ভ্রমন ভোমরারা...
পরদিন ভোরে ঘুম ভেঙ্গেই শুনি ঢাকার বাস হাজির।কোম্পানির ঢাকার কলিগরা বউ পোলাপাইন নিয়ে আমাদের হোটেলেই রেস্ট করতে নামল।ট্রাভেল এজেন্ট বলে এইখানে রেস্টহাউসএর কোন ব্যবস্থা রাখেনি।সবাইরে গুছায় নিতে নিতে সূর্যিমামা মাথার উপর গনগনে আগুন ছড়াচ্ছেন...... এর মধ্যে হেঁটে হেঁটে বর্ডার পার হলাম। তবে ভারতীয় বর্ডারে তেমন ঝামেলা করলনা,আর লোকজনও কম।ওদিকে পাথর বোঝায় শয়ে শয়ে ট্রাক সব ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে তাই পুর এলাকা ধুলায় ধুলরন্য হয়ে আছে।বাংলাদেশ বর্ডার শেষে পাহাড় শুরু... আমাদের জন্য অপেক্ষারত হুডখোলা জীপ গুলো ধরতে বেশ খানিকটা হাঁটতে হলো।
শিলং হচ্ছে ভারতের 'সেভেনসিস্টার্স' এর অন্যতম মেঘালয়ের রাজধানী। শিলং যেতে সিলেট থেকে প্রথমে যে্তে হয় তামাবিল বর্ডারে, যেতে ঘন্টা দেড়েক লাগে। তামাবিলের রাস্তা জুড়ে ভ্রমণের অন্যরকম আনন্দ। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যায় দুপাশে শুধু উচু উচু সব পাহাড়। এই পাহাড়ের উপরেই শিলং। তামাবিল হচ্ছে আমার দেখা বাংলাদেশের সবচেয়ে সহজ বর্ডার।এখান থেকে কয়েক কদম পরেই ইন্ডিয়ার বর্ডার, একদম সামনা সামনি।
এরপর আড়াই-তিন ঘন্টার পাহাড়ের পথে আকাশকে ছোঁয়ার পথ যেন। রাস্তাও বেশ ভালো এবং মাঝে মধ্যে পাহাড়ে সমতল ভুমির পরশ। পুরা ভ্রমণেই চারপাশে মুগ্ধ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট প্রকৃতিক উপকরণ সঞ্চিত আছে। প্রথমে বিশাল বিশাল পাহাড়ি পাথর যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে, পরে পাহাড়ি পথে ঝর্না আর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম শিলং।
শিলং শহরটা বেশ সাজানো গোছানো সুন্দর। শহরের বাইরে থেকেই দেখা যায় সুন্দর সব একতলা, দোতলাবাড়ী, স্থাপত্য অনেকটা নেপাল ভুটানের মতই। শিলংএ খ্রীস্টান সম্প্রদায় বেশী, সেকারনে পথে পথে অনেক চার্চও, ইংরেজরা বলে গরম সইতে না পেরে এখানেই আশ্রয় নিয়েছিল।
অবশ্য সে সময়ে জন মানুষ শূন্য এই পাহাড়ি প্রান্তরে কিভাবে যে তারা ঘাটি গেরেছিল কে জানে?অবশ্য এখন শহরের অধিকাংশ দোকান চালায় বাংগালীরা, তাই কথাবার্তা বলত তেমন সমস্যা হয় না ।আমরা যে হোটেলে উঠলাম সেটা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে।অর্ধেক পাহাড়ের উপরে আর অর্ধেক নিচে...... প্রায় পুরা হোটেলটাই আমাদের জন্য বুকিং দেওয়া।
আমি একটু দেরিতে গিয়ে একটা সিঙ্গেল রুম পেলাম ভাগ্যই বলতে হবে।প্রথম দিন কোন সাইট সিইং নাই তাই সবাই এলো-পাথারি ঘুরে বেড়ালাম। রাতে একা একা ঘুমাতে বেশ ভয় ভঁয় লাগল—বিদেশ বিভুই ভুতগুলো নিশ্চয় শান্ত প্রকৃতির হবে না!