somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারীর সৃষ্টিতে চিরায়ত বাংলার আধুনিক নারীরূপঃ বনলতা ও অনেকে (১ম পর্ব)

২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেঘমেদুর আষাঢ়ের শেষ লগ্নে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পঞ্চম তলায় এসেছিলেন বনলতা। একা আসেননি, সাথে ছিলেন আরো বেশ কজন সঙ্গী। হৈমন্তী, কৃষ্ণকলী, চারুলতা, সুনয়না, লাবন্য, শ্যামলী, নার্গিস অনেকেই। শিল্পী সুশান্ত অধিকারী তুলির আঁচড়ে সহজ ভঙ্গিমায় বাংলার চিরায়ত নারীরূপে মূর্ত করেছেন এই বনলতাসহ খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের সাহিত্যরসে সমৃদ্ধ বিভিন্ন নারী চরিত্রকে। শিল্পী সুশান্তর রঙ তুলির ছোঁয়ায় সাঁওতাল রমনী বরেন্দ্রীও এসেছেন নিগুঢ় মমতায়। চিত্রা পাড়ের মোনালিসাও বাদ পড়েননি অনুপম শিল্পের ছোঁয়া থেকে।


জীবনানন্দের বনলতা, সুশান্তর বনলতা একাকার হয়ে বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ নারীরই এক প্রতিরূপ ধারণ করেছে। শিল্পী তাঁর উপলব্ধির কথায় বলেন, “সে অতীতের সকল কাব্যের নারী চরিত্রের প্রতিনিধি স্বরূপ। তাঁর সৌন্দর্যের মধ্যে ‘ভেনাস’, ‘মোনালিসা’, ‘সীতা’, ‘শকুন্তলা’, ‘কৃষ্ণকলি’, ‘লাবন্য’, ‘নার্গিস’ প্রভৃতি নারীর সৌন্দর্য বর্তমান। আমি বনলতা ও আরো কিছু চরিত্রের ভাবসম্পদকে গুরুত্ব দিয়ে বর্তমান ছবিগুলো এঁকেছি।”


অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আরব্য রজনীর চিত্রমালার মতোই যেন সুশান্ত কুমার অধিকারীর বনলতা চিত্রমালা। আরব্য রজনীর গল্পের চরিত্রগুলো চিত্রায়ন করতে গিয়ে অবনঠাকুর কলকাতার ঠাকুরবাড়িতেই তাঁর আশেপাশে পেয়ে গেছেন সেই চরিত্রগুলো। বনলতাকেও খুঁজে পেতে সুশান্ত কুমার অধিকারীকে নাটোর যেতে হয়নি। বাঙ্গালী রমনীর আটপৌরে জীবনের মাঝেই সুশান্ত পেয়েছেন বনলতাকে। যার সৌন্দর্য্য অন্তর্লোক থেকে উদ্ভাসিত হয়েছে মৃন্ময়ী নারীরূপে। টানা টানা অর্ধনিমিলিত আয়ত চোখে বনলতা কামনার বিষয় হয়ে আসেননি, এসেছেন মমতাময়ী প্রশান্তির প্রতীক হয়ে। যাকে দেখে নয়ন জুড়ায়, হৃদয়ে প্রলম্বিত হয় করুনাধারায় ভাবনার স্বস্তি। চির তারুণ্যের বনলতা কখনো একজন চারুকলার শিক্ষার্থী, শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের সাথে বসে নিপুণ আঁচরে পাশ্চাত্য শিল্পের অনুলিপি অনুশীলনে ব্যস্ত, খোলা চুলে অনুশীলন কক্ষে জীবনান্দের প্রতিকৃতি নিয়ে, ক্যানভাসের পাশে মায়াময় চাহনীতে। কখনো শিল্পের আত্মানুসন্ধানে নিমগ্ন ধ্যানী রমনী, যিনি কম্পিউটারের সামনে বসে ইন্টারনেটে পিকাসোর শিল্পকর্ম পর্যবেক্ষণে, জাপানের কোন এক আর্ট গ্যালারীতে সপুত্রক শিল্প সুষমার মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন। আবার তাঁকে দেখতে পাই প্যারিসের ল্যুভ মিউজিয়ামে মোনালিসার প্রতিমূর্তির সামনে, বাবা, মা ও ভগিনীকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু যাদুঘরে, যেখানে এ দেশের ইতিহাসের অন্যতম ট্র্যাজেডিকে হৃদয়ঙ্গম করছেন। জাতির পিতার প্রতিকৃতির সামনে বিনম্রতায় দাঁড়িয়েছেন ছেলেকে নিয়ে। একজন দায়িত্বশীলা এক জননী, সন্তানকে প্রত্যক্ষ পরিচয় করাচ্ছেন ইতিহাস ও শিল্পের সাথে।


