somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জ্যামময় এই নগরী!

২২ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জ্যামময় এই নগরী

ঘটনা - ১

মোয়াজ্জেম সাহেব একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে জব করেন। উত্তরা তিন নম্বর সেক্টর থেকে পল্টন-প্রতিদিন এই পথে যাতায়াত করেই অফিস করতে হয় মোয়াজ্জেম সাহেবকে। দুরত্ব সর্বসাকুল্যে ২১ থেকে ২২ কিলোমিটার সেই পথটুকু পড়ি দিতেই রোজ দেড় থেকে দু’ঘন্টা সময় হাতে রেখে বাড়ি থেকে বেরুতে হয় তাকে। তার উপর বর্ষার দিনে বাড়তি ঝামেলা তো আছেই। পথের নানা জায়গায় যখন বৃষ্টির পানি জমে তখন অফিসে আসাটা রীতিমতো দূর্ভোগে পরিণত হয়। এছাড়া দূরের পথ হওয়া স্বত্বেও সিএনজি চালকদের বাড়তি ভাড়া দাবী করা, কিংবা সিটিং বাসে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করার মতো অভিজ্ঞতা তো আছেই। মোয়াজ্জেম সাহেব জানান, আগে সরকারী ছুটির দিন কিংবা শুক্র-শনিবারে রাস্তার যানজট পরিস্থিতি কিছুটা ভাল থাকলেও ইদানিং ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই দিনগুলোতেও।

ঘটনা - ২

একই কোম্পানীর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মামুন সাহেব। বনশ্রী প্রজেক্ট থেকে কর্মস্থল পৌঁছুতে রোজই যানজটের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। বিশেষ করে মৌচাক-মালিবাগ-কাকরাইল-বিজয়নগর থেকে পল্টন সিগন্যাল অবদি প্রতিদিনই দীর্ঘ জ্যামে আটকে থাকতে হয় তাকে। মামুন সাহেব জানান, এই জ্যামের চিত্রটি এতোটাই বিচিত্র যে কোনদিন কখন বাসা থেকে বেরুলে কখন অফিসে পৌঁছুনো যাবে এটি আগে থেকে অনুমান করাটা একেবারেই অসম্ভব। বিশেষ করে মৌচাক-মালিবাগে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকে থাকা এবং অত্যন্ত কম সময়ের জন্য সিগন্যাল ছাড়ার মতো কারণে তাকে প্রায়ই আগে বাসা থেকে বেরিয়েও দেরীতে অফিসে পৌঁছুতে হয় বলে প্রায় দিনই ই ডি সাহেবের ঝাড়ি খেতে হয়। তার আশঙ্কা, এই জ্যামের কারণ যেমন তার কাছে অজ্ঞাত তেমনি দিনের পর দিন অবস্থার উন্নতির পরিবর্তে ধারাবাহিক অবণতিও এই শহরের বাসিন্দাদের জন্য ভীতিকর।

তিলোত্তমা এই ঢাকা নগরীতে যাদেরকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো কাজে বেরুতে হয় উপরের ঘটনাগুলো তাদের জন্য বাস্তবের চাইতেও অনেক বেশী রূঢ়। তবে অজানা কারণে সমাধান না হওয়া এই জানা সমস্যাটির শিকার হয়ে রোজই যাদের পথে নামতে হচ্ছে- তাদের দুর্ভোগ আর দুর্দশার যেন কোনো শেষ নেই। বিশেষ করে গত বছর থেকে ঢাকা শহরের পরিবহন ব্যবস্থা যেভাবে স্থবির হয়ে পড়ছে তাতে করে সহসাই আশাবাদী হবার মতো কোনো সুখবরও কানে আসছে না নগরবাসীর। এক্ষেত্রে নানা সময়ে ঢাকা শহরের যানজটের নানাবিধ কারণের কথা বলা হলেও এগুলোর স্থায়ী সমাধান বা কার্যকর কোনো বিকল্প খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় পরিবহন জট কমানোর জন্য যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো আদৌ সাফল্যের মুখ দেখেনি। আর এসবকিছু মিলিয়ে ক্রমেই আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে শহর ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা।

ঢাকা সিটির পরিকল্পনায় গেল ক’ বছরে যে পরিমাণ সড়ক পথ বেড়েছে তার চাইতে বহুগুনে বেড়েছে এইসব সড়ক ব্যবহার করা যানবাহনের সংখ্যা। ফলে প্রতিটি রাস্তাতে ট্র্যাফিক জ্যাম এখন নিত্য নৈমত্তিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ এবং ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে দেখা যায়, বর্তমানে ঢাকা শহরের যানজটের জন্য অধিকাংশ মানুষই দায়ী করেছেন অপরিকল্পিতভাবে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, অ-যান্ত্রিক যানবাহন, সড়কের সংখ্যা ও পরিমাণ বৃদ্ধি না পাওয়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং এর মতো বিষয়গুলোকে। নানা সময়ে বেশ কিছু সড়ক থেকে রিক্সার মতো অযান্ত্রিক যানবাহন উঠিয়ে নেয়া হলেও এর সুফল ভোগ করতে পারেনি সাধারণ মানুষ। আর এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি ও সিএনজি’র মতো বাহনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। একটি গাড়ি সিএনজি’তে রূপান্তরিত করবার পর সেটির পরিচলন ব্যয় হাতের নাগালে চলে আসে বলে বর্তমানে ঢাকার সড়কে গাড়ির সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতেই অনেক বেশি। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি কিংবা ঢাকায় চলাচল করা সিএনজিগুলোর জন্য আলাদা কোনো রুট নেই বলে এসব গাড়ি কিংবা সিএনজি চলতে পারে পুরো শহর জুড়ে। আবার একটি প্রাইভেট গাড়ি কিংবা সিএনজি একটি সড়কের যতোটা স্থান দখল করে সেই তুলনায় এদের যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা কম। অথচ একটি বাসে একসাথে অনেক মানুষ পরিবহনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারলেও ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার তুলনায় তা এখনো অপ্রতুল। এছাড়া বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা লোকাল ও কাউন্টার বাস সার্ভিসগুলোর সেবার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো স্বতন্ত্র ব্যবস্থা না থাকার কারণেও স্বচ্ছল মানুষেরা এইসব পরিবহন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

