somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাশের বাড়ীর ঐ মেয়েটি বলল সেদিন এই... (ছোট গল্প)

১৫ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লুবনা ভেবে পাচ্ছে না, প্রতিদিন তার গোলাপ গাছগুলোতে এই চিঠিগুলো ছেলেটা কখন, কীভাবে বেঁধে যায়। এই কাণ্ড যে ঐ পুঁচকে ছেলেটার কাণ্ড তা সে শতভাগ নিশ্চিত। গত মাস দুয়েক হয়েছে নীচের তলায় মেইন গেটের কাছের ফ্ল্যাটে ভাড়া এসেছে যে পরিবার, তাদের ছোট ছেলে... ক্লাস এইটে পড়ে। লুবনা এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে অবসর সময় কাটাচ্ছে, আগের মত যত্ন নিতে পারছে ছাঁদের উপর তার গড়ে তোলা ছোট্ট গোলাপ বাগানটার। কিন্তু এই ছেলে যেদিন থেকে এই বাসায় এসেছে, লুবনাকে ছায়ার মত বোধহয় অনুসরণ করছে। প্রতিদিন সময় করে লুবনার বাবা অফিসে বের হয়ে গেলে বেলা এগারোটার দিকে ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে দেয়, ‘পাশের বাড়ীর ঐ মেয়েটি বলল সেদিন এই, তুমি ছাড়া এই জীবনে আর তো কিছু নেই...’

কাঁচা হাতের লেখা চিঠিগুলো পড়তে অবশ্য মজাই লাগে লুবনার। কি উদ্ভট সব কথাবার্তা, পড়লে নিজেরই হাসি পায়। তার থেকে কমপক্ষে বছর দুইতিনের ছোট একটা ছেলে প্রতিদিন তাকে প্রেমপত্র লিখছে, তাও খুবই সিনেমাটিক ভাষায়। মাঝে মাঝে রাগও হয়। কি অসভ্য ছেলে, লুবনা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু এই ছেলের উৎপাত কিন্তু বেড়েই চলেছে। ছেলেটার নাম শিপলু, একটু মোটার দিকে গড়ন, কোঁকড়া কোঁকড়া চুল... সবই ভালো, কিন্তু ছেলেটা কেমন খ্যাত মতন, কি সব হাস্যকর যে হয় তার চিঠিগুলো। অসংখ্য বানানে ভুল, প্রায় চিঠিতেই কোন চটুল বাংলা বা হিন্দি গানের ভুলভাল কলি লেখা থাকবে।

সমস্যা হল লুবনা চিঠিগুলো সব ফেলে দিতেও পারছে না, কেমন মায়া লাগে ফেলে দিতে। কিন্তু এগুলো জমিয়ে রাখাও সম্ভব না। তার সাথে শিপলুর সাহস দিন দিন বেড়েই চলেছে, লুবনা ভেবে পায় না এতোটুকুন পিচ্চি ছেলে এই প্রেম ভালবাসার বুঝেটা কি? অবশ্য লুবনাও যে খুব একটা বেশী কিছু বুঝে এমন নয়, স্কুলে বান্ধবীদের অনেককেই প্রেম করছে এমন শুনেছে। কিন্তু খুব একটা পরিস্কার ধারণা নেই তারও, কিন্তু শিপলু... যে ছেলের এখনো গোঁফের রেখা ঠিকমত উঠেছে কি না সন্দেহ আছে, সে প্রতিদিন প্রেম ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লুবনাকে প্রেমপত্র লিখে যাচ্ছে।

একদিন বিকেল বেলা গোলাপ গাছের চিঠি হাতে পড়ে গেল বাড়ীওয়ালাদের বড় মেয়ে যূথী আপুর হাতে। যূথী আপু অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে, চিঠি হাতে নিয়ে হাজির লুবনাদের ফ্ল্যাটে।
‘কিরে লুবনা? কবে থেকে’
‘কি কবে থেকে?’ লুবনা কিছুটা অবাক হল।
‘ডুবে ডুবে জল...’
‘মানে?’
‘এই বয়সেই প্রেম পিরীতি শুরু করে দিলি...’
‘কি সব আবোল-তাবোল কথা বল আপু...’
‘হুমম... আবোল তাবোল কথা! ছাঁদের উপর গোলাপ বাগান, সেই বাগানে ঝুলছে চিঠি...’ বলে যূথী আপু খিলখিল করে হেসে উঠল। লুবনা বুঝতে পারলো ঘটনা কি ঘটেছে।

