সময়কাল:
১৭৩৪ সালে দেওয়ান দয়ারাম রায় নির্মান করেছিলেন। ১৮৯৭ সালের গ্রেট এশিয়ান ভুমিকম্পে এই প্রাসাদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরবর্তীকালে রাজা প্রমদা নাথ রায় ১৮৯৭ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছর সময় ধরে বিদেশী বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও চিত্র শিল্পী আর দেশী মিস্ত্রিদের সহায়তায় সাড়ে ৪১ একর জমির উপর এই রাজবাড়ীটি পুনঃ নির্মাণ করেন।
নির্মাতা: নাটোর রাজবংশের দেওয়ান দয়রাম রায় এবং রাজা প্রমথ নাথ রায়।
ইতিহাস:
দীঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং রামজীবন রায়ের ভূতপূর্ব দেওয়ান দয়রাম রায় ১৮০২ সালে এই প্রসাদের গোড়াপত্তন করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে রাজ পরিবার ভারতে চলে গেলে দীর্ঘদিন এটি অরক্ষিত ছিল। পরে দীঘাপতিয়ার মহারাজাদের এই বাসস্থানকে সংস্কার করে ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর আব্দুল মোনায়েম খাঁন " “দীঘাপতিয়া গভর্ণর বাসভবন" হিসেবে উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একে "উত্তরা গনভবন" হিসাবে ঘোষণা দেন। তিনি ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী এই ভবনের মূল প্রাসাদের ভিতর মন্ত্রিসভার বৈঠক আহবান করেন, সেই থেকে ভবনটি ‘উত্তরা গণভবনের' প্রকৃত মর্যাদা লাভ করে। ১৯৮৯ সালে উত্তরা গনভবনের "কুমার প্যালেসটি" মোটেল হিসাবে ব্যবহারের জন্য পর্যটন কর্পোরেশনকে দেয়া হয়েছিল।
বর্ননা:
সমগ্র প্রাসাদ কমপ্লেক্সটি ৪৩ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। প্রাসাদ কম্পাউন্ডের এর চারপাশে আছে পরিখা ও উঁচু প্রাচীর আর ভেতরে রয়েছে ছোট বড় বেশ কিছু স্থাপত্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—প্রবেশ তোরন, প্রধান রাজপ্রাসাদ, কুমার প্যালেস এবং খাজাঞ্জিখানা।
প্রবেশতোরণঃ পূর্ব দিকের বহিঃপ্রাচীরের কেন্দ্রে অবস্থিত তিনতলা প্রবেশদ্বারটি। এই তোরণে একই আয়তনের ও পরিকল্পনার আটটি কক্ষ আছে। সিড়ি ঘর ছাড়া অন্য ঘর গুলোতে প্রহরীরা থাকতো। প্রবেশতোরণের তিনতলার মাঝ খানে একটি কক্ষে স্থাপন করা হয়েছে বিশাল ঘন্টা যুক্ত একটি ঘড়ি যা বাইরে থেকে দেখা যায়। কথিত আছে ঘড়িটি দেওয়ান দয়ারাম ইংল্যান্ড থেকে আনিয়েছিলেন, এক সময় এর ঘণ্টাধ্বনি বহুদূর থেকে শোনা যেতো।
মূল রাজপ্রাসাদঃ মূল রাজপ্রাসাদটি একতলা এবং চারিদিকে বারান্দা ঘেরা। মাঝখানে একটি বড় হলঘর সহ এখানে রয়েছে মোট ৩৪টি কক্ষ। এরমধ্যে একটি হলঘর, একটি ডাইনিং হল, একটি দরবার হল, একটি গোপন কক্ষ, নয়টি শোবার ঘর, একটি বেসিন কক্ষ এবং বাকি গুলো ড্রেসিং রুম ও স্নানঘর। ছাদের উপরে কন্দাকৃতির গম্বুজ যুক্ত এই প্রাসাদের দক্ষিণের বারান্দায় আছে ছয়টি কারিন্থীয় শীর্ষ যুক্ত স্তম্ভ। পশ্চিমের বারান্দার পরেই রয়েছে শানবাঁধানো একটি জলাধার যার ধাপ গুলো শ্বেতপাথর দিয়ে বানানো হয়েছিল।
প্রাসাদের দক্ষিণ দিকে চমৎকার একটি ফুলের বাগান এবং বাগানে গ্রেকো-রোমান ধরনের নারী ভাস্কর্য, ফোয়ারা এবং একটি ‘টি হাউস’ আছে। দ্বিতল ‘টি হাউস’টি কাঠের নির্মিত।
কুমার প্যালেসঃ
তোরন থেকে মূল প্রাসাদে যাবার আগেই উত্তর-দক্ষিণ দিকে অবস্থান কুমার প্যালেসের। এটি একটি দ্বিতল ভবন, মোট কক্ষের সংখ্যা পাঁচটি। নীচতলার ঘর গুলোতে প্রবেশের জন্য মাত্র একটি দরজা থাকায় এই ঘর গুলো অন্ধকার ও স্যাতঁস্যাতে।
এছাড়া উত্তরা গণভবন চত্বরে গোলপুকুর, পদ্মপুকুর, শ্যামসাগর, কাছারিপুকুর, কালীপুকুর, কেষ্টজির পুকুর নামে ছয়টি পুকুর রয়েছে।
যোগাযোগ:
ঢাকা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে সরাসরি নাটোর যাওয়া, দুই পথেই ৫ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। শহর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে দীঘাপতিয়ার জমিদার বাড়ি বা উত্তরা গনভবনের অবস্থান। নাটোরে নেমে রিক্সা, ভ্যান কিংবা অটোরিক্সা নিয়ে সহজেই যাওয়া যায় সেখানে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৩২