বিদ্যুতের শত বছরের পুরনো সূত্রকে বদলে দিয়ে পুরো বিশ্বকেই চমকে দিয়েছেন ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করা যুবক গিয়াস উদ্দিন কচি। জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের খবর পড়ে তাকে ‘অভিনন্দনবার্তা’ পাঠিয়েছে জাতিসংঘ। ব্যাপক সাড়া মিলেছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান থেকেও। কচির উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আমেরিকান পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি ওয়াসিলা, কেটার পিলার, জার্মানীর প্রতিষ্ঠান ডয়েস, বাংলাদেশের জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি ও রহিম আফরোজের মতো নামকরা প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য, গিয়াস উদ্দিন কচির জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের খবরটি ২০ এপ্রিল দৈনিক ইত্তেফাকসহ কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়। এ খবরে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বিস্তারিত জানতে চেয়ে পরদিনই কচির পৃষ্ঠপোষক চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সে অভিনন্দনবার্তা পাঠায় জাতিসংঘ। এ বার্তায় কচিকে অভিনন্দন জানিয়ে তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। মেইলে উল্লেখ করা হয় ‘কোন্ সূত্র ও পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন সেই বিষয়টি বিস্তারিত জানালে কৃতার্থ হবো। আপনার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহযোগিতাও করবো আমরা।’
জাতিসংঘ থেকে এ ধরনের মেইল পাওয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি এমএ লতিফ দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, ‘জাতিসংঘের পাঠানো অভিনন্দন বার্তায় উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলেও কৌশলগত কারণে আমরা এখন তা জানাতে চাচ্ছি না। তবে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের পাঠানো বার্তার উত্তর দেয়া হয়েছে।’
গ্যাস, ডিজেল ও কয়লা ছাড়া গিয়াস উদ্দিন কচির বিদ্যুৎ উৎপাদনের খবরে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটারী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সাড়া মিলেছে দেশের আরেক নামকরা প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি (জিইসি) থেকেও। নিজ চোখে কচিকে জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দেখে জিইসি বাংলাদেশের পরিচালক (উৎপাদন) প্রকৌশলী এবিএমএ বাসেত বলেন, ‘বিদ্যুতের স্বতঃসিদ্ধ সূত্র মানতে গেলে বলতে হয় এটি অসম্ভব। কিন্তু চোখের সামনে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দেখলাম তা অস্বীকার করি কিভাবে?’ প্রায় অভিন্ন মন্তব্য করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (বিতরণ) মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, ‘জ্বালানি ও গ্যাসের অভাবে যখন আমাদের একের পর এক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন গিয়াস উদ্দিন কচির এই উদ্ভাবন দিতে পারে আলোর দিশা। তবে এ উদ্ভাবনকে সার্থকভাবে ব্যবহার করতে আরো সতর্ক ও কৌশলী হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঝিনাইদহের যুবক গিয়াস উদ্দিন কচি তার উদ্ভাবিত ১০০০ ওয়াট (এক কিলোওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সর্বোচ্চ ৫০ হতে ৬০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান। আর ১০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে এ খরচ দাঁড়াতে পারে দেড় থেকে দু’লাখ টাকায়। তবে শুরুর দিকে কেবল একবার এমন ব্যয় হলেও পরবর্তীতে আর কোন খরচ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে অনবরত। কারণ, উৎপাদিত বিদ্যুতের ২০ শতাংশ দিয়েই পুনরায় উৎপাদিত হবে ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ। প্রচলিত সূত্রানুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনে শক্তি নিঃশেষ হলেও কচির উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সূত্র হচ্ছে ‘সমন্বিত চক্রাকার পদ্ধতিতে শক্তি কখনোই নিঃশেষ হয় না।’
অষ্টম শ্রেণী পাস করে আর্থিক টানাপোড়েনে পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়া কচি বলেন, ‘১৮ বছরের সাধনার ফসল আমার এই উদ্ভাবন। বিদ্যুতের সূত্র-টুত্র আমি জানি না। শুধু জানি, জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মূল মন্ত্রটি।’ তিনি বলেন, উদ্ভাবনের চেয়ে তার পরের ঝামেলা ম্যানেজ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্বকে চমকে দেয়া যুবক কচি প্রযুক্তিকে বশ মানালেও তরুণ সমাজের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠা ‘মোবাইল’ নেই তার হাতে। নেই নিজস্ব কোন মেইলিং এড্রেসও। চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদে ভাড়া করা একটা বাসায় থাকলেও সে কিংবা তার পৃষ্ঠপোষকরা তাও জানাতে চান না। এ ব্যাপারে চেম্বার সহ-সভাপতি এমএ লতিফ বলেন, ‘খবর প্রকাশের দু’দিনের মধ্যে ন্যূনতম অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করেছে আমাদের সাথে। এদের মধ্যে আমেরিকান পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানী ওয়াসিলা, ক্যাটার পিলার ও জার্মানীর প্রতিষ্ঠান ডসেসও রয়েছে।’
- ইত্তেফাক ২৩.০৪.২০০৮