রাতের চায়ের আড্ডায় সুমনকে খুব চিন্তিত ও কেমন যেন ওর মুখে বিরক্তি ও ভয়ের ছাপ একই সাথে স্পষ্ট হয়ে উঠল। কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করাতেই বললঃ একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, “একই সাথে প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট ও স্টাফদের মধ্যে ঝামেলা হওয়ার খুব বড় শঙ্কা দেখা দিচ্ছে।”
-আরে টেনশন করিসনা, প্রিন্সিপ্যাল হুজুর যখন আছে তখন উনি সব কিছু একাই সামাল দিতে পারবে।
-কিন্তু সমস্যাটা যে প্রিন্সিপ্যাল হুজুরের রেপুটেশন নিয়েই টান দিছে। এবং অভিভাবক হিসেবে উনার উপর ও এর দায় বর্তাবে।
-কি হইছে বিস্তারিত বলত।
-আজ বিকেলে স্টাফ আমানের ছেলে তুহিন (ছদ্মনাম) ও প্রিন্সিপ্যালের ভাতিজা সোহাগ (ছদ্মনাম) দুষ্টুমি করতেছিল। এরই ফাঁকে হঠাৎ তাদের মধ্যে রাগারাগি শুরু হয়ে যায়। রুমে তখন কেউ ছিলোনা। একটা পর্যায়ে সোহাগ খুব বেশি হিংস্র হয়ে উঠে এবং দুর্ভাগ্যক্রমে হাতের কাছেই একটা ছুরি (ফলমূল কাটার জন্য যেসব ছুড়ি সচরাচর সবায় ব্যবহার করে।) পেয়ে সেটা দিয়ে তুহিনের বুকে স্ট্যাপিং করে, তির্যকভাবে বুকের বাম পার্শ্বের হার্টের ঠিক উপর হতে শুরু করে বক্ষপিঞ্জরের ডান পার্শ্বের নিচের কোস্টাল আর্চ এর ঠিক উপর পর্যন্ত। কিন্তু পরক্ষনেই যখন লক্ষ্য করলো যে স্ট্যাপিংটা ভালো মতো হয়নি তখনি ঠিক যেখানে সে স্ট্যাপিংটা শেষ করেছিলো সেখানে হাত ঘুরিয়ে ছুরিটা বসিয়ে দেয় তারপর নিজেই হতভম্ব হয়ে পরে। তুহিনের কান্যার আওয়াজে তখন অনেকেই সেখানে উপস্থিৎ হয়। তারপর তুহিনকে ঢাকা ম্যেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় ৯টার দিকে।
সোহাগের মতো ছেলেদের চরিত্র বিশ্লেষণ ও এর পিছনের কারণঃ
১/ ওর গার্ডিয়ান যখন ওর নৈতিক শিক্ষা দিবার সময় হয়েছে তখন সেটা না দিয়ে দামি স্মার্টফোন হাতে দিয়েছে। সোহাগের ভিডিও গেমস খেলার প্রতি খুব ঝোক ছিল।
২/ প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভাতিজা হওয়ার দরুন সবাইকে নিজের অধীনে রাখার চেষ্টা করত। ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখাতো সবার কাছে।
৩/ পরিবার হতে যথার্থ শিক্ষা পায়নি। কারোর প্রতি সম্মান শ্রদ্ধাবোধ জাগাতে পরিবার পুরুপুরি ব্যর্থ হয়েছিলো।
৪/ এদের মতো ধ্বংসাত্বক ছেলেমেয়েদেরকে পিতামাতা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দিয়ে ভাবে তাদের দায়িত্ব শেষ। (সেই ছেলেদের বাকি জীবন তাদের নিয়তি অনুযায়ী অতিবাহিত হবে।)
৫/ ছোট বেলাতেই হোস্টেলে দিয়ে দেওয়া।
৪ ও ৫ নম্বরের জন্য কেন মাদ্রাসাকেই পছন্দ করা হয়?
