নারীকে পণ্য নয়, তার সত্ত্বার সম্মান দিতে হবে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
কাজলরেখা
মানবতা আর সাম্যের জয়গানে নারী ও পুরুষ কাঁধে কাধ মিলিয়ে গড়তে চাইছে সফলতার স্বর্ণ সোপান।
কিন্তু হাজারো প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নারী এখনো অবহেলিত। চোখ ধাধানো এক ভোগ্যপণ্য মাত্র! তবুও হতভাগ্য নারীজাতি বারবার সম্মুখীন হচ্ছে নিত্য নতুন বঞ্চনার। আর তাই আজ অযুত কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে মা, স্ত্রী, কন্যা ও ভগ্নি হিসেবে আমরা কি পেয়েছি?
ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যায়, যুগে যুগে বিভিন্ন সভ্যতা নারীকে করেছে নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত ও বঞ্চিত। নির্যাতনের যাতাকলে নিষ্পেষিত নারী মুক্তি চেয়েছে জীবনাকাশে । অন্ধের মত হাতড়িয়ে ফিরেছে স্বীয় মর্যদা আর সম্ভ্রমের সোপান। তাদের এই আকাঙ্খাকে কাজে লাগিয়েছে সুবিধাবাদি আর চাটুকার শ্রেণীর বিশেষ একটি মহল। অধিকার প্রদানের নামে নারীকে মাধ্যম বানিয়ে লুফে নিয়েছে নিজের মুনাফা পু। পুরুষের কাধে কাঁধে মিলিয়ে যে স্বাধীনতা কিনতে চেয়েছিলো অর্ধাঙ্গিনীরা, কায়িক শ্রমের ক্ষেত্র গুলোতেও তারা হারিয়েছে নায্য অধিকার, বঞ্চিত হয়েছে প্রতিটি পদক্ষেপে।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ এরকম মর্মন্তদ এক কাহিনীর জ্বলন্ত সাক্ষী এই দিনটি। যুক্তরাষ্ট্রের একটি সুট কারখানার নারী শ্রমিকরা মানবেতর পরিবেশ, অসম মুজুরি, ১২ ঘন্টা কর্ম দিবসের বিরুদ্ধে পথে নামে। ফলশ্রুতিতে বহু নারী নিক্ষিপ্ত হয় কারাগারে, নির্বিচারে পুলিশের গুলিতে সেদিন আহত হয় অনেক নারী শ্রমিক। ১৯১০ সালের ৮ মার্চ কোপেন হেগেনে আন্তজাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের ঘোষনা দেওয়া হয়। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালকে নারীবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। জাতিসংঘের নির্দেশেই ১৯৭৫-১৯৮৫ সালকে “নারী দশক” ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষে ১৯৮৩ সালের ৮ মার্চ “বিশ্ব নারী দিবস” হিসেবে ঘোষিতক হয় এবং বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহুদেশে মহাসমারোহে প্রতিবছর পালিত হয় বিশ্ব নারী দিবস এবং এ উদ্দেশ্যে গ্রহীত হয় বহু আইন। বসভা-সমাবেশ আর কাগজের পাতা ভরা কক্তৃতা ও সেমিনারের গন্ডি পেরুতে পারেনি । যেন লাল ফিতায় বন্দি নারীর নায্য অধিকার।
অগ্রসরমান আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নারী আজ এগিয়েছে বহুদূর। