ব্লগার সপ্নবাজ অভি'র "মা" নিয়ে লিখা সুন্দর আর্টিকেল (নোংরা পেজগুলোকে পেছনে ফেলে ) গুগলের প্রথম পাতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ। ’র ডাকে সারা দিয়ে গত মাস দেড়েক জুড়ে অসংখ্য লেখা এসেছে। খুব ইচ্ছা ছিল আমার খুব প্রিয় দুটি ভিন্ন রকমের কবিতা দিয়ে একটি লেখা লিখবার। প্রথম কবিতাটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। এই কবিতাটির সাথে আমার প্রথম পরিচয় প্রায় ১৫ বছর আগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কেন্দ্রিক এক সংগঠন আয়োজিত ছয় মাস ব্যাপী “আবৃত্তি ও উপস্থাপনা” কর্মশালায়। আমি কোন মহা রবীন্দ্রভক্ত নই, কর্মশালার শেষে মূল্যায়ন পরীক্ষায় একটা অংশ ছিল দর্শকদের সম্মুখে আবৃত্তি করা, আর এতে আমার ভাগ্যে পরেছিল এই কবিতাটি। খুবই ভালো লেগেছিল কবিতাটি সেই সময়ে, যা আজও হৃদয় মাঝে বাজে, কবিতাটির নাম “অন্য মা”। আর ২য়টি আমার খুবই পছন্দের স্বরচিত একটি কবিতা। সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি রবীন্দ্রনাথের কবিতার সাথে নিজের কবিতা দেয়ার ঔদ্ধতের জন্য।

অন্য মা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার মা না হয়ে তুমি আর কারো মা হলে–
ভাবছ তোমায় চিনতেম না, যেতেম না ঐ কোলে?
মজা আরো হত ভারি–
দুই জায়গায় থাকত বাড়ি,
আমি থাকতেম এই গাঁয়েতে, তুমি পারের গাঁয়ে।
এইখানেতে দিনের বেলা
যা-কিছু সব হত খেলা,
দিন ফুরোলেই তোমার কাছে পেরিয়ে যেতেম নায়ে।
হঠাৎ এসে পিছন দিকে
আমি বলতেম, "বল্ দেখি কে?"
তুমি ভাবতে চেনার মতো চিনি নে তো তবু।
তখন কোলে ঝাঁপিয়ে প’ড়ে
আমি বলতেম গলা ধরে,
"আমায় তোমার চিনতে হবেই, আমি তোমার অবু!"
ওই পারেতে যখন তুমি আনতে যেতে জল
এই পারেতে তখন ঘাটে বল্ দেখি কে বল্?
কাগজ-গড়া নৌকোটিকে
ভাসিয়ে দিতেম তোমার দিকে,
যদি গিয়ে পৌঁছত সে বুঝতে কি, সে কার?
সাঁতার আমি শিখিনি যে,
নইলে আমি যেতেম নিজে–
আমার পারের থেকে আমি যেতেম তোমার পার।
মায়ের পারে অবুর পারে
থাকত তফাত, কেউ তো কারে
ধরতে গিয়ে পেত নাকো, রইত না একসাথে।
দিনের বেলায় ঘুরে ঘুরে
দেখা-দেখি দূরে দূরে,
সন্ধ্যেবেলায় মিলে যেত অবুতে আর মা-তে।
কিন্তু হঠাৎ কোনোদিনে যদি বিপিন মাঝি
পার করতে তোমার পারে নাই হত মা রাজি?
ঘরে তোমার প্রদীপ জ্বেলে
ছাতের 'পরে মাদুর মেলে
বসতে তুমি, পায়ের কাছে বসত খ্যান্ত বুড়ী–
উঠত তারা সাত ভায়েতে,
ডাকত শেয়াল ধানের খেতে,
উড়ো ছায়ার মতো বাদুড় কোথায় যেত উড়ি।
তখন কি, মা, দেরি দেখে,
ভয় পেতে না থেকে থেকে–
পার হয়ে মা আসতে হতই অবু যেথায় আছে।
তখন কি আর ছাড়া পেতে,
দিতেম কি আর ফিরে যেতে–
ধরা পড়ত মায়ের ওপার অবুর পারের কাছে।
======================================
কেমন ছিল মা আমার?
- বোকা মানুষ বলতে চায়
কেমন ছিল মা আমার?
ভাবতেই যেন দ্বিধায় পরি,
মনে পড়েনা কোন স্মৃতি
হেথা হতে হেথায় খুঁজি।
কেমন করে ডাকতো মোরে
“আয়রে সোনা কোলে আয়”,
নাকি “খোকা” বলে জড়িয়ে
ভরে তুলতে চুমোয় চুমোয়।
কিছু মনে পড়েনা আজ
কিছু নেই স্মৃতিতে,
কেমন করে ডেকে তুলত
কাঁক ডাকা প্রভাতে।
কেমন করে সাজিয়ে দিতো
ইশকুলেতে যেতে,
কেমন করে পড়াতো মোরে
উঠোনে মাদুর পেতে।
কেমন করে করতো শাসন
দুষ্টুমিতে করতো বারণ,
কেমনে আগলে রাখত মোরে
খুঁজে ফেরে আজ মন।
কখন, কোথায়, কেমনে?
সবটুকু স্মৃতি নিয়ে,
মা আমার হঠাৎ করে
কোথা গেল হারিয়ে।
হাজার দিবস রজনী পরে
দুঃখিনী এই রাতে,
খুঁজে ফিরি মাকে আমার
ধুলো পড়া স্মৃতিতে।
হাসিকান্না আর ভালোবাসায়
কেমন ছিল মা আমার?
সুখে-দুঃখে, মায়া-মমতায়
কেমন ছিল মা আমার?
আমায় নিয়ে স্বপ্নদেখা
আমায় নিয়ে ছবি আঁকা,
আমায় নিয়ে জাল বোনা
আমায় নিয়ে গল্প লেখা।
সেই আমার প্রিয় মা
কোথায় গেল হারিয়ে,
সেই আমার ভালবাসা
দিগন্তকে ছাড়িয়ে।
হেথা হতে হেথায় খুঁজি
মনে কেন পড়েনা স্মৃতি,
কেমন ছিল মা আমার?
ভাবতেই কেন জলে ভেজে আঁখি।
(কবিতাটির রচনাকালঃ ১৭ই আগস্ট, ২০০০ সাল; মধ্য দুপুর)