ইরা আমাদের বাড়িতে অনেকদিন ধরে কাজ করে। কি অবাক হলেন? এত্ত সুন্দর নাম, আমাদের কাজের মেয়ের? আসলে বাড়িতে লোক এলেও যখন জিজ্ঞেস করত এই মেয়েটা কে? তখন, আমরা উত্তর দিতাম আমাদের বাড়িতেই থাকে। লক্ষি মেয়ে। একে কাজের মেয়ে বলতে পারতাম না কোনদিন। কেউই সেটা বলতে পারত না। ওর জামা কাপড় খুব মার্জিত। ফর্সা মুখ আর মাঝারি চুল। মনে হত এ বাড়ির মেয়ে ও। কিন্তু সমস্যা হল ও কথা বলতে পারত না। বোবা মেয়ে, কথা বললে সব শোনে কিন্তু বলতে পারে না। সবসময় হাসি-হাসি মুখ করে থাকত।
মেয়েটার খুব চাঁদ বা তাঁরা কিংবা আকাশ দেখার সখ ছিল। মাঝ রাত্তির বেলা বাথরুম করার জন্য যখন উঠতাম তখন দেখতাম ও হাসি হাসি মুখ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। একদিন রাতে যে ভয় পেয়েছিলুম ওকে দেখে!
কোন এক ঈদের দিন বোবা মেয়েটা হঠাৎ কথা বলা শুরু করল!!
তখন মা বললে,
- কথা কম বলবে। চাকরানিদের এত কি কথা! সারাদিন এত ফুসুর ফুসুর কি?
আমি সত্যি অবাক হলুম! আমার মা আগে তো কত আদর করত ওকে! কিন্তু কথা বলতে পারছে, এটাতো ভাল ব্যাপার। কিন্তু উনি বকছেন কেন?
বাবা বললে,
- কাল থেকে তোর আর আসা লাগবে না। আমাদের কথা বলা চাকরানীর দরকার নেই।
এ কথা আমি দরজার ও পাশ থেকে শুনে, কান্না করে দেই। মেয়েটা আমার কিছুই হয় না। আমার চেয়ে বয়সেও অনেক বড়। কিন্তু একটা মায়া জন্মে গেছে। ও আমায় গাছ থেকে পেয়ারা পেড়ে দিত। আমার জর হলে সারারাত মাথায় পানি ঢালত।
সবচেয়ে অবাক হলুম আমার বড় ভাইয়ের ব্যাবহারে। সদা মুখে ঠাঠিয়ে চড় মেরে দিলো। অথচ বড় ভাইকে দেখতাম ওর জন্য মালা, নূপুর, পিয়াজি এগুলো নিয়ে আসত। কিন্তু আজ এমন কি হলো? কথা বলা কি খারাপ? আমি না হিসেব মিলাতে পারিনি।
এর পর থেকে ওকে আর দেখিনি। তখন ছোট ছিলুম! এখন বড় হয়েছি। হিসাব মিলাতে চাই না। হিসাব মিলাতে গেলে বড্ড বেহিসাবি হয়ে যাই। নিজের বাপ, ভাইকে নিয়ে কেউই খারাপ কিছু ভাবতে চায় না। আমিও না হয় সে দলে রইলুম। ক্ষমা কর ইরা!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:১০