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, প্রশাসন সকল ক্ষেত্রেই নারী রেখেছে যোগ্যতার স্বাক্ষর। আজ নারীর পদচারনা মহাকাশ থেকে সিন্ধুতল। আঞ্চলিক থেকে আন্তর্জাতি উভয়ক্ষেত্রেই সংসদ নারী প্রতিনিধিত্বের হার মাত্র ১৫ শতাংশ। বিশ্বের অনানুষ্ঠিক রাজনৈতিরক নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহনে ১০ ভাগের ও বেশি। এ পর্যন্ত ২১ ভাগেরও বেশি রারী রাষ্ট্র প্রধানের পদ অলংকৃত করেছেন। জাতিসংঘের ৫ জন নারী। মোদ্দাকথা, শিক্ষা, সাংস্কৃতি, রাজনীতি, প্রশাসন সকল ক্ষেত্রেই স্বর্ণ সোপানে আরোহন করেছে। বাস্তব নির্মম । এত প্রচেষ্টা, স্বাধীনতার এত দূর্বার আকাঙ্খা , বিনিময়ে কি পেয়েছে আজকের নারী সমাজ? নারী পুরুষের অযৌক্তিক সমতা আনতে যেয়ে নারী সমাজ বরাবরই প্রহসনের শিকার। দাম্পত্য জীবনের বন্ধন থেকে নিজেকে ছিন্ন করতে যেয়ে নারী সমাজ আজ অবাধ যৌনাচারের সুলভ মাধ্যম। নারী পুরুষের সহবস্থানে অশ্লীলতা যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রায় নতুন আবরণে। সৌন্দর্যকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে উন্নতির ¯্রােতে ভেঁসে যেতে আকাঙ্খিক নারী আজ স্বেচ্ছায় নিজেকে সঁপে দিচ্ছে মুনাফালোভী একটি বিশেষ শ্রেণীর হাতে। সম্মান আর মর্যাদার বদলে নারী সমাজ যে অভিশপ্ত জীবন বেছে নিয়েছে, তার বাস্তব ফলাফল অনেক বেশি করুন। নারী স্বাধীনতাবাদীদের উৎপত্তি যে যুক্তরাষ্ট্রে, সেখানেই নারীর অবস্থা এতটাই সংকীর্ণ যে, কয়েক বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নারী নির্যাতনের শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে কমপক্ষে ১২.৫ লাখ কিশোরী গর্ভধারণ করে। সুসভ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি হাজারে ৩০৭ জন নারী সহকর্মী দের দ্বারা যৌন নির্যতনের শিকার হয়। সেখানে সম্ভ্রম। ভারতে প্রতিদিন ১৪ জন নির্যাতিত হয়। অশ্লিষতার বিষবাষ্পে গুমরে উঠছে আমাদের প্রিয় জন্মভ’মির চতুর্পাশ। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ বছরে এদেশে পতিতালয় বেড়েছে ২৬ হাজার । বাস্তবিক পক্ষেই নারী স্বাধীনতার শ্লোগানই যে নারী সমাজ কে কাঙ্খিত মর্যাদা দিতে পারেনি; তা কি সময়ের দাবী না? বর্তমানে নারী জাতীর অবস্থানকে সভ্যতার ধারায় কিসের ভিত্তিতে যাচাই করা যাবে? নাজুক এ পরিস্থিতিতে ইন্ধন যোগাচ্ছে পাশ্চাত্যপ্রেমী মিডিয়াগুলোর নানামুখী প্রচারনা। পাশ্চাত্যের উদর থেকে উগরে ফেলা রেওয়াজকে এসব নারীদের জন্য ধ্যান-জ্ঞান কামনার বস্তুতে পরিণত করছে, তাদের একান্ত কল্যাণকামিরা। সম- অধিকার ও নারী স্বাধীনতার নামে তারা নারীত্বকে টুটি চেপে হত্যা করছে। পণ্যের চটকদার বিজ্ঞাপনের মডেল ও সস্তা ভোগের সামগ্রীতে পরিণত করে সুকৌশলে লুন্ঠন করছে নারীর মান-সম্মানকে। স্বভাব সুলভ সরলমনা নারীরাও সমান অধিকারের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে লিপ্ত হচ্ছে অশোভনীয় কর্মকান্ডে। এই সকল চিহ্নিত সমস্যা সনাক্ত করে কয়েকটি বিষয় সামনে এসেছে। প্রথমতঃ মূল্যবোধের অবনতি, নৈতিক চরম অবক্ষয়, নৈতিক শিক্ষা বিবর্জিত শিক্ষা কাঠামো ও দুর্বল মানুষিকতা এবং সত্য সমাজ নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহনকারীর অভাব। অথচ আজ খেকে ১৫শ বছর আগে জীবন্ত প্রোথিক কন্যার মর্মান্তিকতা রোধে উদীত হয়েছিলো যে আলো করবী, মূল্যোবোধের চর্চাই ফিরিয়ে দেবে জাতি হিসেবে আসল মর্যাদা। আমরা অর্জন করতে পারবো কাঙ্খিত লক্ষ্য। তারই স্বীকারোক্তি করেছেন ফরাসী লেখিকা মারহাম হ্যারি।