ক/ এরকম উসৃঙ্খল ছেলেদেরকে কখনো স্কুল কর্তৃপক্ষ হোস্টেলে রাখতে চায়না। যেখানে ধর্মের প্রতি আনুগত্যশিলতা দেখালেই মাদ্রাসা পরিচালনায়রত ব্যক্তিরা ঐসব ছেলেদের হোস্টেলে রাখার ব্যপারে না বলতে পারেনা।
খ/ হোস্টেল সুবিধা মাদ্রাসায় অনেক বেশি।
৩ নম্বর কারনের একটা যথার্থ উদাহরণ দেইঃ প্রায় ২.৫ মাস আগে আমার এক ফ্রেন্ড তাকে প্রথম দিন পড়িয়ে (টিউশন করে) এসে বলেছিলঃ “এরকম বেয়াদব ছেলে (একটু ভাবুন দুষ্টু, চালাক বা ফাজিল বলেনি সোজাসুজি বেয়াদব আখ্যা দিয়েছে) আমি জিবনেও দেখিনি। এর জন্য (ওর এমন আচরণ) পুরোদমে ওর অভিভাবক দায়ী।" ম্যাডিক্যাল শিক্ষার্থী।
গতকাল সকালে যখন আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রা (১লা বৈশাখ) নিয়ে বের হলাম তখন তুহিন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। সেদিন দুপুরে সোহাগকে পুলিশ এসে থানায় নিয়ে যায়।
পরবর্তী আলোচনাঃ
প্রতিষ্ঠার অধ্যাবদি হতে ঘটনার পূর্ব পর্যন্ত এলাকার মানুষ সকলে প্রতিশষ্ঠানটিকে ভালোবাসতো। কিন্তু এখন সবায় বলতেছে মাদ্রাসাটা নাকি জঙ্গি তৈরির কারখানা।
আপনারা জানেন জঙ্গি ব্যপারটা নিয়ে বাংলাদেশে কম আলোচনা সমালোচনা হয়নাই।এমনকি এটা নিয়ে রাজনীতিও কম হয়নাই। আমরা ভুলে যাই কিভাবেই বা এতোটা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আনুগত্ব স্বভাবের হই যে প্রথমে জঙ্গি ব্যপারটাকে আলোচনায় তুলে তারপর সেটাকে দমন করার মাধ্যমে বিশ্ব পলিটিসিয়ানদের কাছে নিজের বীরত্ব প্রকাশ করি। কিন্তু এর মাধ্যমে যে বিশ্ব-মঞ্চে আমাদের দুর্নাম রটিত হচ্ছে তাকি আমরা কখনো ভেবে দেখি!!!
এর মাধ্যমে যে, আমরা নিজেরাই নিজেদের হেনস্থা করছি, নিজেরাই বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বের কাছে জঙ্গিদের আস্তানা হিসেবে প্রকাশ করছি এটা যে আমাদের জাতিসত্বার জন্য কতটা অবমাননাকর তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখছি?
যেই অ্যামেরিকার কাছে আমরা জঙ্গি দমনে (ছোট-খাটো দমন নিপীড়ন উল্লেখ করে) তৎপর বলে বিশ্বমঞ্চে তাদের সমর্থন প্রত্যাশা করছি সেই অ্যামেরিকায় ২০১২ সালের ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে ২০ বছর বয়সী এক আততায়ীর হাতে ২৮ জন (এর মধ্যে তার মাকে সে হত্যা করে, পরব্তীতে নিজেও আত্মহত্যা করে) নিহত ও ২ জন আহত হওয়ার পরও কি কখনো তারা বলেছিল যে এটা জঙ্গি তৎপরতার কাজ?