বনলতার রয়েছে নিজস্ব গ্রন্থাগার, যেখানে শিল্পকলাসহ দর্শন, ইতিহাস ও বিভিন্ন বইএর সমারোহ। তাঁর কম্পিউটার টেবিলের পাশেই দেখতে পাই সেসবের কিছু নমুনা। দেশ যখন সামাজিক অস্থিরতার সংকটে নিমজ্জিত। বনলতা তখনো শিল্প ও জ্ঞানের চর্চায় ঋদ্ধ এক রমনী। যুগের আধুনিকতাকেও ধারন করেন বনলতা। কম্পিউটারে তাঁর যেমন বিচরণ, স্মার্ট সেলফোনেও তিনি দক্ষ এবং রোমান্টিক। বর্তমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও তিনি ব্যবহার করেন প্রয়োজনে। শিল্পীর রসবোধ মূর্ত হয়েছে এভাবেই। কবি জীবনানন্দের কবিতা বনলতা সেন যেমন কালোত্তীর্ণ, শিল্পী সুশান্তও তাঁর বনলতাকে গড়ে তুলেছেন আধুনিকতার সাথে সাবলীল চরিত্রের ধারায়। তাই তো দেখি বনলতাকে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনের অপরূপ প্রতীকরূপে, বাহ্যিক রূপে প্রগলভ নন, বরং অন্তর্গত বোধের গভীরতায় বিনীত। অন্তর্গত সৌন্দর্যের প্রতীক বনলতাকে বহুমাত্রিকতায় সার্থকভাবে উপস্থাপন করেছেন শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারী। তাঁর অক্লান্ত অধ্যাবসায়ই দর্শকের মনে নতুন করে যেন ঠাঁই করে নিয়েছে শ্রাবস্তীর কারুকার্য এই বনলতা।


বনলতা রবীন্দ্র উৎসবে যায় কৃষ্ণকলিকে নিয়ে। চুড়ি সেন্ডেল আর আটপৌরে শাড়ি-ব্লাউজে আচ্ছাদিত বাংলার চিরন্তন নারী, কাঁধে ঝোলানো শান্তিনিকেতনী ব্যাগ। সুনয়না আছেন, টিকলো নাক মোগল ধারার পার্শ্ব চিত্র।


শিল্পীর কল্পনায় সোনালী জ্যোৎস্নায় সুনয়না ধারন করে পাশ্চাত্যের নারীর গোলাপী আভা। কিন্তু বাঙ্গালী নারীর কমনীয়তা ক্ষুন্ন হয়নি এতটুকুও, খোঁপায় তাঁরার ফুল গুঁজে, চিবুকের হাত রেখে মায়াবী চাহনীতে লাজনম্রতাই প্রস্ফুটিত।


চিত্রাপাড়ের মোনালিসার অভিব্যাক্তি পাশ্চাত্যের মোনালিসার মতো রহস্যময় নাহলেও, এলোচুলে হরিণী চোখ আর গোলাপ পাপড়ি ঠোটে মৃদু হাসির ঝিলিক দর্শক মনে ছায়া ফেলবে অনেকদিন। এর আবেদন ফুরোবার নয়। একইভাবে চারুলতা, লাবন্য, শ্যামলী, নার্গিস, হৈমন্তী কেউই আবেদন হারায়নি কখনো। স্বমহিমায় সকলেই ভাস্বর। . . . . . . . . . . . . . . . (বাকি অংশ ২য় পর্বে)

সম্পর্কিত পোষ্টঃ
শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারীর সৃষ্টিতে বাংলার চিরায়ত নারীরূপঃ বনলতা
শিল্পী সুশান্ত অধিকারীর সৃষ্টিতে চিরায়ত বাংলার আধুনিক নারীরূপঃ বনলতা ও অনেকে (২য় পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫
৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফুফুর চলে যাওয়া

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৪১


স্কুলে ক্লাস করাচ্ছিলাম। হঠাৎ ফোন এলো ফুফুর যায় যায় অবস্থা। আমাকে এখনই যেতে হবে। পকেটে কানাকড়ি নেই। কী করে যাব? কিছুদিন আগে এক জ্যাঠা মারা গেছেন, তখনও যেতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার হাসান মাহবুব

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০২



প্রিয় ব্লগারগন, কেমন আছেন? সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে আবারও হাজির হলাম আরেকটি ইন্টারভিউপোস্ট নিয়ে। আমি সত্যি বলতে কি মনের খেয়াল থেকেই ব্লগারদের ইন্টারভিউমূলক পোস্ট করা শুরু করেছিলাম। ভেবেছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার হাসান মাহবুবের কাছে প্রশ্ন, "আমার 'পরিশুদ্ধ' হওয়ার কি দরকার আছে?"

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০২



**** আমি চাঁদগাজী নিকে ব্লগিং করার সময়, ব্লগার হাসান মাহবুব আমাকে ১টা গালি দিয়েছিলেন; তিনি আমার ১ পোষ্টে মন্তব্য করেছিলেন; মন্তব্যটা ছিলো, "তুমি একটা মাদারচোদ"। আমি বিনিময়ে কিছু বলিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও সংস্কার প্রসঙ্গে

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:০৫


বাংলাদেশের সুশীল সমাজকে নিয়ে চাইলে আপনি ফিল্ম বানাতে পারেন, বই লিখতে পারেন। এরা দেশের একটি অতি আশ্চর্য শ্রেণী। এদের পড়ালেখা বেশি, বই লিখেন, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা করেন, কখনো আমলা কখনো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুর নতুন মডারেটরদের কাজ কি?

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:১৫

সামুতে মডারেটররা ভালো কিছু উপহার দিতে পারছেন কি? তারা কি যোগ্যতাবলে এই পদপ্রাপ্ত হোন? আমার কাছে প্রশ্নগুলো বেশ ধোয়াশা পূর্ণ। কাভা ভাই থাকা কালে আমি এই ধরনের প্রশ্ন করি নাই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×