ফার্স্ট ক্লিপে সাগরের ঢেউয়ে বাঁশের বিশাল মাচার উপর দুলছেন তারিক আনাম এবং লুৎফর রহমান জর্জ। এর পরের ক্লিপে একটা চরের/দ্বীপের ছবি, দেখেই তো আমি নড়েচড়ে বসলাম। আরে এটা কি! ভোলার কালির চর না? না... না... এটা মনে হয় পটুয়াখালীর সোনার চর। পর মুহূর্তে মনে হল এটা সুন্দরবনের কোন অংশ। কি আর করা বসে পড়লাম টেলিফ্লিমটা দেখতে। আজ দুপুরের ঘটনা।
আমি শুক্রবারে কোথাও ভ্রমণে না গেলে জুম্মা নামাজের পর এনটিভি’তে দুপুরের খবর দেখি এবং খবরের পর যে টেলিফ্লিম দেখায় তা একনজর দেখে নেই, যদি কোন ভালো কিছু দেখায় তবে অবসর কাটানোর ভালো সুযোগ পাওয়া যায় একটা। আজ দুপুরের খবর শেষ হতেই দেখি এরপর দেখবেন টাইটেলে ‘ছিন্ন’ নামের একটি টেলিফ্লিম এর ক্লিপগুলো, যা উপরে বর্ণনা করে লেখা শুরু করেছি। আগ্রহ নিয়ে বসে পড়লাম দেখতে। বহুদিন পর সেইরাম একটা টেলিফিল্ম দেখলাম। এর আগের দেখা সেইরাম ছিল শহীদুজ্জামান সেলিম অভিনীত টেলিফিল্ম "বাজীকর"।
তো কি দেখলাম? কাহিনীটা এরকম, এক চরাঞ্চলে তারিক আনাম আর লুৎফর রহমান জর্জ দুই দরিদ্র বন্ধু, সাগর পাড়ের মানুষ। তাদের কাছে বিপদ সঙ্কুল পথ বেয়ে এক ঝাক বাঁশ সমুদ্র আর বনের মাঝ দিয়ে বয়ে নিয়ে যেতে হবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। অন্য আরেক জায়গায় তিশা বাসর ঘর হতে পালিয়ে যায়, তার অমতে টাকার লোভে তার মদ্যপ বাবা তাকে জোর করে এলাকার এক চরিত্রহীন লম্পটের সাথে বিয়ে দেয়ায়। পালাতে গিয়ে নৌপথে একা ছোট্ট নৌকা নিয়ে রাতের আঁধারে বের হয়ে পড়েন তিশা। পরদিন সকালে তারিক আনাম আর লুৎফর রহমান জর্জ জঙ্গলের ধারে জলের পারে অচেতন তিশাকে দেখতে পান। মূল কাহিনী এখান থেকে শুরু।
একদিকে তারিক আনামের লোভ এবং জৈবিক লালসার জেগে ওঠা, অন্যদিকে লুৎফর রহমান জর্জ এর মানবিক প্রতিরোধ এই নিয়ে এগিয়ে যায় কাহিনী। প্রতি পরতে পরতে দর্শক যা আঁচ করে ঘটে তার বিপরীত। এইভাবে এগোতে এগোতে অবিশ্বাস্য সুন্দর একটা সমাপ্তি ঘটে টেলিফ্লিমটির।
শুটিংয়ের প্রয়োজনে কোথায় না ছোটেন তারকারা! দেশের সীমানা পেরিয়ে প্রায়ই তাদেরকে উড়াল দিতে হয় বিভিন্ন দেশে। কিন্তু এই টেলিফিল্মে তারিক আনাম খান, তিশা এবং লুৎফর রহমান জর্জ ছুটে গেলেন গহীন সমুদ্রে। টানা ছয় দিন সেখানেই আবহাওয়া অফিসের সতর্ক সংকেত উপেক্ষা করে কাজ করেছেন তারা। টেলিফিল্মের শেষে শিল্পীদের দেয়া অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায় তখন সমুদ্রে চার নম্বর বিপদ সংকেত চলছিল। ওয়াহিদ আনামের রচনা এবং পরিচালনায় টেলিছবিটির দৃশ্যধারণ হয়েছে কুয়াকাটা থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে ফাতরার চর সংলগ্ন এলাকায়। আর পুরো শুটিং এর সময় ফাতরার চরের বনবিভাগ ভালো সহায়তা করেছে। টেলিছবিটির কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ওয়াহিদ আনাম বলেন, ‘একদিকে বনের ভয়াবহতা অন্যদিকে সমুদ্রের প্রবল ঢেউ- সবমিলিয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। একবার আবহাওয়া অফিস থেকে চার নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেওয়া হলো। সে অবস্থার ভেতরেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেছি আমরা। আমাদের ইউনিটে মোট চল্লিশ জন লোক কাজ করেছে। তিন-চারটা ট্রলার সব সময়ই আশেপাশে থাকতো।
টেলিফিল্মঃ ছিন্ন
এনটিভিতে ঈদের তৃতীয় দিন দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে প্রচার হয় টেলিফিল্ম 'ছিন্ন'। ওয়াহিদ আনামের রচনা ও পরিচালনায় এখানে অভিনয় করেছেন তিশা, তারিক আনাম খান, লুৎফর রহমান জর্জ, নাঈম, শশী, তুষার খান, আহসানুল হক মিনু, শবনম পারভীন প্রমুখ।
কাহিনী সংক্ষেপেঃ ‘খবির, চুন্নু খুবই অভাবী প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু এরা বেশ ভালো বন্ধু। একজনের জন্য আরেকজন জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে। ভালো অর্থের বিনিময়ে পানিপথে কিছু বাঁশ পৌঁছে দেয়ার কাজ পায় তারা। কিন্তু যে পথ দিয়ে যেতে হবে, তা অনেক বিপজ্জনক। গভীর জঙ্গলের মধ্যে ছোট্ট খাল। খবির ও চুন্নু তাদের বাঁশের ভেলা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যাত্রাপথে তারা ভয়াবহ সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এরই মধ্যে খালের পাড়ে তারা একটি মেয়েকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। মেয়েটিকে ভেলায় উঠিয়ে নেয় তারা। জ্ঞান ফিরলে জানা যায় যে, তিথি নামের মেয়েটি জীবনের কিছু অমানবিক নির্যাতন থেকে পালিয়ে এসেছে। সুন্দরী তিথিকে দেখে পাল্টে যেতে থাকে খবির। চন্নু এটা টের পেয়ে খবিরকে শাসায়। কিন্তু খবির তার সিদ্ধান্তে অটল। এতদিনের বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে ছিন্ন হয়ে যেতে শুরু করে।’
আপনি যদি টেলিফিল্মটি না দেখে থাকেন, তবে আমি বলব দেখতে। কাহিনী, পরিচালনা, স্পট, অভিনয় সব কিছু মিলে আপনি ভালো কিছুই পাবেন, আশাহত হবেন না। আমার মতে এটা ফিল্ম আকারে নির্মাণ করে সিনেমা হলে মুক্তি দেয়া উচিত ছিল। এবং আমার মতে সেই ছবির IMDb Rating হতো 8.5

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০০