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখের মধ্যে সংগঠিত মোট ১৭ টি ( শুধুমাত্র ২০১৮ সালের) ঘটনার মধ্যে আলোচিতঃ ভালোবাসা দিবসে (১৪ ফেব্রুয়ারি) ঘটে যাওয়া ১৯ বছর বয়সী একজন ছাত্রের হাতে ১৭ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হওয়া সহ সর্বমোট ২৭ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হওয়ার পর ও কি অ্যামেরিকা বলেছে যে এগুলো জঙ্গি গুষ্ঠির কাজ?
-বলেনি।
বরং বিষয়গুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছে, যেখানে ২য় ঘটনাটি (১৪ ফেব্রুয়ারির) আমরা শুনতেই পাইনি। (আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বলতেছি এই খবরটা আমি বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল বা পত্রপত্রিকায় পাইনি। যদি আপনি পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি সৌভাগ্যবান বলতে হবে)
আল্লাহ্ না করুক, বাংলাদেশে যদি এমন একটা ঘটনা ঘটতো তাও এমন একটা দিনে তাহলে আমাদের রাজনীতি কর্তাব্যক্তিদের কি অবস্থা হত ভাবাই মুস্কিল।
কারণ ওরা জানে কিভাবে দেশের সম্মান মর্যাদা রক্ষা করতে হয়। ওরা জানে অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলীকে আলোচিত হতে না দিয়ে আগলে রেখে কিভাবে সবার সামনে ভালো থাকার অভিনয় করতে হয়। এর অবশ্য একটা কারণ ও আছেঃ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জানে ওনাদের দেশে ঘটে যাওয়া যে কোন অপরাধের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রশাসনিক ব্যর্থতা দায়ী আর যেটার সমন্বয়কারী হিসেবে রাজনৈতিক কর্তা-ব্যক্তিরাও দায়ী।
অথচ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা সরকার দল বিরোধী দলকে আর বিরোধী দল সরকার দলকে দায়ী করতে পারার অভাবনীয় সাফল্যের মাধ্যমে সারাবিশ্বে দেশের সম্মান নষ্ট করে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করে।
একনজরে তথ্যসুত্রঃ এখানে কিল্ক করুন।
ফটো সোর্সঃ গুগল।
অ্যামেরিকার কিছু আলোচিত ঘটনার লিংকঃ ২০০০ সাল থেকে বর্তমান অব্ধি।
১/ ২৩’ই জানুয়ারি ২০১৮ ঃ suspect (15), victims: deaths(2), injuries(18)
২/ ১৩/১৪’ই নভেম্বর ২০১৭ ঃ suspect (43), victims: deaths(6), injuries(18)
৩/ ১লা অক্টোবর ২০১৫ ঃ suspect (26), victims: deaths(10), injuries(9)
৪/ ৭’ই জুন ২০১৩ ঃ suspect (23), victims: deaths(6), injuries(4)
৫/ ২রা এপ্রিল ২০১২ ঃ suspect (43), victims: deaths(7), injuries(3)
৬/ ১৪’ই ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ঃ suspect (27), victims: deaths(6), injuries(21)
৭/ ১৬’ই এপ্রিল ২০০৭ ঃ suspect (23), victims: deaths(33), injuries(23)
৮/ ২১’ই মার্চ ২০০৫ ঃ suspect (16), victims: deaths(10), injuries(7)
৯/ ৫’ই মার্চ ২০০১ ঃ suspect (15), victims: deaths(2), injuries(13)
প্রতিটার ক্ষেত্রে সাস্পেক্ট একজন। বন্ধনীতে ওদের বয়স দেওয়া।
#MiK
এতো ছিলো শুধুমাত্র স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলোর মধ্যে আক্রমন। যেখানে বাংলাদেশ আল্লাহ্র রহমতে এখনো হাজার গুণ ভালো আছে। কিন্তু তারপরও কি দরকার তাদের একটু মনোযোগ আকর্ষণের (অথবা অন্য কোন কারণ এর জন্য) নিজের দেশের নামে নিজেরাই এমন দুর্নাম রটানোর?!!!
প্রশ্ন রেখে গেলাম!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৮ রাত ১০:৫৯