যুগান্তর রিপোর্ট-----১১/০৭/২০১১---
সেটি কোচিং সেন্টার ছিল না। ছিল ছাত্রীদের দিয়ে বিকৃত আনন্দ পেতে যৌন নিপীড়নের সেল। লেখাপড়ার পরিবর্তে সেখানে ছাত্রীদের মনোরঞ্জনে বাধ্য করা হতো। কোচিং সেন্টারের আড়ালে ভিকারুননিসার বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধর দীর্ঘদিন ধরে ওখানে এমন কাজ করছিল বলে আশপাশের বাসিন্দারা বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু সবাই অপেক্ষায় ছিল একদিন হাতেনাতে ধরবে বলে। কিন্তু লজ্জা ও ভয়ে হয়তো কোন ছাত্রী অভিযোগ করতে সাহস পায়নি। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের সঙ্গে এ অনৈতিক কাজ করেও সে পার পেয়ে যাচ্ছিল। সর্বশেষ ১০ম শ্রেণীর সেই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে সেই দৃৃশ্য ভিডিও ও ধর্ষণ করায় অবশেষে ফেঁসে যায় লম্পট শিক্ষক পরিমল। ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার হওয়া ভিকারুননিসার বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধর বাড্ডার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এফ ব্লকের ৬ নম্বর রোডের ৩৫৯ নম্বর বাড়ির নিচতলার কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কোচিং সেন্টার খুলে ছাত্রী পড়াত। রোববার সকালে সরেজমিন গিয়ে ওই বাড়িতে ও আশপাশের ভবনের লোকজনের সঙ্গে পরিমলের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, অভিভাবকরা মেয়েদের প্রাইভেট পড়াতে পাঠাতেন। আর লম্পট পরিমল সে সুযোগ নিয়ে ওই বাড়িতে অনেক মেয়ের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। এ ঘৃণিত কাজে তার সহযোগী শিক্ষক বাবুল কুমার কর্মকার, বিষ্ণুপদ বারই, বরুণচন্দ্র বর্মণ ও বিশ্বজিৎ চন্দ্র মজুমদারও জড়িত থাকতে পারে। তাদেরও গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক অজানা তথ্য বেড়িয়ে আসতে পারে বলে স্থানীয়রা জানান।
এদিকে গ্রেফতারকৃত পরিমল ধর্ষণ মামলায় বাড্ডা থানায় ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্র জানায়, রিমান্ডের তৃতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষক পরিমল স্বীকার করেছে, ওই ছাত্রীকে ১৭ মে নিষ্ঠুরভাবে হাত-পা বেঁধে নগ্ন ছবি মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করে তাকে ধর্ষণ করে। পরে ওই ছবি দেখিয়ে আরও কয়েক দফা ধর্ষণ করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পরিমল আরও জানায়, ওই ছাত্রীটির আগে সে একই স্কুলের আরও কয়েক ছাত্রীকে ও বাইরে থেকে অন্য মেয়েদের এনে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করেছে। বাড্ডা থানার ওসি মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পরিমল অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে, এতে মামলার তদন্তে অনেক অগ্রগতি হবে। পরিমল চতুর হলেও পুলিশের কৌঁসলি প্রশ্নে তার মুখ দিয়ে একের পর এক নতুন তথ্য বেড়িয়ে আসছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সেসব কথা বলা সমীচীন হবে না। ওসি জানান, লম্পট পরিমলের যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, সেভাবেই পুলিশ এ স্পর্শকাতর মামলার চার্জশিট দেবে। ওদিকে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীটির পারিবারিক সূত্র জানায়, ওই ছাত্রীটি ও তার অসুস্থ বাবা-মায়ের উন্নত চিকিৎসা চলছে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেদ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শেষে আগামী সপ্তাহে তারা দেশে ফিরবেন। বৃহস্পতিবার রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সিঙ্গাপুর যান।