ঘটনা ১
ইমন কলেজে উঠেই নতুন মোবাইল কিনেছে। আনন্দে তাই সবার ছবি তুলছে।ছোট আপু রুমে শুয়ে শুয়ে বই পরছে, বড় আপু বাথরুম থেকে গোসল থেকে বের হয়েছে এরকম কত মজার ছবি।
-এই কি করিস, এসব ছবি তুলছিস কেন?দেখছিস না আমি রেডি না।
-দারাও না আপু একটু মজা করি……আরে তুলতে দাও না। ক্লিক……।।
কয়েক ঘন্টা পরে…
-কিরে নতুন মোবাইল কিনছস নাকি?
-আরে তুহিন নাকি…হ, দোস্ত...
-দেখি একটু
-নে
-দোস্ত কয়েকটা গান লই আমার মোবাইলে…
-নে।
আর এভাইবে ট্রান্সফার হয়ে গেল ইমনের পারিবারিক কিছু ছবি।
ঘটনা ২
তুহিনের বোন সামিয়া।মেডিকেলের পুরো ব্যাচ সহ এখন কক্সবাজারে। রাতের পার্টিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
-ওহ সামিয়া, শাড়ী ছারা ওই শর্ট ড্রেসে তোকে যা সেক্সি লাগছে না। দারা তোর একটা ছবি তুলি।
-শিমু, একদম ভাল হবে না বলে দিলাম।
-আরে দ্বারা না…ক্লীক…ক্লীক
-দ্বারা শিমু তাহলে তোরও একটা ছবি তুলি
-তোল
এই নাদিয়া তোরও একটা ছবি তুলি, দেনা? তুই এত মিন মাইন্ডেড কেন বলত?নিজেকে আপগ্রেড কর বুঝলি.
ক্লীক…ক্লীক
সামিয়া, শিমু, নাদিয়া তিন বান্ধবি হাসতে হাসতে দেখতে লাগল স্বল্প বসনে তাদের ছবি।
শিমুর পিঠা পিঠী বড় ভাই রুমেল বোনের ল্যাপটপ ব্রাউস করতে গিয়ে আবিস্কার করল আনারি ব্যাবস্থাপনায় হিডেন করে সংরক্ষন করা এইসব অর্ধনগ্ন ছবি।শুধুমাত্র বোনের ছবিগূলো বাদ দিয়ে ওর বান্ধবিদের ছবিগুলো চালান করে দিল নিজের পেন ড্রাইভে।
নাদিয়ার বয়ফ্রেন্ড জুনায়েদ
-এই কক্সবাজারে কি কি ছবি তুলেছ দেখাও না নাদিয়া। মোবাইলের গুলোই দেখাও।
-এখন দেখান যাবে না। পারসনাল কিছু ছবি আছে।ওগুলো ডিলেট করে নেই তার পর দেখো।
-আরে আমি পারসনাল ছবি গুলো দেখবনা।যেগুলো তোমার সেগুলো দেখব।
-সত্যি তো
-একদম সত্যি
নাদিয়া জানতেও পারল না ব্লু-টুথ টেকনোলজি ব্যাবহার করে কোন এক ফাকে কয়েকটা ছবি ঠিকই জুনায়েদ ট্রান্সফার করে ফেলেছে শুধু নাদিয়ারগুলো ছারা।
ঘটনা-৩
জুনায়েদের বোন ইমি। ভার্সিটি হলের রুমে ঘুমিয়ে আছে। রুমে এই মাত্র প্রবেশ করলো মিরা।ঘুমন্ত ইমিকে দেখে তার মনে জেগে উঠল প্রতিশোধের আগুন। এই ইমির জন্য সে তার পছন্দের মানুষটিকে পায়নি।দ্বারা ঘুমন্ত অবস্থায় এই আলুথালু বেশের ছবি তুলে সে ছরিয়ে দিবে সব ছেলেদের মধ্যে।ক্লিক…ক্লিক
-এই বাবু তোর জন্য একটা এক্সলুসিভ জিনিস আনছি
-কি আনছস মিরা
-তোমারে ছেকা দেওয়া ইমির হাই প্রোফাইল ছবি
-দেখি…।দেখেই মাথায় আগুন চাপল বাবুর। এই ইমি তার প্রেমের অফার প্রত্যাক্ষান করে আরেকজনকে ভালবেশেছে। আজকে তার প্রতিশোধ নেয়ার পালা।
হাসছে মিরা।আজ চরম একটা প্রতিশোধ নেয়া গেল।কিন্তু আক্ষেপ একজায়গায়।মিরা ফাজিলটাকে ছবিতে নায়িকাদের মত সেক্সি দেখা যাচ্ছে।তাকেও কি এমন লাগেবে? পরিক্ষা করেই দেখা যাক।বাথরুমের আয়নার সামনে যেয়ে পোশকটা সরিয়ে তুলে ফেলল নিজের একটা ছবি। ভাবল “নাহ আমার ফিগারটাও খারাপ না”
সেদিনই মার্কেটে যাওয়ার সময় মিরার মোবাইলটা ব্যাগসহ চুরি হয়ে গেল
ঘটনা ৪
বাবুর বোন বিন্দু আর দুলাভাই নিয়াজ। আজকে নিয়াজ একটা নতুন ঝকঝকে সাইবার শট মোবাইল কিনেছে।প্রথম দিনেই মাথায় ভুত চাপল তার নিজের ও স্ত্রীর কিছু রগরগে হলিউডি মার্কা ছবি ও ভিডিও তুলবে। বিন্দুর শত আপত্তি সত্তেও রাতে তার ইচ্ছাটা পুরন করলো নিয়াজ। সকালে অফিসটাইম তারাতারি হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিল রাতে এসে সব ভিডিও ও ছবি কম্পিউটারে ট্রান্সফার করতে হবে।সারাদিন অফিসে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু ছবি দেখে তার বউয়ের সৌন্দর্য নিয়ে বেশ তৃপ্তি পেল সে। আর সন্ধ্যায় বাসায় আসার সময় ছিন্তাইকারীর হাতে পরে মোবাইল খোয়াল সে!
