আমি একা একা হাঁটছি
আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না-
ক্রমশঃ নিজেকে আমি আরও
ভালোভাবে দেখতে পারছি,
দর্পণ সম্মুখে দাঁড়িয়ে
নিজেকে যতটা দেখতে পেয়েছি,
তার চাইতে যেন আরও স্পষ্ট করে
নিজেকে দেখতে পাচ্ছি।
অসীম নীরবতার মাঝে স্পষ্ট করে
নিজ হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি।
আমি কথা বলছি না,
তবু মনে হচ্ছে আমি
অজস্র শব্দাবলী শুনছি,
মনে হচ্ছে...
আমার অন্তর ফুঁড়ে বের হওয়া
শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
শুধু অন্তরে লুকানো বেদনা কেন?
আমার হৃদয়ে কত অব্যক্ত আকাঙ্খা,
যা এতকাল চাপা পড়েছিল।
এই রাত্রির অন্ধকারে আমাকে একা পেয়ে
সেইসব আকাঙ্ক্ষা যে আমার
হৃদয় ফুঁড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।
রাত্রির এই নীরবতার মাঝে
আনন্দে আজ হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে,
অজানা অসীমের পানে,
মহাশূন্যে কালে ইচ্ছে করছে যাত্রা করতে।
মায়ের স্নেহের মত রাত্রির আঁধার
আমার চারিদিক ঘিরে রেখেছে।
এতদিন এক অজানা ভয় মোরে
সর্বদা গ্রাস করে রেখেছে।
কিন্তু আজ এই গভীর রাত্রিতে,
আজ এই গহীন আঁধারেতে।
কোন ভয় নেই আমার,
নেই কোন সঙ্কোচ আর।
একি?
সব আলো, নিভে গেল!
একেবারে সূচীভেদ্য অন্ধকার,
মহাকালের অনন্তপানে হারিয়ে যাওয়া
হবেনা বুঝি আর!
আমি যে অন্ধকারকেই বেশী ভালবাসি,
আমি যে অন্ধকারের মাঝেই বাঁচি।
ধীরে ধীরে আলোকিত হচ্ছে চারিদিক,
পথ ফুরিয়ে যাচ্ছে, আমি ব্যর্থ পথিক।
দূর অন্ধকার ভেদ করে
ডাকছে আমার দূর দূরের পাহাড়,
ঐ ব্যর্থ পৃথিবী দুঃখ গায়ে জড়িয়ে
নর্তকী সেজে ডাকছে আবার।
মুহূর্ত পরেই ফিরে পেলাম
সেই কষ্টের ভুবন,
বুঝলাম এতক্ষণ যা দেখলাম
সব মিথ্যে স্বপন।
====================================
মাঝে মাঝে কোন গল্প-উপন্যাস বা কবিতার কোন অংশ পড়ে মনে হয়, এই কথাগুলো আমার। আমারই হয়ত লেখার কথা ছিল এই শব্দ সম্ভারটুকু। দেড় দশক আগে লেখা এই কবিতাটি আমার অন্যতম প্রিয় লেখক নিমাই ভট্টাচার্য’র “তোমাকে” উপন্যাসের মাঝে একটি ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত প্যারার কাব্যিক রূপ। কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করেই আমার কবিতায় খাতায় অবহেলায় পড়ে থাকা এই কবিতার কথাটি মনে পড়ছে। আর সেই সুত্রধরে এই কবিতা পোস্ট করা। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
রচনাকালঃ ২২ এপ্রিল, ১৯৯৯।