কোন করুণা নয়, নারী অধিাকর নিশ্চিত করণের মাধ্যমে নারীর সকল মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করাটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দায়িত্ব প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার । নারীকে প্রকৃত মর্যাদা প্রদান করে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। কেননা নারী পুরুষের সমান দায়বদ্ধতায় গড়ে ওঠে এক একটি পরিবার। আর একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবারই পারে একটি সুস্থ শিশু উপহার দিতে। একজন মেধাবি সন্তান উপহার দিতে। আর একটি দেশের সুন্দর পরিবার ব্যাবস্থা একটি নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ উপহার দিতে সক্ষম। যা একটি উন্নত দেশের পূর্বশর্ত। তাই নারীকে এই বাজার অর্থনীতির বাজারে পণ্য নয়, বরং তার সত্ত্বার মর্যাদায় তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর
লেখক বলেছেন: amarboi kothay pelen? however thankslot.
আলোচিত ব্লগ
যারা আমাকে বই উপহার দেন, আমি তাদের জন্য দোয়া করি।
আপনি যদি সেলফ হেল্প বা নন-ফিকশন বই পড়তে পছন্দ করেন, তবে আপনি হয়তো মিরাকেল মর্নিং, এটোমিক হ্যাবিটস, সেভেন হ্যাবিটস অফ হাইলি ইফেক্টিভ পিপল এসব বই পড়েছেন।
এই বইগুলো আপনি পড়ে থাকলে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে ‛অসহযোগী’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত এবং......
ভারতকে ‛অসহযোগী’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত এবং......
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্পের অবিস্মরণীয় জয়ের পর ট্রাম্পের প্রশাসনে একের পর এক ভারতপন্থী লোকজন নিয়োগ দিয়েছেন, যা দেখে ভারতীয়রাতো বটেই, এদেশীয় জোকার টাইপের ময়ূখ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়কে কেবল ‘ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে কট্টর হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদী টুইট করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গিয়ে একাত্তরের বিজয়কে কেবল ‘ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়’... ...বাকিটুকু পড়ুন
একমুঠো দুর্বলাঘাস
ঘুমিয়ে থাকা দুর্বলাঘাসের সাথে মিতলী
করতে যাচ্ছি; শীত উষ্ণ পথের ভেজা পায়-
উঠান হাহাকার দিয়ে উঠবে কোন সময়ের ক্ষণে!
আমি তার দর্শণ দিতে যাচ্ছি;ঢাকা,গাজীপুর হয়ে
টাঙ্গাইলের মেঠোপথ ধরে কুয়াশা ভেদ করে
এগিয়ে আসবো শুধু জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন
তাবলীগে হট্টগলের কারন কী?
তাবলীগ পন্থীদের সাধারণত কোন ধরনের ঝুটঝামেলায় দেখা যায়না। তারা কোন রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি করেনা। কারো সাথে নেই কারো পাছে নেই। তারা বাংলাদেশে শুধুমাত্র মুসলিমদের মাঝে ইসলামের আকিদার বিষয় নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১. ০৮ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৫২ ০