সজনে ডাটা আমাদের কাছে সুপরিচিত। সজনে গাছটাও মোটামুটি পরিচিত। কারণ, এই গাছটা শুধু ডাল পুতে দিলেই অযত্ন-অবহেলাতেও বেড়ে ওঠে। কিন্তু, সজনে পাতা আমাদের কাছে খাদ্য হিসেবে কতটা পরিচিত?
সজনে ইংরেজিতে Moringa (Moringa oleifera) বা Drumsticks হিসেবে পরিচিত। এটা আফ্রিকার খরা প্রবণ রুক্ষ এলাকাতেও সারা বছর জন্মায় আর আমাদের দেশেও খুব সহজেই চোখে পড়ে। নাইজারে এটা প্রধান খাদ্য ও পুষ্টির উৎস হিসেবে ব্যাপক ভাবে চাষ শুরু হয়েছে। এই গাছের গুণ বলে শেষ করতে একটু সময় লাগবে। তবু, এক কথায় বলি, এর পাতা-ফুল-ফল-বাকল-শিকড় সবই পুষ্টি ও ঔষধি গুণে পূর্ণ। এমনকি এটা দিয়ে পানি পরিশোধন পর্যন্ত করা হচ্ছে আফ্রিকাতে। আর পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে দুধ ও মাংস উতপাদনে বেশ ভাল সাফল্য পাওয়া গেছে (ওজন ৩২% বৃদ্ধি, দুধ ৪৩-৬৫% বৃদ্ধি, সূত্রঃ উইকি)। সজনে পাতাতে আছে কমলার ৭ গুণ ভিটামিন C, গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন A, দুধের ৩ গুণ ক্যালসিয়াম, কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম, এক কাপ দইয়ের দ্বিগুণ প্রোটিন।
এখন, বছর খানেক আগে আমার মায়ের কাছে সজনে পাতার গুণাগুণ বর্ণনা করায় বাসার আশেপাশে লাগানো সজনে গাছ থেকে কচি কচি পাতাগুলো প্রায়ই আমাদের খাবার টেবিলে উঠে আসছে। এই রোজায় পেঁয়াজুর সাথে সজনে পাতা আর ভাতের সাথে সজনে শাক ভাজি প্রায় নিয়মিত খেলাম। এখন, আমার মায়ের রান্না অমৃত। তবুও অল্প তেলে সজনে পাতা ভাজি কিন্তু নিরামিষ প্রেমীদের কাছে ভাল না লেগেই নয়। (অল্প তেল প্রয়োজন , কারণ, ভিটামিন A আমাদের দেহে শোধিত হবার জন্য ভোজ্য তেল মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভিটামিন A প্রথমে ভোজ্য তেলে দ্রবীভূত হয়। পরে তেল আমাদের দেহে শোধিত হলে সাথে সাথে ভিটামিন A ও গ্রহণ করা হয়।)
খ্রিষ্টের জন্মের ১৫০ বছর আগের ভারতীয় প্রাচীণ লেখনীতে সজনের ওষধি গুণের বর্ণনা পাওয়া যায়। এতে আছে ৯০ এর অধিক পুষ্টি উপাদান। দেহের জন্য অপরিহার্য ৮ প্রকার অ্যামিনো এসিডের সবগুলো আছে আর আরো ১২ রকমের অ্যামিনো এসিড আছে এই সজনেতে। শরীরের দূষণ দূর করার জন্য আছে ৪৬ রকমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। মাত্র ৩ চামচ সজনের পাতার গুঁড়োতে আছে একটি শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির ক)ভিটামিন A এর ২৭২%, খ)প্রোটিন ৪২%, গ)ক্যালসিয়াম ১২৫%, ঘ)আয়রন ৭১%, ঙ)ভিটামিন C ২২%। আরো সহজ করে বললে, মাত্র ১০০ গ্রাম সজনে পাতায় আছে একটা ডিমের সমান প্রোটিন, এক পিস মাংসের থেকে বেশি আয়রন, আর এটা হচ্ছে খাবার, তাই সহজেই দেহে শোধিত হয়। হরলিক্স-ট্যাং বা কৃত্রিম ভিটামিন-মিনারেলের মত দেহের জন্য ক্ষতিকারক নয়। কৃত্রিম ভিটামিন-মিনারেল দেহের জন্য মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ কিরকম ক্ষতিকর, তা একটি উদাহরণ দিয়ে বলছি। শিশুর চোখের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন A এর ক্যাপসুল যা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়, তা একাধিক সেবনে শিশুর অন্ধত্বের মত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আর, খাদ্য হিসেবে সজনে গ্রহণ করায় এই বিপদ নেই। এটা সহজে শরীরে শোধিত হয়। বাড়তিটা বের হয়ে যায় এর আঁশের সাথে। খাদ্যে আঁশ বা ফাইবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর বাড়তি ফ্যাট-চর্বি-কোলেস্টেরল খাদ্যের আঁশের সাথে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। সজনের পুষ্টিগুণ এতই বেশি যে, এর পরিমাণ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে, শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা, এবং বয়স্কদের জন্য এই সজনে খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, আলসার, এবং এরকম আরো বহু রোগের জন্য এটা খুবই উপকারী যা আপনারা এই বিষয়ক লেখাগুলোতে পাবেন। তবে, পুষ্টি উপাদানের সামারী হচ্ছে, সজনেতে আছে কমলার ৭ গুণ ভিটামিন C, গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন A, দুধের ৩ গুণ ক্যালসিয়াম, কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম, এক কাপ দইয়ের দ্বিগুণ প্রোটিন।
সাবধানতাঃ সজনের শেকড়ের ছাল বিষাক্ত। শেকড়ে স্নায়ু অবশকারী উপাদান আছে। সজনের বাকল ভারতে গর্ভপাতে ব্যবহার করা হয়, এতে অনেক সময় মা মারাও যেতে পারেন। রক্ত পাতলা করার ওষুধ ব্যবহারকারীরা সজনে ব্যবহারে সাবধান।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৩০