নীলুর বুক কাঁপছে। তার অস্থিরতটা সময়ের সাথে বাড়ছে। আগামীকাল তার এইচএসসি পরীক্ষা। কিন্তু সে এখন পড়তে পারছে না। কিছুক্ষণ আগে তার বান্ধবী রূপার ফোন এসেছিল। রূপা জানালো যে প্রশ্ন পাওয়ার একটা সম্ভাবণা আছে।
নীলুর বাবা এটা শোনার পরই ছুটে গিয়েছেন। এখন সে তার বাবার অপেক্ষায় বসে আছে। প্রায় ঘন্টাখানেক পর তার বাবা প্রশ্নপত্র নিয়ে বাসায় ফিরলেন। নীলু প্রশ্ন পেয়েই পড়া শুরু করলো। তাকে এ প্লাস পেতেই হবে। তাকে মেধাবী হতেই হবে, যে ভাবেই হোক। এটাই বর্তমানে শতকরা আশি ভাগ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার পূর্বরাত্রির চিত্র।
আচ্ছা আপনি কি আপনার সন্তানের হাতে ইয়াবা তুলে দিতে পারবেন? উত্তরে বলবেন 'না'। আপনি কি আপনার সন্তানকে অন্যায় কাজ করতে দিবেন? উত্তরে বলবেন 'না'। তাহলে আপনি আপনার সন্তানের হতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কিভাবে তুলে দেন? নাকি ন্যায়, নীতিকে বস্তাবন্দী করে রেখে দিয়েছেন? আপনারা যা পারেন না। আপনাদের চেয়ে রাস্তার ঐ চোর কিংবা বেশ্যার দালালটাও ভালো। ওদের মিনিমাম একটা নীতিবোধ আছে। আপনাদের মত ভদ্রতার মুখোশ পড়ে থাকে না।
নচিকেতা বলে গিয়েছেন,
"কেন পথ নিয়ে মাথা ব্যাথা, জেতাটাই বড় কথা। আসলে সবাই চায় জিততে"। জিতুন , আপনার সন্তান ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে এ প্লাস পাক। কিন্তু এই দৌড়ের শেষ সীমা কোথায় জানেন তো? জীবনের সব জায়গায় তো আর প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না। তখন কি করবেন?
আমাদের শিক্ষা মন্ত্রী শিক্ষার মাণ নিয়ে গর্ব করেন। এ প্লাসের সংখ্যা বৃদ্ধি দিয়ে দেখান শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু যে বিষয়টা বলেন না সেটা হলো যে, এদেশে প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। কারা প্রশ্ন ফাঁস করছে সেটাও নিশ্চয়ই তাঁর জানার কথা। তারপরও কেন এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়না সেটাই এক রহস্য। সরকারের উচিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া। এই জঘণ্য কাজের জন্য এর চেয়ে ছোট কোন শাস্তি আর নেই।
এই ঘৃণ্য কাজকে রোধ করার জন্য সবার আগে প্রয়োজণ সবার সচেতনতা। এই প্রশ্ন ফাঁস প্রথার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।