শীত শেষের ফুলেল গপ্পো ।
ভ্যালেন্টাইনের ফুল নয়, তাতে কি সৌন্দর্যে একটুও কম নয় ।
“চোখে সর্ষে ফুল” দেখে খারাপ তো লাগেনি । বরং মনটাই ভরে গেছে ।
গতি দানব ।
আগমন ......
দানবীয় রূপ......
প্রস্থান......
ট্রেন দেখলেই । আমার বেশি মনে পড়ে বিভিন্ন সময়ে আমার ট্রেন মিস করার । আর সেটা মনে হলেই একটা গান ও খুব মনে পড়ে স্করপিওন্সের ।
“Don't be lazy man and work off your ass.
He's the boss you've gotta do what he says!
Catch your train, run and forget those ways.
Keep it cool it's not too late! ”
সান্ত্বনাঃ আমার মত ট্রেন মিস করা অলস আছে বিশ্বজুড়ে বর্তমান।
জেলে >>> মাছ (ধাপে ধাপে)
এই স্টেশনটা দেশের সবচেয়ে অবহেলিত স্টেশনগুলোর একটা ।
শৈশব, কৈশোরে আমার নানা বাড়ি মানেই এই মনু স্টেশন । তখন রাস্তাঘাট তেমন ভালো ছিলোনা তাই এই অঞ্চলের একমাত্র বাহন ট্রেন (তাও লোকাল ট্রেন) আর সেই সুত্রে এই স্টেশন । আশেপাশের দুই-তিনটি ইউনিয়ন ও চা বাগানের যাত্রীদের জন্য হাতেগোনা কয়েকটি লোকাল ট্রেন এখানে থামত, মিক্স ট্রেন, কুশিয়ারা, জালালাবাদ ......। এই স্টেশন এতই অবহেলিত যে আমার মনে হয় যার কারনে এর স্টেশন মাস্টার কখনো বদলী হননি । আমি সেই থেকে একজনই স্টেশন মাস্টার দেখে আসছি । খোশ মেজাজি, বিনয়ী ও ভালো মানুষ ।
জায়গা, অবস্থানগত কারনে কোন ধরনের সিগন্যালের বেবস্থা নেই । তাই ক্রসিং হয়না(নিয়মিত রেল যাত্রীরা এই বরিক্তিকর শব্দের সাথে পরিচিত থাকবেন)। কোন ধরনের ফোন নেই তাই অন্য স্টেশনের সাথে কোন যোগাযোগ ছিলোনা তাই কখনই যাত্রীরা জানতে পারতেন না যে ট্রেনটি দেরী করছে সেটি আর কতক্ষণে এসে পৌঁছাবে। এ যেন দীর্ঘ বিরক্তিকর প্রতীক্ষা ।
ছেলেবেলার লাল স্টেশনগুলো এখন আর নেই প্রায় । নতুন ডিজাইনে সংস্কার হচ্ছে সব স্টেশন । এই স্টেশনটি এখনো লাল । নস্টালজিক “লাল স্টেশন” ।
এই অবহেলিত স্টেশনটি ব্রিটিশ আমলে এতটা অবহেলিত ছিলোনা । বরং এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল । পাশের স্টোর হাউজটি আজো তারই সাক্ষী দিচ্ছে । পাশের মনু নদী হয়ে ভারত থেকে আসতো পন্য সামগ্রী, মনু স্টেশন হয়ে ছড়িয়ে যেত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। দেশ ভাগের পর আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় এর গুরুত্ব। মাঝে মাঝেই গুজব কানে আসত এই বুঝি বন্ধ হয় বলে স্টেশনটি।
সাম্প্রতি আবার মনু স্টেশন তার অস্তিত্বের জানান দিয়ে ছিল । মনু নদীর (নদীর পাড়েই স্টেশন) উপরে যে সেতু তাতে বাঁশ দিয়ে আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা জোড়া তালি দিয়ে ছিলেন । তাতেই মিডিয়ায় তোলপাড় আবার আলচনায় মনু স্টেশন।
বুঝলাম না পরে বাঁশের অংশটি তুলে দিয়ে কাঠ দিয়ে মেরামত করাতে কি এমন মহাভারত শুদ্ধ হয়ে গেল । ছবি দেখে এর কিছুটা বুঝতে পারবেন।
শত অবহেলায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে চলা অখ্যাত এ স্টেশনটি আমার স্মৃতির পুরোটা জুড়েই থাকবে । আমি বলতে শিখিনি রেলগাড়ি কিংবা ট্রেন, শিখেছি লম্বা গাড়ি। বাবা চাকুরি করতেন ফেঞ্চুগঞ্জে ৭ টি স্টেশন পরেই কাঙ্ক্ষিত মনু স্টেশন । মাইজগাও, ছকাপন, লংলা, টিলাগাও, কুলাউড়া স্টেশনগুলো কিভাবে ভুলা যায় !!! এই স্টেশনে নেমেই শিহরিত হতাম - এসেগেছি নানা বাড়ি, আমার স্বর্গ । যেখানে আজো বার বার যেতে চাই । ফেরার পথে সকাল সাড়ে আট টায় কুশিয়ারা ট্রেন । স্টেশন মাস্টারের হাসি । কটাকট টিকেটে সিল মারা । ট্রেনের আসা, খুব অল্প সময় থেমেই যাত্রীদের কোলাহলের মধ্যে বিকট এক হর্ন বাজিয়ে আবার ছুটে চলা। নানা বাড়িছেড়ে যাওয়ার কষ্টটা (যেটা কণ্ঠ পর্যন্ত এসে অস্বস্তি দিতে থাকে) ঝিক ঝিক শব্দের সাথে সাথে সেটা মিলিয়ে যায় । এই স্টেশনটি ও হয়ত কখনো সংস্কার হবে নয়তো বাতিল । তাতে গুরুত্বপূর্ণ কাজের কাজ কিছুই হবেনা । তাই এটি নস্টালজিক লাল রঙে পুরনো স্টেশনের সাক্ষী হয়েই থাক । আমি অন্তত তা ই চাই।
আমার হাসি কান্নার শৈশবের লাল রঙের মনু স্টেশন।
ফক্রেঃ Aklis Ahmed and Meah Md. Sharif