somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহারাণীর কেচ্ছা - ১ (ছোট গল্প)

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মোবাইল রিং হতেই বিরক্ত হলাম, ফোন সুইচ অন করতে দেরী নাই, কল এসে হাজির। “এই মোবাইল বন্ধ ছিল কেন?” মহারাণী’র ঝাঁঝালো কণ্ঠে জিজ্ঞাসা। আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘এম্নি... চার্জ ছিল না’। ঘটনা কিন্তু সেরকম না, ইচ্ছা করেই রাতে মোবাইল সুইচ অফ করেছি। গত এক সপ্তাহ যাবত রাতে ঘুম হচ্ছে না। ঘুমের বড়িতেও কাজ হচ্ছে না। সারা রাত ঘুম আসে না, চোখ খোলা থাকলে জ্বালা করে, চোখ বুঝে শুয়ে থাকি, ঘণ্টা কেটে যায়, কিন্তু ঘুম আসে না। কি অসহ্য যন্ত্রণা! নির্ঘুম একাকী রাত কাটানো যে কি কষ্টের, উফ! ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ জানে না।

গতরাতে ডবল ডোজ ঘুমের বড়ি খেয়ে গুনে গুনে পাঁচশ কদম হেঁটে পরিস্কার ধোঁয়া চাদর বিছিয়ে রুমে এয়ার ফ্রেশ্নার স্প্রে করে মশারী টাঙ্গিয়ে দক্ষিনের জানালা খুলে তারপর ঘুমাতে গেছি। সাথে মোবাইল সুইচ অফ। প্রতিদিন ফজরের পর একটু তন্দ্রা আসে, কিন্তু সাত সকালে যত উটকো ফোন এসে ঘুমের বারোটা বেজে যায়। আর তাই কাল রাতে মোবাইল বন্ধ করে ঘুমুতে গেলাম।

কিন্তু সকাল হতেই পাশের বাসায় বিশাল হাউকাউ, ঝগড়া শুরু হয়েছে, ননস্টপ চলছেই। শেষে আজও ঘুমের জ্বালা চোখে নিয়ে উঠে বসলাম খাটে, মাথা ভার হয়ে আছে, দুপাশের রগগুলো লাফাচ্ছে দ্রুত বেগে, ঘুমের বড়ির কুফল। হাই তুলতে তুলতে ফোন সুইচ অন করলাম, আর সাথে সাথেই একটা মেসেজ, মিসকল এলার্ট, মহারাণী সকাল থেকে তিনবার ফোন করেছেন। আমি মেসেজ পুরোটা পড়ে শেষ না করতেই এলো তার ফোন কল, আর কল করেই
ঝাঁঝালো কণ্ঠে জিজ্ঞাসাবাদ...

“এই মোবাইল বন্ধ ছিল কেন?”।

আমার ‘এম্নি... চার্জ ছিল না’ প্রতিউত্তরে মনে হল উনুনে গরম তৈলাক্ত কড়াইয়ে কেউ পানি ঢাললো, ঝনঝন করে মহারাণীর গম্ভীর সুর কর্কশতর হয়ে উঠলো।

‘চার্জ ছিল না মানে? সারারাত কি বাসায় কারেন্ট ছিল না?’

‘কারেন্ট ছিল সোনাপাখি, মহারাণী... কিন্তু আমার রিচারজার যে তুমি...”

‘এই খবরদার আহ্লাদ করবা না, স্টুপিড কোথাকার...’

‘সরি... মহারাণী...’ আমি মিনমিন করে কথাগুলো বললাম, বুঝার চেষ্টা করছি ঘটনা কি? এতো ক্ষেপছে কেন প্রিয়তমা আমার।

‘এই তোমারে না বলছি মিনমিন করে কথা বলবা না আমার সাথে। আর মহারাণী কি? তুমি কি আমারে রাজত্ব লিখে দিছো? নাকি কোন রাজা বাদশাহ’র সাথে আমার বিয়ে হইছে?’

আমি চুপ করে মোবাইল কানে দিয়ে বসে রইলাম। এই মোমেন্টে কোন কথা না বলাই ভালো।

‘এই কথা বল না কেন? কি মুখে কষ্টেপ মারছো? মেসেজেতো আঙ্গুল দিয়ে কথার খই ফোটে... খবরদার চুপ থাকবা না। কথার উত্তর দাও’

‘কি উত্তর? কিসের উত্তর? বললাম তো চার্জ ছিল না’

‘চার্জ ছিল না কেন? রাতে কার সাথে কথা বল? গুড, আমি যে ডিসিশন নিছি ঠিকই নিছি...’

‘কিসের ডিসিশন? কি হইছে বলবাতো?’

‘কিছু হয় নাই। শোন... এখন থেকে তোমাকে আর কোন ফোন করবো না, নো কমিউনিকেশন’

‘ওকে ঠিক আছে...’

‘কি! কি বললা তুমি? বাহ...বাহ, ঠিক আছে, ঠিক আছে! নতুন পাখি যোগাড় করছো তাই না? ও সরি, তোমারতো পাখি না, মহারাণী...’

‘কি আবোল তাবোল বলতেছো?’

‘ও আমার কথা এখন আবোল তাবোল লাগতাছে? লাগবেই তো...’

‘আরে কি কথার কি মানে করতেছো?’

‘কোন মানে-ফানে’র দরকার নাই, শোন... তোমার সাথে আমার আজ, এখন থেকে ব্রেক আপ’

‘ব্রেক আপ মানে...?’

‘এই একদম চুপ, খবরদার আরেকটা যদি ন্যাকামি শব্দ কর...! ব্রেকআপ মানে বোঝো না? ন্যাকা? তোমার সাথে আজ থেকে আমার সম্পর্ক শেষ, সব শেষ...বুঝছো’

‘কিন্তু আমার অপরাধটা কি? ধুর ভালো লাগে না...’

