"দ্বীন" শব্দের চারটি অর্থ:
১- প্রভাব, প্রাধান্য, শক্তি, আধিপত্য
২- দাসত্ব, আনুগত্য
৩- কর্মফল, প্রতিফল
৪- আইন, বিধান, ব্যবস্থা
এই চতুর্থ অর্থে এসে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ চূড়ান্তভাবে বিব্রত হয়। কেননা, তাদের মূল বক্তব্যই হল কুরআন ঠিক আছে, ধর্ম ঠিক আছে। কুরআন আর ধর্ম নিজ নিজ জায়গায় ঠিক থাকবে, আর আইন, বিধান, ব্যবস্থা এগুলো মানুষ তৈরি করবে।
কিন্তু কুরআন দ্বীন শব্দের আওতার মধ্যে দেশের ব্যাবস্থা, আইন, বিধান সবগুলোকেই কব্জা করে নেয়। সূরা নূরের ২ নং আয়াত, আল্লাহ বলেন, ব্যভিচারী-ব্যভিচারিনী উভয়কে একশ করে বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তোমরা যেন তাদের উপর দয়া না করো। এখানে বেত্রাঘাত করা হচ্ছে রাষ্ট্রের আইন। একে "দ্বীন" শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। আর আল্লাহ নির্ধারিত এই দ্বীন বা আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে কোন ধরণের অবাঞ্ছিত দয়া না করার জন্য আল্লাহ হুশিয়ার করে দিয়েছেন।
বিষয়টির ব্যাপারে আমরা যারা নিয়মিত কুরআনকে অধ্যয়ন করি, কুরআনকে ভালবাসি, কুরআনকে শ্রদ্ধা করি, - আমাদের পরিষ্কার থাকা দরকার। দ্বীন শব্দের চারটি অর্থ যদি পরিষ্কারভাবে আমাদের মনে থাকে তবে যখনই কুরআন পড়বো, আমাদের চোখের সামনে সংশ্লিষ্ট আয়াতটি পরিষ্কারভাবে ফুঁটে উঠবে। কুরআন নিয়ে আমাদের কেউ বিভ্রান্ত করতে পারবেনা।
তৃতীয় অর্থ ছিল কর্মফল, প্রতিফল। আমরা যদি আমাদের বহুল পরিচিত একটি আয়াত এখানে আবার পাঠ করি, আমাদের সামনে তৃতীয় অর্থ পরিষ্কার হবে। "মালিকি য়াও মিদ দ্বীন।" প্রতিফল দিবসের মালিক।
এভাবে দ্বীন শব্দযুক্ত বিভিন্ন আয়াত পাঠ করলে সবগুলো অর্থই আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
একজন মুসলিম যে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করে, আনুগত্যের মস্তক অবনত করে- তার জন্য ধীরে ধীরে দ্বীনের মধ্যে তথা আল্লাহ প্রবর্তীত জীবন ব্যবস্থার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশের আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অনেক বাধা আসবে। কিন্তু আমরা যদি আল্লাহ যা বলতে চেয়েছেন সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখি, এবং দ্বীনকে গ্রহণ করার ব্যাপারে অনমনীয় থাকি। আমাদের জন্য আল্লাহর আনুগত্য করা সহজ হয়ে যাবে। নতুবা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ চুপিসারে এবং ঘোষণা দিয়েই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করবে। পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থাই যে আল্লাহ প্রদত্ত এবং জীবনের কোন প্রান্তেই যে স্ব-আবিষ্কৃত নীতিমালা ও বিধান প্রয়োগের কোন সুযোগ নেই, এ কথাগুলো মানুষের সামনে যত কম পৌঁছানো যায়- ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের প্রানান্ত চেষ্টা নিয়োজিত থাকে সেদিকেই। কিন্তু আমরা যতই কুরআনকে আঁকড়ে ধরবো, নিয়মিত অধ্যয়ন করবো, আমাদের বিভ্রান্ত হবার সম্ভাবনা ততই হ্রাস পাবে।
----------------------------------------------------------------------------------
এবার নিচে দ্বীন শব্দের চারটি অর্থের সমর্থনে কয়েকটি আয়াত কোট করছিঃ
প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থে ( প্রাধান্য, প্রভুত্ব, শক্তিমত্তা এবং আনুগত্য, দাসত্ব)
দ্বীনকে একমাত্র তারই দিকে নিবদ্ধ করে তোমারা তাকেই ডাকো। সকল প্রসংশা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য। সূরা আল মুমিনঃ ৬৫
একান্তভাবে দ্বীনকে তাঁর জণ্য খালেস করে আল্লাহর ইবাদত করার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। সর্বপ্রথম আনুগত্যের শীর নত করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা আজ জুমারঃ ১১
আসমান জমীন যা কিছু আছে সবই আল্লাহর, দ্বীন একান্তভাবে তারই জন্য নিবেদিত। তবুও কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে তোমরা ভয় করবে? সূরা আন নহলঃ ৫২
তৃতীয় অর্থেঃ (প্রতিফল, কর্মফল)
বহুল পঠিত ও পরিচিত সূরা, সূরা মাউন। তুমি কি তাকে দেখেছ যে দ্বীনকে প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করে? এই সে ব্যক্তি যে এতিমকে গলাধাক্কা দেয়, মিসকীনদের খাবার ব্যাপারে উৎসাহিত করেনা।
চতুর্থ অর্থেঃ (ব্যবস্থা, বিধান, আইন)
আর এমনি করে আমরা ইউসূফের জন্য পথ বের করেছি। বাদশার দ্বীনে (আইনে) তার ভাইকে পাকড়াও করা তার জন্য বৈধ ছিলনা। সূরা ইউসূফঃ ৭৬
শাসন কর্তৃত্ব আল্লাহ ছাড়া আর কারো নয়, তারই নির্দেশে তিনি ব্যাতিত আর কারো ইবাদাত করোনা। ইহাই সত্য সঠিক দ্বীন। সূরা ইউসূফঃ ৪০
তারা কি এমন শরীক বানিয়ে বসেছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের ব্যাপারে এমন সব আইন বিধান রচনা করেছে, আল্লাহ যার অনুমতি দেননি, দেননি কোন হুকুমে। সূরা আশ শূরাঃ২১
----------------------------------------------------------------------------------
আজ এ পর্যন্তই, ভিতরে কোন ভূল থাকলে সংশোধনী প্রত্যাশা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৩:৩০