ইমন,তুহিন, রুমেল,জুনায়েদ, মিরা, বাবু, নিয়াজ কয়েকদিন পর আবিস্কার করল তাদের যার যার বোন বা কাছের মানুষের ছবি কয়েকটি পর্ন সাইটে আপলোডেড অবস্থায়।মাথায় হাত দেয়া ছার কিছুই করতে পারল না তারা।সাইটগুলোতে যত ভিজিটর বাড়তে থাকল তাদের বুকে যেন ততগুলো শেল এসে বিধল।শুধু তা একসাইটে না ছরিয়ে পরল আরো অনেক সাইটে।এমনকি খুব কাছের কিছু মানুষের পিসি বা মোবাইলেও। রুমেল,জুনায়েদ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না কক্সবাজারের ছবিগুলোতে তাদের বোনদের ছবি আপলোড করল কে । ওগুলোতো তারা আপলোড করে নাই। তবে সবাই তারা একটা কথা বুঝলো যে পাপ তারা অন্যের বোন বা প্রিয়তমার সাথে করেছে সেই পাপ আজ তাদের নিজেদের ঘাড়ে এসে পরেছে।
আর এভাইবেই আমাদের অসচেতনতার জন্য জানা বা না জানা উপায়ে আমাদের প্রিয় মানুষগুলোর ছবি বা ভিডিও চলে যাচ্ছে পর্ন সাইটে আর তার দর্শক হচ্ছে অসংখ্য বিকৃত মস্তিস্কের মানুষ। আপাতত দৃস্টিতে যা আপনার বোন, মা বা প্রিয়তমার ক্ষেত্রে যে ছবিটি শোভন তা অন্যের কাছে হয়ত ভয়াবহ বিকৃত আনন্দের খোরাক।
তাই বলে কি স্বাভাবিক চলাচল বা স্বাভাবিক আনন্দ থেকে নিজেকে বিরত রাখব।না, অবশ্যই না।তাই সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে আসুন আমরা সবাই একটু সচেতন হই। আমাদের দেশের সামাজিক রীতিনীতি বা ধর্মীয় অনুশাসনকে পশ্চিমা কালচারের বড়াই করে বুড়ো আঙ্গুল না দেখাই কিংবা অভিহিত না করি “মিন মাইন্ডেড, ব্যাক ডেটেট, ক্ষেত” ইত্যাদি উপমায়। কিংবা জালাতন বা উৎপাত না করি উক্ত অনুশাসন মান্যকারিদের। নিজেরা নিজেরদের আচরন সংযত করি। সবার হয়ত ইমন,তুহিন, রুমেল,জুনায়েদ, মিরা, বাবু বা নিয়াজদের মত অভিজ্ঞতা নাও হতে পারে। তবে হতে কতক্ষন।
দেশে ছয়কোটি মোবাইল গ্রাহকের এককোটিও যদি ক্যামেরা মোবাইলে ব্যাবহার করে থাকে তাহলে প্রতি মুহুর্তে আপনাকে আমাকে তারা করে বেরাচ্ছে এককোটি সুযোগসন্ধানি হিডেন ক্যামেরা লেন্স। সুযোগটাযে কখন আসবে... মূল সমস্যা হোল আজকে আমি মোবাইলে যে ছবি রাখছি তা বেহাত হতে পারে বিভিন্ন কারনে। যেমন আমার মোবাইল ছিনতাই হতে পারে, নষ্ট হলে তা দোকানে দিয়ে আসতে হতে পারে ইত্যাদি। আবার কম্পিউটার নষ্ট হলে তা সার্ভিসিং সেন্টারে দিতে হয়। মূলত এভাবেই মানুষের ব্যক্তিগত মুহুর্তগুলোর ভিডিও/ছবি সর্বত্র ছড়িয়ে পরে আর ভুক্তভোগী মেয়টিকে হয়তো আত্নহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। খুব সাধারন একটি ভুল বিশাল বিপদের কারন হয়ে দাঁড়ায়।
▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓
লেখাটি এখান থেকে সংগ্রহীত
▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓▓