আজকে হতে পারতো নানাভাইয়ার ১৫৪তম ডায়ালাইসিস... গত ডায়ালাইসিস এ ডাক্তারদের দের ঘন্টা শুধু রক্ত বন্ধ করতেই লেগেছে...তারা বলেছিলেন যে টিস্যুগুলো এমনভাবে র্যাপচার হয়ে গেছে যে ঐ একই জায়গা দিয়ে আর ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হবেনা...আর নানাভাইয়ের শরীরের যে অবস্থা তাতে আরেকবার ফিস্টুলা করার ধকল উনি সহ্য করতে পারবেন না...গত দুদিন আমরা এসব ভেবেই কাটিয়েছি...
গতকাল সকালে নানাভাইকে দেখে আসলাম যখন তখন উনি ঘুমাচ্ছিলেন...দুপুর ১২টার দিকে ছোট্মামা এসেউনাকে তুলে বাথ্রুমে নিয়ে গিয়ে গোসল করালেন...গত তিনদিন ধরে নানাভাইয়ার কথা পুরাপুরি বন্ধ...মাঝে মাঝে হাতে ইশারা করে কিছু বুঝানোর চেষ্টা করেন... বেশিরভাগ সময়ই আমরা বুঝিনা উনি কি বলতে চাচ্ছেন...যাই হোক, গোসল করানোর পরে মামা আর আমি মিলে নানাভাইকে শার্ট পরালাম...মামা বেচারা হাপিয়ে গিয়েছিল উনাকে ধরে রাখতে রাখতে...নানাভাই পুরাপুরি শরীর ছেড়ে দিচ্ছিলেন...খাতে বালিশ দিয়ে বসানোর পর এক মুহুর্তও উনার পাশ ছেড়ে সরা যায়নি...উনি দুপাশে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন... শার্ট পরানো হলে আম্মু ভাত নিয়ে আসলো। আম্মুকে দেখে নানাভাই দুহাত উপরে তুলে কিযেন বুঝাতে চাইলেন...আম্মু বলল মামাকে যে আমরা সরবোলীন লাগাতে ভুলে গেছি...লাগিয়ে দিলাম দুজনে মিলে...তারপর মামা নানাভাইকে অনেক রকম গল্প করে দুপুরের ভাত খাইয়ে ঔষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে বাসায় গেলেন...নানাভাইকে ঘুমাতে দেখে উনার কম্বল ঠিক করে আমি বের হলা দৃক গ্যালারীর উদ্দেশ্যে...শিরোনামহীন আর জটিলের আসার কথা সেখানে...আড্ডা আর চটপটির পর বারি ফিরলাম সাড়ে পাঁচটায়...
তখন বড়খালামনি আর বড়মামা এলেন...আমি সবার জন্য হান্টার বীফ স্যান্ডুইচ বানালাম ...আম্মু ডেকে বলল নানাভাইকে একটা মিষ্টি খাওয়ায় আসতে...দাড়িয়ে কিছুটা মিষ্টি আর পানি খাইয়ে গোসলের জন্য গরম পানি চুলায় দিতে এলাম...হঠাত শুনি খালামনির আর্তনাদ...দৌড়ে গিয়ে দেখলাম...নানাভাইয়ের চোখ উলটে গেছে...খালামনিকে বললাম এরকম তো আগেও হয়েছে...এত ভয় পাচ্ছ কেন...খালামনি ..্লেন...উহু আমার লক্ষন ভাল লাগছেনা...বলে ওযু করে ওজীফা নিয়ে বসলেন...মামা আমার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন...আমি যখন রুমে আসছি তখন আমাকে ডেকে বললেন যে অবস্থা আসলেই খারাপ...আজ রাত নাও কাটতে পারে...ততক্ষণে তিনতলার আন্টি এসেছেন...[উনার দুই মেয়েই ১৮ বছর বয়েসে মারা গেছেন...রক্তের একটা বিরল রোগে...]উনি খালামনিকে বললেন...যে চার কলেমা পড়েন সূরা ইয়াসীন আর আস্তাগফিরুল্লাহ পড়েন...উনার অবস্থা খুব খারাপ...আম্মু তখন নামাজ পরছেন...আমি অন্যান্য খালামনিদের ফোন করছি আর মাঝে মাঝে ফিস্টুলায় হাত দিয়ে দেখছি যে রক্ত চলাচল করছে কিনা...একবার গিয়ে দেখলাম যে নাই...দৌড়ে মামাকে ডাকলাম...মামা এসে স্টেথো দিয়ে দেখেই মাথা নাড়লেন...আমি খালামনিকে বললাম..কখালামনি...নানাভাই নাই...উনি মারা গেছেন সন্ধ্যা ৭টা ২০ এর কিছু পরে...আম্মুরা বিশ্বাস করেনাই প্রথমে...রাত ৮টার দিকে যখন শরীর পুরা বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেল তখন মামা এসে মুখের উপরে কাপড় টেনে দিলেন...নানাভায়ের গত দেড় বছরের অমানুষিক কষ্টের অবসান হল...
নানাভাইয়ার আর ১৫৪তম বার ডায়ালাইসিস করা লাগলো না...
[দোয়া করবেন উনার আত্মার শান্তির জন্য...আজকে আমাদের কলোনীর মসজিদে একবার জানাজা হল...আরেকবার হল ইকবাল রোডের মসজিদে। শুক্রবার বাদ আসর কুলখানি...উনাকে আজ বাদ জোহর কবর দেয়া হল মীরপুর বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে আমার নানীর কবরের উপরেই...]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১:০০