লুবনা পুরো ঘটনা যূথী আপুকে খুলে বলল। কিন্তু যূথী আপুর ধারণা এটা ঐ ছেলের কর্ম নয়। ও এতোটা সাহস পাবে না, নতুন ভাড়া এসেছে, দুই মাসও হয় নাই। বরং এটা পাঁচতলার রতনের কাজ হতে পারে। রতনটা স্কুল থেকে আসার পর প্রায় সারাদিনই ছাঁদে ঘোরাফেরা করে। এটা নিশ্চয়ই ঐ বদ ছেলেটার কাজ। লুবনা তো আকাশ থেকে পড়ল! রতন... আরে ওর সাথে তো প্রায় বিকেলেই লুবনার কথা হয়। লুবনা ছাঁদে গাছগুলোতে পানি দিতে গেলে দেখে ছাঁদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। রতনের সাথে কতদিন গল্প করেছে লুবনা, কখনো তেমন কিছু মনে হয় নাই।

উফ... এখনকার পিচ্চি পিচ্চি ছেলেগুলো সব এতো ইঁচড়ে পাকা হয়ে যাচ্ছে, বলার বাইরে। রতনও তো ক্লাস এইটেই পড়ে! যূথী আপু লুবনার কাছ থেকে চিঠি নিয়ে বিকেল বেলা ছাঁদে এসে রতনকে পাকড়াও করল। রতন তো প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিল না। সে লুবনা আপুর গোলাপ গাছে কোন দুঃখে কাগজ বাঁধতে যাবে। সে ঘুড়ি ওড়ায় ছাঁদের যে প্রান্তে গাছগুলো আছে, তার বিপরীত দিকে। ফলে কোন কাগজ গাছে আটকানোর কথাই নয়।

যূথী আপু যখন রতনকে চিঠি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘এটা তোর হাতের লেখা না?’ তখন রতন চিঠি পড়ে ঘটনা বুঝতে পারল। হাতের লেখা তার নয়, কিন্তু কেউ একজন যে লুবনা আপুকে প্রেমপত্র লিখেছে তা বুঝতে পারল। সেদিন সারাটা সন্ধ্যা কোন এক অজানা কারণে রতনের মনের মাঝে শুধু লুবনা আপুর কথা মনে হতে লাগল। চোখ বন্ধ করলেই যেন শেষ বিকেলের আলোতে ছাঁদে দেখা লুবনা আপুর অনেক অনেক মুখচ্ছবি ভেসে উঠছে। রাতে রতন লুবনা আপুকে নিয়ে একটা মিষ্টি প্রেমের স্বপ্নও দেখে ফেলল।

এরপর থেকে লুবনা তার গোলাপ গাছে একটির বদলে দুটি করে প্রেমপত্র পেতে থাকলো, ভিন্ন দুটি হাতের লেখায়।
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুহাম্মদ ইউনূসকে একঘরে করে দিন

লিখেছেন sabbir2cool, ২৪ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৭


জুলাই ষড়যন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। গত বছরের জুলাইয়ের মেটিকুলাস ডিজাইনড প্ল্যানে দেশবিরোধী যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সেটার অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। দখলদার ইউনূস সরকার প্রবল চাপে পড়েছে। এখন তাদের সব কূল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না : ড. ইউনূসের মনে কেন এমন আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৯


দৈনিক সমকাল থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর বরাতে আমরা জানতে পারি —প্রশাসন, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই—নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক গভীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার নাই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

একটা পোস্ট দেখে লেখার সাধ জাগলো। যা নিয়ে লিখবো তা আমার নেই।
আমার দাদা-দাদি, নানা-নানি কেউ নেই। বাবা মা যখন ছোট ছিলেন তখনই তারা পরপারে উড়াল দিয়েছেন। বাবার বয়স যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনৈতিক সংকটে বিএনপি খেলছে পিছনে থেকে, কিনতু কেন?

লিখেছেন সরলপাঠ, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:২১

রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীলতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ এখনও ক্ষমতায় থাকত। রাজনীতি গড়ে উঠে গণমানুষের পারসেপসনের উপর ভিত্তি করে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির বৈঠকের পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ই সঠিক

লিখেছেন ইশতিয়াক ফাহাদ, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৫৯

কিছু মানুষ পুরোপুরি ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে বাঁচে। তারা বারবার যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চায় যে, তাদের কথাই একমাত্র সত্য। এই প্রক্রিয়াটি এক ধরনের লজিক্যাল ফ্যালাসি বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×