বর্তমানে ঢাকা শহরে যে প্রধান প্রধান সড়কগুলোর উপর মানুষ নির্ভরশীল সেগুলোর দু’পাশেই এমনভাবে আবাসন কিংবা অফিস আদালত গড়ে উঠেছে যে এসব রাস্তার পরিধি বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে নতুন রাস্তা করার জন্য খুব বেশি ভূমিও এই নগরে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে গেল ক’বছরে ঢাকার সড়ক ব্যবস্থায় যে কয়টি নতুন সড়ক যুক্ত হয়েছে সেগুলো এলাকা বিশেষে যানজট নিরসনে কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া বর্তমানে একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি নতুন সড়ক নির্মাণের কাজও চলছে। এসব সড়ক একসাথে চালু হলে ঢাকার যানজট কিছুটা কমবার সম্ভাবনা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে নতুন কিছু শঙ্কাও। প্রথমত, প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট এর পাশাপাশি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বাড়ানো না গেলে কোটি মানুষের বাসস্থান এই ঢাকায় যানজট কখনোই পুরোপুরি দূর করা যাবে না। বরং যানজটের স্থানটাই শুধু পাল্টাবে। দ্বিতীয়ত, সমন্বিত পরিকল্পনার বাইরে জলাশয় বা নিচুভূমি ভরাট করে নতুন রাস্তা নির্মাণ করলে সেটি বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার পরিমাণ আরো বাড়িয়ে তুলবে। ফলে জনমানুষের ভোগান্তিও বাড়বে।

ঢাকা শহরের যানজট নিয়ন্ত্রনে এর অবকাঠামো এবং ট্রাফিক ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও নানাসময়ে বলে এসেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাস্তবে আমাদের দেশে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং সিস্টেমের কার্যকর প্রয়োগ এখন দশভাগও গড়ে ওঠেনি। নানা স্থানে ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবও ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। এছাড়া আবাসিক এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, শহর ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়া এবং অফিস এলাকায় যথেচ্ছ পার্কিং এর মতো সমস্যাগুলোও সার্বিকভাবে দূর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্য বিকল্প পথ বা ফ্লাইওভার নির্মাণ করা যেমন জরুরী তেমনি ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজন রয়েছে নাগরিকদের সচেতনতাও। বিশেষ করে গাড়ি পার্কিং এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে নাগরিকদের যথাযথ ভূমিকা পালন যানজটের বিশাল সমস্যাটিকে সামান্য পরিমাণে হলেও কমাতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:৫৪
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

* ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’
* ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
* ‘নাটক কম করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসসালামু আলাইকুম। ইদ মোবারক।

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:১৯



ঈদ এখন এক নিরানন্দময় উপলক্ষ্য।
কিতাবে আছে ধনী-গরীব অবিভাজনের কথা বরং এদিন আরো প্রকটতা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয় বিভেদরেখা কেননা আমরা আমাদের রাষ্ট্র- সমাজব্যবস্থা ও জনগণকে সেভাবে দিয়েছি ঘিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের শুভেচ্ছা: দূর থেকে হৃদয়ের কাছ

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

আসসালামু আলাইকুম,
আজ ঈদের দিন। চারদিকে উৎসবের আমেজ, হাসি-খুশি, নতুন জামা আর মিষ্টি মুখের আদান-প্রদান। আমি ইউরোপে আমার পরিবারের সাথে এই আনন্দের মুহূর্ত কাটাচ্ছি। কিন্তু আমার হৃদয়ের একটা কোণে একটা ফাঁকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০


বাংলা গানের ভাণ্ডারে কাজী নজরুল ইসলাম এক অনন্য নাম। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সংগীতের এক শক্তিশালী ধারা তৈরি করেছেন। তারই লেখা কালজয়ী গজল "ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে এলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই যে আমার নানা রঙের ঈদগুলি ......

লিখেছেন অপ্‌সরা, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪২


পেছনে ফিরে তাকালে আমি সবার প্রথমে যে ঈদটার কথা স্মরন করতে পারি সেই ঈদটায় আমি পরেছিলাম আমব্রেলা কাট নীলচে বলবল রং একটা জামা এবং জামাটা বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×