somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা তোমার জিপিএ কত ছিল? (ছোটগল্প)

০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিনারের বাগদা চিংড়ি’র মালাইকারীটা খুবই ভালো হয়েছে, তৃপ্তি করে খাচ্ছি, গিন্নি রেঁধেছে বটে... ফার্স্টক্লাস। ছেলে এইচএসসি’তে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে, এই খুশীতে আজ বাসায় স্পেশাল ডিনার। সেই সময় হঠাৎ ছেলের এমনতর প্রশ্নে আমি বিষম খেলাম... ‘বাবা তোমার জিপিএ কত ছিল?’

আমার ছেলে তুষার, যে তার বড় দুই ভাইবোনের ন্যায় মেধার স্বাক্ষর রেখে এসএসসি আর এইচএসসি দুটোতেই গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। আমার বড়মেয়ে তন্দ্রা ডিএমসি’তে ফোর্থ ইয়ারে পড়ছে, তার ছোট শুভ ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইকনমিক্সে সেকেন্ড ইয়ারে। সবচেয়ে ছোটজন তুষার। দিন'তিনেক আগে রেজাল্ট হয়েছে, ঘরের সবাই খুশী, আমি আর গিন্নীতো মহাখুশী যাকে বলে। তো খাবার টেবিলে এই প্রশ্নশুনে ভিমরি খেলাম।

বড় দুইজন লুফে নিল কথাটা, হ্যাঁ ঠিকইতো, বাবা’র জিপিএ কত ছিল? খাওয়া শেষে মহা উৎসাহে পুরো পরিবার ঘিরে ধরলো, বাধ্য হয়ে আমার ফাইলপত্রের ভেতর হতে একাডেমীক সার্টিফিকেটের ফাইলখানি আলাদা করে খুঁজে পেতে বের করে দিলাম আমার মেট্রিক আর ইন্টারমিডিয়েটের মার্কশিট। আর তাই নিয়ে ওরা তিন ভাইবোন ঝাঁপিয়ে পড়ল, সাথে বাচ্চাদের মত উল্লাসে যোগ দিল গিন্নী স্বয়ং।

আমি বাইরের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের প্রকৃতির আঁধারের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম, আর রোজকার পায়চারী। প্রতিদিন ডিনার শেষে আমি এই ছোট্ট ব্যালকনিতে আধঘণ্টা’র মত পায়চারী করি, অনেকটা ব্যায়ামের মত। আজও তাই করছিলাম, কিছুক্ষণ পর ড্রইং রুম হতে সমস্বরে অনেকটা উল্লাস ভেসে আসলো। বড় মেয়ে এসে টানতে টানতে ড্রইং রুমে নিয়ে গেল। সবাই মুচকি হাসছে আমায় দেখে, প্রথম কথা বলল ছোট ছেলে...

‘ছিঃ বাবা, তোমার রেজাল্ট এত পুওর ছিল’

আমি ঢোক গিললাম, আমার রেজাল্ট আমাদের ইউনিয়নে সেরা ছিল, জেলায় প্রথম পাঁচজনে ছিলাম। আর সেই রেজাল্ট কি না পুওর!

মেয়ে বলল, ‘জানো তোমার জিপিএ কত এসেছে? অনলি ৪.২৫!’

আমি বললাম, ‘আমাদের সময় খাতা অনেক হার্ডলি দেখা হত। মাস্টারমশাই’রা এখনকার মত এত্ত এত্ত নাম্বার দিতেন না, বুঝলে’

‘বাবা ইটস নট ফেয়ার। এখন আমরা ভালো লিখছি বলেই নম্বর পাচ্ছি’

‘আচ্ছা ঠিক আছে, তোমরা আমাদের জেনারেশনের চেয়ে অনেক মেধাবী, কিন্তু এটাও সত্যি তোমরা এখন যেমন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছো আমাদের সময় তেমন ছিল না’

‘বুঝেছি, বুঝেছি বাবা, আর বলতে হবে না। এখন হেরে গিয়ে এত্ত এত্ত যুক্তি...’ ছোট ছেলের কথায় আমি একটু বিরক্ত হলাম, কিছুটা কষ্টও পেলাম। কেমন ঠাট্টামিশ্রিত কথাটা কানে বাজলো। আর সন্তানদের আমি বন্ধুর মত সঙ্গ দিয়ে বড় করলেও যথেষ্ট ভদ্রতা এবং শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছি। তাই ব্যাপারটা হজম করতে আমার একটু কষ্ট লাগলো। সাথে দেখি গিন্নীও যোগ দিল ফোঁড়ন কেটে, ‘এই রেজাল্টেই সরকারী আমলা!’

মাস দুয়েক পরের কথা, ছোট ছেলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কোথাও টেকেনি। বাসায় সবার মন খারাপ, থমথমে মুখ করে সবাই ঘোরাফেরা করছে। আমি তুষারকে জোর করে ডিনারের টেবিলে এনে বসালাম। কোনোমত একটু মুখে দিয়ে উঠে যাচ্ছিল। আমি ইশারা করে বসতে বললাম। খাওয়া শেষ হতে ড্রইংরুমে ছেলেকে নিয়ে বসলাম। বাকী দুইজন আর তাদের মা’ও এসে বসলো। আমি ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

‘দেখো বাবা কোন পছন্দসই পাবলিক ভার্সিটি’তে চান্স পাওনি, তো কি হয়েছে? প্রাইভেটে ট্রাই করবে, সেখানে না হলে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। সেখানে দেশের হাজার হাজার ছেলে মেয়ে পড়ছে না? আর কখনো মন ছোট করবে না। সবাইকেই ভালো কোথাও পড়তেই হবে এমন কোন কথা নেই; ভালো রেজাল্ট, ভালো ক্যারিয়ার, এগুলোই জীবনের সব নয়। মানুষ হিসেবে গোল্ডেন এ প্লাস সমতুল্য মানুষ হও জীবনে, ভালো ভার্সিটিতে নয়... স্থান করে নাও তোমার চারিপাশের মানুষের মনের মণিকোঠায়... তবেই মানব জীবন সার্থক হবে। বাবা হিসেবে আমি গর্বিত হব। এবার আমার দিকে চেয়ে একটু হাসো দেখি...’ বলে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম।

বোকা ছেলে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিল, ঘরের অন্য তিনটি মানুষও দেখি চোখ মোছায় ব্যাস্ত, কিন্তু খুব নীরবে। আমি হাসি হাসি মুখে চেয়ে দেখি, নিজেকে খুব সুখী মনে হয়। একসময় আমার চোখ হতেও সন্তানদের কল্যাণে আশীর্বাদ হয়ে দু’বিন্দু জল জমা হয়।

(ইহা একটি ছোটগল্প মাত্র যাহা প্রথম পুরুষে রচিত। গল্পের সাথে আমার কোন যোগসূত্র নেই। পাঠক যেন বিভ্রান্ত না হন, তাই এই ফুটনোট)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:২৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলেম কি? এ বিষয়ে বান্দার দায়িত্ব কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:১০




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প- ৯৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০১



নাম তার তারা বিবি।
বয়স ৭৭ বছর। বয়সের ভাড়ে কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। সামনের পাটির দাঁত গুলো নেই। খেতে তার বেগ পেতে হয়। আমি তাকে খালা বলে ডাকি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়ি বুনো ফল-রক্তগোটা ভক্ষন

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০৫

পাহাড়ি বুনো ফল রক্তগোটা এর রয়েছে বিভিন্ন নাম-রক্তগোটা, রক্ত ফল, রক্তআঙ্গুরী, রক্তফোটা, রক্তজবা পাহাড়িরা আবার বিভিন্ন নামে ডাকে। এর ইংরেজী নাম ব্লাড ফ্রুট।











প্রতি বছর... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেষমেষ লুইচ্চা হামিদও পালিয়ে গেলো!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩



৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয় ফেসিস্ট হাসিনা ও তার দল আম্লিগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে দলটির চোরচোট্টা নেতাকর্মীরা। অনেক চোরচোট্টা দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলো আম্লিগ সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপারেশন সিঁদুরে নিহত আইসি ৮১৪ বিমান অপহরণের সঙ্গে, জইশ জঙ্গি মাসুদের ভাই রউফ আজ়হার:

লিখেছেন ঊণকৌটী, ০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩১

অপারেশন সিঁদুরে নিহত আইসি ৮১৪ বিমান অপহরণের সঙ্গে যুক্ত, জইশ জঙ্গি মাসুদের ভাই রউফ আজ়হার: ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর আব্দুল-সহ পাঁচ জঙ্গি আইসি-৮১৪ বিমান অপহরণ করেছিল। মাসুদ আজ়হার আলভি-সহ তিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×