হ্যা, আমি একজন শিবির কর্মী। ব্লগে আশার পর থেকে দেখছি শিবির- জামায়াত এগুলোর বেশ চর্চা চলছে। কে মগবাজারের পেইড ব্লগার, কে সম্ভাব্য শিবির ইত্যাদি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। ভাবছি একজন শিবির কর্মী হিসেবে আমার কথাগুলো অনেকেরই সহায়ক হবে।
আমি একজন শিবির কর্মী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় শিবিরের কর্মী হয়েছি। এসএসসি পরীক্ষার পূর্বেই শিবিরের সাথী হিসেবে শপথ নিয়েছি। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছি। তবে এখনও সদস্য হতে পারিনি।
শিবিরের কর্মী হতে হলে আটটি কাজ করতে হয়। যেমন, প্রতিদিন কুরআন ও হাদিস বুঝে অধ্যয়ন করা, নিয়মিত ইসলামী সাহিত্য পাঠ করা, ইসলামের নৈতিক বিধানগুলো মেনে চলা, দাওয়াতি কাজ করা, রিপোর্ট রাখা, প্রোগ্রামসমূহে উপস্থিত হওয়া, অর্পিত দায়িত্বসমূহ পালন করা এবং বায়তুলমালে এয়ানত দেয়া। সে অনুযায়ী সেই স্কুল জীবন থেকেই ব্যাক্তিগত রিপোর্ট রাখছি। ব্লগের অনেকেই বলেন শিবির করলে টাকা পাওয়া যায়, মাসে মাসে, নির্দিষ্ট হারে। কিন্তু আমি কোনদিন টাকা পাইনি। বরং কর্মী হবার পর থেকে টাকা দিয়ে আসছি। যেদিন কর্মী হয়েছি সেদিন আমাকে বলা হয়েছে তুমি কত দিতে পারবে? আমি ভেবে চিন্তে বললাম ২ টাকা। এরপর দিন গেল টাকার পরিমানও বাড়লো। কালের বিবর্তনে এখন আমার সে টাকা দেয়ার পরিমাণ দাড়িয়েছে মাসে ১৫০।
সাথী হয়েছি প্রায় ১০ বছর হতে চললো, এখনও সদস্য হতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালিন সভাপতি বেলাল হোসেন ভাইকে অক্ষেপ করে বললাম, ভাই সদস্য তো হতে পারলামনা । তিনি বললেন তোমাকে তো সদস্য বানাতেই চাই । কিন্তু তুমি নামাজ কাজা বন্ধ করতে পারোনা। বই গুলো শেষ করতে পারনি। - কথাটা মিথ্যে ছিলনা। একশ পনেরটা বই পড়তে হয় সদস্য হতে হলে। আমার তখনও বই বাকি প্রায় ৪৫%। আর নামাজ বিগত ছয় মাসের মধ্যে কাজ্বা থাকতে পারবেনা। আমার দুই-তিন মাস পরপরই নামাজ কাজ্বা হয়ে যেত।
আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমি সদস্য- প্রার্থী। গত ১০ মাসে আমার নামাজ কাজা নেই । এখন বই বাকি ১৫টি। তবে প্রতিটিই প্রায় ৩০০পৃষ্ঠার ওপরে।
আমি বর্তমানে একজন ওয়ার্ড সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার ওয়ার্ডে সাথী সংখ্যা ১০। এক ঝাক কর্মী তো রয়েছেই। সাথীদের মধ্য থেকে ১০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত মাসে এয়ানত(চাঁদা) দিয়ে থাকে। আর কর্মীরা যে যার সামর্থ অনুযায়ী, তবে মাসিক। এছাড়া প্রতিমাসে বিভিন্ন শুভাকাঙ্খিরা টাকা দিয়ে থাকেন। উর্ধতন সংগঠনকে মাসে পরিশোধ করি ১৪০০ টাকা। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে থাকি। বিশেষ টাকার প্রয়োজন হলে কর্মীভাইদের নিকট সমস্যা তুলে ধরি, শুভাকাঙ্খীদের কাছে যাই। তারা সাধ্যমত দান করেন। আশা করি শিবিরের টাকার বিষয়টি স্পষ্ট করতে পেরেছি।