ওমা! ওপাশ থেকে লাইন কেটে দিল। মেজাজ এখন সপ্তমে আমার, পাশের বাসার চেঁচামেচি চলছেই। রাগে মোবাইলটা দিলাম এক আছাড়। শালার কচ্ছপের আয়ু, নোকিয়ার সেই হাতুড়ি সেট। আমার সিম্ফনি এনড্রয়ডটা গতমাসে পকেট মেরে দেয়ার পর সফিক থেকে চেয়ে এই মান্ধাতা আমলের সেটটা এনেছি। আছাড় খেয়ে ব্যাটারি খুলে গেছে।

আবার ব্যাটারি ভরে সুইচ অন করলাম, মহারাণী’কে ফোন করা দরকার। ঘটনা কিচ্ছু একটা আছে, জানা দরকার। কিন্তু সেট অন হল না। জামা পড়ে বাইরে বের হলাম, মোবাইল ফোনের দোকান থেকে একটা ফোন করলাম। মহারাণী ধরে না, আমি ভুলেই গেছি ও আননোন নাম্বার এর কল রিসিভ করে না। আমার মাথার রগ আবার লাফাচ্ছে... ঔষধের দোকানের দিকে গেলাম, আরও এক পাতা ঘুমের ঔষধ কেনা দরকার। তিনদিন পর ভার্সিটি খুলবে, এই তিনদিন কি করি?

==============

তিনদিন পর, আমি কলাভবনের পেছনে সিঁড়িঘরে বসে আছি, দূর থেকে দেখলাম মহারাণী আসছেন। আমি উঠে মধুর ক্যান্টিনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। আমি ডিসিশন নিছি, এই প্রেম প্রেম জ্বালা যন্ত্রণা আর না, লাইফে এত এত প্যারার মাঝে এই মহা প্যারা আর ভালো লাগে না। এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে কোনার এক টেবিলে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চোখ বুজে বসে রইলাম।

‘কি বাবু সোনা দেখি রাগ করছে...’ মহারাণীর কণ্ঠ শুনে চেয়ে দেখি উল্টো দিকের টেবিলে এসে বসেছে। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। না আর না, রোজকার এই যন্ত্রণা আর না।

‘ওমা! বাবুর এত্ত রাগ! আই অ্যাম সরি...’

আমি নির্বিকার হয়ে চায়ে চুমুক দিলাম।

‘আরে বাবা বললাম তো সরি। এই যে সবার সামনে কান ধরলাম, এখন কি উঠবস করবো?’

চেয়ে দেখি সত্যি সত্যি মহারাণী দুহাত দিয়ে কানের লতি ছুঁয়ে আছে। চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি উঠবস করবে কি না? আমি জানি, ও পাগলী আছে, ঠিকই উঠবস শুরু করে দিবে। আমি চায়ের কাপ রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে ওর হাত ধরে বাইরে বের হলাম। একটা রিকশা ডেকে কার্জন হলের দিকে রওনা হলাম। শহীদুল্লাহ হলের পুকুর ঘাঁটে গিয়ে দুজনে বসে যে অনেক কথা বলতে হবে। সুযোগ পেলে মহারাণীর কোলে একটু মাথা রেখে ঘুমিয়ে নিবো, রাতগুলো যে বড্ড নির্ঘুম কাটছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:২৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

লিখেছেন ডাঃ আকন্দ, ২২ শে মে, ২০২৫ রাত ২:৩৮

বাংলাদেশ নিয়ে আমি বড়ো স্বপ্ন দেখি না , দেখা উচিতও না । প্রিয় এনসিপি তোমরাও বড়ো স্বপ্ন দেখতে যেয়ো না । কারণ যে দেশে অধিকাংশ মানুষ পরিবারতন্ত্র মেনে চলে ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

চিলিং আউট ইন মরোক্কোঃ ওস্তাদের সাথে বহু-প্রত্যাশিত মোলাকাত!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২২ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০৫



পূর্বকথাঃ আপনাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে সেই ২০২২ এর সেপ্টেম্বর মাসে একটা পোষ্ট করেছিলাম মরোক্কোর তান্জিয়ারে যাওয়া নিয়ে.........বদ লোকের জন্য দোয়া করলে বদ-দোয়া হয়ে যায়!!! শিরোনামে। সেই ভ্রমনের আসল সচিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ২২ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:২৭


বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা এই এক প্রশ্ন দিয়েই তাদের সকল অন্যায় অবিচারকে জাস্টিফাই করে আসছে। আমরা দেশের মানুষের মাঝে এই ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছি আমরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের সময় নেতৃত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে মেয়র হবে না হবে, তাতে আমার কী আসে যায়!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২২ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৮


একটা কথায় কতটা ক্ষোভ, হতাশা আর বাস্তবতার প্রতিফলন হতে পারে—এই একটুকু বাক্যই তার প্রমাণ। এটা নিছক কোনো ফেসবুক স্ট্যাটাস না, এটা আজ হাজারো সাধারণ নাগরিকের কণ্ঠস্বর, যারা প্রতিদিন বাঁচার সংগ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ভুল করি, বিপদে পড়ি= (প্রার্থনা)

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১৫



যখন তোমার বান্দা অহঙ্কারী হয়, তুমি তো তা দেখ,
কী শাস্তি আমার পাওনা হিসাবের খাতায় লেখ;
আমি হারাই পথের দিশা,
জীবনে নেমে আসে সহসা অমানিশা।

কখনো দাও রোগ বালাই,
কষ্টে ভোগে প্রার্থনায় তোমারেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×