজন মিলে যে মজাটা করলাম তা আমার মনে হয় সবাই ছবিতে দেখতে পারবেন। তারপরে আমাদের নৌকে সাহায্য করার জন্য আরেকটি নৌকা এলে, সেখানে একটা পিচ্ছি থাকে। আমি তারসাথে বেশ মজা করতে থাকি। তারপরে একটা সময় আমরা সবাই নিজেদের জামা কাপড় ভিজিয়ে ফেলি। আমি ভরা নদীতে নেমে ভাল করে নিজের শরীর ভিজয়ে গোসল করলাম। তারপরে আমরা চিন্তা করলাম আমাদের মনে হয় এখান থেকে যাওয়া দরকার। তারপরে সবাই এই ভিজা শরিরে আমরা নৌকায় করে তীরে আসলাম। তারপরে সবাই মিলে চিন্তা করলাম আমাদের মনে হয় এখন আমাদের খাওয়া দরকার। আমরা এরপরে রুপ পুরে গিয়ে আগে আমাদের যাবার টিকেট এর ব্যবস্থা করতে থাকি। সেখানে কোন কিছু না করতে পেরে আমরা সেখান থেকে চলে যাই একেবারে কুষ্টিয়া শহরে। সেখানে খাওয়া বাদ দিয়ে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ ঢাকা যাবার বাস ঠিক করা। তারপরে আমি বেশ কিছুক্ষন দৌড়ঝাপ করে সিলেটের একটা বাস পেলাম তাও আবার সবার শেষে সিট। কোন কিছু চিন্তা না করে আমরা বাসে উঠে পড়লাম। তার মাঝে ইরা আর সাকিয়া মনে হয় হাল্কা কিছু নাস্তা পানি ব্যাবস্তা করে নিল। সেখানে আমি দেখতে পেলাল পুরি, সিংড়া, আর মোঘলাই ছিল। আমি শুধু মাত্র মোঘলাই খেলাম। আমাদের মাঝখানে ছিল একটা নতুন ভদ্রলোক, তারপরে আমি একটা কাজে নিচে গেলাম। তার মাঝে আমি এসে দেখি তারা সবাই মিজের মাঝে সব কিছু ঠিক করে নিয়েছে। আমি এসে খাওয়া শুরু করলাম। তারপরে বাস চলা শুরু করল,মাঝে বাস বেশ কিছু জায়গায় থামিয়ে রাখে।
৪
শেষ কালে আমরা সবাই রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা এসে পোঁছালাম। এত রাতে কে কই যাবে কিছু বুঝতে পারছি না। তার মাঝেই ইরা আর সাকিয়াকে নিয়ে সাকিয়ার হলে গিয়ে রেখে আসলাম। তারপরে আমি আর সুগম মিলে কফি খেয়ে চলে গেলাম যার যার বাসায়।