শিবির করতে এসে আমার জীবনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন কুরআন পাঠ করতে হয়। কম হলে কৈফিয়ত দিতে হয়। এ ছাড়া হাদিস, ইসলামী সাহিত্য, পাঠ্যপুস্তক এগুলোও নিয়মিত করতে হয়। এবং প্রত্যেকটির জন্যই জবাব দিতে হয়। আমিও আমার ওয়ার্ডের সাথীদের এই বিষয়গুলো সাধ্যমত তদারক করার চেষ্টা করি। সাথীরা তদারক করে কর্মীদের। আমি সব কর্মীদের নিকট যাওয়ার সুযোগ পাইনা।
মাদ্রাসায় পড়িনি তবে কুরআন তেলাওয়াতে তাদের কারো চেয়ে অশুদ্ধ হবেনা আশা করি। ব্যক্তিগত জীবনে পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করি। রাস্তায় নামলেই সাথী, কর্মী, সমর্থকদের চোখের প্রহরায় থাকি। অর্থাৎ নফসের প্ররোচনায় পড়ে অনৈতিকতার পথে পা বাড়াতে গেলেও শিবির এবং ওয়ার্ড সভাপতি পরিচয় আমাকে বাধা দেয়। পরীক্ষার হলে যে যা কিছূ করুক, আমি ঘাড় ফিরাতে গেলেও আমার অবস্থান আমাকে বাধ্য করে মাথা সোজা রাখতে। এক অদৃশ্য প্রোটেকশন আমাকে সোজা পথে চলতে বাধ্য করে। এ তৃপ্তি, এ প্রশান্তি বর্ণনা করে বলা অসম্ভব। বন্ধুরা নিজেরা যে যাই বলুক, আমি উপস্থিত থাকলে হিসেব করে কথা বলে। আমার অনেক লীগ, দল, এবং বাম বন্ধূ রয়েছে। এক ছাত্রলীগের বন্ধুর বক্তব্য হচ্ছে- "দোস্ত, অনেক শিবির পিটাইছি, সামনেও পিটাব, তবে নিশ্চিত থাক, তোমার গায়ে হাত তুলবো না, কাউকে তুলতেও দেবনা।" হ্যা এটাই আমাদের নৈতিক অস্ত্র।
শিবির কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। আর ইসলাম একাকি পালন সম্ভব নয়। আল্লাহর রসুলের দেখানো পথেই ইসলাম পালন করতে হবে। ছাত্রদের মধ্যে ইসলামের কাজকরা দলগুলোর মধ্যে শিবিরকে সবচেয়ে পারফেক্ট মনে হয়েছে, তাই শিবির করি। তবে আমরা নিজেদেরকে ইসলামের সোল এজেন্ট মনে করিনা। বাংলাদেশের খুব স্বল্প সংখ্যক ছাত্রই শিবির করে। বাকিরা সবাই খারাপ, ভুলেও এমন কথা বলিনা। শিবির করেনা এমন অসংখ্য ছেলে আছে যারা আমার চেয়ে ভাল। তবে ভাল বানানোর সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশে শিবিরকেই সবচেয়ে ভাল মনে হয়েছে। আমরা প্রত্যেকটি ইসলামী দলকে শ্রদ্ধা করি। তারা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও আমরা নিশ্চুপ থাকি। আওয়ামী লীগ বিএনপির নীতির প্রতি আমাদের বিরোধিতা রয়েছে, কিন্তু ব্যাক্তি হিসেবে কোন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর প্রতি আমাদের কোন ঘৃণা নেই।
অগোছালো অনেক কথাই বললাম। বিশেষ কোন প্রশ্ন থাকলে আসতে পারে। অনেকেই হয়তো রাজাকার বলে গালি দিবেন। অসুবিধে নেই। রাজাকার শব্দের অর্থও যখন জানিনা, সেই শৈশব থেকেই রাজাকার গালি শুনে আসছি। প্রথম প্রথম কান গরম হয়ে যেত। নালিশ করতাম নেতাদের কাছে। এখন সয়ে গেছে। এখন আবার কর্মীরা আমার কাছে এসে নালিশ করে। আমি শান্তনা দেই । আর অশ্লীল কথা বলবেননা দয়া করে। আমার ক্লাসমেটরা পর্যন্ত আমার সামনে অশ্লীল কথা বলা থেকে বিরত থাকে। আজকের মত এখানেই ।